somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদি আরাবিয়ায় সুফীবাদের পূণর্জাগরণ-দ্বিতীয় অংশ (ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ হতে) ২য়

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২য় অংশ

By Faiza Saleh Ambah
Special to The Washington Post
Tuesday, May 2, 2006
মূল লেখাটি এখানে.......
................সুফীরা কোন ভিন্ন মতাবলম্বী গোত্র বা কোন বিশেষ মতানুসারী দল নয় , বরং তারা ইসলামের ইহসান ভিত্তিক জীবন যাপনের উপর সবিশেষ গুরুত্বপ্রদান কারী মুসলিমদের জামাত।হুজুর পাক (স.) হজরত জিব্রাইল (আ.)এর নিকট ইহসানকে ব্যাখা করেছেন এভাবে যে, ‘এমনভাবে ইবাদত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তা না হয় তবে এমনভাবে ইবাদত কর যেন আল্লাহ তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।‘ সুফীদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হচ্ছে, তারা হুজুর পাক (স.), আহলে বায়েত এবং সাহাবী (রা.)গণের অনুগ্রহ করার সক্ষমতার উপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখে ।
ইতিপূর্বে হিজাজে, হুজুর পাক (স.)এর পবিত্র জন্মস্থান মক্কা এবং তার রওজা শরীফ এর অবস্থানস্থল মদীনা মনওয়ারা সহ বর্তমান সৌদি সাম্রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল, লোহিত সাগরের তীরবর্তী বন্দরনগরী জেদ্দাহ-তে সুফীদের ই প্রাধান্য ছিল। মুসলিমগণ হুজুর পাক (স.)এর কন্যা হজরত ফাতেমা (রা.), উম্মত জননী হজরত খাদিজা (রা.) এবং অন্যান্য সাহাবী (রা.) গণ সমাধি স্থল জিয়ারত করতেন। মিলাদ মাহফিল এবং মিরাজ শরীফ স্মরণে অনুষ্ঠান ছিল সমগ্র নগরী আলোকসজ্জিত করে শোভাযাত্রা ও জাকজমকের সাথে সাধারণ জনগণের পালিত অনুষ্ঠান।
১৯২০ সালে যখন বর্তমানে সৌদি শাষকগোষ্ঠি আল-সউদ বংশ হিজাজের ক্ষমতা অধিগ্রহণ করে, ওয়াহাবীরা নির্দয়ভাবে মিলাদ নিষিদ্ধ ঘোষনা করে এবং ঐতিহাসিক হজরত ফাতেমা (রা.), উম্মত জননী হজরত খাদিজা (রা.) এবং অন্যান্য সাহাবী (রা.) গণ সমাধি স্থল গুড়িয়ে দেন এই অজুহাতে যে, এ সকল অনুষ্ঠান মুসলিমদেরকে মুর্তিপূজা ও শিরকের দিকে ধাবিত করবে।
আরবের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলো একক সৌদি শাষনের অধীনে আনার প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে ১৯৩২ সালে স্থাপিত সৌদি আরবের রূপকার সৌদ বংশের অবিচ্ছিন্ন সহযোগী রুপে ওয়াহাবীরা লাভ করে এ অঞ্চলে ধর্মীয় বিষয়াবলীর নিয়ন্ত্রণের একচ্ছত্র অধিকার ।
১৯৭৯ সালে মক্কার কেন্দ্রীয় মসজিদের নিয়ন্ত্রণ অধিগ্রহণের সাথে সাথে সসস্ত্র চরমপন্থী ওয়াহাবীরা তাদের দাবীকৃত সমগ্র দেশব্যপী অধিকতর বিশুদ্ধ ধর্মমত প্রতিষ্ঠায় অন্যান্যদের পাশাপাশি সুফীদের উপরো নিপিড়ন প্রবলতর করে। যদিো সরকার এই উত্থান কঠোর হস্তে দমন ও এর নেতৃবৃন্দের শিরোচ্ছেদ করে, ঘটনা প্রবাহের আকস্মিকতায় কর্তৃপক্ষ প্রবলভাবে আলোড়িত হয়। অবশিষ্ট ওয়াহাবিরা যেন তাদের প্রতি বিদ্রোহ ঘোষনা না করে সে ভয়ে তারা তাদের নিয়ন্ত্রণের লাগামে আরো ঢিল দেয়।
এর পর, দ্রুত চরমপন্থী ধর্মীয় নেতারা মরমী সুফী নেতা মুহাম্মদ আলায়ী মালকীকে কাফের ঘোষণা করে একটি ফতোয়া জারী করে।মুহাম্মদ আলায়ী মালকীকে তার শিক্ষকতা করা হতে বিরত করা হয় এবঙ তার পিতা ও পিতামহের শিক্ষা দান করার স্থল কেন্দ্রীয় মসজিদে শিক্ষা প্রদান নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয় এবং ধর্মীয় পুলিশ ও আভ্যন্তরীণ মন্ত্রনালয় কর্তৃক জেরা করা হয়।মসজিদে ইবাদতরত অবস্থায় একদিন চরমপন্থীদের একটি দল দ্বার আক্রমন করলে এর পর হতে কেবল সসস্ত্র প্রহরাধীনে তিনি মসজিদে ইবাদত করতে যেতে পারতেন।

