সবচেয়ে ভয়াবহ ছিলেন মোল্লা মোবারক নাগুরী ও তাহার দুই পুত্র আবুল ফজল ও ফৈজি। মোল্লা মোবারক নাগুরী সব মযহাব সম্পর্কে এলম হাসিল করিবার পর নিজেকে এজতেহাদের দর্জা প্রাপ্ত ভাবিতে শুরু করেন। তিনি কোন মযহাবের অনুগত না থাকিয়া ব্যক্তিগত মছলা অনুযায়ী ইবাদত করিতে থাকেন। তিনি এলেমের প্রচার ও প্রসারের কাজ ছাড়িয়া দিয়া পুত্রদের সঙ্গে রাজনীতিতে জড়াইয়া পড়েন।
এইভাবে দুনিয়াদার আলেমগণের দ্বারা মোঘল হুকুমতে সর্বপ্রথম ইসলামবিরোধী বিশ্বাসের বীজ বপন করা হয়। আবুল ফজল, ফৈজী ও তাহার পিতা এক মযহাবনামা জারী করেন। ইহাতে নফছ্পরস্তি ও শয়তানী আকিদার স্পষ্ট নিদর্শন পরিলতি হয়। এই মযহাবনামায় আরো অনেক দুনিয়াদার আলেম স্বেচ্ছায় দস্তখত করেন। অনেকের নিকট হইতে জোর করিয়া দস্তখত আদায় করা হয়। মযহাবনামাটি ছিল নিুরূপঃ
“ বাদশাহ আকবরের আদল ও ইনসাফের বদৌলতে বর্তমান হিন্দুস্তান পরিণত হইয়াছে শান্তি ও শৃঙ্খলার কেন্দ্রে। এই জন্য এই স্থানে মুক্ত পথের প্রদর্শক আলেম ও সর্ব সাধারণের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হইয়াছে।ইহারা আরব ও বিভিন্ন দেশ হইতে আগমন করিলেও এই দেশকেই মাতুভূমি বলিয়া জানেন। এই সমস্ত আলেমগণ সর্বপ্রকার এলমে বিশেষ পারদর্শী। তাহারা সাচ্চা ইমানদার। আকলী ও নকলী বিষয়গুলিতেও তাহারা বিশেষজ্ঞ। কোরআন পাকে আল্লাহ্পাক এরশাদ করিয়াছেনঃ
“আল্লাহ্তায়ালার নির্দেশ মান, রসূলের নির্দেশ মান এবং ঐ সকল লোকের নির্দেশ মান যাহারা তোমাদের প্রতি হুকুমের মালিক।” কতিপয় হাদিস । যথা ঃ ‘আল্লাহর নিকট কেয়ামতের দিন সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি হইবেন ন্যায় বিচারক আমির,’ ‘যে ব্যক্তি আমিরের অনুগত সে যেন আমারই অনুগত এবং যে ব্যক্তি তাঁহার অবাধ্য সে আমারও অবাধ্য।’ এই সব হাদিসের মর্মানুসারে এবং আকলী ও নকলী দলিল মোতাবেক আমরা ঘোষণা করিতেছি য়ে, আল্লাহর নিকট মুজতাহিগণ অপো ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ্ অধিক মর্যাদাসম্পন্ন। বাদশাহ জালালুদ্দিন মোহাম্মদ আকবর বড়ই ন্যায়বান, জ্ঞানী ও বিদ্বান। তাই মুজতাহিদগণের এখতেলাফি বিষয়গুলিতে যদি তিনি তাঁহার তীè বুদ্ধি, জ্ঞান ও নির্ভুল রায় অনুযায়ী আদম সন্তানের জীবিকা ও পার্থিব সুবিধার জন্য কোন একটি দিককে প্রধান্য দেন এবং উহা করণীয় বলিয়া নির্দেশ প্রদান করেন তবে আবদশাহর এই সিদ্ধান্ত সমর্থরযোগ্য এবং সর্বসাধারণ উহা মানিয়া চলিতে বাধ্য। এইরূপ কোরআন শরীফের প্রতিকূল নয় অথচ যাহা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়, বাদশাহ কর্তৃক প্রদত্ত এই ধরনের ফরমান অনুযায়ী প্রতিটি নর-নারী আমল করিতে বাধ্য থাকিবে। ইহার বিরোধিতায়-দীন দুনিয়ার ধ্বংশ ও আখেরাতের শাস্তি নিহিত।”[/su
এইরূপ প্রচারের ফলে বাদশাহ্াকবর নিজেকে মুজতাহিদ মনে করিতে থাকেন। তাহার মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয় যে- তিনি নিজেই নতুন কোন ধর্ম প্রবর্তন করিবার যথেষ্ট যোগ্যতা রাখেন। এইভাবে দুনিয়াদার আলেমগণের ফেতনা তাঁহার মনে অবিশ্বাসের বীজ বপন করে। ফলে তিনি ইসলামকে তাঁহার বিবেক দ্বারা বিচার করিতে থাকেন এবং দেখেন যে, ইসলামের প্রতিটি আকিদাই বিবেকের রায়ে টিকে না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



