আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ উপন্যাসটা পড়লাম। উপন্যাসে একটা বিষয় খুব আলোচিত হয়েছে তা হচ্ছে নারী। নারীর প্রতি দুর্বার আকর্ষণের কেন্দ্র হল পুরুষ। পুরুষ নারীকে ঘরের চার দেয়ালের বাইরে আনতে চায়। এই সঙ্গলিপ্সু মানসিকতা চুক্তিবদ্ধ বৈবাহিক সম্পর্ককেও গ্রহন করতে নারাজ। পুরুষ নারীকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করে তার সাথে সম্পর্ক করতে চায়। সমাজ আবার এটা মেনে নিতে পারে না। সমাজ, ধর্ম চায় নারীর সাথে পুরুষের সম্পর্ক হবে বৈবাহিক সম্পর্কের পর থেকে। ফলে ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক চেতনার সাথে সামাজিক চেতনার দ্বন্দ্ব প্রকাশ পায়।
বস্তুবাদী দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক। যেখানে শোষক আর শোষিতের দ্বন্দ্বই চিরন্তন। কিন্তু এ উপন্যাসে যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা হল চেতনার দ্বন্দ্ব যা প্রকাশ পেয়েছে ফ্রয়েডিয় মনঃসমীক্ষণ ও মনস্তাত্ত্বিক সংঘাতরূপে। উপন্যাসের নায়ক নায়িকাকে কাছে পেতে চায় বিয়ের আগেই। কিন্তু নায়িকা সামাজিক মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় নায়কের আশা পূরণ হয় না। ফলে নায়কের আনন্দ সময়ের প্রেক্ষিতে অবদমিত হয়। মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড বলেছেন, সভ্যতা মানুষের স্বাভাবিকতাকে কৃত্তিম চাহিদায় রূপান্তরিত করেছে। ফলে সে সভ্যতার দাবি মানতে গিয়ে অসন্তুষ্ট হয়। তিনি মনে করেন, আদিম বন্যপ্রাণী শিকার নির্ভর সভ্যতাই ভাল। সেখানে নারী পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই। উপন্যাসিক আজাদ এই দিকটা নায়ক জাহেদের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি তিনি সভ্যতার উৎকর্ষকে কটাক্ষও করেননি। ফলে তার দৃষ্টিভঙ্গী দ্বান্দ্বিকরূপে আমাদের সামনে ফুটে ওঠে। আজাদ চান সমাজে প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতিকে ভেঙ্গে আগাতে।
তিনি বলেন, কিম্ভূতকিমাকার হওয়াটাই যুগের দাবি। বিকৃতিকে বিকৃতি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। যেমন, বিষের ওষুধ বিষ। বিকৃতিকে যদি বিকৃতি দিয়ে মোকাবেলা করা হয় তখন অধিকতর বিকৃতির জন্ম হবে। পরস্পর দুটির সংঘর্ষ অস্তিত্বের বিনাশই ডেকে আনে। ধ্বংস করে তার মুল অস্তিত্বকে। ফলে সংকট আরো ঘনীভূত হয়। কিন্তু তিনি এটা ভাবতে চাননি। তিনি মনে করেন বিকৃতির পাল্টা বিকৃতি বিদ্রোহের সৃষ্টি করে। এই বিদ্রোহই সমাজকাঠামোকে পাল্টে দেবে। আজাদের দৃষ্টিতে বিপ্লব এটাই। কিন্তু যুক্তি, জ্ঞান, বিচার-বিশ্লেষণ মুক্ত আবেগই যে বিপ্লবের প্রধান বাঁধা
৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৫
সেন্ট্রাল পার্ক, কোলকাতা
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:৫০