সেটা ছিলো ২০১৫ এর প্রথমদিককার কথা। আমি খলিলভাইয়ার থেকে এক আশ্চর্য্য উপহার পেয়ে আপ্লুত হয়ে একটি পোস্ট দিলাম।
পোস্টটি ছিলো অসম্পর্কের ঋণে ঋণী আমি যেই জনা...
পোস্টটি প্রকাশের কিছুখনের মাঝেই সেখানে কমেন্ট করলো জিনিভাইয়া। আমিও যথারীতি উত্তর দিলাম। এর আগে জিনিভাইয়ার সাথে আমার ব্লগে তেমন ইন্টার্যাকশন ছিলো না। সে বেশ চুপচাপ ছিলো। নিজের মত নিজে লিখত। সেই আমার তাকে প্রথম চেনা।
জিনিভাইয়ার ব্লগ থেকে জানা যায় জিনিভাইয়া এইখানে এসেছিলো ২০১৪ এর আগস্টে।
ভাইয়ার প্রথম পোস্ট
সেটা ছিলো একটা কবিতা। অনেক পরে আমি জেনেছিলাম ভাইয়ার এই কবিতা ঠিক ভাইয়ার ভেতরের অনুভূতিগুলিরই বহিঃপ্রকাশ ছিলো। যদিও এ কবিতাটি আমি অনেক দিন বাদে দেখেছিলাম। এরপর সেটেম্বরে ভাইয়ার আরও গুটিকয় পোস্ট ছিলো আর তারপর কোনো পোস্ট ছিলো না। অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারী পেরিয়ে ফেব্রুয়ারীতে এসে বোধ হয় সেদিনই ভাইয়া আমার ব্লগে কমেন্ট করেছিলো। সে ছিলো এক মহালগন। কারণ ভাইয়া সেদিন আমার ব্লগে সেই কমেন্ট না দিলে বা এরপরে আমার অংবং লেখাগুলি সম্পর্কে কিছুটা কৌতুহলী হয়ে আমাকে এবং আমার মস্তিস্কের উদ্ভট ভাবনাগুলি সম্পর্কে জানতে না চাইলে ভাইয়ার মত প্রায় মহাপুরুষ পর্যায়ের এই অসম্ভব ক্রিটিক্যাল এ্যনালাইজার আমার এই ব্লগ জীবনে দেখা হত না। জানা হত না বা তার সম্পর্কে এত কিছু ভাবাও হত না।
হ্যাঁ ভাইয়াকে আমি বা আমরা কতটুকু জানি? মানুষকে জানা মোটেও সহজ নহে। অনেক সময়ই অনেক অনেক জানা মানুষও অজানা, অচেনা হয়ে যায়। ভাইয়াও তেমন অনেক অনেক জানার পরেও অজানা একজন। তবুও যতটুকু জেনেছি সে এক অবাক বিস্ময়! ভাইয়া একজন গবেষক, সমালোচক, ক্রিটিক্যাল থিংকার, যে কোনো নেতিবাচক জিনিষের প্রতি নির্লিপ্ত মনোভাব দেখাতে পারা ধৈর্য্যবান আর অবাক করা বিদ্বেষহীন একজন মানুষ! তার কোনো পরমতম শত্রুটির প্রতিও বুঝি তার নেই কোনো ক্ষেদ, বিদ্বেষ কিংবা ঘৃনা। তবে ভাইয়া অজাতশত্রু সে আমি নিশ্চিৎ। তার শত্রু হতে পারে এমন কেউ মনে হয় নেই এই দুনিয়ায়।
আমি যদিও ২০০৮ থেকে এই ব্লগে একটিভ। তবুও ২০১৫ তে আমার ব্লগ জীবনে এক অভ্যুত্থান হয় বা পূর্ণর্জীবন। হা হা হা হা কেউ হয়ত জানেনা বা এই কথা শুনে হাসছে মিটি মিট ভাবছেন যে বলে কি এইটা? নিন্দুকেরা মনে মনে বলছেন, এহ আসছেন পূর্নজীবন নিয়ে! হা হা হা ! হ্যাঁ, এই কথা অনস্বীকার্য্য যে পূণর্জীবন বা নতুন নতুন নিক বা জীবন নিয়ে বারে বারে জন্ম নিতে আমার বড় মজা লাগে বা সে আমার এক মজার খেলা। তবে সত্যিই কতখানি নতুন জীবন প্রাপ্তি আমার ঘটেছিলো ২০১৫ তে তা আমি বলে বুঝাতে পারবোনা বা বুঝাতেও চাই না। আর এসবই ঘটেছিলো জিনি ভাইয়ার সান্নিধ্যে। ভাইয়া আমার মস্তিস্কের ভেতরে বসে বুনে দিয়েছিলো সেই অভূত্থানের বীজটি।
তাই ভাইয়ার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। জানি এই লাইনটাতে এসে ভাইয়া অনেক বিরক্ত হবে। রাগও করবে মনে মনে! কারণ কৃতজ্ঞতা, বাহুল্যতা, তার সম্পর্কে বড় বড় কথা বলা এসব ভাইয়ার একেবারেই পছন্দের বিষয় না। ভাইয়া যা সঠিক মনে করে সেটার সাথেই থাকে। সে আমি হই বা যেই হই না কেনো আর সবচেয়ে বড় কথা ভাইয়া এক অকুতভয় সৈনিক। নিজের মত বা নিজের সঠিক মনে হওয়া ব্যপারগুলোতে ভাইয়া কোনো রকম ভয়, লজ্জা বা দ্বিধার তোয়াক্কা করে না।
