somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সময়ের কন্ঠ
সময়ের সাথে চলি, সময়ের কথা বলি।

কোরআনের ফরায়েজ নীতিতে ভুল!

১৯ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোরআনের ফরায়েজনীতি নিয়ে প্রথমে প্রশ্ন তুলেছিলেন আরজ আলী মাতুব্বর তাঁর সত্যের সন্ধান নামক বইয়ে। মাতুব্বরের ভাষায়, ফরায়েজ বিধানের মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায় যে, মৃতের ত্যাজ্য সম্পত্তি তার ওয়ারিশগণের মধ্যে নির্ধারিত অংশ মোতাবেক বন্টন করলে কেউ পায় এবং কেউ পায় না। উদাহরণ স্বরূপ, যদি কোনো মৃত ব্যক্তির মা, বাবা, দুই মেয়ে ও এক স্ত্রী থাকে, তবে মা ছয়ভাগের এক ভাগ, বাবা ছয়ভাগের এক ভাগ , দুই মেয়ে একত্রে তিনভাগের দুই ভাগ এবং স্ত্রী আটভাগের এক ভাগ পাবে। কিন্তু মা বাবা ও কন্যাদের দিলে স্ত্রী কিছুই পায় না। এ ক্ষেত্রে মোট সম্পত্তি ১-এর স্থলে ওয়ারিশগণের অংশের সম্পত্তি বেশী হয় । অর্থাৎ ষোল আনার স্থলে হয় আঠার আনা। আরজ আলী মাতুব্বর সাহেবের মাতুব্বরীর পর হাল আমলের নাস্তিকেরা এটা নিয়ে বেশ গবেষনায় মেতে উঠেছেন এবং কোরআনে ভুল আছে মর্মে নানা নিত্য নতুন যুক্তি দিয়ে ব্লগে ফেসবুকে লিখে বগল দাবাচ্ছেন। এজন্যে তারা একটা কমন প্রশ্ন করছেন আল্লাহ কেমনে ভুল করেন? ফরায়েজে আউল নীতি কেন? আল্লাহর ভুল কেন আলী এবং ওমরকে ঠিক করতে হলো? আল্লাহ তো অংক জানেন না।

উত্তরঃ

কোরআনে ভুল থাকার কোন বিষয় আজ পর্যন্ত কেউ প্রমান করে দেখাতে পারেনি। ইনশাল্লাহ পারবেও না। উত্তরাধিকার বিধান কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন কোরআনের ২নং সুরার (সুরা বাকারা) ২৪০ নং আয়াতে (স্ত্রীর অংশ), কোরআনের ৪নং সুরার (সুরা নিসা) ৭ নং আয়াতে (পিতা-মাতার অংশ)৮ নং আয়াতে (আত্মীয়স্বজন, এতীম মিছকিনের কথা) ১১ নং আয়াতে সন্তানদের অংশ, ১২ নং আয়াতে পূনঃ পিতা মাতার ও স্ত্রীর অংশ, (ঋণ আগে পরিশোধের কথাও), ১৭৬ নং আয়াতে ভাইবোনের অংশ বর্ণনা করা হয়েছে।

ইসলামী ফরায়েজ বা উত্তরাধিকার আইনকে বুঝতে হলে কোরআনের প্রতিটি শব্দ আয়াত মেনে সেই আলোকেই ভাগ-বন্টন করতে হয়। অংক করার সময় যেমন প্রথমে ভাগ, তারপর গুন, তারপর যোগ, সবশেষে বিয়োগ করতে হয়, এখানেও তেমনি। এনীতির আগে পরে হলে হিসাব গড়মিল হবে। অংক মেলাতে পারবেন না কোনভাবেই। তেমনিভাবে ফরায়েজের নীতি মেনে প্রথমে স্ত্রী এবং পিতামাতাকে দেয়ার পর বাকি অংশ পুত্র/কন্যাদের দিলে হিসাব কোনভাবেই গড়মিল হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর হিসাব কোনভাবেই ষোল আনার পরিবর্তে ১৮ আনাও হয় না। এটা হয় জ্ঞানের স্বল্পতার কারনে। সুরা নিসার ১১ নং আয়াতে সন্তানদের সম্পত্তির কথা বলা হয়েছে। ১২ নং আয়াতে পিতা মাতা ও স্ত্রীর কথা বলা হয়েছে। ১২ নং আয়াতে একথাও বলা হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টনের আগে তার ঋণ পরিশোধ ও তারপরে অছিয়ত থাকলে সেগুলো পুরণ করার। কাজেই কোনটা আগে কোনটা পরে প্রথমে সেটা বুঝতে হবে। কোরআনের বিধান অনুযায়ী প্রথমে মা বাবা ও স্ত্রী/স্বামীর অংশ দিয়ে তারপরে সন্তানদের দিতে হয়। সুরা নিসার ১১ নং আয়াতে পুত্র না থাকলে, কন্যা একজন থাকলে কি পরিমাণ এবং একাধিক থাকলে কি পরিমাণ পাবে তার বর্ণনা রয়েছে। ইসলামী স্কলার ডঃ জাকির নায়েকের মতে ইসলামী ফরায়েজের বিষয়টি খুবই জটিল। একজন স্কলার তার সারাজীবন ফরায়েজের গবেষনায় কাটিয়ে দিতে পারেন।

