somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। পর্ব-১

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভাষা আন্দোলনের পটভূমি
:-
১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে করাচীতে শিক্ষা মন্ত্রী ফজলুর রহমানের আহবানে পাকিস্তান শিক্ষা কনফারেন্সে প্রস্তাব গৃহীত হয়, “উর্দুকে সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে উর্দু।”
পূর্ববাংলার মানুষের চেতনা , আশা- আকাঙ্ক্ষা, আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপটের সাথে সাংঘর্ষিক এই আইন এসেম্বলিতে পাস করে অফিস আদালত , পোস্ট কার্ড , মানি অর্ডার ফর্ম ইত্যাদিতে ইংলিশ এবং উর্দু বাধ্যতামূলক করার অপরিণামদর্শী এই সিদ্ধান্তই ভাষার দাবীতে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে প্ররোচিত করেছিল।
শিক্ষা কনফারেন্সে আগত একজন বাঙালি প্রতিনিধি উর্দুকে সর্বত্র চাপিয়ে দেয়ার বিরোধিতা করেন।

১৯৪৭ সালে ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে সামাজিক, পেশাজীবী, চিন্তাবিদ, লেখক এবং সাংবাদিকদের সমন্বয়ে “তমদ্দুন মজলিস” নামক সংস্হা প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রথম প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন নূরুল হক ভূঁইয়া ।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সামসুল আলম, আবুল খয়ের, আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী এবং অলি আহাদ। পরবর্তীতে এই কমিটি সম্প্রসারণ করা হয় এবং মোহাম্মদ তোয়াহা এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম কমিটিতে যোগ দেন।

মজলিসের সচিব আবুল কাশেম তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে সভার আয়োজন করেন। ভাষার দাবী প্রতিষ্ঠায় দলমত নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা চান।
এদিন-ই আবুল হাশিমকে চেয়ারম্যান করে খিলাফতে -রব্বানী পার্টির প্রতিষ্ঠা করা হয়।
“তমদ্দুন মজলিস” এর উদ্যোগেই সর্বপ্রথম “রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ” গঠনের প্রস্তাব করা হয়। শুরুর দিকে কমিটির সকল ধরনের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত গোপনে পরিচালনা করা হতো।

১৯৪৮ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান এসেম্বলির বিরোধী দলের সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত উর্দু এবং ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তরভুক্ত করার দাবী জানান।

মার্চের শুরুর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্র-নেতৃবৃন্দ, বাম, ডান, মধ্যপন্থী সকল ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে “একশন কমিটি”/”রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ”গঠিত হয়।ঐদিনই ভাষার দাবিতে ১১ই মার্চ
সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচী প্রদানের ঘোষনা দেয়া হয়। “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” শ্লোগান নিয়ে ছাত্র-মিছিল রাজপথে নামলে পুলিশ ব্যটন চার্জ করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সহ ৬৫ জনকে গ্রেফতার করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কারান্তরীন করা হয়।

বঙ্গবন্ধু সহ ছাত্রদের গ্রেফতারের খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র চরম ক্ষোভের জন্ম দেয়। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। এদিকে ১৯শে মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম গভর্নর জেনারেল’র ঢাকা সফরের তারিখ নির্ধারিত ছিল।

ছাত্রদের ফেটে পড়ার ঘটনা নাজিমুদ্দিনের জন্য একদিকে চ্যালেঞ্জ অন্যদিকে স্নায়বিক চাপ হয়ে দেখা দেখা দিলে মোহাম্মদ আলীকে(বগুড়া) প্রতিনিধি করে একশন কমিটির সাথে একটি আলোচনায় বসে। কমিটি দুইটি প্রস্তাব পেশ করে। ১) প্রাদেশিক বিধানসভা পূর্ব-পাকিস্তানের সরকারী ভাষা বাংলা করার প্রস্তাব করবে এবং নির্দেশনার মাধ্যমে তা পূরণ করবে ২)
বিধানসভা সরকারের কাছে সুপারিশ করবে যে বাংলাদেশের নিজস্ব একটি ভাষা থাকবে (– হাসান জাহির)

২১শে মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে ঘোষণা দেন, “State language of Pakistan is going to be Urdu and no other language. Anyone who tries to mislead you is really an enemy of Pakistan.”
তার এই ঘোষণার সাথে সাথে উপস্থিত ছাত্র জনতা প্রতিবাদে মুখরিত হয়। উপস্থিত ছাত্র জনতার নো, নো ধ্বনিতে চারিদিক প্রকম্পিত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সারাদেশের মানুষের কাছে ভাষা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছাত্র প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেন, কিন্তু সমস্ত আলোচনা-ই ভেস্তে যায়।

ভাষা আন্দোলনের দাবী ক্রমশ উপেক্ষিত হতে থাকে। আমাদের গৌরব গাঁথা লেখার জন্য আরেকটু সময় অপেক্ষা করতে হয়। (চলবে)

তথ্য ও ছবি: হাসান জহির, তালুকদার মনিরুজ্জামান, ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×