somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যা বলো তাই বলো

০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যার কথা বলতে এলাম তাকে আমি চিনি। তখন ও একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। পড়াশুনায় তো মন ছিল না, প্রথমবারে চান্স পেল না।
চান্স না পেয়ে কতকিছুই না করল ছেলেটা। যার কিছুতেই কিছু হয় না, যা বলো তাই বলো ছেলের কি অবস্থা তখন! মেয়েটা আমাদের কাছে এসে অসহায়ের মত বলে, প্লিজ আমার পাগলটাকে বোঝাও! আমি তো ওরই আছি, এবার হয়নি পরেরবার হবে।
বস্তুত, আমরা পাঁচজন, না ছয়জন ছিলাম ওর সবচাইতে কাছের বন্ধু। পাঁচজন একসাথে থাকতাম মেসে আর একটা মেয়ে, আমাদের দলে মিশে গিয়েছিল। তার কথা অন্য কোনদিন হবে। তো, আমরা দায়িত্ব সহকারে গালাগাল দিলাম ছেলেটাকে। তার কথা, বৌয়ের সাথে একই সাথে ক্যাম্পাসে যাওয়ার মর্ম নাকি আমরা কোনকালেও বুঝব না!
কয়দিন পরই অবশ্য ওর "আমারে দিয়া কিছু হবে না" স্টেটাস ঢেকে গেল অনেক কাপল সেলফিতে... আমরাও ওকে পাগল ই বলতাম। যে ই একটু চিনত সে ই পাগল বলত। পরেরবার চান্স পেয়ে গেল। কী খুশি! ওর মুখে বৌ ছাড়া কথা নাই, এই করলাম, ওই করব, সেই জীবনেও করব না ইত্যাদি ইত্যাদি। ওর ঘুমানোর স্টাইলটা ছিল অসাধারণ। পুরানো খারাপ মোবাইল তো, দুইহাতে দুইটা রাখত..একটায় টাইপ করত, আরেকটায় পড়ত বৌয়ের মেসেজ..যাতে তাড়াতাড়ি হয়। এইভাবে রোজ ঘুমাত ছেলেটা। হাঁ করে। মুখ দিয়ে লালা পড়ে বালিশ ভিজে যেত। হাতে ধরা জ্যোত্স্নােলোকের সংবাদবাহক! আমার বেশ হিংসাই হত। একদিন মেয়েটাকে বললাম, সত্যি জানো..আমি বুঝি না তোমাদের মধ্যে কে বেশি লাকি..কে কাকে পেল আর কে কাকে জয় করল!
মেয়েটা বলেছিল, আমিই। পাগলটা না আমাকে খুব সুখে রাখে।
এই কথাগুলো যখন হচ্ছিল মেসেজে তখন 'পাগলটা' দুই হাতে মোবাইল ধরে হাঁ করে আমার সামনেই ঘুমাচ্ছিল। আমি গিয়ে ওর গালে একটা থাবড়া দিলাম! শালার! রাজকপাল নিয়া জন্মাইছো আর থাবড়া খাবা না?
