ভূকম্পন অনুভূত হলে শান্ত থাকুন। আতংকিত হয়ে ছোটাছুটি করবেন না বা তাৎক্ষণিকভাবে বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করবেন না। ভূমিকম্পের সময় বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে নিন। টেবিল, ডেস্ক বা শক্ত কোনো আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন এবং তা এমনভাবে ধরে থাকুন যেন মাথার ওপর থেকে সরে না যায়। এ ছাড়া শক্ত দরজার চৌকাঠের নিচে ও পিলারের পাশে আশ্রয় নিতে পারেন। বারান্দা, ব্যালকনি, জানালা, বুকশেলফ, আলমারি, কাঠের আসবাবপত্র, বাঁধানো ছবি বা অন্য কোনো ঝুলন্ত ভারী বস্তু থেকে দূরে থাকুন। রান্নাঘরে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব বের হয়ে আসুন। সম্ভব হলে বাড়ির বিদ্যুতের মূল সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও গ্যাসের চাবি বন্ধ করুন। কোনো অবস্থাতেই লিফট ব্যবহার করবেন না। উঁচু বাড়ির জানালা, বারান্দা বা ছাদ থেকে লাফ দেবেন না। ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে খোলা স্থানে আশ্রয় নিন।
অনেক মানুষ আছে এমন ঘরে (গার্মেন্ট কারখানা, হাসপাতাল, সিনেমা হল, মার্কেট) থাকলে বাইরে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে ভিড় বা ধাক্কাধাক্কি করবেন না। পণ্য সামগ্রীর শেলফ থেকে দূরে আশ্রয় নিন এবং দুই হাতে মাথা ঢেকে বসে পড়ুন। গাড়িতে থাকলে ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে গাড়ি থামান। ভূকম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভেতরেই থাকুন। ভাঙা দেয়ালের নিচে চাপা পড়লে বেশি নড়া-চড়া করবেন না। কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন, যাতে ধুলাবালি শ্বাসনালিতে না ঢোকে। সম্ভব হলে দেয়ালের পাশে সরে আসুন এবং উদ্ধারকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করুন। লক্ষ রাখবেন, এ সময় যাতে কোনো অবস্থাতেই শ্বাসযন্ত্রে ধুলাবালি প্রবেশ না করে।
ভূমিকম্প সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং তা বুঝতেই ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড চলে যায়। ভূমিকম্পের সময় তাই দৌড়ে ভবন থেকে বের হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
ভূমিকম্প-পরবর্তী করণীয়
একবার কম্পন হওয়ার পর আবারও কম্পন হতে পারে। তাই প্রথমবারের কম্পন থেমে যাওয়ার পর ঘর থেকে সিঁড়ি দিয়ে সারিবদ্ধভাবে বের হয়ে খালি জায়গায় আশ্রয় নিন। বৈদ্যুতিক বা টেলিফোনের খুঁটি ও তার, উঁচু দেয়াল ও ভবন থেকে দূরে থাকুন। গ্যাস বা অন্য কোনো রাসায়নিক দ্রব্যের গন্ধ পেলে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। জরুরি তথ্য পাওয়ার জন্য রেডিও ব্যবহার করুন। কেউ অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। উদ্ধার কাজে তৎপর সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করুন। উদ্ধারের ক্ষেত্রে শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দিন।
মনে রাখবেন, একটি ভূমিকম্পের পর আরো ভূকম্পন হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ভবন, ব্রিজ, বিভিন্ন অবকাঠামো থেকে দূরে থাকুন। কারণ পরবর্তী ভূকম্পনে সেগুলো ধসে যেতে পারে।
ভূমিকম্প মোকাবিলায় নিজেকে প্রস্তুত রাখুন
বাড়ি নির্মাণের সময় বিল্ডিং কোড মেনে চলুন। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ ঝুঁকিমুক্ত কি না তা নিয়মিত পরীক্ষা করুন। এগুলো বাড়ি বাসার কোথায় অবস্থিত এবং কিভাবে বন্ধ করতে হয়, তা সবাইকে জানিয়ে রাখুন। জরুরি অবস্থায় বাড়ি থেকে বের হওয়ার বিকল্প একাধিক পথসহ বাড়ির পাশের ফাঁকা জায়গা পরিবারের সবাইকে দেখিয়ে রাখুন।
ঘরের ভারী আসবাবপত্র (আলমারি, শেলফ, ফুলের টব, ছবির ফ্রেম) যাতে ভূমিকম্পের সময় পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা না ঘটাতে পারে সেজন্য যথাসম্ভব পেছন থেকে আংটা লাগিয়ে দেয়ালের সাথে আটকিয়ে রাখুন। ভারী জিনিসপত্র শেলফের নিচের তাকে রাখুন। ফায়ার স্টেশন, হাসপাতাল, ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের টেলিফোন নম্বর বাড়ির প্রকাশ্য জায়গায় লিখে রাখুন, যেন সহজেই সবার নজরে পড়ে। বহুতল ভবন, মার্কেট, হোটেল, স্কুলের সিঁড়ি যতটা সম্ভব প্রশস্ত করুন। এসব প্রতিষ্ঠানে জরুরি দরজা ও সিঁড়ির ব্যবস্থা রাখুন।
ভূমিকম্পের সময় আত্মরক্ষার জন্য ঘরে সব সময় রেডিও, টর্চ লাইট, হাতুড়ি, হেলমেট, কুড়াল ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম একটি ব্যাগে মজুদ রাখুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১০ সকাল ৭:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



