somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো বাসা

২৩ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসাটা ছেড়ে দিতে হচ্ছে। নতুন বাসা দেখে আসলাম। তিন তলায়, উপরে ছাদ। ভালই হলো মাঝেমধ্যে ছাদে উঠা যাবে। বিশেষ করে লোডশেডিং রাত্রে একসাথে বসে গল্প করা যাবে দু'জনে। দিবাকে বলতেই ওর মন খারাপ হয়ে গেল। দিবার যাবার ইচ্ছে নেই। এখানে মন বসে গেছে। এই ঘর ছাড়তে তার মন চাইছেনা। আমাদের সংসারের প্রথম ঘর এটিই, এখানে জড়িয়ে আছে আমাদের অনেক স্মৃতি, আবেগ, ভালবাসা আর কৃষ্ণগহবরিক অজানা কিছুু জানা উন্মেচন।

দিবার আসলে মন খারাপ অন্য কারনে। পাশের বাসার ভাবিটার জন্য। নতুন ভাড়াটিয়া আসল পক্ষকাল হয়নি অথচ দিবার সাথে খুব ভাল সম্পর্ক দাঁড়িয়ে গেছে এই অল্প ক'দিনেই। বাসাটা খালিই পড়েছিল মাস দুয়েক। এই বিল্ডিংয়ে ভাড়াটিয়া বেশিদিন টেকেনা, হুট করে আসে আবার হুট করেই চলে যায়। কারণ বাড়িওয়ালার স্বভাবটা ভালনা। নারী দেখলেই সে লাউ গাছের আগার মতো মাথা চাড়া দিয়ে দোলে উঠে। কারণে অকারণে কলিংবেল টিপে কথা বলবে, পানি নিয়ে ঝামেলা করবে ইত্যাদি। এখানে পানি ধরে রাখতে হয়, সকাল ৮টা থেকে ৯টা আবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা এই দুই টাইম পানি দেবে বাড়িওয়ালা। এই সময়টাতে পানি ধরে না রাখলে আর পাওয়া যাবেনা, হাতে পায়ে ধরে তারপর মটর ছাড়াতে হয়। সেও চায় ওটা। ঘরের মহিলারা তার কাছে আসুক, দু'টো কথা বলুক, গালগল্প করুক তারপর সে পানি দেবে। দিবা আমাকে বলেছে সে কথা, "বাড়িওয়ালার চাহনি ভালনা, কেমন যেন,"! আমি দুষ্টামি করে বলেছিলাম আলুর দোষ। এবার আমাকে বোঝাতে হবে আলুর দোষটা কী? আমি আর বোঝাতে পারিনা। এখন চা দাও আগে চা খাব পরে বোঝাবো বলে এড়িয়ে গেলাম।

নতুন সঙ্গি পেয়ে দিবা আমাকে ভুলতে বসেছিল যেন, আগে আমাকে ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করে জিজ্ঞাসা করতো এখন কী করছি? আমার সেক্রেটারী মেয়েটার সাথে বসে গল্প করছিনাতো? অথচ আমার কোন সেক্রেটারীই নেই, আমি নিজেই সেক্রেটারী, হা হা হা। দুপুরে কী খেলাম? তাড়াতিড়ে বাড়ি আসতে হবে ওর ভাল লাগছেনা একা একা, ঘরে বাজার নেই তবুও বাজার করতে হবেনা, আমাকে তার এখনি চাই এমন সব উত্তেজনা ছিল দিবার, আমাকে নিয়ে। পাশের বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া আসার পর থেকে এসব যেন উধাও হয়ে গেছে। এখন সারাক্ষণ দুই ঘরে আসা যাওয়া।

রাতে খেয়ে সোফায় বসলাম টিভি দেখব বলে, দিবার টুকটাক সিরিয়াল কিংবা জি বাংলার অনুষ্ঠানগুলো দেখার অভ্যাস, তবে আসক্ত নয়। আমি রিমোট চাইলে দিয়ে দেয়। আমি ঘুরেফিরে খবরগুলো দেখি আর টকশো। দিবা কাপড় চেন্জ করে পাশে এসে বসল। নাইটিটা খুব মানায় ওকে। কাপড়টাও তুলতুলে সিল্কি। ধরলেই কেমন যেন শুড়শুড়ি লাগে, হা হা হা হা। দিবার মামারা সওদি আরব থাকে। গতবার দেশে বেড়াতে এসেছিল তখন দিবার জন্য এই নাইটিটা নিয়ে এসেছিল। আমি তাকিয়ে আছি দিবার দিকে। দিবা আড়চোখে সেটা লক্ষ্য করেছে। "কী ব্যাপার? বাড়ি ওয়ালার মতো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেন? খবরতো টিভির দিকে, এদিকে না,"!

