somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কম পুঁজিতে ভালো ব্যবসা

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমাজে যাঁরা সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার কারণে কিংবা কম ঝুঁকিতে স্বল্প পুঁজি নিয়ে ছোটখাটো ব্যবসায়ে নামতে চান, তাঁরা এখনই এগিয়ে আসতে পারেন। তাঁদের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করে ছোট পরিসরে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করার সুযোগ আছে,যা ৪০ হাজার থেকে লাখখানেক টাকার মধ্যে শুরু করা যায়। নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে একটু পরিশ্রম করলেই এ ব্যবসায়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা যায়। রাজধানী ঢাকাসহ সাভার ও দেশের চার কোণের চারটি জেলার এ ধরনের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য জানা গেছে।
ঢাকার আশুলিয়া থানার পল্লী বিদ্যুৎ বাজারে এ ধরনের একটি দোকান দিয়ে আশরাফ আহমেদ খোকন নামে একজন এখন সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো আয় করেন, যিনি উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ১৯৯৮ সালে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে অডিও-ভিডিও ক্যাসেটের ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায়ের পাশাপাশি লেখাপড়াও করেন এবং ২০০২ সালে ডিগ্রি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসার ধরন পাল্টে ‘মুভি ম্যাজিক টেলিকম’ নামের একটি দোকান খুলে কম্পিউটারের মাধ্যমে মুঠোফোনে গান লোড, সফটওয়্যার প্রদান ও মেরামতসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি মোবাইলের সিম বিক্রি ও ফ্লেক্সি লোডের ব্যবসাসহ মোবাইলের সব ধরনের খুচরা যন্ত্রপাতিও বিক্রি শুরু করেন। অচিরেই ইন্টারনেট সুবিধাও চালু করবেন বলে জানান আশরাফ আহমেদ খোকন।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার আমরাড়ি নামক বাজারে একটি দোকান খুলে কম্পিউটার কম্পোজ, প্রিন্ট, ছবি তোলা ও মুঠোফোনে গান ভরে দেওয়ার কাজ করছেন স্থানীয় যুবক জহিরুল। পাশাপাশি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষে অধ্যয়ন করছেন। তিনি বলেন, ‘মা-বাবা, চার ভাইবোনসহ ছয় সদস্যের পরিবার আমাদের। বাবা একসময় কৃষিকাজ করলেও বর্তমানে বেকার। তাই অভাবের সংসারে আমার কাঁধেই পড়ে সংসারের ভার। প্রথমে কিছুদিন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যকেন্দ্রে কাজ করেছি। পরে শহরে গিয়ে কম্পিউটারের কাজ শিখি। সেই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এ রকম একটি দোকান খোলার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী পরিবারকে বুঝিয়ে জমি বন্ধক দিয়ে ৫০ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করি।’
এই দোকান থেকে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয়। জহিরুল বলেন, ‘দিন দিন দোকানের আয় বাড়বে, ব্যবসা বড় হবে, সংসারে সচ্ছলতা আসবে—এটাই আমার স্বপ্ন।’
পঞ্চগড় শহরে বর্তমানে এ ধরনের শতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে।শহরের মহসীন মার্কেটের একটি দোকানে কর্মরত আশরাফ আলীও এখন একই স্বপ্ন দেখেন। অর্থাৎ দোকান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি জানান, তাঁর বাবা পেশায় বাবুর্চি। ভাইবোন নিয়ে নয় সদস্যের পরিবার। সবার বড় তিনি। নিজে কিছু করার মতো পুঁজি না থাকায় অগত্যা এক দোকানে কাজ নেন। সেখানে আট বছর ধরে সিডি বিক্রির পাশাপাশি মোবাইলে গান ও ছবি ডাউন লোড করা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভিডিও সম্পাদনার কাজ করছেন। এই দোকানে গড়ে প্রতিদিন ৩০০ টাকার মতো আয় হয়।’ দরিদ্র পরিবারের সন্তান আশরাফ আলী জানান, তিনি কাজ করার পাশাপাশি বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছেন। ইতিমধ্যে কিছু টাকা জমিয়ে একটি কম্পিউটারের সিপিইউ কিনেছেন। ধীরে ধীরে অন্যান্য জিনিসপত্র কিনে নিজেই এ রকম একটি দোকান দেবেন। তিনি বলেন, ‘এই ব্যবসা করতে তেমন একটা পুঁজি লাগে না। ছোট একটা দোকানঘর আর একটা কম্পিউটার হলেই শুরু করা যায়।’
