somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আব্বা যখন জেলে ছিলেন

০২ রা মে, ২০১৪ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আব্বাকে যেদিন পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, সেদিন আমি ত্রিশালে। রাজিব ফোন করে আমাকে ঘটনাটা জানায়। আমি হতভম্ব হয়ে যাই। আব্বা আধ-পাগলা ধরনের মানুষ। আমার জানামতে কখনও কারও ক্ষতি করেননি। সুতরাং, কারও সাথে তাঁর শত্রুতা থাকার কথা নয়। হঠাৎ এমন কী ঘটল! আম্মাকে ফোন দিয়ে কী হয়েছে জানতে চাইলাম। আম্মা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, “তুই চিন্তা করিস না, তোর মামা আনতে গেছে; আজই ছাড়া পাবে!”

আমি আব্বা-আম্মার একমাত্র ছেলে। আব্বার জন্য কষ্ট লাগবে; এটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীতে এমন কোনো সন্তান নেই, যে মা-বাবার দুর্দিনে অস্থির হয় না। বুঝলাম, আমার কাছে অনেক কিছুই গোপন করেছেন আম্মা। অবশ্য পরে আমি সবকিছু জানতে পেরেছিলাম।

দাদার সাত ছেলে। সবাই বড় এবং বিবাহিত। তাঁদের সন্তানাদি আছে। এক ভিটাতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় আমি যখন খুব ছোটো, দাদার বাড়ি হতে একটু দূরে আমাদের নতুন বাড়ি বানানো হয়। প্রায় রাস্তার পাশেই এর অবস্থান। দাদার বাড়ির পূর্ব পাশে একটা বাড়ি আছে, যেটাকে পূরবাড়ি বলা হয়। ঘটনা সে বাড়ি ঘিরেই।

এ বাড়িতে পাঁচটা পরিবার। রফিকুল, নজরুল, শরিয়তউল্লাহ, বাদশা এবং আরিফ সপরিবারে থাকে। প্রত্যেকের দু-তিনজন করে ছেলেমেয়ে আছে। রফিকুল আর নজরুল দুই ভাই। জমি-জমা নিয়ে চাচা শরিয়তউল্লাহ’র সাথে বিরোধ। সেদিন হঠাৎ চতুর্মুখী ঝগড়া বেঁধে গেল। পুরুষ-মহিলা পরস্পর পরস্পরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। রফিকুল আর নজরুল এক পক্ষে, অন্যপক্ষে শরিয়তউল্লাহ ও আরিফ। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে রফিকুলের বউ বেশি আঘাত পেলেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো রফিকুল আর নজরুলের পরিবার। তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হলো। অথচ তাদের দোষ সামান্যই ছিল। রফিকুল শুধু পুরোনো জমিটা মাপতে গিয়েছিলেন। শরিয়তউল্লাহ আর আরিফ গিয়ে তাকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন। নজরুল ভাইকে বাঁচাতে ছুটে যান।

এলাকাবাসী ছুটে আসায় রফিকুলেরা প্রাণে বেঁচে যান। বিকেলে সালিশ বসে। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আসেন, আসেন রাজনৈতিক নেতারাও। শরিয়তউল্লাহ’র সাথে তাদের বেশ ঘনিষ্ঠতা। কোনো কিছু যাচাই-বাচাই না করে রফিকুল-নজরুলকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আব্বা তীর্যক ভাষায় এর প্রতিবাদ জানান। কারণ, আব্বাই লোকজন নিয়ে তাদের উদ্ধার করেছিলেন। ঘটনা সম্পর্কে তিনি আগেই অবগত ছিলেন। তিনি জানতেন কে প্রকৃত দোষী। তাই এই অন্যায়-অবিচার তিনি মানতে পারেননি।

নেতারা একটা বিশেষ দলের। আমি কোনো দলকে দোষ দিই না। ব্যক্তির দোষ নিশ্চয়ই দলকে দেওয়া ঠিকও না? কারণ, একই দলের সবাই খারাপ হন না। অবশ্য মাঝে মাঝে ব্যক্তির দোষ দলের ওপরও বর্তায়। সে অন্য কথা।

রফিকুল-নজরুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আব্বাকেও আসামি করা হয়। আরও আসামি করা হয় নজরুলের ছেলে শিমুলকে, যে দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। কিছুদিন পরেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।

আব্বা প্রায় এক সপ্তাহ কারাগারে ছিলেন। আমাদের বেশ সমস্যা হয়েছিল তাঁকে ছাড়াতে। কারণ, আমাদের গোষ্ঠিতে কেউ কখনও মামলা- মোকদ্দমায় জড়ায়নি। আইন-কানুন, মামলা-মোকদ্দমা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অতি সামান্য। বাস্তব জ্ঞান বলতে গেলে নেই। কোর্ট-কাচারি, উকিল-মোক্তার আর বিচারক সম্পর্কে যা জেনেছি; তা ঐ বিটিভির বাংলা সিনেমা দেখেই।

আমার এক মামা আর দুই চাচা ব্যাপারটা সামলান। আমি যদি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি, এই ভয়ে আম্মা আমাকে আব্বার সঙ্গে দেখা করতে দেননি।

এক সপ্তাহ পর আব্বাকে যখন দেখি, আমার খুব কান্না পেয়েছিল। আব্বা সাত জন ভাইকে বড় করেছেন। দু’জন বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। কখনও নিজের উন্নয়নের কথা ভাবেননি। পাড়া-প্রতিবেশী আব্বার সমবয়সি অনেকেই এখন অনেক টাকা-পয়সার মালিক। অথচ আব্বা যেমন ছিলেন, তেমনি আছেন। তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থার কোনো অগ্রগতি হয়নি। শুধু বয়স বেড়েছে আর কিছুই বাড়েনি। আমি আব্বাকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম।

২রা মে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ
ময়মনসিংহ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×