somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মওলানা ভাসানীর খামোশ শব্দটি আর কোনো দিন শুনতে পাবো না।

২০ শে মে, ২০১১ দুপুর ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তুলনাহীনার তুলনা এবং ভাবজগতে নতুন এক স্রষ্টার পদচারণা
মিনার রশীদ


খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক পাল্লায় তাকে মাপতে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।

তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার সত্যিই কোনো তুলনা চলে না। ১৯৯৬ সালে শেয়ার মার্কেটে হাজার হাজার বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে আবারও ক্ষমতায় এসেছেন। এবার এসে ৩০ লাখ বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়েছেন। তারপরও তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছেন। খালেদা জিয়া যা কল্পনাও করতে পারতেন না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে শেখ হাসিনা ও তার দল যে তা-ব সৃষ্টি করেছিল তা জনগণের মন থেকে এতো শিগগির মুছে যাওয়ার কথা নয়। তখন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, একমাত্র পাগল ও অবুঝ বালক ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। দেশের বুদ্ধিজীবীদের কর্ণকুহরে এ কথা পড়া মাত্রই হাসির রোল পড়ে যায়। এখন যখন শেখ হাসিনা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বলা শুরু করেছেন তখন সেই বেশি বুদ্ধিওয়ালা মাথার বুদ্ধিজীবী তা লুফে নিয়েছেন। নদী পার হয়ে গেলে সাকোর দরকারই বা কি? আর রাখলেও এমনভাবে রাখতে হবে যাতে লগি-বৈঠা দিয়ে সামান্য অপারেশন চালালেই যাদের জিনিস তাদের কাছেই ফিরে আসে।

কাজেই গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত শেখ হাসিনার বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার সঙ্গে অন্য কারো তুলনা চলে না। এদিকে ব্যবসায়ী সমাজের সর্বোচ্চ নেতা হুমকি দিয়েছেন, আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে তারা দেশেই থাকবেন না। কাজেই শেখ হাসিনার প্রয়োজনে নয়, বরং ব্যবসায়ী সমাজের এ অভিমান ভাঙাতে এবং তাদের দেশে রাখার স্বার্থেই এ ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা গড়তে শেখ হাসিনার পাশে দাড়িয়েছিল নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীরা। আজ শেখ হাসিনার জন্য তা ভাঙতে দাড়াবে নিরপেক্ষ ব্যবসায়ীরা।

প্রধানমন্ত্রী যেদিকে যান শুধু দেখতে পান দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে কেমন পেরেশান হয়ে পড়েছে। এই বড় পেরেশানির সম্মুখে অন্যান্য ছোট খাটো গৃহস্থালিজাত পেরেশানি গণনায় নেয়ার মতো না। জনগণের এ বড় পেরেশানিটি বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীকে সবরের নির্দেশ দিতে হয়। অন্যদিকে নিজের বাবার হত্যার বিচারের ব্যাপারে মেয়ের শ্লথ গতি দেখে অস্থির ভক্তরা অনশনের হুমকি দেন। অননোন্যপায় হয়ে তিনি যুগ যুগ ধরে এই মধুর ও মহান বিচারের কাজগুলি চালু রাখার আশ্বাস দেন। এই মহৎ কাজ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিতে রাজাকার ভাবাপন্ন মানুষ অহেতুক বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে।
দেশের প্রকৃত চিত্রটি হলো, দেশের মানুষ এখন শুধু দুই বেলা নয় কেউ কেউ চারবেলা ভাত খাচ্ছে। এই চারবেলা ভাত খালেদার আমল তো দূরের কথা, শায়েস্তা খার আমলেও লোকজন খেতে পারেনি। কাজেই অ্যাটর্নি জেনারেলের মতো অন্য কোনো জেনারেল এখন সহজেই ঘোষণা দিতে পারেন যে, বর্তমান আমলটি শায়েস্তা খার আমলকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।

এই ঘোষণায় জনগণ বা তাদের মুখপত্র মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। কারণ বাকশাল সমস্ত পত্রিকার মুখ বন্ধ করে যা পারেনি, এখন অনেক টিভি-পত্রিকার মুখ খুলে দিয়ে সেই অসাধ্যটি সাধন করে ফেলেছে। কাজেই এ যুগের তুলনা আসলেই নেই।

কাজেই কার সঙ্গে কার তুলনা?

