somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের সন্তানদের বাঁচান

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি ভীষণ প্রয়োজনীয় লেখা পোস্ট করলাম নোট-এ। দয়া করে সবাই পড়ুন। আমাদের সন্তানদের পাগল হওয়া থেকে বাঁচাবার কথা ভাবুন। প্লীজ সবাই শেয়ার করুন এই মূল্যবান লেখাটি


মো. সাইফুর রহমান

উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম ২ বছরের হলেও মূলত শিক্ষাকার্যক্রম চলে জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের নভেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত। এ হিসেবে শ্রেণী কার্যক্রম চলার কথা ৩০ী১৬.৫ = ৪৯৫ দিন। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে ছুটি থাকেÑ সাপ্তাহিক ছুটি ৬৮ দিন, দুই রমজানের ছুটি ২০+২০ = ৪০ দিন, দুই দুর্গা পূজার ছুটি ৭+৭ = ১৪ দিন, দুই ঈদুল আজহার ছুটি ৯+৯ = ১৮ দিন। উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা উপলক্ষে কেন্দ্র কলেজের ছুটি ৩০ এপ্রিল থেকে জুন ১৪ পর্যন্ত = ৬৬ দিন, শীতকালীন ছুটি ১৩ দিন, জাতীয় দিবস ও পূজাসহ অন্যান্য ছুটি ১৯ দিন, কোনো কোনো কলেজে এ সময়ের মধ্যে আরও ৩-৪টি পরীক্ষা নেয়া হয়। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য ১৫ দিন সময় লাগলেও পরীক্ষার আগে ও পরে ৭ দিন ধরে অধিকাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণী কার্যক্রমে অনুপস্থিত থাকে। এতে কার্যকর শ্রেণী কার্যক্রম সম্ভব হয় না। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ছুটি ২৫*৪ = ১০০ দিন ধরা যায়। সুতরাং মোট শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ থাকে ৬৮+৪০+১৪+১৮+৬৬+১৩+১৯+১০০ = ৩১৮ দিন এবং শ্রেণী কার্যক্রম চলে (৪৯৫-৩১৮) দিন = ১৭৭ দিন। আমি একজন রসায়নের শিক্ষক। তাই রসায়ন পাঠের সমস্যা নিয়ে এখানে আলোচনা করব। উচ্চমাধ্যমিকের রসায়ন ১ম ও ২য় পত্রে ২৮০ দিনের শ্রেণী কার্যক্রম দেয়া হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে যে সিলেবাস দেয়া হয়েছে, তা শেষ করতে কমপক্ষে ৩০০ দিনের শ্রেণী কার্যক্রম প্রয়োজন। এছাড়া সিলেবাসের বিষয়বস্তু পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো সৃজনশীল আকারে শিক্ষার্থী মূল্যায়নের জন্য আরও সময় প্রয়োজন। অর্থাৎ সিলেবাসের পুরো বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের জানানোর জন্য কমপক্ষে ৩২০ কর্মদিবস প্রয়োজন। কিন্তু সময়ের অভাবে ৩২০ দিনের শ্রেণী কার্যক্রম মাত্র ১৫০-১৬০ দিনে শেষ করতে হবে বিধায় সিলেবাসের অধিকাংশ বিষয়বস্তু ফাঁকি দিয়ে পড়ানো হয় অথবা না পড়িয়েই পড়ানো হয়েছে বলে গণ্য করা হয়।
সৃজনশীলতার কারণে লেখাপড়ার চাপ কমেছে বলে টেলিভিশনের টক শো বা বিভিন্ন সেমিনারে কেউ কেউ মতামত প্রকাশ করেন। এরা আসলে না বুঝেই এ কথা বলেন। প্রকৃতপক্ষে সৃজনশীলতার কারণে শিক্ষার্থীকে প্রতিটি বইয়ের প্রতিটি শব্দ পড়তে হয় এবং ভালো ফলাফলের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে বিষয়ভিত্তিক একজন দক্ষ শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। তাই বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক মানসিক চাপ সামলাতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থী এত চাপ সহ্য করতে পারে না। গ্রামের বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের ৯৫% দুর্বল মেধাসম্পন্ন। অধিকাংশ স্কুলে পদার্থ, রসায়ন পড়ানোর মতো মেধাবী শিক্ষক নেই। ফলে উচ্চমাধ্যমিকের সিলেবাসের পাশাপাশি তাদের নতুন করে এসএসসি সিলেবাসের মৌলিক বিষয়গুলো পড়িয়ে নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে এসব শিক্ষার্থীর ওপর পড়ার চাপ আরও বেড়ে যায় এবং শিক্ষকের কর্মঘণ্টা কমে যায়।
উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর বিজ্ঞানের প্রতিটি বিষয়ের ওপর বিভিন্ন লেখকের ১০-১৫টি বই রয়েছে। এসব বইয়ের সিলেবাস এক হলেও লেখার মধ্যে আলোচনাগত এত পার্থক্য রয়েছে যে, পার্থক্যের বিষয় নিয়ে প্রতিটি বিষয়ে প্রতিটি পত্রের জন্য বড় আকৃতির একটি রচনাপত্র তৈরি করা যাবে। যেমনÑ রসায়ন ২য় পত্রের পরিবেশ রসায়নের প্রথম পিরিয়ডের পাঠের বিষয় হল বায়ুমণ্ডলের উপাদান। বিভিন্ন লেখকের বইয়ে এ বিষয়ে যা লেখা হয়েছে, তা সমন্বয় করে শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপনের জন্য কমপক্ষে তিন পিরিয়ড প্রয়োজন। রসায়ন প্রথম পত্রে সিলেবাসে ক্রোম্যাটোগ্রাফির প্রাথমিক ধারণা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কয়েকজন লেখক দু’পৃষ্ঠায় আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখলেও