somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে...(২৫)

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্ব (২৪)

পত্রিকায় হঠাৎ একটা কলেজের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে এপ্লাই করা গেল, কলেজটা ছিল রুমি যে কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়েছিল, চাকরী বা শিক্ষকতা করার কোন প্ল্যান ছিলনা তবুও ভাবল ঘরে এভাবে বশে থাকাটা কিছুটা বোরিং, যদিও বিয়ের তোরজোড় চলছে, আর রুমির আম্মু যেভাবে খুঁতখুঁতিয়ে পাত্র নির্বাচন করতে চাইছে তাতে সহসা বিয়েটা হবে তারও লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা, এদিকে কলেজ এর প্রিন্সিপ্যাল রুমিকে খুব ভাল জানতো, পরিচয় যেহেতু আছে ইন্টারভিউটা দিয়ে দেখা যাক, সেটা ভেবেই কাগজপত্র সাবমিট করা গেল, প্রিন্সিপ্যালও তার প্রিয় ছাত্রীটির প্রতি একটু হয়তো পক্ষপাতীত্ব করলেন, রুমি জয়েন্ট করল।

শাকিল এর ব্যাপারটা রুমির মাথায় ছিলনা তা না, কিন্তু ঘরের যে পরিবেশ তাতে সে একেবারেই কোণঠাসা, পারিবারীক সিদ্ধান্ত নেবার দিক দিয়ে আধুনিক মধ্যবিত্ত বাংগালীকে স্ত্রীতান্ত্রীক কিংবা মাত্রিতান্ত্রীক পরিবারও বলা চলে, কর্তা যদিও সিদ্ধান্তটা প্রকাশ করেন কিন্তু সেটা কত্রীর ইচ্ছাটাই থাকে ষোল আনার বার আনা, রুমিদের পরিবারে সেটা তের আনাই বলা চলে

রুমি মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল তার আম্মুর সাথে একটা সংঘাত হবেই, সেটা দুদিন আগে কিংবা পরে, যতই বিয়ের তোড়জোড় চলুক পাত্র পছন্দ হয়নি এমন একটা ভেটো দেবার অধীকার তার আছে এমন একটা বিদ্রোহের বীজ তার মনের গভীরে লতাপাতা হযে বাইরের আলোতে প্রকাশ হতে চাইছিল, তবে কিছুটা দমন করেই রেখেছে দেয়ালে পিঠ ঠেকার পূর্ব পর্যন্ত।

এদিকে পলাশ ভাই এর কাছ থেকে যেদিন শুনেছে শাকিল এর জব চেন্জ হল, এবং সেটা বর্তমান পাত্র নামক হাঁটের বাজারে বিশেষ চাহিদা আছে তাই সে ভাবল এখন নিশ্চয় জননী আগের সেই অগ্নিরূপ ধারণ করবেনা, আর এদিকে সেও কলেজে জয়েন্ট করেছে, সব মিলিয়ে অনন্য এক সংসার এর স্বপ্নের দাঁড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে এমনটাই ভাবতে লাগল রুমি।

রুমি এবার ভাবল এটাই পারফেক্ট সময়, শাকিল আর রুমি এখন দুইজনই প্রতিষ্ঠিত আর যেহেতু রুমি নিজেও এখন উপার্জন করছে আত্মবিশ্বাসটাও পোক্ত হয়েছে ঢের,তাই এবার সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাকিল এর দিক থেকে বিয়ের প্রস্থাবটা আসলে, সে যেহেতু রাজিই আছে তাই খুব একটা ঝামেলা হবেনা, এসব চিন্তা করেই আজকে শাকিল এর সাথে দেখা করা।

এদিকে আমিও মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম, অনেক হয়েছে লুকোচুরি আর প্রতিক্ষার প্রহর গুণা, এবার একটা ফাইনাল ডিসিশানে আসতে হবে, হয় বিয়ের আয়োজন, না হয় চির বিদায়, এভাবে নিজেকে কষ্ট দিয়ে, নিজের সাথে যুদ্ধ করে আমিও রীতিমত টায়ার্ড, মাঝের মধ্যে মনে হতো, ওর বিয়ে হয়না কেন? কারো ঘরে চলে গেলেইতো আমার আর অপেক্ষা করতে হয়না, আমার খুব কষ্ট হবে তা ঠিক, কিন্তু দিনের পর দিন এভাবে অপেক্ষায় থাকটা যে কত বেদনা এব্ং একটা গুমোট অস্ব্যস্থিকর ব্যাপার সেটা কি আর কাউকে বুঝানো যাবে!

দেড় বছরের কথা কি আর একদিনে শেষ করা যাবে! তাই অতীতকে বিদায় জানাতে হল, সময় হয়তো আর খুব বেশী পাওয়া যাবেনা, পাখিকে আর উড়াল দিতে দেয়া যাবেনা, খাঁচার ব্যাবস্থা করা চাই, আমি আর রুমি সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম, এবার অভিভাবকদের সরাসরি জানানো হবে, তারা যদি এগ্রি থাকেন সবকিছু স্বাভাবিক ভাবেই হবে, আর অন্যথা হলে প্রয়োজনে অবাধ্য হতে হবে।

