somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্লাশব্যাক!

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েকদিন থেকে খুব লিখতে ইচ্ছে করছে ,কিন্তু কি লিখব বুঝতে পারছিলাম না।আজকে রাতে আমরা চার ভাই-বোন আর আমার এক কাজিন আড্ডা দিচ্ছিলাম।আড্ডার মূল বিষয় ছিল আমাদের ছোটোবেলার সব গল্প।কে কেমন ছিলাম,কার ইস্কুল জীবন কেমন ছিল এইসব।তো গল্প শেষে সবাই ঘুমাতে গেলাম।আমার ঘুম আসছিলনা।ঠিক তখন আমার মনে হলো,আমি আমার শৈশব,আমার মেয়েবেলা নিয়ে কিছু লিখি।যেই ভাবা সেই কাজ বসে পড়লাম পিসির সামনে।জীবনে প্রথম নিজের থেকে কিছু লিখতে যাচ্ছি।জানিনা কেমন হবে?আশা করছি কোন ভুল হলে সবাই সেটা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি তে দেখবেন।

তখন আমি বেশ ছোট।কোনো এক শীতের সকালে আমার বড় ফুফুর ডাকে ঘুম ভাঙলো।ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার দাদু কাঁদছে।আমি তো খুবই অবাক!দাদু এভাবে কাঁদছে কেন?পরে জানতে পারলাম আমরা আজকে আমার আব্বুর কাছে যাচ্ছি।যে জায়গাটি আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে বেশ দূরে।তাই দাদু এভাবে কাদছে।এর আগে আমার আব্বুর পোস্টিং ছিল আমদের গ্রামের বাড়ির কাছে।তাই তখন আমরা আব্বুর সাথে থাকলেও প্রায় প্রতিদিন বাড়ি থেকে কেউ না কেউ বাসাই আসত।আর আমার দাদু প্রতিদিনের খবর বাড়ি বসেই পেত।তাছাড়া তার যখনই আমাদেরকে দেখতে ইচ্ছে করতো তখনই সে বাসাই চলে আসত।এখন তো আর সেটা সম্ভব না।তাই সবার মন খারাপ।আমারও কারণ আমি আমার দাদুকে অনেক ভালবাসি।এর আগের সময়ের বেশীরভাগ সময় আমি আমার দাদুর সাথে কাটিয়েছি।সেই দাদুকে ছেড়ে যেতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল।তারপরও এই সব কষ্টকে পিছনে ফেলে আমরা রওয়ানা হলাম মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার উদ্দেশ্যে।তখন আব্বুর পোস্টিং ছিল শিবচর খাদ্য গুদামে।আমরা (আমরা চার ভাইবোন,আম্মু,আমার ্ছোটোচাচা এবং আমার বড় ফুফু)যখন শিবচর পৌছালাম তখন দুপুর ২টা বাজে প্রায়।আমরা চার ভাইবোন তো মহাখুশি।নতুন জায়গা,নতুন মানুষ আমার খুব মজা লাগছিল।শিবচর খাদ্য গুদামের এরিয়াটা আমার দেখা সবচাইতে ছোটো এরিয়া।তারপরও কি যে ভাললাগা ঐ জায়গাটার প্রতি বলে বোঝতে পারবোনা।পরের দিন ঘুম থেকে উঠে শুনি আমাকে ইস্কুলে ভর্তি করতে নিয়ে যাবে।আমার খুশি আর দেখে কে?জীবনে প্রথম ইস্কুলে যাবো সে কি আনন্দ!সকাল ১০টার দিকে আমার ছোটো চাচা আমাকে শিবচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে গেল।সেখানে গিয়ে একটা মজার কান্ড ঘটছে যা আমার সারাজীবন মনে থাকবে।