আগের পর্ব (২৫)
আাবার আসলাম বাস ষ্ট্যান্ড এ, এবার সঠিক সময়, আর অপেক্ষা করতে হবেনা, আমি গিয়ে দাঁড়ালাম এক সাইডে, চাইলে সিট আছে বসা যায় কিন্তু বসলামনা, একপাশে কিছু ষ্টুডেন্ট বসে গল্প করছে, হয়তো বাস আসলে চলে যাবে, দু'জন ছাত্রীও আছে, আমার সাথে তাদের দু'একজনের চোখাচোখি হল বেশ কবার, কি জানি হয়তো ভাবছে তাদের কোন সহপাঠির মজনু সাহেব এসেছেন দেখা করতে, তাই অপেক্ষা করছে।
একটু অস্বস্থি লাগছিল এভাবে দাঁড়িযে থাকতে, ষ্টুডেন্টগুলো নিশ্চিত আমাকে সন্দেহ করছে, হয়তো এসে জিজ্ঞেসাও করতে পারে আমি কি জন্য এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছি, কেননা এখানকার পরিবেশটা এখনো শহর হয়ে উঠেনি, গ্রামীন চিত্রটা খুব সহজেই বুঝা যায়, তাই এভাবে কেউ সন্দেহমূলক দাঁড়িয়ে থাকলে অন্যের কিছু যায় আসেনা বলা যাবেনা।
দুপুর একটা, এক ঘন্টা অতিক্রম হয়ে গেল, আমি তখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে, বুকের মধ্যে হঠাৎ ধূপ করে উঠলো, আবার কি হারালাম রুমিকে! এতক্ষণতো লাগার কথা না, ত্রিশ মিনিট এদিক ওদিক হতে পারে কিন্তু এক ঘন্টার ব্যাবধান কেন হবে? মন আবার অস্থির হতে থাকল, দেরী হচ্ছে কেন! কোন কারনতো মাথায় আসছেনা, রুমির বাসায় প্রবলেম হয়নিতো! আমাদরে সম্পর্কের প্রসংগটা ঘরে কি আলাপ হয়েছে! কি জানি এ ব্যাপারে আবার কোন হাংগামা হল কিনা। তবে তার জন্য কি রুমির কলেজ আসা বন্ধ করে দেবে বলেতো মনে হয়না, সেতো এখন আর ছাত্রী নয় যে বখাটের উৎপাতের জন্য কলেজ আসা বন্ধ করবে।
হাজার দুশ্চিন্তা মাথায় ভর করছিল তখন বেলা দুইটা, আমি তখনো দাঁড়িয়ে আছি, কলেজ এর দিকে তাকালাম, অনেকটা ফাঁকা, কলেজ মাঠে এবং বারান্দায় ষ্টুডেন্টদের কোলাহল থেমে গেছে, বাস ষ্ট্যান্ড এর ষ্টুডেন্টরাও আর নেই, কোলাহলপূর্ণ পরিবেশটা যেন কেমন নির্জীব নিস্তব্ধ হতে থাকল, দুপুরের ভাপসা গরমে আমিও কিছুটা হাপিয়ে উঠেছি, রুমাল দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে রুমলটা ভিজে গেছে, রুমি কি তাহলে আজ আসেনি!
এভাবে আর দাঁড়িয়ে থাকার মানে হয়না, এবার চললাম কলেজ এর দিকে, কনফার্ম হতে হবে রুমি কি আজ কলেজ আসছে কিনা, কলেজ মাঠ পেরিয়ে টিচার্স রুম এর দিকে আসতেই মুখোমুখি হলাম ক্লাশ শেষে ঘরমুখি কিছু স্টুডেন্ট এর। এক্সকিউজমি বলে চোখ রাখলাম একটু হ্যাংলা লম্বাটে ছাত্রটির দিকে, প্রশ্ন করলাম রুমি মেডাম আছে কিনা অফিসে, সে বলল, "না আজ রুমি মেডাম ক্লাশ করেননি, সম্ভবত কলেজে আসেননি আজ।" তারপর আমার পরিচয়টাও জানতে চাইল, সহপাঠী বলতেই সে প্রশ্ন করল " আপনি কি ইকবাল নামের কাউকে চেনেন? আপানাদের সহপাঠী ছিল" হুম ইকবাল চিনেছি, রুমির সাথে একসাথে প্রায়ই যাওয়া আসা করত, ওদের বাড়ী রুমিদের বাড়ীর পাশেই। কথা বলে জানা গেল ছেলেটির নাম নাম মারুফ, ইকবাল এর সাথে চাচা ভাতিজা সম্পর্ক। ভালই হল, হয়তো কোন ইনফর্মাশান পাওয়া যাবে মারুফ এর কাছ থেকে, মারুফের মোবাইল নাম্বারটাও নেয়া গেল, তাকে বিদায় জানিয়ে আমি গেলাম টিচার্স রুম এর দিকে আরো একটু কনফার্ম হবার জন্য।
টিচার্স রুম, প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর রুম, লাইব্রেরী সবখানে উঁকি-ঝুঁকি মারলাম, না রুমি সত্যিই আসেনি, পরের রুমটা সম্ভবত মেয়েদের কমন বা ওয়টিং রুম, কিছু মেয়ে তখনও গল্প গুজব করছিল, আমি বারান্দায় হাঁটার ছলে বুঝার চেষ্টা করছিলাম কোথাও রুমির উপস্থিতি আছে কিনা, খুব যে নিঃসংকোচে ছিলাম তা'না, লজ্জ্বা আর ভয় ও লাগছিল, কেউ যদি সন্দেহ করে! লাইব্রেরী কক্ষে এক মেডামকে দেখলাম বশে যেন নোট করছে, সাহস করে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেসা করেই ফেললাম, হতাশ হতে হল, রুমি আজ আসেনি।
রুমি আবার লাপাত্তা, ইকবাল এর সাথে ফোন যোগাযোগ হল দু'একবার, ওকে বলা আছে রুমি আসলে আমাকে যেন একটা মিসড কল দেয়, আমি কল ব্যাক করব, আর রুমিকেও যেন বলে রাখে আমি এসে খোঁজ করেছিলাম। ইকবাল এর ফোন পাওয়া যায়নি, সে হয়তো তেমন গুরুত্ব দেয়নি আর আমিও সংকোচ বোধ করে ইকবালকে আর ফোন করিনি, দু'সপ্তাহ অপেক্ষা করে আবার গেলাম কলেজে, শনিবার ছিল, ইকবালকে খোঁজে বের করলাম, কথা বলে জানা গেল রুমি সেই থেকে অনুপস্থিত, কলেজে আর আসেনি।
বাধ্য হলাম রিমিকে ফোন দিতে, রিং পড়ে কিন্তু রিসিভ হয়না, তিন চারদিন ধরে ট্রাই করছি, সে রিসিভ করছেনা আবার ফোন কেটেও দিচ্ছেনা, আমার অস্থিরতা বাড়তেই থাকল, নিশ্চই কিছু একটা হয়েছে, সেদিন ছিল বৃহষ্পতিবার, আমি পুরোদিন রিমিকে কল করেছি, সেই সকাল থেকেই অফিস কাজের ফাঁকে অনবরত তাকে রিং করেই চলেছি, সন্ধ্যার দিকে আমি যখন অফিস থেকে বের হচ্ছিলাম আবার ট্রাই করলাম, তিন চারবার ট্রাই করার পর রিসিভ হল।
চলবে...............
পরের পর্ব (২৭)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