আরেকদিনের কথা, তখনও চান্স পায়নি, প্রিপারেশন নিচ্ছে। আমি নীলক্ষেতে আসছি পাগলরে নিয়ে। কয়টা বই কিনব, তারপর অনন্ত জলিলের নতুন মুভিটা দেখব বলাকায়, এই প্ল্যান। ছোঁড়া আমার পাশে হাঁটতে হাঁটতে চ্যাট করছিল মেয়েটার সাথে। কিছুক্ষণ পর আমাকে একটা মেসেজ দেখায়, "শার্টের বোতাম লাগাও বুকের কাছটায়।"
একটু আগে শালায় যে সেলফিখান তুলল আমার সাথে সেইটা পাঠায়া দেয়াও হয়ে গেছে! এমা! আর কিছুক্ষণ পরে দেখি হঠাত্‍ বাঁই বাঁই করে দৌড়! বই কেনা মাথায়, দৌড়ে ধরে থামালাম। কি..না বৌয়ের ক্লাশ শেষ। এখনো দৌড় দিয়া অমুক জায়গায় পৌছাতে পারলে রিকশাটা ধরা যায়! মেয়েটার বাসায় খুব কড়াকড়ি, জানতাম। বললাম, আজকে তো ক্লাশ পালায় নাই, ঘুরতে তো পারবা না।বলে, ভাই আধঘন্টা যে রিকশায় থাকব তার দাম কত সেইটা কি বুঝবা?আবার দৌড়। আমি হাসতে হাসতে বলাকায় ঢুকে গেলাম।
এরপর তো আলাদা হয়ে গেলাম। আমি ঢাকা ছেড়ে এলাম, বন্ধুরাও বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি হয়ে মেসটা ছেড়ে দিল।
এরমধ্যে একদিন আমি ক্যাম্পাস থেকে রিকশা করে কোথায় যেন যাচ্ছিলাম। হঠাত্‍ ম্যাজিকের মত একটা দৃশ্য চোখে পড়ল। একটা ছেলে হাত পা নেড়ে গম্ভীর মুখে কি যেন বোঝাচ্ছে পাশে দাঁড়ানো মেয়েটাকে। মেয়েটা বেশ একটা 'ছোট্ট বাচ্চার সিরিয়াস কথা শুনছি, হাসি পেলেও হাসা যাবে না' ভাব করে তাকিয়ে। জগতের কারো দিকে খেয়াল নাই, আমি যে হা করে ওদের দেখছিলাম যতক্ষণ দেখা যায় সেটা দেখেইনি! আমি নিজে প্রেম করি না,এরকম ঘটনা আমার জীবনে ঘটেনি, হিংসা লাগাটা খুব যুক্তিসঙ্গত। লাগল না, বরং খুব শ্রদ্ধার ভাব এল। মনে মনে বললাম, ওদের ভালো হোক। তখন মনে পড়ল আমার বন্ধু আর বন্ধুপত্নীর কথা। দুই জুটিতে কিছুই তো মিল নাই অথচ কেন জানি এদের আর আলাদা ই করা যাচ্ছে না।
আর তো সেইভাবে যোগাযোগ নাই। ওদের সেলফীতে লাইক দেই। ক্রমে ফেসবুকটা লুম্পেন থেকে লুম্পেনতরদের আখড়া হয়ে গেল। হোমপেজ দেখা ছেড়েই দিলাম। আর খোঁজ নাই।
খোঁজ নিতে গিয়ে.. বন্ধুর আইডিতে গেলাম। পুরা থ। বিভিন্ন ভালবাসার পেইজ থেকে নানান পোস্ট, "যে যেতে চায় যেতে দাও..তোমার হলে ফিরে আসবে"..মার্কা বহু পোস্ট শেয়ার করা। শেষের দিকে খালি দুঃখের এনালাইসিস, দুঃখ কত প্রকার, কার কাছে দুঃখ পেলে কেমন এইসব। আমার মনে পড়ল একেবারে প্রথম দিককার কথা, ওর 'বৌ' কে কোচিংয়ে দেখে এসে আমাদের ধরল, সেই বান্ধবীকে বলা হল যেভাবেই হোক ব্যবস্থা কর। ও খালি বলছিল, "মানুষ এত সুন্দর! এত সুন্দর মানুষ!" আমরা ছবি দেখলাম, ফেসবুক আইডি..নাহ। একেবারেই সাদাসিদে মেয়ে। এই গল্পটা মেয়েটা যতবার শুনত খুব খুশি হতো...
মেয়েটার আইডিতে যেতেই পারলাম না। জানা গেল, আমাদের সার্কেল পুরোটাই ব্লকড। অফিশিয়াল ব্রেক আপ যাকে বলে একদম!
