বাবলু হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে লোকটার সামনে। তাকিয়ে আছে সে লোকটার দিকে। লোকটার স্বাস্থ্য একেবারে শুকনো লিকলিকে। তবে উচ্চতা অস্বাভাবিক পর্যায়ের উঁচু। চেহারাট লম্বাটে। নাকের নিচে বেমানান রকমের ইয়া মোট গোঁফ। গোঁফের গোছায লোকটার ওপরের ঠোঁট প্রায় ঢাকা পড়ে গেছে। পড়নে অনেকগুলো পকেটঅলা একটা রঙচটা শার্ট আর হাফ প্যান্ট। প্যান্টটা আবার অতিরিক্ত রকমের ঢোলা। বেল্ট ছাড়া শার্ট প্যান্ট ইন করা। দেখে মনে হচ্ছে যে কোন সময় খুলে পড়ে যাবার মতো বিপদজনক অবস্থা। পায়ে গাবদা গোবদা একজোড়া বুট জাতীয় জুতা। মাথায় একজরাশ উসখো খুশকো চুল। সব মিলিয়ে লোপকটার হাল হকিকত একেবারে ‘কিম্ভুতকিমাকার’ ধরণের। বাবলুর মনে পড়লো সে বহু পুরনো একটা ইংরেজী ছবিতে ব্রিটিশ আমলের একটা হাবিলদারকে দেখেছিলো। সেই হাবিলদারের সাজসজ্জা প্রায় এই লোকটার মতোই ছিলো। তবে এই ‘কিম্ভুতকিমার’ লোকটাকে আরো ‘অদ্ভুতদর্শন’ করে তুলছে যে বস্তুটি, তা হচ্ছে চশমা। এই আঁধার রাতেও লোকটার চোখে একটা কালো চশমা মানে সানগ্লাস।এই রাতের বেলা কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ চোখে চশমা পড়তে পারে? ভেবে পেলো না বাবলু। ভাবতে গিয়ে হঠাৎ নিজেই চমকে উঠলো সে। কারণ সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ না দিলেও অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ তোএবাধহয় দেয়। আর এই লোকচা যে সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ তাতো ওকে কেউ বলে নি। মানে? সময় বাঁচানোর জন্য এই পথে এসে শেষ মেষ এই অসুস্থ মস্তিষ্কের পাগলের হাতে বেঘোরে প্রাণটা হারাতে হবে নাকি! শিউরে উঠলো বাবলু। ঠান্ডা একটা কি যেন ঘাড় বেয়ে নিচের দিকে নেমে গেলো। একটা ঢোক গিলে সে অপলক তাকিয়ে রইলো লোকটার দিকে।
দুই
বাবলু গিয়েছিলো শহরে। শহরের বড় মাঠে আজ ফুটবল ম্যাচ ছিলো। রয়েল কাব আর লায়ন্স কাবের মধ্যে। বাবলু রয়েল কাবের খেলোয়াড়। ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে তার খ্যাতি ইতিমধ্যেই তাদের এই মফস্বল এলাকার গন্ডি ছাড়িয়ে গেছে আশেপাশের আরো অনেকখানে। বাবলু এখন মোটামুটি তারকা টাইপের খেলোয়াড়।ফুটবলে সে কোনমতে পা ছোঁয়াতে পারলেই বল নেটে ঢুকবে এটা নিশ্চিত। তাই বাবলুর নাম হয়ে গেছে ‘টাচ বাবলু’। শুধু বাবলু নামে অনেকেই তাকে এখন চেনে না। তবে টাচ বাবরূ বললে চেনে সবাই।