প্রবাসী এক দম্পতির আহ্লাদি মেয়ে। জন্ম নিয়েই সে যেন প্রধানমন্ত্রী। যে কাজ করে তাতেই জোটে সকলের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা।

আড়িয়ল বিলে জনতার চাপে এয়ার পোর্ট করা থেকে পিছিয়ে এলেও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার দারুণ প্রশংসা করা হয়। প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইনি কর্মকর্তা দেশের বিচার ব্যবস্থার ১২টা বাজিয়ে আবার নিজেই তাকে বিচারব্যবস্থার স্বর্ণযুগ বলে উচ্ছসিত প্রশংসা করেন। নিজের এ ঢোলটি নিজে বাজালেই নিরাপদ। এমনকি ব্যারিস্টার রোকনদ্দিন মাহমুদ ও ড. কামাল হেসেনের মতো সুশীল মানুষের হাতেও এ ঢোলটি এখন দেয়া যাবে না। গ্রামীণ ব্যাংক উত্তেজনায় তারা এ ঢোলটি ফাটিয়ে ফেলতে পারেন। কারণ এসব প্রশংসা আবার তারই প্রাপ্য। তারই অছিলায় এসব হচ্ছে। তার এ গুণটি ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার কমিটি টের পেলেও নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটি উপলব্ধি করতে পারেননি। শেখ হাসিনা এবং সন্তু লারমার জন্যে নির্ধারিত পদকটি তারা ভুল করে ড. ইউনূসের হাতে তুলে দিয়েছিল।

মানুষ প্রজাতির কেউ কেউ ভয়ংকর উচ্চতায় উঠে গেলে এমন বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। তখন অবুঝ বালক ছাড়া অন্য কেউ বলার সাহস পায় না যে, রাজার শরীরে আসলে কাপড়ই নেই। পুরো ঘরটি ধসে না পড়া পর্যন্ত বুঝতে পারে না কোনো জায়গায় সমস্যাটি ছিল।
প্রবাসী দম্পতির যে মেয়েটিকে নিয়ে কথা শুরু করেছিলাম তার অবস্থাও হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মতো। আশপাশের সকলে খালি খালি প্রশংসা করে তার মাথাটাই খারাপ করে দিয়েছে অর্থাৎ আদালতের পরিভাষায় সে রং হেডেড হয়ে পড়েছে। সে বুঝতে পারে না কোনো কাজটি খারাপ। আহ্লাদি মেয়ের বুদ্ধির ঝিলিক ও চমকে বাবা-মাকেও এখন মাঝে মধ্যে অস্বস্তিতে পড়ে যেতে হয়।

স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরে এই মেয়ের সে কি উচ্ছ্বাস! মাম্মি, আমি পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়ে পড়েছি, ফার্স্ট হয়ে পড়েছি। আতংকিত মা জিজ্ঞাসা করেন, রেজাল্ট বের হওয়ার আগেই কিভাবে ফার্স্ট হলি? বলে, আমি সবার আগে খাতা জমা দিয়ে ফেলেছি মাম্মি। কাজেই আমি ফার্স্ট।

তার মা বুঝতে পারলেন ঘটনাটি। কিছু না লিখেই সবার আগে খাতা জমা দিয়ে ফার্স্ট হয়ে পড়েছে তার গুণধর মেয়েটি। এ মায়ের মতো একই ধরনের দুশ্চিন্তায় পড়েছিল এ দেশবাসী যখন প্রধানমন্ত্রী দিল্লি জয় করে আসেন। অনেকেরই মনে থাকার কথা, দিল্লি জয়ী প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছ্বাস। সুখ চাহি নাই, জয় চেয়েছিনু জয়ী আমি। রেজাল্ট বের হওয়ার আগেই গুণধর ছাত্রীটির কায়দায় নিজের মতো করে তিনি নিজেকে ফার্স্ট বা জয়ী ঘোষণা করে বসেছেন।

বক্তব্যটি ছিল মহাভারতের এক নাম্বার ভিলেইন দুর্যোধনের। খলনায়কের উচ্ছ্বাসটি নকল করলেন হতভাগা দেশটির রাষ্ট্রনায়ক! দুর্যোধনের এ ডায়ালগটি প্রধানমন্ত্রী কেন বেছে নিলেন তা নিয়ে এবিএম মুসার মতো শেখ হাসিনার একান্ত সুহৃদরাও তখন দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। অর্থ উপদেষ্টার কথায় এখন বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে। কারণ ট্রানজিটের জন্য পয়সা আদায় হবে ছোটলোক, অসভ্যদের কাজ।

