somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাচীরটা ভেঙ্গে ফেলো

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



Dear Dairy,

I know we are not compatible ,it was not easy for both of us
to ignore all the differences.........


চোখ ঝাপসা হোয়ে এলো ,চিঠিটা আর শেষ করা হলনা ঘোলা চোশমা টা খুলে চোখের পানি মুছলো টিনা । এ কেমনতর অনুভূতি ভাবলেই বুকের ভিতরটা কেমন জানি মোচোর দিয়ে ওঠে। প্রিয় বন্ধু হারাবার কষ্টটা বুকের ভিতর চেপে বসে আছে।
সারাদিন ক্লাস শেষে শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছিল টিনার , পরীক্ষায় গোল্লা মেরে মেজাজ মর্জি এমনিতেই বারোটা বেজেছিল এমন সময় জেনেট ফোন দিয়ে জোড়াজোড়ি করলো ওর সাথে International Student Club যেতে। অনুরোধে যে ঢেকি গিলতে হয় তার প্রমান স্বরুপ আবার জাব্বা জুব্বা পড়ে জেনেটের সাথে রাত আট টায় Student club এ যাওয়া। কিন্তু যেয়ে ভালই হয়েছে অনেকে মিলে নতুন ধরনের তাস খেলা হল। টিনার মনটাই ভালো হয়ে গেলো।ইশ্‌ তাসের নামটা যদি জানতে পারতো তবে দোকান থেকে কিনে নিজে নিজে ঘরে বসে খেলতে পারত।৩/৪ দিন পর টিনা What's App এ জিঙ্গেস করল সেদিনের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে। এমনিতে জার্মান রা অনেক moody আর চুপচাপ, একটা কথা জিঙ্গেস করলে তা খুবই সক্ষেপে উত্তর দিবে আর চেহারা টা এমন বানিয়ে রাখবে যে ২য় কোন প্রশ্ন করার ইচ্ছেটাই উবে যাবে ।
তাই টিনা পারোতপক্ষে জার্মানদের সাথে কথা বলতে চায় না নিতান্ত বাধ্য না হলে।টিনাকে আবাক করে দিয়ে জার্মান ছেলেটি সাথে সাথে নামটা পাঠিয়ে দিলো। Daniel এর সাথে টিনার এভাবেই পরিচয়টা শুরু। কবে কিভাবে কেমন করে বন্ধুত্বটা জমাট বেধে গেল কেউ জানেনা। প্রথম থেকেই দানিয়েল নিজের সম্পর্কে সব জানিয়েছে টিনাকে আর টিনাও ভেবেছে ওদের মধ্যে এত ভিন্নতা এতটাই ভিন্ন সঙ্সকৃতি,ভাষা,দেশ,ধর্ম ,বয়স,যৌন অভিযোজন যে ওর মত একজন মানুষের সাথে বড়জোর বন্ধুত্ব হতে পারে এর বেশি কিছু হবার প্রশ্নই আসে না। যদিও এটা একটা সহজ সরল প্রেম কাহিনী হতে পারত।