যাই হোক, আজকের খেলায় রয়েল কাব জিতেছে। তিন- দুই গোলে। রয়েল কাবের তিন গোলের মধ্যে দুইটাই বাবলুর দেয়া। তাই খেলায় বিজয় উপলক্ষে যে বিজয় অনুষ্ঠান হয়েছে সেটা ছিলো অনেকটা তাকে ঘিরেই। শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে থাকতে হলো তাকে তাই। আর অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে হয়ে গেছে অনেক রাত। বাবলুদের এদিকে কাবের আর কেউ বাস করে না। তাই অনুষ্ঠান শেষে বাবলু একাই রওনা হয়েছে বাড়ির পথে। তাকে এগিয়ে দেয়ার জন্য অবশ্য সালাম আসতে চেয়েছিলো। বাবলুই না করেছে। কারণ তাকে এগিয়ে দিয়ে আবার সালামকে ফিরতে হবে এআ একা। ওকে কষ্ট দিতে চায় নি সে। তাই একাই চলে এসেছে।
হাত ঘড়িটা দেখলো বাবলু।
চাঁদের আলো কেমন যেন একটু ঘোলাটে হয়ে এসেছে। চারপাশে কেমন যেন জমাট বাধা ধূৃসর অন্ধকার। এই অন্ধকারেও রেডিয়াম বসানো ঘড়ির কাটাগুলো জানান দিচ্ছে রাত এখন সাড়ে বারোট। মফস্বলের জন্য বেশ রাত।
বাবলু হঠাৎ শহরের বড় রাস্তা ছেেেড় মাটির রাস্তায় নেমে এলো সে। নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে লাগলো সে। হাঁটতে হাঁটতে বাবলু শ্মশানঘাটের সামনে চলে এলো। তারপর থামলো কিছুক্ষণের জন্য। তাকালো ঘাটের ভেতর দিকের বনের দিকে। কোথাও কিছু নেই। তবু কেমন যেন একটু শিউরে উঠলো বাবলু।
সকল গ্রামেই নির্ধারিত একটা ব্যাপার হচ্ছে শ্মশানঘাট বা কবর স্থান নিয়ে ভয়ানক ধরণের সব রক্ত হিম করা ভৌতিক গালগল্প থাকবে। আর তা শুনে রাতের বেলা তো দূরের কথা শ্মশানঘাট আর কবরস্থানের ছায়াও পাড়াবে না। বাবলুদের এ শ্মাশনঘাট নিয়েও একই অবস্থা। তবে তা বাবলু ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম। কারণ বাবলু এসব ব্যাপার বিশ্বাস করে না। আর তাই যে ঘাটের ভেতর দিনেও লোক ঢোকে না সেখানে সে এই মধ্য রাতে সিদ্ধান্ত নিলো যে সে শ্মশানের এই বনের ভেতর দিয়ে রওনা দেবে। কারণ এই বনের ভেতর দিয়ে গেলে সে তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছাতে পারবে। যেই ভাবা সেই কাজ। বাবলু হাঁটা ধরলো বনের ভেতর দিয়ে। কিন্তু কিছুদূরে যাওয়ার পর তার মনে হলো সিদ্ধান্তটা নেয়া আসলে ভুল হয়ে গেছে। কারণ কেউ বনে ঢোকে না বিধায় বনের ভেতর মানুষ চলাচলের কোন পথ নেই। তাই হাঁটতে খুব কষ্ট হতে লাগলো বাবলুর। গাছপালা ঝোপঝাড় সরিয়ে ডালপালা ভেঙে নিজেকেই পথ বানিয়ে নিতে হচ্ছে তাকে। পথ তৈরী করতে করতে বিরক্তি ধরে যেতে লাগলো বাবলুর। কিন্তু আবার পেছনে ফিরতেও ইচ্ছে হলো না। গাছগাছালির ছাউনি থাকায় এখানে একটু বেশীই অন্ধকার। সেই অন্ধকারে বাবলু লক্ষ্য করলো তার ডানদিকের একটা ঝোপ নড়ছে। সে লাফ দিয়ে একপাশে সরে গিয়ে হাক দিলো, ‘এই ঝোপের ভেতর কে রে?’
