somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি রাত অথবা প্রতিটি রাতের গল্প (তৃতীয় অধ্যায়)

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি রাত অথবা প্রতিটি রাতের গল্প ১
একটি রাত অথবা প্রতিটি রাতের গল্প (দ্বিতীয় অধ্যায়)

বাড়ি যাবার দুই রাত পরের ঘটনা

টিনের চালে বৃষ্টির গা এলিয়ে ঝরে পড়ার শব্দে যেনও এক ঘোর লেগেছিলো তন্বীর। শুধু কি বৃষ্টির ডাক! অর্কর শরীরের উত্তাপ, শুধু তার একান্ত পরিচিত অর্কর গায়ের মিষ্টি সুবাস, অর্কর বাকা ঠোটের হাসিটা আর অগোছালো মাথার চুল। যেখানে হাত দেবার অধিকার এক সময় শুধু তন্বীর হবে। আর কারো না। কক্ষনও না।আচ্ছা, অর্ক কি কিছু বোঝে না! এখনও কেন তাকে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করছে না! নাকি ধরেই নিয়েছে না বললেও তন্বী শুধু তারই থাকবে। হুহ! ভাবলেই বুঝি হোলো! একদম না! অর্ককে আগে এসে বলতে হবে।

আচ্ছা!! অর্ককেই বা বলতে হবে কেন! সে নিজেও তো বলতে পারে। অর্ক তো মুখে কোন দিন বলবেই না। নাহ, এবার ঢাকা গিয়ে নীল শাড়ি, আর সবুজ টিপ পড়ে বলবে অর্ক সাহেব, আজকে আমাকে ভালোবাসার কথা না বললে আমার টিপ নিয়ে যেতে দেবো না।


তন্বীর ঘোর লাগা ভাঙ্গে ফোনের শব্দে, তাকিয়ে দেখে অর্কর ফোন।তন্বীর শরীর হিম হয়ে যায়। পাশের ঘরে মা শুয়ে আছে, ফোনের শব্দে উঠে গেলে কি হবে!! ঝাপিয়ে ফোনটা ধরে জানালার পাশে চলে যায়। ভাগ্যিস বৃষ্টি পড়ছিল! ফোনটা ধরেই একটা ঝাড়ি লাগায় অর্ককে--
--এই তোমাকে না ফোন করতে মানা করেছিলাম! কি আজব আমার একটা কথা যদি কানে ঢোকে! এইরাতের বেলা ফোন করার মানে টা কি!

ওপাশ থেকে কোন উত্তর আসে না। তন্বী ভাবে বৃষ্টির জন্য বোধ হয় শোনা যাচ্ছে না। কিছুক্ষন হ্যালো, হ্যালো করে। কোন উত্তর আসে না ওপাশ থেকে।


ওপাশের গল্প


দুদিন পর তন্বীর গলাটা শুনে মনে হচ্ছিল এই বুঝি সে তার প্রান ফিরে গেলো। দুই দিন কি ভয়ঙ্কর অস্থিরতায়, দুশ্চিন্তা আর সিদ্ধান্তহীনতায় কাটিয়েছে সে জানে। কিন্তু অর্ক ভেবে পাচ্ছে না তন্বীকে সে কি বলবে। সে নিজেও জানে তন্বী তাকে কত্ত ভালবাসে। কিভাবে এই মেয়েটাকে কষ্টটা দেবে অর্ক! সে নিজেই বা কি করে নিজেকে সামলে নেবে! কি করে সে তন্বীকে বলবে সে আর কোন দিন তন্বীর সাথে কথা বলবে না। তন্বী যেনও তাকে ভুলে যায়। তন্বী শুধু তার ভালো বন্ধুই ছিলও। আর কিছু না। কি করে বলে এসব??


ডানা ভাঙ্গা শালিক জোড়া



হঠাত অর্ক টের পেলো তন্বী ওপাশ থেকে তাকে ডাকছে। আহারে! এই ডাক কি আর কোন দিন শুনতে পাবে অর্ক! ভারী কণ্ঠে অর্ক বলল--
আছি, আমি লাইনে আছি। কেমন আছো তুমি?

তন্বী কি জবাব দেবে? ওর তো ইচ্ছে করছে তার ভাললাগা ভালোবাসার কথা এখন ই বলে দিতে । কিন্তু ভালবাসা চেপে বলল--
আমি তো ভালই আছি, মা এত্ত আদর যত্ন করছে।কত্ত দিন পর বাড়ি এলাম! খুব ভালো আছি।

অর্ক বুঝতে পারেনা কি বল্বে।মেয়েটার গলায় খুশি ঝরে পড়ছে। এমন সময়ই তাকে এই কষ্ট টা দিতে হবে! হ্যাঁ, দিতে হবে। জীবনে সব কিছু নিজের ইচ্ছায় চলে না। তাকেও রূঢ় হতে হবে।

--তন্বী, তোমাকে কিছু বলার ছিলও!