দিনের পর দিন হাজার ভিন্নতার মাঝেও আস্তে আস্তে ওরা নিজেদের মধ্যের মিলগুলো খুজে পায় আর অবাক হয়। মৌন পাহাড়, সুউচ্চ গাছের সারি ,স্নিগ্ধ হ্রদ, পরিযায়ী pfuhlschnepfe পাখির ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ, আকাশে ধুসর মেঘের খেলা,ঠান্ডা কন্‌কনে বাতাসের সাথে বৃষ্টি দুজনকে এনে দেয় খুব কাছাকাছি ।টিনা যেমন গান গাইতে পছন্দ করে দানিয়েল ও তেমনি কবিতা লিখতে ভালবাসে। নির্জন দুপুরে পাহাড়ি পাতা ঝরা রাস্তায় হাত ধরে হাটতে হাটতে টিনা গান গেয়ে শোনায় দানিয়েলকে। তাহসানের বাংলা গান "কে তুমি কেন এখানে কেন এতদিন পড়ে......"। গান শেষে আবার তা ইংরেজীতে বুঝিয়ে দেয় কি গাইল।কখনো অঝোর বৃষ্টিতে ছাতা হাতে পার্কে দাড়িয়ে দুজনে সবুজ ঘাসে বৃষ্টির ফোটা গুনে।ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে দানিয়েল তার দরাজ গলায় শোনায় তার লেখা কোন কবিতা । কবিতার সারমর্ম বুঝিয়ে দেয় ইংরেজীতে। দুটি জীবন এভাবেই অতি ধীরে ধীরে কখন যে কাছে চলে আসে টিনা টেরই পায় না। দেখা সাক্ষাৎ হয় খুব কম যদিও এটা নিয়ে টিনার আক্ষেপের অন্ত নেই। দানিয়েল অবশ্য টিনার এইসব অভিযোগ আমলে নেয় না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে উল্টো টিনাকে কথা শুনায়, বলে তুমি তো আর আমার পার্টনার না যে এত সময় আর মনোযোগ চাইছো। কথা তো সত্যি ! লজ্জিত হয় টিনা, কিন্ত আবার ক'দিন পর ভূলে যায়।
টিনা চায় দানিয়েল ওকে আরেকটু বেশি সময় দিক, এই অজানা অচেনা শহরে মা-বাবা ,আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ছেড়ে থাকতে অনেক কষ্ট হয় । তাও জীবনের তাগিদে পড়তে আসা। ঢাকায় ভালই চাকরী করত টিনা, ডিভোর্সের পর সামাজিক নানা প্রশ্ন,কৌতুহল আর বন্ছনা সইতে না পেরে পালিয়ে বেচেছে চেনা শহর থেকে। সবাই মিলে টিনাকে ২বার বিয়ে দিবার জন্য মড়িয়া হয়ে উঠেছিল। তাতে টিনার সম্মতি আছে কিনা সেটা নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই। আসিফ কে তো ভালবেসেই বিয়ে করেছিল টিনা কিন্তু সংসারটা টিকেনি, কেন টিকেনি, কার দোষ ছিল, এসব উত্তর দিতে দিতে টিনা ক্লান্ত। তাই যখনই এই স্কলারশিপটা পেল এক মুহুর্ত চিন্তা না করে চাকরী বাকরী সব ছেড়ে সাথে সাথে চলে এলো সুদূর এই দেশে জার্মানীতে। পালি্যে এসেছে ঠিকই মনের বোঝাটা ফেলে আসতে পারেনি । দানিয়েল যেন অথৈই সাগরে তাই একচিলতে কাঠ ,যেটা আগলে ধরে টিনা ভাসতে চেয়েছিল ডুবে যেতে চায়নি গভীর হতাশায় । দুজনের মাঝে যে ঝগড়া ঝাটি হয়না তেমন না, দানিয়েল চায় টিনা সব ওর সাথে share করুক , মজার ঘটনা,বন্ধুদের সাথে খুনশুটি, ভাষাগত জটিলতার কারনে কিছু বুঝতে না পারা কিংবা জাভা প্রোগ্রামিং এ কোথাও আটকে গেলে সাহায্য করা। টিনার তাতে কোন আপত্তি ও ছিলনা, কিন্ত যখন দেখে দানিয়েল কিছু Share করে না টিনার সাথে তখন মনে মনে দুঃখ পায় টিনা। যে নামেই ডাকা হোক না কেন সম্পর্কে পারস্পারিক চাওয়া পাওয়ার মধ্যে একটা মেলবন্ধন থাকা জরুরী। গত ছয়টা মাস সম্পর্কটা এগিয়ে গেছে তার নিজস্য গতিতে, টুকটাক মেসেজ আদান প্রদান ,মাসে ১/২ বার দুজনে মিলে কোথাও ঘুরতে যাওয়া ,কখনো গাছের নিচে বসে Franz Kafka বা erudite Faust এর সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করা ভাল লাগায় ভরিয়ে দিচ্ছিল দুজনকে।