চোখ ফেরালাম টিভির দিকে। দিবা আরেকটু কাছে এসে বসল, গা ঘেসে। পারফিউম এর ঘ্রাণ পেলাম। ব্লু লেডি, দিবার প্রিয় পারফিউমটা মাঝেমাঝে রাতে ব্যবহার করে। আচমকা বলে উঠল, "এই বলেননা,"?

কী বলব?
আপনার সাথে কারো প্রেম ছিল কিনা
হঠাৎ এই প্রশ্ন?
বলেননা, আমার জানতে ইচ্ছে করছে
আরে না, এসব কী বল, আমার সাথে প্রেম করতে যাবে কোন মেয়ে কোন দুঃখে?
আপনি মিথ্যে বলছেন, বলেননা, আমি শুনতে চাই
বলছিতো, আমার জীবনে প্রেম জাতীয় কিছু ছিলনা, খুুবই সাদামাটা জীবন আমার, তুমি আসার পর রঙ্গীন হল।
আপনার জীবনে প্রেমের কোন ঘটনা নেই এমনটা আমার বিশ্বাস হয়না, আপনি না করুন, অন্য কেই আপনার প্রেমে পড়েছে এমন কোন ঘটনা নেই?
ও আল্লাহ! কোন বিপদে পড়লাম, এতো রাতে আমি প্রেমের গল্প কোথায় পাবো তোমাকে শোনানোর জন্য।
এই শুনেন না, আজ'না রাত্রি ভাবি অনেক কেঁদেছে
রাত্রি নামটা শুনে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো, কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, " রাত্রি ভাবি! সেটা আবার কে,"?
ওইযে পাশের বাসার নতুন ভাড়াটিয়া
হুমম, তো কাঁদলো কেন? কোন মৃত্যু সংবাদ?
না, তেমন না। ওর হাজবেন্ড আজ চলে গেল, প্রবাসী।
ও তায়। বাসা ভাড়া না নিতেই চলে গেল?
হ্যা, ওদের একমাত্র মেয়ে ঐশী। ক্লাস সিক্সে পড়ে। ওর লেখাপড়ার জন্যই নিজেদের বাড়ি ছেড়ে এদিকে ভাড়া বাসায় চলে আসা। ভাল স্কুলে চান্স পেয়েছে।
হুমমমমমম.............
ওদের'না আর বাচ্চা হচ্ছেনা, অনেক চেষ্টা করেছে, হয়না। ডাক্তার বলেছে হাজব্যান্ড বিদেশ থাকে তায় প্রবলেম, একসাথে থাকা গেলে ঠিক হয়ে যাবে, তায় ওর হাজব্যান্ড এবার গিয়ে চেষ্টা করবে ওদেরকেও নিয়ে যাবার।
তুমিতো অনেক কিছুই জানো দেখছি
হুম, ভাবিটা অনেক ভাল, আমরা অনেক কথা বলি, সারাদিন গল্প করি। ভাবির বিয়ের আগে প্রেম ছিল সেই কথাও জানি
ধ্যাত!! এসব পচা কথা বলতে নেই
না, শুনো না, আমি সংক্ষেপে বলি প্রেম কাহিনীটা
এতো রাতে আবার প্রেম কাহিনী? কাল অপিষ যেতে হবেনা?
কাল শুক্রবার না? আপনার অপিষ আছে বুঝি?
ওওও ভুলে গেছি, কালতো শুক্রবার। আচ্ছা বলো শুনি।

ভাবি তখন হাই স্কুলে। বাবা নেই, ছোট দুই ভাই। ওনার বাবার কী একটা অসুখ হয়ে মারা গেল হঠাৎ। চাচা আর জেঠারা আছে। ভাবিদের দেখাশুনার ভার ওনার জেঠাই নিয়েছিল। যদিও পরে ভাবিদের জায়গা জামি কিছুটা নয়ছয় হয়েছিল, পুরোটাই জেঠার দখলে চলে গেছে।

ওনাদের গ্রামেরই একটা ছেলে, দূর সম্পর্কে আত্মিয় হয়, ভাবিকে খুব পছন্দ করতো। বিভিন্ন উছিলায় ভাবিদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল। ভাবিরও পছন্দ ছিল কিন্তু কেউ কাউকে প্রকাশ করে বলেনি কখনো। এসএসসি পরিক্ষার পর ভাবি কলেজে ভর্তি হলো আবার একটা এনজিও তেও জব নিল। জবটা সেই ছেলেটাই ঠিক করে দিয়েছিল। ভাবির দুইটা ছোট ভাইকে লেখাপড়া করাতে হবে তায় ঘর চালাতে কিছু বাড়তি ইনকামতো চাই।

