somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সালাফি-আহলে হাদিসদের প্রধান অস্ত্র

৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আহলে বাইত বিদ্বেষী হযরত মুয়াবিয়ার প্রতিষ্ঠিত উমাইয়া রাজতন্ত্রের শাসকেরা নিজেদের সুবিধামত আকীদার জন্ম দিয়েছে। ধর্মের অনেক কিছুই হাদিসের নামে নিজেদের পক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। হাদিস সংগ্রাহক ইমাম নাসায়ী হযরত মুয়াবিয়াকে সম্মান না করায় রাজপথে প্রকাশ্যে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। হাদিস সংগ্রাহকরাও যে স্বাধীন ছিলেন না, তা এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত। মহানবীর মৃত্যুর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে আহলে বাইতের বিরুদ্ধে নানা জুলুম নির্যাতন শুরু হয়ে যায়। এতো জুলুম নির্যাতন আর বর্বরতার ইতিহাস অন্য কোন জাতির আছে বলে জানা যায় না। উমাইয়া-আব্বাসীয়রা ক্ষমতার জন্যে সবকিছুই করেছে। নানা জাল হাদিস আর বানোয়াট হাদিছ দ্বারা মুয়াবিয়াকে উচ্চমর্যাদার সাহাবি বানিয়েছে, আহলে বাইতের হত্যাকারীদের ভাল মানুষ হিসাবে চিত্রিত করেছে, রাজতন্ত্রের অনুকুলে সবকিছুকে ব্যাখ্যা করতে পেরেছে। তাদের আকাম কুকামকে বৈধতা দিতে মহানবীর চরিত্রকেও কলুষিত করার চেষ্টা করেছে। রাজতন্ত্রের অনুকুলে সৃষ্ট যেসব আকীদার জন্ম হয়েছে তা হলো, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত, ওহাবী মতবাদ, সালাফি এবং আহলে হাদিস ইত্যাদি। এসবের গুরু ছিলেন রাজতন্ত্রের মোল্লা ইবনে তাইমিয়া নামক ব্যক্তি। ইবনে তাইমিয়া সৃষ্টিকর্তার দেহবাদী তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন এবং আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য হযরত আলীকে ভুল ব্যক্তি এবং কোরআন অমান্যকারী ব্যক্তি মর্মে আখ্যায়িত করতেন (নাউজুবিল্লাহ)। একথা বলাই বাহুল্য যে, উমাইয়া-আব্বাসীয়রা রাজতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে বরাবরই ধর্মের আশ্রয় নিয়েছে। খোলাফায়ে রাশেদীনের পর মুসলিম বিশ্ব আর কখনোই স্বাধীন হতে পারেনি। এখনো রাজতন্ত্রের অধীনে মদীনা থেকে এইসব রাজতান্ত্রিক আকীদার শায়খ উৎপাদন করে গোটা মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এবং এর ফলশ্রুতিতে সৌদি আরব একটা চরম অনুন্নত, সভ্যতা থেকে দুরে ও পশ্চাদপদ দেশ হওয়া সত্বেও গোটা বিশ্বে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হচ্ছে। সৌদির এইসব প্রডাক্ট আমাদের দেশকেও গ্রাস করেছে। এইসব রাজতান্ত্রিক মোল্লারা একটা দারুন অস্ত্র ব্যবহার করে আসছে সেই সুদীর্ঘকাল থেকে। নিম্নের উদাহরন থেকে বিষয়টা স্পষ্ট হবে।
ডাকাতরা ছুরি ধরে ডাকাতি করেন। ছুরি বা পিস্তল হলো তাদের অস্ত্র। অস্ত্রের ভয় দেখিয়েই তারা আপনার সব কেড়ে নেয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের রাজপথে কয়েকটা ভিক্ষুক দেখবেন যারা সারাগায়ে গু মাখিয়ে আপনার থেকে ভিক্ষা আদায় করবেই। আপনি ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও ভয়ে ভিক্ষা দিতে বাধ্য হবেন। রাজতন্ত্রের মোল্লারাও তেমনি। তারা মানুষকে ভয় দেখায়, তারা মদীনা থেকে সহীহ ইসলাম শিখে এসেছে। যারা তাদের কথা মানবে বা তাদের অনুসরন করবে না তারা কাফের। সালাফি-আহলে হাদিসের মানহাজই সঠিক এবং একমাত্র সহীহ মানহাজ। না মানলে কাফের।’