দানিয়েল কে অবশ্য টিনা কখনো নিজ থেকে তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন করেনি, একজন বাই সেক্সু্য়াল মানুষকে তার কয়জন পুরুষ সঙ্গী বা কজনা নারী সঙ্গীনী ছিল এটা জিঙ্গেস করা ভদ্রতা বা শালীনাতার পর্যায়ে পড়ে না। তাই বলে নিজের সম্পর্কে টিনা সবই বলেছে, নিজের সুখ- দুঃখ আনন্দ-বেদনার কাব্য, কতটা বেদনায় আজো মাঝ রাতে দুঃস্বপ্নে চমকে জেগে ওঠে টিনা,কেন ভয় পায় নতুন কোনো সম্পর্কে জড়াতে তেমনি আরো কত কি ! কখনো দানিয়েল চুপ করে শুনেছে, কখনো বা তার কাধে মাথা রেখে কাদতে দিয়েছে টিনাকে। গত কিছুদিন ধরে দানিয়েল কেমন জানি অদ্ভুত আচরন করছে টিনার সাথে, আগের মত নরম গলায় কথা বলে না, প্রতিটি কথায় রেগে যায়, স্বাভাবিক কথার মধ্যে কেমন উল্টো মানে খুজে পায়, টিনার দোষ ত্রুটি গুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।দানিয়েল এমন নিস্ঠুর আচরনের সঠিক কারন খুজে পায় না টিনা। হুট করে কি এমন হোল যে এমন তর ব্যবহার করতে হবে টিনার সাথে ! এটা নিয়ে প্রশ্ন করতে গেলে এড়িয়ে যায়,অপমান করে।রাগে দুঃখে টিনা কাঁদে। সেদিন না থাকতে পেরে টিনা জেনেট কে জিগেস করে বসে কেন দানিয়েল এমন করছে টিনার সাথে। জেনেট টিনার ছলছলে চোখে দানিয়েলের জন্য মায়া মমতা দেখে যেমন অবাক হয় তেমনি হয় বিরক্ত । এশিয়ান আবেগের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে সে, বলে দানিয়েল এর সাথে ৩ বছর আগে ম্যাথিয়াসের সম্পর্ক যখন ভেঙ্গে যায়, তখন দানিয়েল রীতিমত অসুস্হ হয়ে পরে, নিজেকে সারাক্ষন ঘরে বন্দী করে রাখতো, কারো সাথে তেমন কথাবার্তা বলতো না, কাজ কর্মে চরম গাফিলতির কারনে চাকরিটা ও হারালো। এর পর ওরা কজন বন্ধু-বান্ধব মিলে জোর করে ওকে কাউনসিলারের কাছে পাঠায়, আস্তে আস্তে অনেক দিন ধরে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। টিনা এবার বুঝতে পারে দানিয়েল আজও সেই ভয়াবহ কষ্টের অনুভুতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।নতুন করে সম্পর্কে জড়াবার মত মানষিক শক্তি এখনো আয়ত্ত করতে পারেনি । তাই তাদের চাওয়া পাওয়াহীন নিখুতভাবে বোনা সম্পর্কের গিটগুলো কেন হুট করে আলগা হয়ে খসে পড়লো টিনা তা বুঝতে পারল। দানিয়েল এখন একজন মেয়ে কে জীবন সঙ্গী করতে চায় , সন্তান, সংসার, পোষা কুকুর, একটা ছোট্ট সাজানো গোছানো বাড়ি এসব নিয়ে জিবন কাটাতে চায় । টিনা কে কাছে পেতে হলে হাজারটা বাধা পেরোতে হবে, ম্যাথিয়াসের বেলায় যেটা সে করেছিলো , হাজার চেস্টা করার পরও ম্যাথিয়াসের কে জিবনে ধরে রাখতে পারেনি দানিয়েল, যদিও জার্মানিতে গে পরিবারের অভাব নেই। ক্যাথলিক পরিবারের একমাত্র ছেলে হিসেবে পারেনি সেটা করতে। তাই যখনি বুঝলো দিনের পর দিন টিনা ওর খুব কাছাকাছি চলে আসছে তাই টিনাকে দুরে সরিয়ে দিলো নানা অজুহাত দাঁড় করিয়ে। দানিয়েল আর টিনার মাঝের প্রাচীরটায় যখন সুক্ষ ফাটল ধরেছিলো অচিরেই ভেঙ্গে চৌচিড় হয়ে যাবে বলে দানিয়েলের অতীত এসে প্রাচীরটা আগের চেয়ে আরো উঁচু আর মজবুত করে গড়ে দিল। প্রাচীরের ওপাশ থেকে টিনার কান্নার শব্দ শুনা যায়না, টিনার নরম ঠোটের স্পর্শ,বাদামি ত্বকের মসৃনতা, কালো চোখের গভীরতার মাঝে আর হারিয়ে যায় না সেই গভীর নীল চোখের জার্মান ছেলেটি ।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:১৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×