ঠিক তখনই ভোজবাজির মতো সব কেমন নীরব হয়ে গেলো। ঝোপের ভেতর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলো। আঁধার রাত। ঝি- ঝি পোকার একটানা ঝিরঝিরানি আর মিহি বাতাসে শুকনো পাতার খসখসে শব্দছাড়া আর কোন শব্দ নেই। নিঝুম চারপাশ। এ নীরবতাকে আরো যেন নিস্তব্ধ করে তুললো এই হঠাৎ নীঝুমতা। বাবলু আরো কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু কিছুই ঘটলো না। সে ভাবলো বোধহয় শেয়াল ছিলো ঝোপের ভেতর। এই ভেবে যেই বাবলু সামনে পা বাড়িয়েছে অমনি ঠিক তখন, ঝোপের ভেতর থেকে লাফ দিয়ে বের হলো এই কিম্ভুতকিমাকার লোকটা।
তিন
বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো একে অপরের দিকে।
বাবলু লোকটার দিকে।
লোকটা বাবলুর দিকে।
দু’জনই কেমন ঝিম মেরে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কোথায় একটা শেয়াল ডেকে উঠলো। শেয়ালের ডাক শুনে চমকে উঠে ঘোর ভাঙলো বাবলুর। কিন্তু লোকটা আগের মতোই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। এই আঁধার রাতে শ্মশানে এমন উজবুক ধরণের সাজসজ্জার এই লম্বুটাকে দেখলে ভূত ভেবে অনায়াসে যে কেউ ভীত হয়ে উঠতেই পারতো। তবে বাবলু ভূতটুতে বিশ্বাস করে না বিধায় তা হয়ে উঠলো না। লোকটাকে বাবলুর কাছে মনে হলো পাগল- টাগল। ভূতের চেয়ে পাগল বেশী বিপদজনক এ কথায় বিশ্বাসী হওয়ার পরও একটু সাহস সঞ্চয় করে বাবলু কিছুটা কঠোর গলাতেই জানতে চাইলো, ‘কে আপনি?’
প্রশ্ন করা মাত্রই জবাব দিলো লোকটা, ‘আমি? আমি তুব আলী।’ একেবারে নির্দ্বিধায়। লোকটার গলাটা কেমন ফ্যাঁসফ্যাঁসে।
‘তুব আলী? এইটা আবার কেমন নাম?’ অবাক হলো বাবলু।
লোকটা এবার একটু হাসিমুখে বললো, ‘তুব আলী নামটা পচ্ছন্দ হলো না? এইটা তো ভালো নাম। তবে আমার আসল নাম অবশ্য তুব আলী না। আমার আসল নাম হচ্ছে কুতুব আলী। তবে ‘কু’ শব্দটার অর্থ হচ্ছে মন্দ। আমি আবার মন্দ কিছু পচ্ছন্দ করি না। তাই আমার নামের মন্দ অংশটুকু বাদ দিয়ে, মানে ‘কু’ বাদ দিয়ে নাম বানিয়েছি তুব আলী।’
লোকটার কথা শুনে মজাই পেলো বাবলু। এই লোকের মাথায় যে সমস্যা বিরাজমান তা সে বুঝে গেলো। সেই সাথে এও বুঝে গেলো যে লোকটা যেমনই হোক বিপদজনক না। তবুও একটু সাবধান হয়েই রইলো সে। যে কোন পরিস্থিতির জন্য। সে লোকটাকে আবার জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি এসেছেন কোথা থেকে?’
‘কোথা থেকে মানে? আমি তো এখানেই থাকি।’
‘এখানেই থাকেন?’
‘হ্যাঁ। ওই যে ওখানে আমার বাগানবাড়ি।’ লোকটা আঙুল তুলে একটা ঘন ঝোপের দিকে দেখালো। বাবলু এবার পুরোপুরি নিশ্চিত হলো এই লোকের মানে তুব আলীর মাথা পুরোপুরি আউলা। মানে সমস্যা প্রকট। এখন কি করা উচিত ভেবে পেলো না সে।
তুব আলী আবার কথা বলা শুরু করলো, ‘আমি আসলে এ সময়ের মানুষ না।’
একই বলে পাগলের প্রলাপ, ভাবলো বাবলু। তারপর বললো, ‘ সেটা তো আপনার বৃটিশ আমল মার্কা পোষাক দেখেই বুঝতে পারছি।’
বাবলুর খোঁচা গায়ে মাখলো না তুব আলী। জানতে চাইলো, ‘আচ্ছা এখন কত সাল চলছে তোমাদের এখানে?’
