মুক্তিযুদ্ধের শেষের একটা মাস আমি মুক্তিবাহিনী এয়ারফোর্সের ডাকোটা বিমানবালার ক্যাপ্টেন ছিলাম। আসলে ওই ডাকোটা প্লেনটি চালানোর দায়িত্বে ছিলাম আমরা তিনজন পাইলট। ক্যাপ্টেন খালেক, ক্যাপ্টেন মুকিত এবং আমি। তখন আমরা অবস্থান করছিলাম ব্যারাকপুরের ভারতীয় বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে। ওই বিমান ঘাঁটি কলকাতা শহর থেকে বেশি দূরে না। তাই প্রায় দিনই আমি কলকাতার থিয়েটার রোডে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অফিসে গিয়ে মখ কামালের সঙ্গে বসে গল্প করতাম, চা-বিস্কুট খেতাম। কামাল তখন প্রধান সেনাপতি ওসমানী সাহেবের এডিসি। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে আমরা ওসমানী সাহেবকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বেশ কয়েকটি সেক্টরে ফ্লাই করেছি। সঙ্গে অবশ্যই শেখ কামাল ছিলেন। এভাবে তাঁর সঙ্গে আমার আগেকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠতর হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের সম্পর্ক হয়ে ওঠে আপন ভাইয়ের মতো।
১৯৭৩ সালের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করছি। তখন অ্যালিফ্যান্ট রোডে ছিল আমার বাসা। সন্ধ্যের একটু আগে অর্থাৎ পড়ন্ত বেলায় রিক্সায় বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ দেখলাম শেখ কামাল তাঁর লাল টয়োটা গাড়িটা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আমাকে দেখতে পেয়ে গাড়ি থামিয়ে নামলেন। বাসার খুব কাছে বলে আমিও রিক্সা ছেড়ে দিলাম।
রাস্তার পাশেই কাঁচ ও ফটো বাঁধানো একটা দোকান ছিল। আশা করি এখনও সেটা আছে। দোকানের মালিক ছিলেন আমার খুব পরিচিত। ওখানে আমার একটু কাজ ছিল। কথা বলতে বলতে কামাল আর আমি ওই দোকানে ঢুকলাম। দোকানদার ভদ্রলোক আমাদের কোমল পানীয় দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। আমরা দুইজন যখন কোমল পানীয় পান করছিলাম, তখন ইউনিভার্সিটি এলাকায় গোলাগুলি শুরু হওয়ার শব্দ শুনতে পেলাম। দশ-পনেরো মিনিট পর গোলাগুলির শব্দ থেমে গেল। আমার বাসা একদম কাছে বলে কামালকে বললাম, চল বাসায় যাই। তিনি বললেন, না, আর একদিন আসব। এখন যাচ্ছি।
বাসায় ঢোকার দুই-চার মিনিট পর সম্পর্কে আমার এক ভাই এসে উপস্থিত হলো। সে বেশ হাঁপাচ্ছিল। বলল, ইউনিভার্সিটিতে গোলাগুলি চলছে। শেখ কামাল একদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
আমার চাইতে পাঁচ-সাত বছরের ছোট আমার এই ভাইটি বেশ লেখাপড়া জানা ছেলে ছিল। আমি তাকে বললাম, তুমি এত বড় একটা মিথ্যা কথা না বললেও পারতে। গোলাগুলি ঠিকই হয়েছে। কিন্তু শেখ কামালকে তুমি কোনো দলের নেতৃত্ব দিতে দেখোনি। সামনের রাস্তার ওপর ফটো বাঁধানোর দোকানে বসে সেই শব্দ আমিও শুনেছি এবং যতক্ষণ সেটা চলেছে, কামাল এবং আমি ততক্ষণ ওখানে বসে গল্প এবং কোকাকোলা পান করেছি। তারপর কামাল নিজেদের বাসায় চলে গিয়েছেন।
আমার স্ত্রী তাহমিনা এবার আমার ওই ভাইকে বললেন, তুমি যদি বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারকে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে না পারো, তবে আর আমাদের বাসায় এসো না। আমার স্ত্রীর কথা শুনে ওই ভাইটি আমাদের বাসা ছেড়ে চলে গেল।
আমি শুধু প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে একটি উদাহরণ দিলাম। আওয়ামী লীগের শত্রুপক্ষ শেখ কামালকে নিয়ে এর চেয়ে অনেক গুরুতর মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়েছে অনেক দিন ধরেই।
---আলমগীর সাত্তার
ঘটনাটা তুলে এনেছেন Md Golam Kibria Talukdar
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




