আপনি কি পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার সম্পর্কে জানেন? আপনি কি জানেন যে আপনার সন্তান যদি এই সমস্যার মধ্য দিয়ে বড় হতে থাকে, একটা সময় গিয়ে সে তার পারিবারিক, সামাজিক ও কর্মজীবনে একজন অথবা নতুন কোন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে একজন ব্যর্থ মানুষ হিসেবে পরিগনিত হতে পারে? যা পরবর্তীতে বাবা মা হিসেবে আপনাদের জন্যই চরম পীড়াদায়ক বলে মনে হবে।
আসুন গুরুত্তপূর্ণ ৪ টি ব্যক্তিত্তের ত্রুটি নিয়ে আজ স্পষ্ট হই------
১। নিজেকে সবসময় অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া, নিজেকে একমাত্র অতুলনীয় ব্যক্তি হিসেবে মনে করেন। পারস্পারিক সম্পর্কে এরা সুবিধাবাদি হয়ে থাকেন। অন্যের বিষয়ে দায়হীন মনোভাব পোষণ এবং অন্যদের প্রতি এদের কোন সহানুভুতি থাকেনা। এরুপ ব্যক্তি ভাবে সবাই তার অনুগত এবং সবাই তাকে তোয়াজ করবে।
কারন – সন্তানকে অবাস্তব উচ্চ প্রশংসা, অতিরিক্ত প্রশ্রয়, অযৌক্তিক প্রশংসা, ত্রুটিপূর্ণ ভালোমন্দ শেখানো এবং ভ্রান্ত মূল্যবোধ ও বাহ্যিক আচরণ প্রকাশে উৎসাহিত করা এই ধরনের ব্যক্তিত্বের প্রধান কারন হয়ে থাকে।
২। অহেতুক অন্যের প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাস এদের মুল বৈশিষ্ঠ। অন্যদের উদ্দেশ্য সবসময় এদের কাছে ক্ষতিকর বলে মনে হয়। আপনার কোন যৌক্তিক মন্তব্যের মাঝেও দেখবেন এরা মন্দ অর্থ খুজবে। এদের মধ্যে ক্ষমাহীন দৃষ্টিভঙ্গি থাকে এবং আপসহীন মনোভাব প্রদর্শন করে। যার ফলে পারিবারিক ও কর্মজীবনে বাজে ধরনের প্রভাব পড়ে, সম্পর্কের অবনতি ঘটে। বাস্তবতাকে যথার্থভাবে যাচাই করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে।
কারন- সন্তাননের উপর প্রচণ্ড চাপ, অবিশ্বাস এরুপ ব্যক্তিত্বের জন্য দায়ী। অযৌক্তিক আচরন আপনার সন্তানকে আত্নবিশ্বাসহীন , লাঞ্চনাবোধ ও অসহায়ত্ববোধের সৃষ্টি করে। এধরনের আত্নবিশ্বাসহীন ব্যাক্তি অন্যদের ভুলভাবে জাজমেন্ট করে, ভুল ধারনা পোষণ করে এবং ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।
৩। এরুপ ব্যাক্তি সবসময় অন্যের অধীনে বেঁচে থাকতে চায়। অন্যের সাহায্য ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব বলে মনে করেন। অন্যের উপর দায়দায়িত্ব চাপানো, পরজীবী মনোভাব এদের ব্যক্তিত্বে ফুটে ওঠে। এরা এতটাই নির্ভরশীল হয়ে থাকে যে অপরের অতিরিক্ত আশ্বাস বা পরামর্শ ছাড়া সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। সহযোগিতা হারানোর ভয়ে এরা কারও সাথে তর্কে জড়াতে পর্যন্ত চায়না। নির্ভর করার মত কাউকে কাছে না পেলে এদের অস্বস্তি তৈরি হয়।
কারন- অতিরিক্ত স্নেহ, প্রিতী ও রক্ষণশীল, সবকিছুতেই আগলে রাখার মনোভাবের কারনে শিশু স্বাভাবিক দায় দায়িত্ব পালন থেকে দূরে থাকে ফলে তারা স্বাবলম্বী বা আত্ননির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারেনা। পরবর্তীতে এরাই আজীবন নির্ভরশীল ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়।
৪। খুঁটিনাটি বিষয়ে অতিরিক্ত মনোযোগ, খুঁতখুঁতে স্বভাবের এবং সবকিছু নিখুঁতভাবে হতেই হবে এমন ব্যক্তিত্ব আমদের আশেপাশে দেখলেই আমরা খুঁজে পাব। এরা সংকীর্ণ ও অনুদার হয়ে থাকে। কাজের সুচিপত্র ও বিধিবিধান নিয়ে এতটাই মগ্ন থাকে যে আসল কাজের মুল লক্ষটাই হারিয়ে ফেলে। কাজকে সম্পূর্ণ গুরুত্ব দিতে গিয়ে এদের মধ্যে অসামাজিক আচরণের লক্ষণ প্রকাশ পায়। কোন কাজ অন্যকে দিয়ে ভরসা পায়না। এরুপ ব্যক্তিদের মধ্যে জিদ ও একগুঁয়েমি ভাব প্রবলভাবে দেখা দেয়।
কারন- মানবজীবনের দোষ-ত্রুটি ও ভালো-মন্দ দিক গুলোকে স্বাভাবিক ভাবে সন্তানদের বুঝাবেন। মানুষ কেউ ই নিখুঁত হতে পারেনা এই সত্যটি যেন আপনার সন্তান উপলব্ধি করতে পারে। মনে রাখবেন কোনকিছুরই অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিকতা স্বাভাবিক বিষয়কে, স্বাভাবিক ঘটনাকে এবং স্বাভাবিক পরিবেশকে নষ্ট করে ফেলে।
বি.দ্রঃ আমার কথা নয়, গবেষণা বলছে, ব্যক্তিত্ব গঠিত হয় ৩ টি ফ্যক্টর এর প্রভাবে-
১। শিক্ষা ২। সঙ্গ ও ৩। পরিবেশ । তাই এই বিষয়গুলো আমাদের সবারই ভাবা উচিত, সচেতন হওয়া উচিত, আলোচনা করা এবং একজন আরেকজনের সাথে শেয়ার করা উচিত।
ধন্যবাদ সবাইকে…।