রুমিকে বললাম তুমি তোমার ভাইয়াকে আমার ব্যাপারে জানাও, আম্মুকে প্রথমে বলার প্রয়োজন নেই, ভাইয়া এগ্রি হলে মা বাবা দু্জনকেই রাজি করানো যাবে, আর যদি ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ করা না যায় তাহলে ওর বাবাকেই সরাসরি বলা হবে, যেহেতু রুমির বড় ভাইয়া সবসময় দেশে থাকেননা, একটা ফরেইন শিপ এ সেকেন্ড ইজ্ঞিনিয়ার হিসেবে আছেন, যোগাযোগ করার কোন মাধ্যম নেই যদি ভাইয়া নিজ থেকে ফোন না করে, শীপ যখন কোন বন্দরে নোঙ্গর করে তবে ভাইয়া ফোন করে বাসায়, খবারাখবর আদান প্রদান হয়।

এদিকে আমি টিক করে রেখেছি ছোট বোন তন্দ্রার হাজব্যান্ডকে বলে বাবাকে রাজি করানো হবে প্রস্তাব নিয়ে যাবার জন্য, আমরা পরের সপ্তাহে আবার দেখা করব তবে রুমির কলেজ ফাঁকি দেবার প্রয়োজন নেই, আমি ওর কলেজে যাব শনিবারে, সেদিন ওর দুইটা ক্লাশ নিতে হয়, ওগুলো সেরে সে আসবে কলেজ গেইট এর পাশের বাস ষ্ট্যান্ডটাতে, রুমি এখনো মোবাইল ইউস করেনা, ওটা ইউস করলে যোগাযোগটা সহজ হতো, আমাকে এখন রুমির উপরই ডিপেন্ড করতে হবে সে যদি যোগাযোগ করার সুযেগা বের করতে পারে, অন্যথা একটা সপ্তাহ আমাকে অন্ধকারেই থাকতে হবে।

একটা সপ্তাহ যেন স্বপ্নের উপর দিয়ে গেল, কিভাবে যে পার করলাম কিছুই বুঝে উঠতে পারলামনা, সময়টা যেন কোন ফাঁকেই চলে গেল, এতদিন বুকে যে একটা চাপ অনুভব করছিলাম সেই চাপটা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া গেল, কেমন জানি হালকা হালকা বোধ করতে লাগলাম, একটা তৃপ্তি একটা আনন্দ অনুভব করতে লাগলাম, আমার অপেক্ষা বা প্রতিক্ষার দিন বুঝি শেষ হল এবার।

নতুন একটা সিনড্রম এর খপ্পড়ে পড়লাম এই এক সপ্তাহে, এটা বোধয় আনন্দের, সেটা হল কোন কারণ ছাড়াই হাসি পাওয়া, আসলে কারন নেই তা না, কারণতো অবশ্যই আছে, মনে মনে আকাশপাতাল এর একটা স্বপ্ন জগৎ তৈরী করে সেইসব অনুসংগের সাথে নিজে নিজেই কথা বলা আর মুচকি হাসা, বিষয়টা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়ে গেছে যে, অন্যদের কাছে দৃষ্টিকটু হতে পারে কিংবা সন্দেহ করতে পারে আমি নতুন প্রেমে পড়েছি, কেউ যখন প্রশ্ন করে কি ব্যাপার চুপি চুপি হাসা হ্চ্ছে কেন তখন সম্বিত ফিরে আসে আমিতো পৃথিবী নামক গ্রহতেই আছি অন্য কোথাও না, তখন আবার নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করি, এভাবে হাসলে অন্যরা দেখছে এবং নিজের ব্যাক্তিত্বটা পাগল উপধীর সাথে মিশে সবার কাছে আবার উপহাসের পাত্র হবার সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না।

বাবাকে বিষয়টা বলা হল, একটু দ্বিধায় ছিলাম বাবা কি রাজি হবেন কিনা, কিন্তু না. বাবা ব্যাপারটা পজিটিভলিই নিয়েছে, শুধু একটু আপত্তি করেছিল, আমার প্রভিয়েশান পিরিয়ডটা শেষ হয়নি, আর একটু গুছিয়ে আয়োজনটা করা গেলে ভাল হতো, তবে তাদের দুজন যখন একে অপরকে পছন্দই করে তাহলে বাবার আর আপত্তি নেই। আমি গ্রীন সিগন্যাল দিলে বাবা প্রস্থাব নিয়ে যাবেন।

দুপুর ঠিক বারটায় পৌঁছার কথা ছিল কলেজ গেইটের পাশে বাস ষ্ট্যান্ডটাতে, কলেজে যাবার প্রয়োজন নেই কেননা কলিগদের কাছে আমার কি পরিচয় দেবে সেটা নিয়ে একটু দ্বিধা ছিল রুমির আর কেনইবা কলেজে গেলাম ব্যাপারটা সবার কাছে প্রশ্নবোধক হয়ে দেখা দিতে পারে, তাই আমাকে বাস ষ্ট্যান্ডেই অপেক্ষা করতে হবে, রুমি ক্লাশ শেষ করে ওখানেই আসবে।

আমার তর সইছিলনা এগারটায় গিয়ে হাজির হলাম, কিছুক্ষণ পায়চারী করলাম, এবার দেখছি সময় আর এগুচ্ছেনা, ঘড়ির কাটা যেন ঘুরছে কিন্তু সময় এগুচ্ছেনা, একটু সামনে হেঁটে গিয়ে বাজারের একটা চা দোকানে বসলাম, টাইম পাস করার জন্য এটা করতে হল, চা আর সিঙ্গাড়ার অর্ডার করলাম, দোকানের টেলিভিশনে বাংলা ছবি চলছে, নায়ক মান্না, সবাই হা করে মান্নার ডায়ালগ গুলো গিলছে আর আমি ছবি না দেখে দর্শকগুলোর কান্ডকীর্তি দেখছিলাম।

চলবে..........

পরের পর্ব (২৬)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৫২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×