‘দুই হাজার আট’
‘ও আচ্ছা। তার মানে আমি এখন অতীতে। আমি এসেছি ভবিষ্যৎ থেকে। মানে আমি যেখান থেকে এসেছি সেখানে এখন চলছে আট হাজার দশ সাল।’
আট হাজার দশ সাল ! হাসি চেপে রেখে পূণরায় খোঁচ দিয়ে বাবলু বললো, ‘ তা সেখান থেকে এলেন কি করে? গরুর গাড়িতে চড়ে- নাকি ঢেলাগাড়িতে করে?’
তুব আলী এবার অবাক হয়ে জানতে চাইলো, ‘এগুলো আবার কি জিনিস?’
‘এগুলো হচ্ছে যানবাহন।’
‘এবার কেমনতর যানবাহনের নাম। আমি অবশ্য এগুলোর কোনটাতে করেই আসিনি।’
‘তাহলে কি করে এলেন?’
‘এই্টার মাধ্যমে।’ কথা বলতে বলতে চোখের গাবদা চশমাটাতে হাত বুলালো তুব আলী।
বাবলু আর সহ্য করতে পারলো না। হেসে উঠলো হো হো করে। তুব আলী একটু অসহায়েরে মতো আশাভঙ্গ মানুষের মতো বললো, ‘বিশ্বাস হচ্ছে না?’
জবাব না দিয়ে হাসতেই থাকলো বাবলু।
হঠাৎ তুব আলী বললো, ‘দাঁড়াও দেখাচ্ছি।’
বাবলু কিছু বোঝার আগেই তুব আলী নিজের চোখর চশমাটা খুলে হঠাৎ করে পরিয়ে দিলো বাবলুর চোর্খে। বাপারটা এতই দ্রুত ঘটলো যে বাবলুর কিছুই করার থাকলো না। চশমাটা চোখে পরিয়ে দেয়ার সাথে সাথেই বাবলুর মাথাটা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠলো। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেলো। তারপর হঠাৎ করেই আবার সব ঠিক হয়ে গেলো।
বাবলু আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমে কিছুক্ষণ কিছুই মনে পড়লো না তার। তারপরই আবার হঠাৎ তার মনে পড়লো সব কিছু। আশেপাশে তাকালো সে আবার। এবার বুঝলো সে দাঁড়িয়ে আছে শ্মশান ঘাটে। সে বাড়ি ফিরছিলো। তার মনে হলো সাথে কেউ একজন ছিলো। কিন্তু কে ছিলো তা সে মনে করতে পারলো না কিছুতেই। মনে করতে না পেরে সে আবার পা বাড়ালো বাড়ির দিকে। অন্ধকার সব। হঠাৎ আশেপাশে কোথায় যন ফোঁস ফোঁস করে একটা শব্দ হলো। শব্দটা কিসের এবং কোথা থেকে আসছে বুঝতে পারলো না বাবলু।এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে সে এগোতে লাগলো। শব্দটা আরো জোরে শোনা যেতে লাগলো। বাবলু থমকে দাড়ালো। মনে হলো শব্দটা ঠিক তার সামনে থেকেই আসছে। গাছপালার ফাঁক গলে একটু জোৎস্না বনের ভেতর আসছে। সেই আলোতে বাবলু দেখতে পেলো তার ঠিক সামনেই বিশাল এক ফণা তুলে বসে আছে বড় একটা সাপ। বাবলু শিউরে উঠলো। উল্টোদিকে ঘুরে একটা ধৌড় দেয়ার চিন্তা করলো সে। কারণ এখনও কিছু করছে না সাপটা তবে নড়াচড়া করলেই ছোবল টোবল দিতে পারে। ভয়ে পাথর হয়ে গেলো বাবলু। এমন সময় সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার ঠিক বামদিকের ঝোপটা থেকে হঠাৎ করে বেরিয়ে এলো একাট বিশাল আকারের বেজী। এসেই ঝাপিয়ে পড়লো সাপটার ওপর। বেঁধে গেলো সাপ আর বেজীর লড়াই। বাবলু এ সুযোগে একটু পিছিয়ে এসে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে সে দেখতে লাগলো সাপ বেজীর লড়াই। কিছুক্ষণ পরই লড়াই থেমে গেলো। যেদিক থেকে এসেছিলো কোনদিকে না তাকিয়ে ঠিক সেদিকেই চলে গেলো বেজীটা। বাবলু দেখলো ভবলীলা ততক্ষণে হয়ে গেছে সাপটার। ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে আছে সাপটার মৃতদেহটা।