আমি আমার জীবন অনেক মানুষই দেখেছি তবে জিনিভাইয়া একেবারেই অন্যরকম। সাধারণ মানুষের চিন্তা ভাবনা ধ্যান ধারণা, আবেগ, বিবেক বা যে কোনো রকম চেতনাগুলি যা আমাদের সাধারণ মানুষের মাঝে বিরাজমান তা ঠিক অন্যরকম ভাবে মুক্ত বুদ্ধিতে চিন্তা করার ক্ষমতা দেখে আমি অভিভূত হয়েছিলাম। ভাইয়া আমার ভেতরের রাগ বিদ্বেষ ঘৃনা বা প্রতিশোধস্পৃহা দেখে নিজেও বোধহয় অনেকটাই অবাক হয়েছিলেন। আর তাই সেই খুনে রাগ বিদ্বেষ বা প্রতিশোধের আগুন নেভাতে সব সময় সচেষ্ট থেকেছে। যদিও এসব বললেই আমার ভেতর থেকে সেসব উপড়ে ফেলা এত সহজ ছিলোনা তাই ভাইয়া বলেছিলো এসব নেতিবাচক জিনিসগুলোর সাথে থাকা মানে নিজেকে ডুবিয়ে দেওয়া। সময় বড় মূল্যবান তাই সেসবে কম কান দিয়ে বরং উচিৎ হবে নিজেকে আপগ্রেট করা। যে যত দমাতে চাইবে তত নিজেকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে হবে উপরে, পারলে আকাশের কাছাকাছি একাগ্রচিতে। এই মন্ত্রনা কাজ করেছিলো আমার মাঝে খুব খুব ভাবে।
আমি নানা নিকে লিখতাম এবং লিখি। ভাইয়া সবগুলিই প্রায় আবিষ্কার করে ফেলেছিলো বা আমি ইচ্ছা করেই তাকে আবিষ্কার করে ফেলতে দিয়েছিলাম। একবার ভাইয়া বললো, এই সব লেখাগুলি আর কোনো অজানা নিক থেকে নয় এই নিক থেকেই যেন আমি লিখি। আমি তাই করলাম..... লিখলাম
!!২৬শে মার্চ- বাংলাদেশের স্বাধীনতা- কেউ কখনও খুঁজে কি পায় সেই স্বপ্নলোকের চাবি!!
আরও লিখলাম,
আন্তর্জাতিক নারী দিবস এবং বাংলাদেশের নারী
মন দিয়ে লিখেছিলাম,
সপ্রতিভ বক্তব্য, লেকচার, উপস্থাপনা বা প্রেজেন্টেশনের ছলাকলা বা কলাকৌশল!!!!!!!!!
ভাইয়া বলেছিলো, যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু
নিভাইছে তব আলো.......
জাস্ট শো দেম। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দাও। বুঝিয়ে দাও ....
কোন স্ফুলিঙ্গ লুকাও তুমি তোমার সজল বক্ষে..... হা হা হা
ভাইয়ার ভাবনাগুলি আমাকে ভাবাতে শিখালো। আমি এই ব্লগের বেশ পরিচিত মানুষ ছিলাম। আমার লেখাও অনেকেই পড়তও এবং আজও পড়ে, কমেন্ট করে কিন্তু ভাইয়ার সান্নিধ্যে আমি নতুন করে পরিচিত হলাম নিজের সাথে। ভাবতে শিখলাম, বুঝতে শিখলাম, শিখলাম আরও আরও নতুন অস্ত্রের ব্যবহার। যা নেপথ্যে বসে ভাইয়া শিখিয়ে গেছে আমাকে একজন নামজাদা গুরুর মতন।
ভাইয়াই প্রথমে আমাকে বলেছিলো স্টিকি পোস্ট যা আসে এই ব্লগে তা যে উদ্দেশ্যে আসা উচিৎ তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেন ঠিক কার্য্যকরী নয়। আমি তো অবাক সে কথা শুনে! তবে কোন উদ্দেশ্যে আর কেমনই বা হওয়া উচিৎ! ভাইয়াই বলেছিলো স্টিকি পোস্ট এমন হওয়া উচিৎ যেই পোস্টে সমস্যা ও সমাধান নিয়ে পাঠক এবং লেখক বা পাঠক পাঠক আলোচনা সমালোচনায় সামিল হবেন। লেখক সেই পোস্টের পূর্ণ রেসপনসিবিলিটি নেবেন। যতটুকু জানেন উত্তর দেবেন বা অন্যদের আলোচনা সমালোচনার সুযোগ করে দেবেন। এই আলোচনা সমালোচনা ধরে কোনো স্যলুশনে আসা গেলে তবেই সেটা সার্থক। পুরাই ব্রেইন স্টরমিং ব্যপার স্যাপার!