তাদের এই দিল্লি জয়ের ঢংকা নিনাদে দেশবাসীর আতংকিত চেহারাটি চাপা পড়ে যায়। অহেতুক আশংকা বাদ দিয়ে ট্রানজিটের পয়সায় সিঙ্গাপুরের হয়ে গেলে কে কি করবে সেসব মানসাংক বা সুখ স্বপ্ন নিয়ে মশগুল হতে সবাইকে উৎসাহ দেয়া হয়। দেশের নিরাপত্তা আর দেশের মা-বোনদের রূপ-যৌবন - এ দুটির বাণিজ্যিক দাম যতোই হোক না কেন, তা দিয়ে কোনো বাণিজ্য করতে নেই। এই গুরুবাক্য অগ্রাহ্য করে বাণিজ্য শুরু করে এখন শুনতে হচ্ছে , সিঙ্গাপুর নয়, সভ্য হওয়াই শ্রেয়।

সাম্প্রতিক এক গোল টেবিল বৈঠকে সাবেক সচিব আসাফউদ্দৌলার কিছু কথায় দেশবাসীর ক্ষোভের কিছুটা ফুটে উঠেছে। ইন্টারনেট-এর বদৌলতে তার এই বক্তব্যগুলো অনেক মহলে ছড়িয়ে পড়েছে। তার বক্তব্যটি শোনলে মেয়ের সঙ্গে বাবার তুলনাটি করতে অনেকেই প্রলুব্ধ হবেন। বাবা-মেয়ের এই তুলনায় কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি নেই।

ফারাক্কা চুক্তি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে গোপালগঞ্জবাসী এই সচিবের কিছু স্মৃতিচারণা নতুন ভাবনার খোরাক জুগিয়েছে। বিবেক জাগলে খোদ গোপালগঞ্জে অবস্থান করেও তা জাগতে পারে। ইন্ডিয়ার অফিসারদের সঙ্গে তর্ক করে যখন শেখ মুজিবের ভৎর্সনার জন্য মনে মনে প্রস্তুত হচ্ছিলেন তখন মুজিবের কণ্ঠে শোনলেন অমিত প্রশ্রয়ের বাণী, আমি তো ইনডিয়ার কোনো নুন খাই নাই। কাজেই তুই চালাইয়া যা। অন্যদিকে ওআইসি সম্মেলনে তার যোগদান নিয়ে ইনডিয়ার আপত্তির মুখে শেখ মুজিব জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোঅর্ডিনেশন আর সাবর্ডিনেশনের মধ্যে পার্থক্যটি তিনি ভালোভাবেই বোঝেন।

এই ধরনের বোঝদার দিয়ে তাদের কাজ কতোটুকু হবে তা ইনডিয়াও বুঝে ফেলে। কাজেই মাঝখানে অনেক কিছু ঘটে গিয়ে সব কিছু লাইন মতো চলে এসেছে। কিছুটা ত্যাড়া রগ-এর জীবিত মুজিবকে দিয়ে যা সম্ভব হতো না, আজ মুজিবের ছবিকে দিয়ে সেই কাজগুলোই করানো হচ্ছে।

শেখ মুজিবকে কোনো নুন খাওয়াতে না পারলেও তার দুঃখজনক হত্যাকা-ের পর সদ্য এতিম দুই মেয়েকে অনেক নুন খাইয়েছিলেন। নির্মম এই হত্যাকান্ডের পরের দিন ইনডিয়ার রাষ্ট্রদূত মোশতাকের সঙ্গে হাসিমুখে ছবির জন্য পোজ দিয়েছিলেন। ভিন্নমুখী এ দুটি ছবি মেলাতে কষ্ট হলেও এটাই ছিল বাস্তব সত্য। ব্যক্তিগত সহানুভূতি দেখিয়ে মতলববাজ আশ্রয় দাতা আশ্রিতাদের মন, মগজ ও আত্মা ধোলাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সহজেই সারতে পারে। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বিবিসিখ্যাত সাংবাদিক সিরাজুর রহমান তার এক লেখায়। তার পর্যবেক্ষণটি একেবারে ফেলে দেয়া যাবে না। কারণ ব্রিটিশ এক মহিলা সাংবাদিক তালেবানদের কাছে পণবন্দি থাকা অবস্থায় তাদের প্রেমে পড়ে নিজেই তালেবানি হয়ে যায়। সার্বিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এতিম দুই বোনের সেই নুন খাওয়ার শোধ আদায় করতে হচ্ছে সারা দেশবাসীকে। এই ধারা সবে শুরু, শেষটি কোথায় এখনো জানা নেই। এখন তুলনা করার জন্য সামনে আছে শুধু সিকিমের লেন্দুপ দর্জি।