তন্বীর সারা গা ঝিমঝিমিয়ে উঠলো, তবে কি যে কথা দুজন দুজনকে বলতে ছাচ্ছিলসেটা আজ অর্ক তাকে বলে ফেলবে! খোদা!! আনন্দে, শিহরনে, তন্বীর সখে পানি চলে এসেছে প্রায়।

--তন্বী, শুনছো?
---হু, বোলো! তন্বীর গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না।
--তন্বী, তুমি খুব ভালো একটা মেয়ে। তোমাকে যে পাবে, সে পৃথিবীর সব চেয়ে ভালো মেয়েটিকে তার সাথে পাবে।তমার সাথে থাকা আমার এক একটি মুহূর্ত..............কি যে অসাধারন গেছে আমি বলতে পারবো না। বঝাতে পারবো না।
--তন্বী নিশ্চুপ।ফোনটা ধরে রাখতেও হাত কাঁপছে।
--কিন্তু তন্বী, তুমি আমাকে ভুল বোঝ না। আমি তোমাকে শুধু বন্ধু হিসেবেই দেখেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু আমাদের মধ্যে হতে পারে না। তুমি আমার জীবনের অসাধারন একটা অংশ হয়ে থাকবে সব সময়। কিন্তু আজকের পর, এই মুহূর্তের পর, কোন দিন আমাদের মধ্যে কোন কথা হবে না।তুমি কোন দিন আমাকে খুজবে না। কিছু জানতে চাইবে না। যেদিন সময় হবে, কোন এক ভোরে, আমি তোমাকে জানাবো। আমি তোমাকে ফোন করে বলবো কেন আমি এমন করলাম। কিন্তু এর আগে, তুমি নিজে থেকে কোন দিন কিচ্ছু জানতে চেয় না।


কথা শেষ করেই অর্ক ফোন রেখে দেয়। তন্বী হাত দুটো ভাজ করে নিজেকে আকড়ে ধরে মাটিতে বসে পরে। জানালা গলে ঢুকে পরা বৃষ্টির আঙ্গুল সযত্নে তার চোখের পানি মুছে দিতে থাকে।


চলবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিপ্লবের নিঃশব্দ মূল্য: অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বাংলাদেশি ছাত্র আন্দোলন

লিখেছেন মুনতাসির, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:২৫

এ লেখাটি বেশ বড়ো। এখানে ছোট করে দেয়া হল। পুরো লেখাটি যদি কেও পড়তে চান, তবে নীচের লিঙ্ক থেকে পড়তে পারবেন।


সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন পর্যালোচনা চলছে। জাতিসংঘের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিরহ

লিখেছেন গোধুলী বেলা, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৪

একটি কবিতা লিখা হবে বাদে কিছুক্ষণ
মেঘমালারা বারি পাত করিছে ক্ষণে ক্ষণ।
গগনভেদি কামান গোলা পরিছে মুহুর্মুহু
দুরুদুরু ভয়েতে কাপিছে বুক বাদ যায়নি কেহ।

জানালার পাশে  প্রেমিকার ছলছল চোখ
বৃষ্টিরো সাথে সে কেঁদে  ভাসাইছে বুক।
হাজারো... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু কিছু মানুষ বলার শুরু করেছে, "আমরা আগেই ভালো ছিলাম"।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:০২



একাধিক কারণে মানুষ ইহা বলার শুরু করেছেন: (১) সাধারণ মানুষ কোমলমতিদের ক্রমেই চিনতে পারছেন, ইহা ভীতি ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে; কোমলমতিরা সরকারের গুরুত্বপুর্ণ অনেক পদে আছে ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি - একাল সেকাল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮



টানা বৃষ্টির মধ্যে মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি । অন্যদিকে ফার্মের মুরগির এক পিছ ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।শুধু মরিচ নয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলা যদি পরাজিত হয়, "দ্রব্যমুল্য"ই হবে ১ নম্বর কারণ

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭



দ্রব্যমুল্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সুচকগুলোর ১ টি বড় প্যারামিটার; ইহা দেশের অর্থনীতি ও চলমান ফাইন্যান্সের সাথে সামন্জস্য রেখে চলে; টাস্কফোর্স, মাস্কফোর্স ইহার মুল সমাধান নয়; ইহার মুল সমাধন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×