ভালোই চলছিলাম আমরা। এই দেশের মানুষেরা। হেসে খেলে পেট পুরে তিন বেলা ডাল ভাত খেয়ে হলেও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে লাখো কোটি মানুষেরা। পৃথিবীতে হাসি আনন্দ দুঃখ বেদনা আছে, থাকবে এবং ছিলো।সেসব নিয়েও সকলেই ভালোই তো ছিলাম আমরা সমগ্র পৃথিবীর মানুষেরা। হঠাৎ এক ক্ষুদ্র এবং অদৃশ্য দানবের করাল গ্রাসে, ত্রাসে সকল কিছু স্তব্ধ হয়ে গেলো। হঠাৎ যেন পৃথিবী হয়ে উঠলো এক পাষান পুরী। চারিদিকে সেই অদৃশ্য দানবের ভয়ে শুনশান নীরবতা। কত শত চেষ্টা এবং প্রচেষ্টা, কত শত আঁকুতি, প্রার্থনার পরেও মন গললোনা সেই ভয়াল দানবের। সে তার ভয়াল থাবা বসিয়েই চলেছে। মৃত্যুর আগেও মৃত্যুর ভয়ে তাই কিছু মানুষের মাঝে নিজের জীবন নিজেই বিসর্জনের চেষ্টা চলেছে। কেউ কেউ জীবন বিসর্জনও দিয়ে ফেলেছেন।
কিন্তু মৃত্যু তো এক অবশ্য সম্ভাবী সত্য। এর থেকে তো কারো মুক্তি নেই। জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে..... কবির ভাষায় এ কথা তো সেই কবেই পড়েছি আমরা। তাই একই সাথে হতাশা, বিষাদগ্রস্ততার পাশাপাশি মানুষ লড়েও চলেছে এই সর্বনাশা দানবের বিরুদ্ধে। এখন প্রয়োজন একতা। প্রয়োজন সবাই মিলে শক্ত হাতে যুদ্ধে সামিল হবার। এবং দারিদ্রতা, অসহায়ত্বতা সকল কিছু নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছে আজ মানুষেরা এই ভয়ঙ্কর কুটিল দানবের বিরুদ্ধে। শুধু করোনা নয় যে কোনো দূর্যোগ মোকাবেলায় মনোবলের জুড়ি নেই। মনোবল হারালে মানুষ আর মানুষ থাকে না। ভীতু কাপুরুষে পরিনত হয়। আর তাই যে কোনো দূর্যোগেই চাই মনোবল। এই লকডাউনের সময়টাতে তাই মানুষের চাই আনন্দে বাঁচার মন্ত্রনা। কিন্তু বন্দীদশায় সময় যেন আর কাঁটতেই চায়না।
যাইহোক মানুষের নাকি সময় কাটেনা। আর আমি বলি আমার তো করোনায় মরোনারও সময় নেই। করোনায় কোয়ারেনটাইনে ছুটি পেয়ে ভাবলাম কি আর করা কখন মরে যাই, কত কিছু করার বাকী আছে। তাই ভয় আর দুঃখে মরার চাইতে আনন্দে মরাই ভালো।
হঠাৎ করোনার লকডাউন- শুরু হলো হাত ধোয়া, সেনিটাইজার, মাস্ক আর ওসিডি এর বড় ভাই ভসিডি( ভয় পাওয়া) সেই হাত ধোয়া নিয়েই আনন্দে মেতে উঠলাম আমি। হা হা এই আনন্দ মানে ঘরের নানাস্থানে সুন্দর করে হাত পরিষ্কারের সামগ্রী সমুহ সাজিয়ে রাখা যেন কারো কোনো সমস্যাই না হয় বা ভুল না হয় হাত ধুয়ে নিতে.....
