পূর্বকথাঃ ১৯৮৭ সনের ১০ই নভেম্বর, যেকোনো সাধারন দিনের মতই ছিলো এক দিন, প্রতিদিনের মতো করে সূর্য উঠেছিলো নিয়ম করে। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য ছিলো বিশেষ এক দিন, ১৯৮৭ সালের এই দিনে বাংলাদেশের বৃহত্তম দুই দল আওয়ামীলীগ এবং বি এন পি সহ মোট ১৫ দলীয় ঐক্যজোট ঢাকা অবরোধের ডাক দিয়েছিলো। কারন, জেনারেল জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর লে. জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আরোহন করেন এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা নেয়ার উদ্দ্যেশ্যে ১৯৮৬ সালে এক পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করে। বি এন পি সে নির্বাচন বর্জন করেছিলো, আর আওয়ামীলীগ ও জামা্যাত সেই নির্বাচনে অংশ নিলেও পরবর্তীতে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে সম্মিলিত ভাবে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে যোগ দেয়।
আলোচ্য বিষয়ঃ ঢাকা জেলার বনগ্রাম আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক নুর হোসেন অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে এক গনমিছিলে যোগ দেন। তিনি সেদিন পরনের শার্ট খুলে বুকে ও পিঠে সাদা অক্ষরে লিখেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ । সেই মিছিলে সামরিক স্বৈরশাসক এর অনুগত পুলিশ বাহিনী গুলি ছোড়ে আর সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন নুর হোসেন সহ আরও দুই যুবলীগ কর্মী, আহত হয়েছিলেন আরো শতাধিক। তাঁদের মৃত্যুর পথ বেয়ে আন্দোলন আরো বেগবান হয়, তারপর ১৯৮৮ সালে আরেকটি নির্বাচন দেয় সামরিক সরকার কিন্তু বাংলাদেশের সকল দল সেই নির্বাচন কে বয়কট করে এবং ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর গনতন্ত্রের চুড়ান্ত বিজয় আসে।
শহীদ নুর হোসেনের আত্মত্যাগ কে স্মরনীয় করে রাখতে ১০ নভেম্বর কে "ঐতিহাসিক ১০ ই নভেম্বর" দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তীতে আওয়ামিলিগের প্রস্তাবে দিনটিকে "শহীদ নুর হোসেন দিবস" হিসেবে পালন করা হয়। আর তাঁর মৃত্যুর স্থান কে "নুর হোসেন চত্বর" হিসেবে নাম করন করা হয়।
আজকের প্রেক্ষাপটঃ ১৯৮৬ সালের নির্বাচনের কায়দায় ২০১৪ সালেও সর্বজন গৃহীত তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতিতে নির্বাচন বাতিল করে বিতর্কিত নির্বাচনের আয়োজন করে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের আগ্রদুত “বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ” এর গায়ে কলঙ্কের কালো তিলক পড়ে। সেই নির্বাচন এখনো বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে গ্রহনযোগ্যতা পায় নি।
সবচেয়ে বেদনার ব্যাপার হলো, ১৯৮৭ সনের সেই স্বৈরশাসকের হাত ধরেই ক্ষমতায় আরোহন করেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা। আর হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ কে পুরস্কৃত করেন নিজের বিশেষ দূত বানিয়ে।
বড় কষ্টের দিন আজ, শহীদের রক্তের সাথে বেইমানীর দিন আজ, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদসমূহ থেকে শত শত বানী আর আলোচনা দেখে না জানি নুর হোসেনদের আত্নারা আজ কি করছে? তবে প্রতিনিয়ত বিদ্রুপের হাসি যে হাসছে তা নিজের কল্পনায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




