somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোবা বিস্ময়

১৯ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দৈনিক বাংলার মোড়ে বাস থেকে নেমে ৫০ গজ পূর্বে NCC ব্যাংকের উল্টোদিকে মতিঝিলে জুবায়েরের নতুন অফিস। মাত্র এক মাস হলো চাকরীতে যোগ দিয়েছে । সকালে বাসেই আসে সন্ধ্যায়
ফিরবার সময় নিজেদের গাড়ীতে ফিরে। বাবা গাড়ী নিয়ে যাতায়াত করতে বলেন, কিন্ত্ত মতিঝিলে পার্কিং বিরাট সমস্যা । কাল রাতে খাবার টেবিলে বাবাকে পেয়ে জিজ্ঞেস করে বসলো জুবায়েরের মায়ের নামে যে জমি আছে যা তার নানা মাকে দিয়ে গেছেন জমিটা জুবায়ের বিক্রি করতে চায়। বাবার বুড়ো চোয়াল কেমন ঝুলে পরল আচমকা এমন কথা শুনে, ঝানু ব্যবসায়ি বাবা পালটা প্রশ্ন করলেন হুট করে এত টাকার দরকার পড়লো কেন ? গোপিবাগের সেই জমির দাম এখন কোটি ছাড়িয়ে গেছে, মনে মনে ভেবেছিলেন জমিটা ব্যাংকে রেখে দয়াগন্জে একটা জুতার কারখানা দিবেন, মোটামুটি কাজ গুছিয়ে ফেলেছেন, জুবায়েরর মায়ের জমি বিক্রির কথা ও কে কিভাবে বলবেন বঝতে পারছিলেন না। তাই ছেলের মুখে আবার সে জমি বিক্রীর কথায় থতমত খেয়ে গেলেন।

জিজ্ঞেস করেই বসলেন জমি বিক্রি করে কি করবে ? জুবায়ের মাথা নিচু করে খেয়ে চলেছে, বাচ্চা মুরগির রান চিবানোর আওয়াজ ছাড়া খাবার টেবিলে সুনসান নিরবতা, জুবির বাবা ডায়বেটিক রোগী তাই খাবারে বাছ বিচার আছে চুপ করে ভাবতে লাগলেন আবার কি হল ! প্রশ্নটা আবার করলেন , এবার জুবি বললো তার বন্ধুর চিকিৎসার জন্য টাকাটা দরকার।
পঙ্গু বন্ধুর পা ঠিক করতে জুবি ওকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে পাঠাতে চায়। বাবার নিজ রোজগারের টাকা খরচ করা যাবে না আর জুবি সবে চাকুরীতে ঢুকেছে এতগুলো টাকার জন্য মায়ের জমি বিক্রি ছাড়া উপায় নেই ।জুবির বাবা অতন্ত অসহায় বোধ করলেন, এ সময় তার মায়ের দরকার ছিলো , উনি থাকলে হয়তো ছেলের পেটের ভিতর থেকে কথা বের করে নিতেন, কোন মেয়ে বন্ধুর জন্য তার সহজ সরল ছেলে এত উতলা ভেবে নাওয়া খাওয়া হয়তো ছেড়েই দিতেন আর দশটা বাঙ্গালী মায়ের মত। ভেবেই মুচকি হাসলেন জুবির বাবা কিছু না বলে উঠে পড়লেন খাবার টেবিল থেকে।
কি বলা যায় ছেলেকে ? বলবেন আমি রাজী নই , কোথকার কোন পঙ্গু মেয়েকে সুস্হ করে তাকে বিয়ে করতে হবে ? জগতে কি হাত পা ঠিকঠাক মেয়ের অভাব পড়েছে ? কত কষ্ট টাকা রোজগার করা আর ছেলেটা কিনা আবেগের ডিপো হয়েছে। ছটফট করতে করতে শুতে গেলেন, ঘুম আসছেনা , রাজ্যের কথা মনে পড়ছে।