হঠাৎ বাবলুর মনে হলো তার চোখ থেকে কেউ কিছু একটা ছোঁ মেরে নিয়ে গেলো। আর সাথে সাথেই তার মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো। দু’হাতে সে মাথা চেপে ধরে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।
‘মানুষ বেঁচে তাকে তার অনাগত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্ন মানুষকে প্রেরণা দেয় বেঁচে থাকার। আগে আগে ভবিষ্যৎ জেসে ফেললে এই প্রেরণা শেষ হয়ে যায়। তখন মানুষ বেঁচে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই আগেই ভবিষ্যৎ জেনে ফেলা ঠিক না।’ বাবলু ফ্যাসফ্যাসে একটা গলা শুনতে পেলো।
মাথার ঝিমঝিমানি কমতেই চোখ মেললো সে। বুঝতে পারলো গলাটা তুব আলীর। চশমা হাতে দাঁড়িয়ে আছে সে। এটা খুলে নেয়ার কারণেই কি তার মাথাটা এমন করে উঠলো! তাহলে এতক্ষণ তাহলে সে কি দেখলো! ভেবে পেলো না বাবলু। তুব আলী আবার বললো, ‘দেখলে তো তোমার ভবিষ্যৎ দেখিয়ে দিলাম। এইবার বুঝেছো এইটা কি ধরণের চশমা? আসলে এটা একটা টাইম মেশিন। এটা দিয়ে অতীত ভবিষ্যৎ সবখানে যাওয়া যায়। ভবিষ্যৎ জানার পক্ষপাতি নই আমি। তবুও তোমাকে চশমার ভেলকি বোঝানোর জন্য তোমাকে দেখালাম। আশা করি বুঝতে পেরেছো। তো আজ আসি। আমার আবার লাঞ্চ করার সময় হয়ে গেছে। গুডবাই।’ তুব আলী নিজের হাতের ঘড়ি দেখলো। তারপর চশমাটা চোখে পড়ে ফেললো এবং হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলো।
কি ঘটলো কিছুই বঝতে পারলো না বাবলু। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেই হেসে উঠলো। ভাবলো এতক্ষণ যা দেখেছে সব মনের ভুল। অবচেতন মনের খেয়াল কল্পনা সব কিছু। কিন্তু তার অবচেতন মন কেন এই ঘটনা তৈরী করলো! ভবিষ্যৎ দেখা! হা! হা! হা! হেসে উঠলো নিজে নিজেই। তারপর বাড়ির পথ ধরলো সে।
হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর এগোতেই এক জায়গায় এসে থামলো বাবলু। কারণ এই জায়গাটা তার পরিচিত মনে হচ্ছে। তার মনে হতে লাগলো এই জয়গায় সে এর আগেও এসেছে। কিন্তু আবার তার মনে হলো এই বনে তো এর আগে সে কখনো আসে নি। তাহলে! ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সে একটা শব্দ শুনতে পেলো। ফোঁস ফোঁস করে একটা শব্দ হচ্ছে। বাবলু একটু এগিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো বিশাল ফণা তুলে বসে আছে একটা সাপ। এই সাপটাকে দেখেও তার পরিচিত মনে হলো। কারণ কি? ভাবতে ভাবতে তার সব মনে পড়লো। তার মানে তুব আলীর ব্যাপারটা আসলে সত্যিই ঘটেছে? ভাবনায় ছেদ পড়লো আরো জোরে ফোঁস ফোঁস শব্দ শুনে। সাপটার ভাবভঙ্গি ভালো ঠেকছে না। কিন্তু তবু পিছু না হটে বাবলৃ তাকালো তার বামদিকের ঝোপটার দিকে। আর ঠিক তখনি ঝোপ থেকে বেরিয়ে এলো একটা বিশাল বড় বেজী। বেরিয়েই ঝাপিয়ে পড়লো সাপটার ওপর। বেঁধে গেলো সাপ- বেজীর লড়াই।
বাবলু হতভম্ব হয়েদাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