আর সাথে চললো চৈতালী বাতাসে ঘুড়ি উড়ানো...
https://www.youtube.com/watch?v=jhKXjsTe4yk
শুধু কি এই নিয়ে থাকলেই চলবে? বাসায় বসে বসে তো জম্বি হয়ে যেতে হবে তাই দরকার এক্সারসাইজ। এই বিদঘুটে কাজের চাইতে আমার কাছে নাচ আর স্যুইমিং ভালো। যদিও নাচানাচি হচ্ছেইনা তাই ফুলে ফেপে ঢোল হচ্ছি। তাতে অবশ্য দুঃখ নেই তাই আনন্দে স্যুইমিং। বিকালবেলা ছাদপুলে স্যুইমিং এর পরে সন্ধ্যা নামে যখন ফুরফুরা বাতাসে মনে হয় মরে যাবার পরে দোযখে গেলেও ক্ষতি নেই। এই বাতাস তো স্বর্গের বাতাস হয়ে ছুঁয়ে গেলো আমাকে মর্ত্যলোকেই...আকাশে থালার মত চাঁদ। গেলো বৌদ্ধ পূর্ণিমা। সেই চাঁদ দেখে গুন গুন.....
https://www.youtube.com/watch?v=darLi0LSLwo
রাতে সেই আগের মত বিছানায় শুয়ে শুয়ে বই পড়াপড়ি-
পেন্সিল স্কেচ নিয়ে বহু সাধনা করেছি আমি। তবে নিন্দুক ইনসপিরেশান ছাড়া আমি যে কোনো কিছুতে উন্নতি কম করি তা বুঝলাম এবারে রঙ তুলিতে আঁকতে গিয়ে। একেবারেই কাকের ঠ্যাঙ, বকের ঠ্যাঙ মার্কা রঙ তুলির ছবি। যাই হোক না কেনো, আমি হলাম নতুন কিছু করো একটা নতুন কিছু করো। কিছু না পেলে পাগুলো সব উপরে দিয়ে না হয় মাথা দিয়েই হাঁটো....
এবারের পহেলা বৈশাখে আমার চিরায়ত পুতুলনাচ, বৈশাখী নাচ, গান বা আবৃতি কিছুই হলো না। তাই বলে কি সাজুগুজুটাই বাকী থাকবে? নিজেই সাজুগুজু করে হারমোনিয়ামে গাইলাম, এসো হে বৈশাখ এসো এসো.....পরলাম আমার সিনেমা শাড়ি। মানে রিক্সা পেইন্ট। কেউ আমাকে পাগল বললেও আমার কিছু আসে যায় না। আমার যা ভালো লাগবে আনন্দে ভাসাবে সেটাই আমি।
কিন্তু এর মাঝে হঠাৎ ঘাড়ে এসে চাপলো অনলাইন ক্লাসের বোঝা। নিউ স্টাইল লেসন প্ল্যান। নিউ স্টাইল ব্লক সিলেবাস। আরও কত কি। ক্লাসে তো ৪০ মিনিটে ২০ মিনিটে এনা ঘেনা করে ২০ মিনিট আর বাকী ২০ মিনিটস বাচ্চাদেরকে খাতা পত্তর দিয়ে বসিয়ে দেই। এখন তো অনলাইন ক্লাস!! এখন কি হবে!!! ৪০ মিনিটই তো প্যারেন্টস চোখ পাঁকিয়ে বসে আছে মনিটরের সামনে। কি জ্বালা ধান বলতে কখন পান বলে ফেলি তাও আবার ইংলিশে এই ভয়েই তো গলা দিয়ে কথাই বের হয় না। বহু কষ্টে চিরকালের অধ্যাবসায়ী আমি বিষম অধ্যবসায়র সাথে মহা সমারোহে পার্থ প্রতীম মজুমদারের মত মুকাভিনয় দিয়ে ক্লাস নিতে শুরু করলাম।
এরমধ্যে আবার রোজা। সবাই বানায় জিলাপী। এ তো আমি কবেই বানিয়েছি। কাজেই যেহেতু বাইরের খানাপিনা নেই কাজেই নতুন কিছু করো একটা নতুন কিছু করো। বানালাম বালুশাহী। বানালাম নাগেটস। নাগেটস জিনিসটাকে যত কঠিন মনে হয়েছিলো এটা আসলে ততটাই সহজ-
এর মাঝে আমার বাহারী ইফতার মেকিং এবং রোজ রোজ নাই কাজ টেবিল সাজাস স্টাইলে ডেকোরেটিংও চলিতেছে। শুধু এই দূর্যোগের কথা মাথায় রেখে আর মানুষের বকা খাবার কথাও মাথায় রেখে আমার চিরকালীন রোজা সংখ্যা ইফতার পোস্ট দেই নাই।
আর নাই কাজ তাাই শুধু শুধু খই ভাজ আমাকে দিয়ে হবে না। তাই আমি তখন এধারের ফুলদানী ওধারে, ওধারের চেয়ার সেধারে। এমন করে পুরান ঘরকে নতুন করে সাজাই।
যাইহোক যতটুকু সময় এই সুন্দর ধরিত্রীতে বাঁচা যায় ততটুকু সময়কেই সুন্দভাবে ব্যবহার করা উচিৎ। এমনটাই মনে হয় আমার। শুধু শুধু মরে যাবার আগেই মরে গিয়ে কি হবে?