একথাও সত্য যে, এধরনের সমস্যায় আমাদের উপমহাদেশের হানাফী মাজহাবীরা ‘আউল নীতি’ অনুসরন করেন। এ কারনেই আমাদের দেশে এসব প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। কেননা স্ত্রী আটভাগের এক ভাগ, পিতা মাতার প্রত্যেকে ছয়ভাগের এক ভাগ করে এবং দুই কন্যা একত্রে তিন ভাগের দুই ভাগ পেলে এক্ষেত্রে আউল নীতিতে হর ২৪ হয়, আর লব ২৭, আউল নীতিতে পুরো ক্ষেত্রেই হর ২৭ ধরে হিস্যাংশ বন্টন করা হয়। ইসলামী স্কলারদের এই বন্টন নীতিকেও ভুল বলা যায় না। কেননা তারা প্রত্যেকের প্রাপ্য শেয়ারের কোন পরিবর্তন না করেই তা তুল্যাংশে সমান করে দিয়েছেন মাত্র। কোরআনে বর্ণিত কারো শেয়ারের পরিবর্তন করেননি। তারপরও ইসলামী স্কলারদের এ নীতিকে ইজতেহাদী ভুল বলা যায়। ইজমা কিয়াসে ভুল হলেও আল্লাহ ক্ষমা করবেন। ইজমা কিয়াস ইসলামেরই স্বীকৃত নীতি। কোনকিছু কোরআন থেকে বুঝতে না পারলে স্কলাররা তার ব্যাখ্যা দেন। তাদের ইজতেহাদী ভুল হতেই পারে। সেটাকে পুঁজি করে ‘কোরআনে ভুল খোঁজা’-রা গলদঘর্ম হয়ে যাচ্ছেন। স্কলাররা গবেষনা করে দেখেছেন, কোরআনের প্রতিটি অক্ষর মেনে এগিয়ে গেলে তাতে ভুল বা বৈপরিত্য তো দুরের কথা, এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যা কেয়ামত পর্যন্ত গবেষনা করেও শেষ করা যাবে না।

আর কোরআনে যে ভুল নেই, কোরআন এ চ্যালেঞ্জ তো দিয়েই রেখেছে। কোরআনের আলোকে বার বার হিসাব করে দেখাও কোথায় ভুল আছে!

নাস্তিকদের আরেকটি কমন বুলি, সেটা হল পিতার পূর্বে পুত্র মারা গেলে দাদার সম্পত্তি নাতী-নাতনীরা পায় না। কিন্তু সরকার আইন করে পিতা দাদার আগে মারা গেলেও নাতী-নাতনীরা দাদার সম্পত্তি পাওয়া নিশ্চিত করেছেন। আল্লাহর আইনে এরকম অসংগতি কেন? সরকারকে কেন সেটা ঠিক করতে হলো?

উত্তর: দাদার আগে পুত্র মারা গেলে নাতী নাতনীরা সম্পত্তি পায় না এটা হানাফী মাযহাবের একটা সিদ্ধান্ত। তবে হানাফী মাযহাব মতে, খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধানই ঐরুপ নাতি-নাতনিকে তাদের দাদা থেকে তাদের পিতা যে সম্পত্তি পেতো সে পরিমাণ সম্পত্তি ক্ষতিপূরণ বাবদ দেবে। বর্তমানে যেহেতু ইসলামী শাসন নেই, খলিফাও নেই, তাই রাষ্ট্রীয় ভাবে অর্থমূল্য না দিয়ে মূল সম্পত্তি দেয়া ধর্মের মুল নীতির বিরুদ্ধে যায় না। এতিমদের হক সম্পর্কে কোরআনে বারবার বলা হয়েছে। এতিমদেরকে দেবার কথাই বলা হয়েছে। এতিমকে বঞ্চিত করার কথা বলা হয়নি। এবার সরকার যদি আইন করে সম্পত্তি দেবার জন্যে বাধ্য করে সেটা কি কোরআনের বিপরীত হয় কি করে? ইসলামের নীতিতে (মালেকী-শাফেয়ী ও শিয়া মাযহাবেও) পিতার পূর্বে পুত্র মারা গেলেও দাদার সম্পত্তি নাতী-নাতনীরা পায়। এখানে আল্লাহর আইনের পরিবর্তন কোথায় হলো?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:০১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×