সালাফি-আহলে হাদিসরা ইতোমধ্যে রাজতন্ত্রের টাকায় নানা ওয়াজ মাহফিল করে বেড়াচ্ছে এবং তা ইউটিউব-ফেসবুকে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিয়ে জনমত গঠন করছে। আর এটা করতে গিয়ে ছড়াচ্ছে জঙ্গীবাদ, সহিংসতা এবং নানা ফ্যাতনা-ফ্যাসাদ। তাদের মতের সাথে একমত না হলেই তাকে ‘শিয়া রাফেজী’ এবং ‘কাফের’ আখ্যা দিয়ে হত্যায় প্ররোচিত করছে। হাদিস না মানলে তাকে হত্যা করার প্ররোচনা দিচ্ছে। কেউ নামাজ না পড়লে তাকেও হত্যা করা যায়েয মর্মে ফতোয়া দিয়ে বেড়াচ্ছে। কৌশলে বলছে যে, এ হত্যা কার্যকর করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্র ক্ষমতা যেহেতু তাদের মত ইসলামীদের হাতে নেই, কাজেই তাদের অনুসারীরাই সে পথে এগুচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক হত্যাকান্ড ঘটে গেছে। হত্যাকারীরা সবাই সালাফি মতাদর্শের। শায়খ আবদুর রহমানের কথা নিশ্চয় ভুলে যাননি। সরকার এইসব সালাফি তথ্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কখনো কঠোর হয়নি যে কারনে তা হলো, এরা জনগণের বিপক্ষে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করলেও, সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান নেই। তারা সরকার উৎখাত করতে চায় না। চায় তাদের মানহাজ বা মত চাপিয়ে দিতে। যে কারনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের ব্যাপারে খুব একটা কঠোর হয়নি। আর সর্বনাশটা হয়েছে এখানেই।

আমাদের দেশের ধর্মভীরু মানুষ সহজেই এদের শিকার হচ্ছে। এই সব মোল্লারা মদীনা থেকে রাজতন্ত্রের শেখানো রাজতান্ত্রিক দীক্ষা পেয়ে এসেছে। আপনি হাজারো যুক্তি দিয়েও তাদের সৎপথে আনতে পারবেন না। তাদের মতের সাথে না মিললেই তারা গালি ছুড়ে, শিয়া রাফেজী, কাফের ইত্যাদি বলে। এভাবেই বিস্তার ঘটছে সহীহ আকীদার নামে রাজতান্ত্রিক ভ্রান্ত আকীদার। হাদিসের নামে মানুষকে জাহেলিয়াতের দিকে টেনে নেয়া হচ্ছে। হাটা চলা উঠা বসা থেকে শুরু করে সবকিছুই এরা কথিত হাদিসের ফরমেটে করে। অথচ পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ৭০ বারেরও বেশী বলেছেন, কোরআন হলো চিন্তাশীলদের জন্যে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ ধর্ম কর্মটা মোল্লাদের উপর ছেড়ে দেওয়ায় এরা পুরো সুযোগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলতঃ রাজতন্ত্র-বান্ধব সালাফি ধর্ম এদেশে দ্রূত বিস্তার লাভ করছে। এখনই সতর্ক না হলে প্রকৃত ইসলাম থেকে যে আমরা দ্রত সরে যাবো তা-ই নয়, আমাদের সন্তানরাও জঙ্গীবাদের ঘোর অন্ধকারের দিকে পা বাড়িয়ে দেবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:৪২
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×