অরিত্রী নিয়ে আমি অপ্সরা নিক থেকে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম।
আর এই পোস্ট লিখতে গিয়ে আমি যত না ভেবেছি পাঠকের উত্তরগুলি দিতে গিয়ে আমি আরও বেশি কিছু ভাবতে পেরেছিলাম। নিজেও জেনেছিলাম অনেক অনেক বেশি। এই পোস্টের আলোচনা সমালোচনা ও সমাধানের পথগুলি যা আলোচিত হয়েছিলো সেসব দেখে ভাইয়ার সেই কথাটিই আমার মনে হয়েছিলো। ভাইয়ার বলা বা শেখানো বিদ্যা ও বুদ্ধিগুলি আজীবন এইভাবেই গোপনে অডিও হেলুসিনেশনের মত বুঝি বেঁজে যাবে আমার কানে কানে ।
ভাইয়া আমার সাথে সুখে দুখে সব সময় ছিলো এবং থাকবেও সেও আমার জানা। তবে খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছিলাম আমার কারণে তাকে দেওয়া অপবাদও তাচ্ছিল্যে তার উড়িয়ে দেবার ক্ষমতা দেখে। এই ব্লগে কেউ একজন যখন অহরহ আমাকে ব্ল্যাক মেইলিং এর ভয় দেখাত আমি খানিকটা মুষড়ে যেতাম। আমি বরাবর ভাঙ্গবো তবুও মচকাবোনা টাইপ। তবুও ভাইয়া বুঝেছিলো আমাকে আর তা দেখেই ভাইয়া বলেছিলো মানুষের বা বিশেষ করে আমাদের মেয়েদের দূর্বলতা নাকি সেখানেই যেটা নিজের মান সন্মান বাঁচাবার ভয়। আমাদের দেশের মেয়েরা এই মান সন্মানের ভয়েই মুখ বুজে অনেক অত্যাচার সহ্য করে। ভাইয়াই আমাকে শিখিয়েছিলো কি করে ছুড়ে ফেলতে হয় সেই অযথা আক্রমনের ভয় ......
সোজা কথা আমার জীবনে ভাইয়ার অবদানের শেষ নেই। শুধু ব্লগে নয়, জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই সেই ২০১৫ এর পরে আমি বদলে ফেলি নিজেকে। অন্যরকম করে একটু হলেও ভাবতে শিখি। যদিও ভাইয়ার ভাষায় পুরোপুরি শিকল ছিড়ে বের হয়ে যেতে পারিনি এখনও বা পারবোনা হয়তো তবুও প্রয়োজন হলে মনে হয় সেটাও করে ফেলতে পারবো। জিনিভাইয়া এমনই এক অনুপ্রেরনার নাম যার কথা বলে শেষ করা যাবেনা। ভাইয়ার মত মানুষগুলো বা ভাইয়া আরও আরও মানুষের জীবনে আলো ছড়িয়ে দিক ঠিক এমনই ভাবে। ভাইয়া হতে আমি যা পেয়েছি তার থেকেও বেশি কিছু পাক এই পৃথিবীর মানুষগুলো। আজ এই শুভদিনে ভাইয়ার জন্ম ধন্য হোক। ভাইয়ার ভেতরের ফল্গুধারা ছড়িয়ে পড়ুক চারিদিকে .....সে আগুন ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে.....
ভাইয়া এখন অনেক ব্যস্ত! নতুন জব আর পারিপার্শ্বিক কিছু ব্যস্ততা নিয়ে। ব্লগ বা লেখালিখির সময় খুবই কম এখন তার। ফেসবুকে একটু আধটু ধূমকেতুর মতন তার দেখা পাওয়া যায়। তবে ভাইয়ার মাঝে যে লেখক সত্ত্বা আছে তার তাড়নায় ভাইয়াকে ফিরতেই হবে একদিন লেখার মাঝে সে আমি বেশ জানি। তাই,
লাভ ইউ ভাইয়া যেখানে থাকো, যেমনই থাকো .......আজীবন.....
গত বছর ২০১৭ এ ভাইয়ার জন্মদিনে আমার পোস্ট
২০১৬তে ভাইয়ার জন্মদিনে আমার লেখা
২০১৫ এ ভাইয়ার জন্মদিনে আমার পোস্ট
ভাইয়ার জন্মদিন ২৫শে ডিসেম্বর। আমি সেদিন ব্লগে থাকতে পারবোনা তাই আজকেই লিখে ফেললাম এই লেখাটি। যেখানে আমি জানাতে চাই এই শুভদিন তোমার জীবনে বয়ে আনুক চিরদিনের সাফল্য! অনেক অনেক ভালো থেকো ভাইয়ামনি.... অনেক অনেক ভালোবাসা তোমার জন্য.....
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৭