আমি ভয় করবো না ভয় করবো না।
দু,বেলা মরার আগে মরবো না ভাই মরবো না.....
এই কয়েকমাসের কোয়ারেন্টাইনে আমার গত ডিসেম্বর থেকে একদম ভেঙ্গেচুরে বসে যাওয়া গলা পরম সাধনায় সকাল বিকাল দু,বেলা মরে যাওয়ার আগে দু,বেলা সেধে সেধে একদম ঠিক হয়ে গেছে তাই আমি সারাক্ষন বারান্দায়, ছাদে, সিড়িঘরে, মেঝের উপর আঁচলখানি পেতে হারমোনিয়ামেও গান গাই আর গান গাই। গান ছাড়া আর কথাই নাই।
https://www.youtube.com/watch?v=KzDMC-gJfQk
এইভাবেই চলছে আমার স্টেইং হোম আনন্দে আর হাসি গানে। মানে যে টুকু সময় বেঁচে থাকি। দূরে দূরে কাছে থাকি আর আনন্দে বাঁচি আনন্দে বাঁচতে চাই। কাজেই নো হতাশা, নো বেদনা........
যতক্ষন আছি ভরে দেবো আমি এ খেলারই ভেলাটাই
তাই অকারণে গান গাই ......
আমি এ ক,দিনে মিস করেছি ব্লগ, করুনাধারা আপুনি, ভূয়ামফিজভাইয়ু,আহমেদ জি এস ভাইয়ামনি, খায়রুল আহসান ভাইয়া
বিপ্লব০০৭
সোহানী
কাওসার চৌধুরী
আল-ইকরাম
সত্যপথিক শাইয়্যান
গিয়াসলিটন
সুপারডুপার
আর্কিওপটেরিক্স
মেহবুবা
রাজীব নুর
মোস্তফা কামাল পলাশ
নূর মোহাম্মদ নূরু
চাঁদগাজী
সাইন বোর্ড
ইসিয়াক
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই
জুন
সৈয়দ তাজুল ইসলাম
অগ্নি সারথি
হাবিব স্যার
মনিরা সুলতানা
রুমী ইয়াসমীন
শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan's Tuition)
অবেলার পানকৌড়ি
মোঃমোজাম হক
অদ্ভুত_আমি
অন্তরন্তর
ডঃ এম এ আলী
রূপম রিজওয়ান
নেক্সাস
আমিই মিসির আলী
তারেক ফাহিম
আমি তুমি আমরা
দি ফ্লাইং ডাচম্যান
স্বপ্নবাজ সৌরভ
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল
জুল ভার্ন
নীল-দর্পণ
আহসানের ব্লগ
মলাসইলমুইনা
সেলিম আনোয়ার
রাফা
ওমেরা
কি করি আজ ভেবে না পাই
সুনীল সমুদ্র
নীল আকাশ
জালিস মাহমুদ
শের শায়রী
আরোগ্য
হাসান কালবৈশাখী
জোবাইর
তারেক_মাহমুদ
অপু তানভীর
বিদ্রোহী ভৃগু
ঢাবিয়ান
পদাতিক চৌধুরি
জাফরুল মবীন আর্কিমিডিসভাইয়ু ও আপুনিরাসহ আরও আরও অনেককে( এরপর যার যার নাম মনে পড়বে এড করে দেবো)।ইমরাজ কবির মুন বেবিভাইয়াটাকেও মিস করেছি!!!!!তাই অনেকদিন পর এসে বলছি লাভ ইউ অল আর ঈদ মুবারাক। সবাই ভালো থাকো, আনন্দে বাঁচো, যতদূর পারা যায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আমার মত আনন্দের মেতে ওঠো, শাররিক ও মানসিক সাস্থ্য ভালো রাখো, করোনা থেকে দূরে থাকো .....
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:২৬