বাগেরহাটে কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড বাজারে কৃষ্ণপদ দত্ত নামের এক যুবক একই ধরনের ব্যবসা করছেন। তিনি জানান, ২০০৩ সালে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় তাঁর বাবার আকস্মিক মৃত্যু হয়। তখন পরিবারের আয়ের কোনো উৎস না থাকায় তাঁকেই বাধ্য হয়ে পরিবারের হাল ধরতে হয়। একটি এনজিও থেকে মোট ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ‘অনি টেলিকম অ্যান্ড সিডি সেন্টার’ নামে একটি দোকান খোলেন। প্রথম দিকে মুঠোফোনে ফ্লেক্সিলোড, চার্জার, ব্যাটারি ও সিডি বিক্রি করেন। ২০০৭ সালে কম্পিউটার, রঙিন প্রিন্টার আর ফটোকপির কাজ শুরু করেন। ছবি প্রিন্ট, মুঠোফোনে গান ভরে দেওয়া, ফটোকপি ও কম্পোজ করে ভালো আয় হয় তাঁর। এখন মুঠোফোনও বিক্রি করছেন। সফলতার ধারাবাহিকতায় একই মার্কেটে অনি ট্রেডার্স অ্যান্ড স্টেশনারিজ নামে আরেকটি দোকান চালু করেছেন। কৃষ্ণপদ দত্ত জানান, দুই দোকানে তাঁরই তিন বন্ধু খণ্ডকালীন কাজ করছেন। বর্তমানে বাগেরহাট সরকারি পি সি কলেজে দর্শন শাস্ত্রে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করছেন।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের এক দিনমজুরের ছেলে মো. রিয়াজ উদ্দিন অভাবের কারণে ষষ্ঠ শ্রেণীর পরে আর লেখাপড়া করতে পারেননি। তিনি ২০০৯ সালে তাঁর মায়ের শেষ সম্বল একজোড়া কানের দুল ও একটি নাকফুল বিক্রি করে কম্পিউটার ও একটি ইন্টারনেট মডেম কিনে ‘মেসার্স হালিমা সেবাকেন্দ্র’ নামে দোকান খোলেন। মাসিক এক হাজার টাকা ভাড়ায় দোকানটি নেন। এলাকার অনেকেই এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে ও মোবাইল ফোনে পছন্দের গান ভরতে তাঁর দোকানে ছুটে আসেন। এতে প্রতিদিনই তাঁর ভালো আয় হয়। রিয়াজ উদ্দিন জানান, তিনি একজন দিনমজুরের ছেলে।
যেভাবে শুরু করতে হবে: এ ব্যবসায়ে নামতে হলে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে ধারণার পাশাপাশি অদম্য ইচ্ছাশক্তিও থাকতে হবে। এ ধরনের দোকানে কয়েক মাস কাজ করেও নিজেকে তৈরি করা যায়। এবারে দোকান ভাড়া, সাজসজ্জা-আসবাবপত্র ও কম্পিউটারসহ অন্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের খরচের হিসাব করে পুঁজি সংগ্রহ করুন এবং ব্যবসায়ে নেমে পড়ুন।
খেয়াল রাখতে হবে: নিখুঁতভাবে আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখা এবং দোকানটা নিয়মিত খোলার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। অবৈধ ও অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। সবার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ দেখিয়ে গ্রাহক টানতে হবে।
কম্পিউটার যাতে ভাইরাসে আক্রান্ত না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এতে ব্যবসায়ে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
এ ছাড়া সফল ও স্বাবলম্বী হতে পরিশ্রম, একাগ্রতা, সততা আর মিতব্যয়িতাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন নতুন কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্যসহায়তা ও ছবি দিয়েছেন আমাদের
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি খলিল রহমান,
পঞ্চগড় প্রতিনিধি শহীদুল ইসলাম
বাগেরহাট প্রতিনিধি আহাদ হায়দার
এবং টেকনাফ প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন।

Click This Link
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×