ব্যক্তিগত সহানুভূতি, আবেগের সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক আবেগ অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে। রবীন্দ্রনাথের দেড়শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন শুরু হয়েছে। সহজেই বোধগম্য ও বহুল প্রচলিত দেড় শব্দটি বাদ দিয়ে অবোধগম্য ও অপ্রচলিত সার্ধ শব্দটি কেন ব্যবহার করা হয়েছে তা বোধগম্য হচ্ছে না। বন্যাআপারা ধীরে ধীরে কেন বন্যাদি হয়ে পড়ছেন তাও বুঝতে পারছি না। রাবীন্দ্রিক ফ্যাশনের কথা বলে প্রেয়সীর সুন্দর কপালের বিরাট জায়গা জুড়ে সিদুর সদৃশ টিপ কেন যে বসছে তাও মালুম হচ্ছে না। ফ্যাশনের দুনিয়াটা স্লিমের পেছনে ছুটলেও মঙ্গলসূত্র ও টিপের এই স্থূলগামী যাত্রা মনকে কিছু অজানা আশংকায় ভরিয়ে দেয়।
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে গিয়ে এ কোনো সম্প্রদায় সৃষ্টি করা হচ্ছে? শেক্সপিয়ারকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আমেরিকা বা কানাডার ইংরেজি ভাষাভাষী জনগণ তাকে যেশাস বা স্রষ্টা বানিয়ে ফেলে না। কবি জিয়া হায়দার তার এক কবিতায় লিখেছেন, আমার অস্তিত্বে তুমি ঈশ্বরের মতো। বাদবাকিদের উচ্চারণ ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কাছাকাছি। গান যেন গান নয়। অন্য কিছু। গানে ভয় নেই। ভয়টি এই অন্য কিছু-তে। ভাববাদের মতো এখানেও ফানা বা অস্তিত্বে বিলীন হওয়ার জয়গান কেন গাচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের কবিকূল সেই মধ্যযুগ থেকেই একটু দিল দরিয়া। প্রেয়সীর গালের একটি তিলের জন্য এরা সমরখন্দ বোখারা বিলিয়ে দিতে পারে। কাজেই কিছুটা গালিগালাজ হজম করে হলেও সমরখন্দ বোখারার প্রকৃত মালিক জনগণের সাবধান হওয়ার সময় হয়েছে।
মানুষের ইতিহাস বলে এমন করেই সাংস্কৃতিক সুষমায় ভরে এক মানুষকে অন্য মানুষের স্রষ্টা বা উপাস্য বানানো হয়েছে । এর পেছনে কাজ করেছে তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া কম মেধাসম্পন্ন মানুষকে অর্থনৈতিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিকভাবে শোষণের রাস্তা তৈরি করা। এই স্রষ্টাদের রাজত্বের বিস্তৃতি নির্ভর করে প্রকৃত মতলবটি কে কতোটুকু দক্ষভাবে লুকিয়ে রাখতে পারে তার ওপর।
বাংলার মানুষের জন্যে এমন ধরনের একটা নতুন আফিমের দরকার। অমর্ত্য সেন আমাদেরকে পরামর্শ দিয়েছেন সম্রাট আকবর প্রবর্তিত দ্বীন-এ এলাহি গ্রহণ করার জন্যে । নিজের ধর্মটিকেই অর্থনীতির এই প্রফেসর সর্বোত্তম মনে করেন। তবে আমরা দ্বীন-এ ইলাহি পর্যন্ত অগ্রসর হলেই চলবে। তাই ডিজিটাল নব-রত্ন পরিষদের সদস্য শাহরিয়ার কবিররা কোরআন হাদিস চষে বের করে ফেলেছেন রাষ্ট্রধর্ম, বিসমিল্লাহ প্রভৃতি সংবিধানে রাখার প্রয়োজন নেই।

এসব আয়োজন কি সেই একই উদ্দেশ্যে নিবেদিত হচেছ?