ছেলেটি হয়েছে ঠিক তার মা এর মত চুপচাপ,শান্ত, মায়াবী ।
জুবায়েরের মা ছিলেন গোলাপী ফর্সা শশুড় বাবার পক্ষে এত সুন্দরী মেয়ে ঘরে রাখা সম্ভব ছিল না, পুরানো ঢাকার মেয়েদের কম বয়সেই বিয়ে দেয়া হত সে সময়। দেখে শুনে চালাক চতুর ৩ পুরুষের ভাল ব্যবসায়ী ছেলে। বাবা হিসেবে এর চেয়ে ভাল আর কি হত ! কিন্তু জুবির বাবা সবসময় চাইতেন ছেলেটা তার মায়ের মত সুদর্সন হোক আর তার মত না হলেও একটু বৈষয়িক হোক । ঘটানা ঘটেছে উল্টো , তার মত খুবই সাধারন দেখতে হয়েছে আর মায়ের মত আবেগী ।

ছেলেটার বাবার উপর অনেক রাগ, ক্ষোভ , ক্রোধ, অভিমান। বাবা হিসেবে উনি কি খারাপ ? ২য় বিয়ে করেন নি, পারতেন করতে কিন্তু মা হারা ছেলের অযত্ন হবে ভেবে সে পথে পা বারাননি । একবারো মনে হয়নি আরো সন্তান থাকুক উনার, নয়তো যদি বুড়ো বয়সে জুবায়ের না দেখে উনাকে দেখার তো কেউ রইলো না। অথচ জুবি একজন বিপত্নীক পুরুষের জৈবিক ক্ষুধা দেখেছে, চতুর ব্যবসায়ীর কুটিল চাল দেখেছে, বৈষয়িক চিন্তা-চেতনার ধারক ৫৮ বছরের প্রৌড়ের ভিতর বুভূক্ষূ পিতৃহৃদয় খানি দেখেনি ! মানুষ হিসেবে তার অবস্হান হয়তো ছেলে জুবায়েরের কাছে বেশ খানিকটা নিচের দিকে কিন্তু পিতা হিসেবে কি উনি পাস মার্কস পেয়েছেন? জুবি তাকে অশ্রদ্ধা করে , ছুতো পেলেই সুক্ষ্ম অপমান করে, বাবা যেটাই বলেন সেটাই তার পছন্দ নয়, অস্হির হৃদয়ের চুপচাপ একটা তরুন, অথচ বাবা চান তার ছেলে থিতু হোক, কিছু একটা করুক জীবন ধারনের জন্য, বিয়ে শাদী করুক তারই পছন্দের কোন একজনকে, নাতি-নাতনির কাছে নিশ্চয়ই উনি ভালবাসা পাবেন । নিজের ছেলে কোনোদিন জিজ্ঞেস করেণি বাবা খেয়েছো কিনা, ঔষুধগুলো কি শেষ হয়ে গেছে ? নাতি-নাতনি কি একবারো আদর, মায়া মমতায় ঘিরে রাখবে না ? আর দশটা বাবার মত চাওয়া গুলো তো খুবি সাধারন । নাকি তার আবস্হাও নচিকেতার সেই গানের মত হবে "ছেলে আমার মস্ত মানুষ মস্ত অফিসার....
View this link

রাত গভীর হতে থাকে চিন্তা গুলো জমাট বাঁধতে থাকে, বুকে চিন চিনে ব্যাথা, জুবিকে কি বলবেন উনি, সাহায্য করবেন জমি বিক্রির ব্যাপারে , নাকি দেখবেন আনাড়ী জুবায়ের কী ভাবে জমি বিক্রি করে মেয়েটিকে হাসপাতালে পাঠাতে পারে ? নাকি বন্ধুটি আসলে মেয়ে নয় কোনো ছেলে ? কিংবা সে কেবল বন্ধু এর বেশি কিছু নয়।

+++++++
জুবায়ের কে নিয়ে আমার আরো কিছু লেখা।১)View
this link

২)View this link
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৮
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×