ইতিমধ্যেই হাজার হাজার বই এবং ক্যাসেট প্রচারিত হতে থাকে সুফীদের-কে ‘কবর-পুজারী’ এবং ভয়ংকর ধর্মদ্রোহীরূপে আখ্যায়িত করে, ঘুরে দাড়ানোর আগেই যাদেরকে অবিলম্বে প্রতিহত করা অত্যাবশ্যকীয়।তাদের খানকাহ্ সমূহে হানা দেয়া হতে লাগলো এবং যাদের সাথে সুফী কিতাব পাওয়া যেত তাদেরকেই বন্দী করা হত এবং কারাগারে প্রেরণ করা হত।
১১ই সেপ্টেম্বরের পরবর্তী আবহ পরিবর্তনের পূর্ব অবধি এই জোয়ার ২০০৩ সাল অবধি অব্যাহত থাকে। বর্তমান রাজা আব্দুল্লাহ (তখন কার যুবরাজ) দেশের নির্বাসিত দল ও মতাবলম্বীদের মূল্যায়িত করার অভিপ্রায়ে একাধিক ধারাবাহিক বৈঠক অনুষ্ঠান করেন। সে সকল বৈঠকের অতিথিদের অন্যতমজন ছিলেন সুফী নেতা মালকী।পরের বছর যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন তার জানাজায় উপস্থিত হন আব্দুলাহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ও আভ্যন্তরীন মন্ত্রনালয়ের প্রতিপত্তীশালী মন্ত্রীবর্গ।তার হৃত সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ তারই মাঝে সম্পন্ন হয়।
“অবশেষে আমরা ‘মূর্খ’ এবং ‘ভ্রষ্টাচারী অবিশ্বাসীর’ দুর্নাম হতে মুক্তি পেয়েছি।“-বলেন ৫৯ বছর বয়ষ্ক ব্যবসায়ী ওয়াসিফ কাবলি।
কিন্তু সুফীদের অনেকেই অভিযোগ করছেন যে বাহ্যিকভাবে নমনীয় আচরণ প্রদর্শন সত্ত্বেও ওয়াহাবীরা এখনো পবিত্র স্থান সমূহে অবস্থিত বুজুর্গগণের কবর ধ্বংশ করা অব্যাহত রেখেছে, খানকাহ সমূহে এখনো পুলিশের আক্রমণ চলছে এবং কিতাবসমূহ এখনো নিষিদ্ধ করে রেখেছে।
ইসলাম সম্পর্কিত ওয়াহাবী এবং সুফী মতাদর্শ সম্পূণতই পরষ্পর বিপরীত।আরবের ধুসর, কঠিন মরুময় এলাকা হতে উত্থিত হওয়া ওয়াহাবীদের মতে, একজন ইমানদারের নিজেই সরাসরি আল্লাহর সন্নিধান পেতে পারেন।তাদের মতে হুজুর পাক (স.)এর শানে মিলাদ উদযাপন শিরকেরই নামান্তর এবং হুজুর পাক (স.) অথবা আহলে বায়াত অথবা সাহাবী (র.) এর নিকট দোয়া যাঞ্চা করা আল্লাহর সাথে শরিক স্থাপন করার সমতুল্য।
সুফীরা এর জবাব দেন এভাবে যে, হুজুর পাক (স.) তার জন্ম দিবস সোমবার রোজা রেখে নিজেই উদযাপন করতেন, হুজুর পাক (স.)নিজেই বলেছেন মুসলিমদের পক্ষ হতে আল্লাহর সাথে মধ্যস্থতা করার কথা এবং হুজুর পাক(স.) কে প্রায়শই দেখা যেত তার (স.) স্ত্রী এবং সাহাবা (রা.)গণের কবর জিয়ারত করতে।

১ম অংশ এখানে..
শেষ অংশ
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:০৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×