ইস্কুলের হেডস্যার আমাকে কয়েকটা প্রশ্ন করলেন আমি ঠিক ঠিক উত্তর দিলাম।এরপর দেখি আমাকে ক্লাশ ওয়ানে ভর্তি করা হচ্ছে।আমিতো খুবই অবাক হলাম!আমাকে কেন ওয়ানে ভর্তি করছে?আমিতো ওয়ানের বইর সব কিছু পারি।আমি আবার কেন ওয়ানের বই পড়ব?আমি আমার ছোটো চাচাকে বললাম আমি ওয়ানে পড়বো না।আমি ওয়ানের বইর সব কিছু পারি।আমি ক্লাশ টুতে ভর্তি হবো।কিন্তু ওই স্যার আমকে টুতে ভর্তি করবেন না।সেদিন আমি অনেক কান্নাকাটি করে ক্লাশ টুতে ভর্তি হয়েছিলাম।যা মনে পড়লে আমার আজও অনেক হাসি পায়।আর ভাবি এই শান্ত মেয়েটা সেদিন কিভাবে অতোটা জেদী হয়েছিল।ছোটোবেলা আমি তেমন ভাল ছাত্রী ছিলাম না।ইংরেজী ছাড়া বাকী সব বিষয়ে ফেল করতাম। ক্লাশ ফোর পর্যন্ত আমি এমন ফেল করেছি।আব্বু আম্মু খুব টেনশনে পড়ে গিয়েছিল।ক্লাশ ফোরের শেষের দিকে আমার এক সহপাঠী আমি ভাল ছাত্রী না বলে আমাকে বাজে কথা বলেছিল।তখন খুব খারাপ লেগেছিল কিন্তু আজকে মনে হচ্ছে আমার ওই বান্ধবীকে পেলে আমি ওকে ধন্যবাদ দিতাম। এরপরে আমি বুঝতে পারি যে আমি যাদের পছন্দ করি তাদের সাথে মিশতে হলে আমাকে ভালভাবে পড়াশুনা করে ওদের মত হতে হবে।এরপর থেকে আস্তে আস্তে আমার পড়ার আগ্রহ বাড়তে থাকে।সব কয়টা বিষয়ে লেটার মার্কস নিয়ে পাশ করে আমি ক্লাশ ফাইভে উঠি।সবাই অনেক খুশি হয়েছিল।ওই সময়ে আমার সচাইতে কাছের বান্ধবীর নাম ছিল লুনা।খুব খাতির ছিল দুজনের।দুজন দুজনকে একদিন না দেখে থাকতে পারতাম না।এমনকি শুক্রবারেও।প্রায় প্রতিটা শুক্রবারে হয় লুনা আমাদের বাসায় আসত না হয় আমি ওদের বাসায় যেতাম।অথচ আজ কতো বছর হয়ে গেল দেখা তো দূরের কথা কেউ কারও খবরও জানিনা।মাঝে মাঝে ছোটোবেলার সেই দিনগুলোকে ফিরে পেতে খুব ইচ্ছে হয়।ছোটোবেলা থেকেই আমি একটু ঘরকুনো টাইপের মেয়ে।খেলাধুলা খুব বেশী করতাম না।ভয় পেতাম খেলতে গিয়ে যদি ব্যাথা পাই।তবে খুব দাবা খেলতাম।যদিও খুব ভাল পারতাম না তারপরও এই খেলাটা আমার ভাল লাগতো।আমার আব্বু খুব ভাল দাবা খেলে।আব্বুর কাছ থেকেই আমি এই খেলাটা শিখেছি।আজও আমার দাবা খেলার প্রতি নেশা রয়েছে।সময় পেলেই বোনরা দাবা খেলতে বসে যাই।বিশেষ করে এই শীতের সময়ে।শিবচর আমার খুবই প্রিয় একটা জায়গা।যেখানে আমি আমার শৈশব কে রেখে এসেছি।রেখে এসেছি আমার জীবনের কিছু সুন্দর মুহুর্তকে।জীবনের অনেকটা সময় ওইখানে কাটিয়েছি।আজকে আমার সেই ছোটোবেলার বন্ধু লুনা,লিপি,রঞ্জনা,সোমা,ইউনা,সাথী ওদের সবার কথা খুব মনে পড়ছে।আমি এখনও তোদের অনেক মিস করিরে দোস্ত।জানিনা তোরা কে কোথায় আছিস,তবে যেখানেই থাকিস না কেন ভাল থাকিস সবসময় এই শুভ কামনা রইল।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×