কদিন পর বন্ধুর সাথে দেখা করলাম। মেয়েটা ক্যাম্পাস বদলে ফেলেছে। আমার বন্ধু পড়াশুনা শিকেয় তুলে সপ্তাহে তিনদিন দশটা পাচটা ডিউটি করা শুরু করেছে ওর ক্যাম্পাসের গেটে। কবে ক্লাশ জানে না তো, গড়ে নাকি তিন সপ্তাহে একবার সেকেন্ড দশেকের দেখা হয়। কথা হয় না। শুধু একবার মেয়েটা বলেছিল, আপনি এভাবে আসবেন না। লাভ নাই।
মাঝখানে অনেকদিন হয়ে গেছে। বিয়ে করেছে বন্ধুর দল অনেকেই। বৌয়ের চার্ম চলেও গেছে। সুতরাং...প্রতি মাসে নতুন করে কোন কলিগ নাহয় অন্য কেউ নাহয় অন্য কারো সাথে ঘেঁষতে পারলেই বেশ সুখী সুখী লাগে। সেইমত বৌয়েরাও ভালোই ‘জীবন উপভোগ’ করে যাচ্ছেন। এইসব দেখি আর নিজের কথা ভাবি। মানতে পারি না তো, একলা একলা লাগে। একটা মানুষের জন্যে শুধুই আরেকটা মানুষ...আমার নাহয় হল না, কারোরই কি হয় না? কেনইবা আমার হবে না! ইত্যাদি ইত্যাদি...
এরকম এক ছুটির বিকেলে, হঠাত দেখা গল্পের নায়কের সাথে! ও ই দেখতে পেয়েছিল, নিউমার্কেটের দিকে। সেই হাকডাক! বিয়ে করে ফেলেছে। সেই মেয়েটাকেই! আমার দেখা যখন পেয়েছে তখন বাসায় নিয়ে যাবেই যাবে। অগত্যা..
ঘরে ঢুকতেই উল্টোদিকে ওদের বিয়ের ছবি, বড় করে। বিয়ের সাজে কোন মেয়েটাকেই বা খারাপ লাগে? কিন্তু এদের দেখে...কিছু একটা ম্যাজিক নিশ্চয় আছে! ছিমছাম বাসা। দুজনার সংসার। বসার ঘর নেই, ডাইনিং এ একটা সোফা পাতা আছে। সেখানেই বসলাম। মেয়েটা চা করতে গেল, বন্ধু তখন বলল, মাত্র কয়দিন আগে ওরা বেড়িয়ে এল। তো যাবার আগে সব গোছগাছ করে খাটও ফোল্ড করে ফেলেছে, রাতে আর ঘুমানোর জায়গা নেই, শেষমেশ এই সোফাতেই দুজনা ভাগাভাগি করে ঘুমালাম!

"কেমন লাগল?"
ও বলল, জীবনেও ভুলব না মিয়া!
এরম সময়ে ওর বৌ এল, গালটা কিছু লাল। শুনে ফেলেছে বোধহয়। তিনজনে আড্ডা দিলাম। কই...কপট রাগ, ঝগড়া ন্যাকামি ঠেকল না তো! সবটার মধ্যেই একটা লুকানো কোন অমৃতের সন্ধান আমিও পেলাম! একসাথে সিনেমা দেখা, হাত ধরে বেড়াতে যাওয়া, কপালের চুল ছুঁয়ে দেয়া, ঝগড়া করে কাপড় পছন্দ করে দামাদামি করে কেনা আর পচা সবজি বাজার করে এনে ঝাড়ি খাওয়া... এই জীবন তো বয়েই যাচ্ছে। প্রাণ বুঝি এসবের লাগিই হায় হায় করে?
আসবার সময় ইচ্ছে হল বলি, আমি তোমাদের সাথে থেকে যাই? রোজ তোমাদের দেখব! তাতেও যে সুখ!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×