এগুলোর বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধের সকল উপকরণ আমাদের সংকুচিত হয়ে আসছে। আসাফউদ্দৌলার মতো কিছু মানুষ আমাদের সতর্ক বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই বলবেন, এগুলো ষাট-সত্তর বছরের পুরনো ঘটনা। তাদের জ্ঞাতার্থে কিছু সাম্প্রতিক ঘটনা বা বিষয় আলোচনা করা যেতে পারে।

বিদেশগামী জাহাজে যারা চাকরি করেন তারা বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল। পরিচিত কাউকে জিজ্ঞাসা করে আমার এ কথাটির সত্যতা সহজেই যাচাই করতে পারেন। বাংলাদেশি কোনো নাবিক বা অফিসারকে ইনডিয়ার অধিকাংশ পোর্টে নামতে দেয়া হয় না। এই বেলায় আমাদের পাকিস্তানের নাবিকদের সঙ্গে একই ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়। বরং পাকিস্তানের দিকে একটা ঘৃণা মিশ্রিত সমীহ কাজ করলেও আমাদের দিকে রয়েছে স্রেফ অবজ্ঞা।

ঘটনাটি মাত্র মাসখানেক আগের। একটি জাহাজের বাংলাদেশি প্রধান প্রকৌশলী সাউথ ইনডিয়ার একটি পোর্টে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেক চেষ্টা করেও সেই অসুস্থ নাবিককে হসপিটালে নেয়া সম্ভব হয়নি। তার জীবন নিয়ে পরিবারসহ অফিসের সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। অগত্যা এক ডাক্তারকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে সেই নাবিকের চিকিৎসা করাতে হয়। টেলিফোনে ডিজিটাল চিকিৎসা গ্রহণ করে সেই নাবিক ডিজিটাল বন্ধুত্বের স্বাদটি ভালোভাবেই গ্রহণ করেছেন।


এখন প্রশ্ন হলো, একজন নিরীহ অসুস্থ নাবিকের হাসপাতালের পথে কয়েকটি মাইল রাস্তা যদি ইনডিয়ার নিরাপত্তার জন্যে হুমকি হয়ে দাড়ায় তবে শত শত মাইলের লোডেড ট্রাকের বহর কি বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে পড়বে না? কাজেই সত্তরে-ঊর্ধ্ব আসাফউদ্দৌলার সঙ্গে চল্লিশ-ঊর্ধ্ব মিনার রশীদের সেই একই জিজ্ঞাসা, এগুলোই কি বন্ধুত্বের নমুনা? যে বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণই জোটে না তাকে ডেকে এনে নিজের স্ত্রীর শরীরের কোনো জায়গায় কতোটি তিল রয়েছে তা গুণতে দেয়াই কি মহত্ত্বের লক্ষণ?

কাজেই এ বৃদ্ধ লোকটি যখন বিলাপ করেন, এগুলো সামনে কারা? এগুলো তো আমাদের সন্তান নয়। বিশ্বাস করুণ, ৪০ বছরের এই শরীরটিকে ৯০ বছরের অথর্ব মাংসপি- বলে মনে হয়। মিস্টার আসাফউদ্দৌলা, আপনার কাছে আসলেই ক্ষমা চাচিছ। এই অথর্ব বৃদ্ধ যুবকগুলোকে ক্ষমা করে দিন। আমরা ছুটেছি প্রমোশনের পেছনে, আমরা আছি টেন্ডারের পেছনে, পারমিটের পেছনে। আমরা ছুটেছি মন্ত্রী, এমপি হওয়ার জন্য কিংবা তাদের পিএস হওয়ার জন্য। নিজের দেশ, ধর্ম বোধ ও শেকড়কে উপড়ে ফেলার উন্মাদনায় মেতেছি আমরা। যে নৌকাটি নিয়ে অথৈ সাগরে ভাসবো সেই নৌকাটি ধ্বংস করার সকল উপায় আটছি।

কাজেই আসাফউদ্দৌলার প্রতি অনুরোধ, আজরাইল আসার আগে আগে আরো কিছু শব্দ রেকর্ড করে রেখে যান। কারণ মওলানা ভাসানীর খামোশ শব্দটি আর কোনো দিন শুনতে পাবো না।

আসাফউদ্দৌলার মতো এ রকম আউট বার্স্টের পর আবার নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি, আমার এ চিন্তাটি কি আসলেই উগ্র? আমার এ ভাবনাগুলো কি একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ব নাগরিক ভাবনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়?

ট্রানজিট প্রশ্নে আমরা যারা কথায় কথায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের উদাহরণ টেনে আনি তারাও কি বিষয়টির গভীরে পৌছতে চেষ্টা করি?