কোনো কোনো লেখক ১০-১২ পৃষ্ঠাব্যাপী তা আলোচনা করেছেন। তাছাড়া রসায়ন ১ম ও ২য় পত্রে বিভিন্ন লেখক সিলেবাসবহির্ভূত অনেক লেখা উপস্থাপন করে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তিতে ফেলেছেন। সিলেবাসের প্রতিটি বিষয়বস্তুতে বিভিন্ন লেখকের বই পর্যালোচনা করে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হল ডাটাগত সমস্যা। একই বিষয়ে বিভিন্ন লেখকের বইয়ের ডাটা অভিন্ন নয়। তাছাড়া বিভিন্ন ভৌত পরিমাপকের এককসমূহ বিভিন্ন লেখক বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। এর ফলে একই রাশির তিন-চারটি করে মান মনে রাখা শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া একই বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ভিন্ন তথ্য পেয়ে হতাশা প্রকাশ করে এবং পাঠে অনাগ্রহতা দেখায়। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এ ক্ষেত্রে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। সিলেবাসে থাকুক বা না থাকুক, যে লেখকের মনে যা চেয়েছে তাই লিখেছে এবং এনসিটিবি তাই অনুমোদন দিয়েছে। সিলেবাসবহির্ভূত এবং রসায়নের বিভিন্ন ভৌত পরিমাপকের অভিন্ন মানের পরিবর্তে ভিন্নমান প্রকাশের অনুমোদন দিয়ে এনসিটিবি শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তিতে ফেলার দায় এড়াতে পারেন না।
একই মৌলের ইলেক্ট্রন আসক্তি, তড়িৎ ঋণাÍকতা, আয়নীকরণ শক্তি, পারমাণবিক ও আয়নিক ব্যাসার্ধ, গলনাংক ও স্ফূটনাংক ইত্যাদি সব লেখকের বইয়ে অবশ্যই অভিন্ন হতে হবে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে লেখক ভেদে মানের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। এনসিটিবি যাচাই-বাছাই ছাড়ই বিভ্রান্তির তথ্য প্রকাশের সুযোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপে ফেলেছে। রসায়ন দ্বিতীয় পত্রের পরিবেশ রসায়নে গড়বেগ, বর্গমূল গড়ে বর্গবেগ, মূল থমসন প্রভাব, সংকট তাপমাত্রা, সংকট চাপ ও সংকট আয়তন সিলেবাসে আছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। অনেক লেখক এ বিষয়গুলো তাদের বইয়ে প্রকাশ করেননি। অথচ এগুলো থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছে। জৈব যৌগ অধ্যায়ে বিভিন্ন সমগোত্রীয় শ্রেণীর যৌগের রাসায়নিকন ধর্ম সিলেবাসে আছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। খুব কম সংখ্যক লেখক রাসায়নিক ধর্ম নিয়ে সীমিত আকারে আলোচনা করেছেন। অথচ ২০১৫ সালের বিভিন্ন বোর্ডের পরীক্ষায় রাসায়নিক ধর্মসংক্রান্ত অনেক প্রশ্ন এসেছে। আগের সিলেবাসের ৯টি জৈব যৌগের অধ্যায় সংকুচিত করে বর্তমানে একটি অধ্যায় করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন লেখকের সব কয়টি বইয়ের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরনো বইয়ের ৯টি অধ্যায়ের অধিকাংশ তথ্যই পড়তে হচ্ছে। এর জন্য ৪০টি লেকচার নির্ধারণ করলেও মূলত এ অধ্যায়ের পাঠ শেষ করতে কমপক্ষে ৫০টি লেকচার প্রয়োজন। কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে মোট ৫০ লেকচারের সময় পাওয়া যায়। ফলে একটি অধ্যায় পড়াতে বন্ধসহ গড়ে ৪ মাস সময় লাগে। দীর্ঘদিনের একই অধ্যায়ের পাঠে শিক্ষার্থীরা অধৈর্য হয়ে পড়ে এবং পাঠে চরম অনাগ্রহতা প্রকাশ করে ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে। বর্তমানে বিজ্ঞানের এজন শিক্ষার্থীকে তথ্যপ্রযুক্তি, পদার্থ, রসায়ন, গণিত ও জীববিজ্ঞানের প্রতি পত্রের জন্য গড়ে ১০টি বই ধরলেও ১০০টি বইয়ের ধাক্কা সামলাতে হয়। বইয়ের ভারে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা আজ চরম মানসিক চাপে আছে। এ চাপ অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ অচিরেই মধ্যম মানের মানসিক রোগীর শিক্ষার্থীর দেশে পরিণত হবে। ফলে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞানসহ সব বিভাগের শিক্ষার ফলাফলে বিপর্যয় দেখা দেবে।
এ বিপর্যয় রোধে নিুোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারেÑ
উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব বিষয়ে বোর্ড বই নির্ধারণ করা। এতে শিক্ষার্থীরা পাঠের ব্যাপারে অধিক আগ্রহী হবে, সব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অভিন্ন তথ্য পাবে এবং শিক্ষকের পাঠদান সহজ হবে। অবিলম্বে বোর্ড বই নির্ধারণ করে বিজ্ঞানসহ সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের মানসিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করুন।
রসায়ন প্রভাষক, গোরাচাঁদ রোড, বরিশাল

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×