আমরা আসলেই জীবনে কী চাই? আমাদের জীবনে পরিপূর্ণতা আসে কীসে? সুস্থ্যতা সৃষ্টিকর্তার অনেক বড় একটি নেয়ামত। আমরা যা কিছুই চাই না কেন, অন্তঃত এই বিষয়ে সবাই একমত হব যে সুখী হতে সবচেয়ে উঁচু মান্দন্ড- শারীরিক ও মানসিক সুস্থ্যতা।
আসুন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ৭৫+ বছরের একটি দীর্ঘ রিসার্চ নিয়ে আলোচনা করা যাক...
১৯৩৮ সালে এই গবেষণা শুরু করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়- মানুষ কীসে সুখী হয়? জেনে হয়ত অবাক হচ্ছেন যে এত বছর কীভাবে রিসার্চ চলমান ছিল। আসলেই তাই, অনেক রিসার্চাররা মারা গেছিলেন, ফান্ডিং এর সমস্যা হয়েছিল, নতুন গবেষক নিয়গে সমস্যা, কিন্তু কপালের জোরে এবং কিছু মানুষের সক্রিয় ভুমিকায় তারা শেষ পর্যন্ত এই গবেষণার ফলাফলে পৌঁছিয়েছিলেন। প্রশ্ন হল এই রিসার্চ কিভাবে করেছিলেন তারা?
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা ছিল এক গ্রুপে এবং বোস্টন শহরের দরিদ্র পরিবারের (নমুনা দল) মানুষ ছিলেন আরেক গ্রুপে। ২/৩ বছর পরপর তাদের ডাটা নেয়া হত। মেডিক্যাল রিপোর্ট(স্বাস্থ্য)দেখা হত যে তাদের স্বাস্থ্যগত(শারীরিক সুস্থতা) কোন পরিবর্তন হয়েছে কি-না, ব্যাক্তিগত ইন্টার্ভিউ এবং পারিবারিক ইন্টার্ভিউ নেয়া হত। এভাবে তাদের ডাটা কালেকশন করা হত। অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০১৪ সালে রিসার্চ শেষ হয়। কী পাওয়া গিয়েছিলো সেই ডাটা এনালাইসিস করে- কী মানুষকে সুখী করে, পরিপূর্ণ করে?- টাকা- পয়সা, বিত্ত, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা, পজিশন, না অন্য কিছু……????
বলে রাখি, নমুনা দলে যারা ছিলেন তাদের প্রথম সাক্ষাৎকারে ৮০% মানুষ বলেছিলেন- অর্থ, ক্ষমতা, অবস্থান মানুষকে সুখী ও পূর্ণ করে। কিন্তু ফলাফলে উঠে আসে চমক…!!
“সুসম্পর্ক মানুষকে সুখী এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে… একটি সুখী ও সুন্দর জীবন যাপনের পিছনে থাকে গুণগত সম্পর্ক(পরিবার, বন্ধু, সমাজ, কর্মজীবন, কমিউনিটি)”
রিসার্চ এ দেখা গেছে, যার জীবনে সুসম্পর্কের সংখ্যা যত বেশি সে মানুষ নিজেকে তত বেশি সুখী হিসেবে দাবি করেছেন, এমনকি তাদের শারীরিক অসুস্থতার হার ছিল খুবই কম। অন্যথায় যাদের মধ্যে সুসম্পর্কের অভাব ছিলেন এবং ব্যাক্তিজীবনে নিজেদের অসুখী বলে দাবী করতেন, তারা নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
#### মানসিক অশান্তি সবসময় বাইরে থেকে দেখা যায়না। মানসিক অসুস্থতার পিছনে জোরালো কারন সম্পর্কের অবনতি। আমার যাকিছুরই অভাব থাকুক না কেন, আমার আশেপাশের মানুষের সমর্থন, সহানুভূতি, আস্থা আমাকে অনেকটাই সামনে যেতে সহায়তা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, সম্পর্কগুলোতে যখন সন্দেহ, অবিশ্বাস, ভুল বুঝা ও স্বার্থপরতা দেখা দেয় তখনই শুরু হয় আমাদের মানসিক দ্বন্দ্ব ও পিড়া যা ধীরে ধীরে মনোজগতে নেগেটিভ পরিবর্তন শুরু হয়, শরীরে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।
বি.দ্র: আপনার জীবনে কতবেশি অথবা কতধরনের মানুষের সাথে সম্পর্ক রয়েছে তার চেয়ে বরং গুণগত সম্পর্কের সংখ্যা কতবেশি তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আসুন আমরা আমাদের পরিবার, আত্নীয়, প্রতিবেশী, বন্ধু সহ সবার সাথে যতটা সম্ভব সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার চেষ্টা করি।
ধন্যবাদ।।
Rokunuzzaman Khan
Counseling Practitioner
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:২২