শতাব্দীর পর শতাব্দী পারস্পরিক যুদ্ধ বিগ্রহে নিযুক্ত থাকলেও ইউরোপের দেশগুলো পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণগুলো সঠিকভাবে নির্ণয় করে ফেলেছে। সকল মহলের সামগ্রিক সচেতনতায় এ বোধটি ফিরে পেতে সহায়তা করেছে। বৃহৎ ফ্রান্স আর ক্ষুদ্র বেলজিয়াম পরস্পরকে একই চোখে দেখে। আজ ওদের পার্টনার ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী আছে। কিন্তু কোনো বিগ ব্রাদার নেই। ইউরোপের প্রতিটি দেশে ওদের স্বতন্ত্র বোধ এতো প্রখর যে, একজন অন্যজনের ভাষা জানলেও সহজে তা বলতে চায় না। আমাদের মতো আবেগে মাখামাখি না থাকলেও আছে প্রত্যেকের পাশে প্রত্যেকের স্বার্থের ঝরঝরে ও স্বচ্ছ অবস্থান। এগুলোকে নিয়েই তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সমীহ বোধ সৃষ্টি হয়েছে।

ওখানে একটি দেশের বন্ধুত্ব হয় অন্য একটি দেশের সঙ্গে। কখনোই একটি দেশের সঙ্গে অন্য দেশের কোনো বিশেষ দলের অবৈধ প্রেম সৃষ্টি হয় না। কারণ এসব অবৈধ প্রেমের মাধ্যমে পারস্পরিক অনাস্থা ও অবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। এক জাতি কর্তৃক অন্য জাতিকে দাবিয়ে রাখার সুযোগ সৃষ্টি হয়। কাজেই যারা উপমহাদেশের এই তিক্ত রাজনৈতিক পরিবেশে হঠাৎ করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ট্রানজিট ব্যবস্থাটি জুড়ে দিতে চান তাদের উদ্দেশ্যটি যে পুরো সৎ তা মেনে নেয়া কষ্টকর।

একবিংশ শতাব্দীর গ্লোবাল সিটিজেন হিসেবে একটি দেশের ওপর দিয়ে অন্য দেশের ট্রানজিট সুবিধার বিরোধিতা করা যাবে না। কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আদলে ট্রানজিট দেয়ার আগে তাদের আদলে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের পরিবেশটি সৃষ্টি করা আরো জরুরি। আমরা আসলে উপমহাদেশের গরুর গাড়ির পেছনে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্লেনের পাখাটি জুড়ে দিতে চাচ্ছি।

কারণ চুন দিয়ে অনেকবার মুখ পুড়েছে। কাজেই এখন দই দেখলেও ভয় লাগে। ভয়গুলো অমূলক হলেই আমরা খুশি হবো। দুটি দেশের জনগণের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন অটুট হোক তা পলি মাটি দিয়ে গঠিত এই দেশের প্রতিটি হৃদয়ের কামনা। ইনডিয়ার উপ-রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় খালেদা জিয়ার আহ্বানটি অত্যন্ত যুগ উপযোগী। তার এই স্পষ্ট ও ঝরঝরে আহ্বানের মধ্যেই রয়েছে উপমহাদেশে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যার প্রকৃত সমাধান।

রবীন্দ্রনাথের প্রতি উভয় দেশের মানুষের ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আবেগকে কাজে লাগিয়ে যদি আমরা ফারাক্কা, তিস্তা, টিপাইমুখ, তিন বিঘা করিডোর, সীমান্ত সন্ত্রাস, সমুদ্রসীমার ন্যায়সঙ্গত বণ্টন, পাহাড়সম বাণিজ্যিক ঘাটতি প্রভৃতি দুঃখগুলো সরিয়ে ফেলতে পারি তবে বর্তমান এ উদ্যোগটি সত্যিই মহৎ বলে গণ্য হবে । কিন্তু তা না হয়ে যদি উল্টোটি করা হয় অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ও তার অমর সৃষ্টির অপব্যবহার করে আমাদের এই বেদনার চেতনাটিই সমূলে নাশ করার মতলব আটা হয় তখনই এ মহামানবের রাজনৈতিক অপব্যবহারটি অত্যন্ত কদর্য হিসেবে দেখা দেবে।

রবীন্দ্রনাথ আমাদের এ চেতনাটির উদয়ে ব্যবহৃত হোক। চেতনানাশক হিসেবে রবীন্দ্রনাথের এই ব্যবহার দেখতে চাই না।
[email protected]

Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১১ দুপুর ১:১৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×