ভাবি যখন ডিগ্রী পড়ছে তখন ওর চাচাতো, জেঠাতো বোনদের বিয়ে হতে লাগল একের পর এক। কিন্তু ভাবির কোন গতি হচ্ছেনা ভেবে ভাবির মা কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। ভাবির জেঠা নিজের মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিলেন কিন্তু ভাবির কথা একটুও ভাবলনা। ভাবির মা একদিন ভাবির জেঠাকে বললেন, ওর জন্য ছেলে দেখতে, ওদের যে জায়গা জমি আছে সেটা বিক্রি করে ব্যায় বহন করা হোক।

বিয়ে ঠিকও হয়ে গেল। ওদের জমিজামা সব ওদের জেঠার নামে হয়ে গেল আর বিয়ের খরচ ওনি বহন করবেন। খবর পেয়ে সেই ছেলেটা ভাবির সাথে গোপনে দেখা করতে চাইল। ভাবি প্রথমে দেখা করতে চায়নি, তবে পিড়াপিড়িতে দেখা হল। ছেলেটা বলল বিয়ে ভেঙ্গে দাও সে বিয়ে করবে। ছেলেটা সবে মাষ্টার্স শেষ করে চাকরী ট্রাই করছিল। ভাবি তায় ভরসা করতে পারেনি। তবুও জিজ্ঞেস করেছিল বিয়ে করলে কিভাবে চলবে সংসার। সে আশ্বস্ত করল, জব একটা হবেই দু'দিন আগে পরে, তাছাড়া ওনারাতো আর পথের ভিখারী নন, জায়গা জমি যা আছে চাষবাস হয়, কিছুদিন কষ্ট হবে কিন্তু পরেতো একটা কিছু হবেই। ভাবি বলেছিল বাসায় কথা বলে জানাবে।

প্রথমে 'মা'কে রাজি করালেন কিন্তু জেঠা শুনেই তেলে বেগুনো জ্বলে উঠলেন। মেয়ে প্রেম করে উচ্ছেন্নে গেছে জানলেতো বিয়ের ব্যাবস্থায় করতেননা, ওদিকে পাকাপাকি সব, মান সম্মানেরও একটা ব্যাপার আছে। মা মেয়ে মিলে এভাবে ওনাকে এতো বড়ো অপমান করবে কল্পনাও করেনি বলে গালমন্দ করতে লাগল ভাবির জেঠা। ভাবি অনেক কেঁদে কেটে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন। তারপর সেই ছেলেটি গ্রাম ছেড়ে উধাও। আর কথনো দেখা হয়নি তাদের।

গল্পটা বলতে বলতে চোখে জল নিয়ে আমাজে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল দিবা। আমি কোলে করে তোলে খাটে শুইয়ে দিলাম। আমার আর ঘুম হলনা। ছটফট করলাম সারা রাত। পরের দিন অনেক দেরীতে ঘুম থেকে উঠলাম। শুক্রবার ছুটির দিন। মনটাও কেমন যেন অস্থির হয়ে পড়ল। ভাবলাম দিবাকে নিয়ে ঘুরে আসি কোথাও হতে। বিকেলে বললাম রেডি হও, ঘুরতে যাবো। দিবা বলল কোথায় যাবেন? বললাম জানিনা, যেখানে মন চায়।

আমরা সিড়ি দিয়ে নামতেই নিচ থেকেই উঠে আসছে এক মহিলা। সাথে একটা ছোট মেয়ে। দিবা বলল ভাবি আমরা একটু বের হচ্ছি, ঘরটা একটু খেয়াল রাখবেন। মহিলাটা আচ্ছা বলতেই চোখে চোখ পড়ল আমার। মাথটা ঘুরে গেল। অনেক্ষণ মাথায় কিছুু কাজ করেনি। ব্রেইনটা যেন কাজ করছেনা। অনেক্ষণ পরে হুস এলো যেন। তখন আমরা রিকশায়। রিকশা কে ঠিক করল, কোথায় যাচ্ছি ওসব আর মাথায় নেই।

পরের সপ্তাহেই নতুন বাসা দেখে আসলাম। বাড়িওয়ালা ভাল নয় অজুহাতে বাসাটা চেন্জ করতেই হলো। এভাবে থাকা যায়না, উচিতও নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:০৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×