somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্তানদের হাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বই তুলে দিন [] আবু মুসা সরকার

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুচি সৈয়দ
‘বই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীনÑআমি তা মনে করি না বরং আমি বলবো ই-বুক, ইন্টারনেট, অনলাইন মিডিয়া প্রভৃতি প্রকাশনা শিল্পের সহায়ক পদ্ধতি। আধুনিক ডিজিটাল তথ্য ও প্রযুক্তি, প্রকাশনা শিল্পকে সামনে এগিয়ে দেবে। তবে বই, বই-ই। এর নিজস্ব স্বকীয়তা চিরকালই থাকবে। সব শিল্পেই বাধা-বিপত্তি আছে। এ শিল্পেরও থাকবে। চার দশক আগে আমি যে প্রকাশনা শিল্পকে দেখেছি, এখন তাকে সেই শিল্পের সঙ্গে মেলানো বড় কঠিন।’ বিজ্ঞান বিষয়ক বইপ্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘বিজ্ঞান একাডেমী’ স্বত্বাধিকারী দেশের প্রবীণ ও প্রথিতযশা প্রকাশক আবু মুসা সরকার একথাগুলো বলেন।
আবু মুসা সরকার বলেন, ‘বিজ্ঞান একাডেমী থেকে ক্ষুদে বিজ্ঞানীর সিরিজের ১৯টি বই দিয়ে প্রকাশনার অগ্রযাত্রা শুরু করি। এই সিরিজের প্রতিটি বই-এ বিজ্ঞানের নানাদিক ওঠে এসেছে। যা শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের প্রতিটি স্তরে স্তরে আবশ্যক। আমার কাছে বিজ্ঞান একাডেমীর সব বই প্রিয়, আলাদা করে বলা কঠিন। এছাড়া দেশের জ্ঞান ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা। আমি মনে করি বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাই পারে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে।’
প্রকাশনার সঙ্গে তার দীর্ঘ সংশ্লিষ্টতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকাশনা জগতে আমার আগমন আকস্মিক কোন ঘটনা নয়। সৃজনশীলতাকে মনে ধারন করে প্রায় ৪০ বছর এই শিল্পে আমার পথচলা। এই দীর্ঘ সময়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সেই সঙ্গে এসেছে প্রকাশনা শিল্পেও। কাঠের ব্লকের পর এসেছে লেটার প্রেস। তারপর কম্পিউটার ও অফসেট ইংজেট মেশিনের যুগ। প্রকাশনার পালে নতুন ধারা প্রবাহিত হওয়ায় বেড়েছে প্রকাশনার মান। এক কথায় বলতে গেলে এ শিল্পের সর্বখাতে নতুনমাত্রা যুক্ত হয়েছে। ইতিবাচক দিকের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। পুনঃমুদ্রন সহজ, ইচ্ছেমতো সাজানো যায়। প্রচ্ছদ ও বাঁধাই-এ এসেছে আধুনিকতা। আগের তুলনায় সময়ও লাগে অনেক কম। অপরদিকে নেতিবাচক দিক নেই বললেই চলে। সামনের দিনগুলো এ শিল্প আরো উজ্জ্বল হবে এমনটিই আমি প্রত্যশা করি।
বই বিপণন বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকাশনা ব্যবসার অন্যতম কাজ বিপণন এটা আমি মনে করি না। গুণগতমানের ভাল বই দরকার। প্রয়োজন ভালোমানের প্রকাশনাও। ভালো লেখক, ভালো লেখা, কিন্তু বইয়ের ছাপা, কাগজ, বাঁধাইসহ অন্যান্য স্তরের কাজগুলো ভালো না হলে সেক্ষেত্রে পাঠকরা কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নেবে।
প্রতিটি ব্যবসার ক্ষেত্রে বিপণন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিপণন পদ্ধতি সকলের বেলায় একই রকম হবেÑ এমনটি ঠিক নয়। তবে মনে রাখতে হবে মুড়ি মুড়কি ব্যবসার মতো প্রকাশনা ব্যবসা নয়। এ ব্যবসা থেকে একচেটিয়া মুনাফা তুলে নেয়াও সম্ভব নয়। আমার সাফল্য আমার চেষ্টা, সততা ও একাগ্রতা এবং জাতীয় শিক্ষা উন্নয়নে গুণগত ভালোমানের বই প্রকাশ।
তিনি জানান, তার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘বিজ্ঞান একাডেমী’ থেকে প্রায় তিন শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে ৮০ শতাংশই বিজ্ঞানের বই। প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক লেখক রয়েছেন। উল্লেখযোগ্য লেখকরা হলেন, ড. ছিদ্দিকুর রহমান, আলী ইমাম, প্রফেসর নারায়ন চন্দ্র বসাক, ডা. মো: শফিকুর রহমান, প্রফেসর ড. ইকবাল হাসান মাহমুদ, প্রমুখ।
উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে, ইনফরমেশন টেকনোলজি, আইটি সমগ্র, কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম, ওয়াইম্যাক্স, গধঃয ঈড়সঢ়বঃরঃরড়হ, জ্যামিতি সমগ্র, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সূর্য ও পরমাণুশক্তি, ছোটদের বিজ্ঞান পিডিয়া সিরিজ, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সিরিজ, বিজ্ঞান ও বিশ্ব, গ্লোবাল আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবতন, ছোটদের পরিবেশ বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য শিক্ষা সিরিজ, মোরাল সাইন্স সিরিজ, বেসিক কম্পিউটার সিরিজ। এছাড়াও রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান-এর ওপর উল্লেখসংখ্যক বই প্রকাশিত হয়েছে। এ বছর একুশে বইমেলায় ৩০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। পুনঃমুদ্রন বইয়ের সংখ্যা ১০টি।

তাঁর মতে, জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আনুপাতিক হারে বইয়ের পাঠকদের সংখ্যা সেভাবে বাড়েনি। জনসংখ্যা বাড়ার কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু বইয়ের পাঠকের সংখ্যা তেমন বাড়েনি। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের বাইরে বই পড়তে অনুপ্রেরণা দিতে চান না শিক্ষকগণ। আমরা অনেক কথা বলি বাস্তবে তা করি না। আমাদের অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
তিনি জানান, প্রফেসর আবদুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার-এর এই কর্মসূচি একটি প্রসংশনীয় উদ্যোগ। এটা মানুষকে বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করে। ‘বিজ্ঞান মনস্ক প্রজš§’ তৈরি করতে দীর্ঘদিন যাবৎ আমি কাজ করে যাচ্ছি। আমার আন্দোলন বিজ্ঞান শিক্ষাকে জনপ্রিয় করে তোলা। আমার যদি সাধ্য ও সামর্থ্য থাকতো তাহলে দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি করে ‘বিজ্ঞান পাঠাগার’ গড়ে দিতাম। সেইসঙ্গে মাধ্যমিক স্কুলসমূহে একটি ‘সাইন্স ল্যাব ও কম্পিউটার ল্যাব’ গড়ে দিতাম। এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই বিজ্ঞান একাডেমীর উদ্যোগে বিভিন্ন স্কুলে বিজ্ঞানের বই ও সাইন্স চার্ট সরবরাহ শুরু করেছি। এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এগিয়ে এলে স্বাগত জানানো হবে।
তিনি বলেন, আমাদের বইমেলা বাঙ্গালির অন্তরের সেতুবন্ধনের মেলা। এই মেলার জন্য প্রয়োজন একটি স্থায়ী অবকাঠামো। তবে মেলার প্রতি উদ্যোক্তাদের আরও যতœবান, আধুনিকমুখী ও বাস্তবমুখী হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, প্রিয় লেখক, পাঠক, সম্মানিত অভিভাবক এবং শ্রদ্বেয় শিক্ষকদের উদ্দেশে বলবো বিজ্ঞান চর্চা নিয়ে ভাবুন। বিশেষ করে বিজ্ঞানের শিক্ষকদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা বইমেলাগুলোতে নিজেরা আসুন, শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে আসুন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক বইগুলো নিজেরা দেখুন এবং শিক্ষার্থীদেরকে দেখতে উৎসাহিত করুন। বিজ্ঞান শিক্ষাকে আরো জনপ্রিয় করতে এগিয়ে আসুন। বেশি করে বই কিনুন, বই কিনে দেউলিয়া হয় না। অভিভাবকদের কাছে আমার বিনম্র আহ্বান আর ভূত-প্রেতের বই নয়, আপনার সন্তানদের হাতে বিজ্ঞানের বই তুলে দিন।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×