কিছুদিন ধরে লেখার ইচ্ছাটা প্রবল ভাবে আকর্ষণ করছে। জানি না কেমন লিখেছি। কারণ এটাই আমার প্রথম কোন লেখা। সেই বাংলাদেশ থেকে চলে আসার পর প্রথমবারের মত সামহোয়্যারইন এ লিখছি। জানি না লেখাটা কেমন হল। আপনাদের যে কোন মতামত জানাবেন আশা করছি।
স্বপ্নের রাজকন্যা
পর্ব -১
সেদিন আকাশে কি মেঘ ছিল? মনে হয় না। যদিও আমার প্রিয় হল বৃষ্টি।তবে বৃষ্টিতে ভিজলে শরীর খারাপ করবে তাই ভেজা হয় না। আবার অফিস ও আছে। এত বড় একজন মানুষ যদি রাস্তায় ভিজে তাহলে মানুষ কি ভাববে। যাই হোক বৃষ্টি থাকুক বা না থাকুক সেই দিন ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় একটি দিন। শুধুই কি প্রিয়? না আমার জীবনে সবচেয়ে বড় একটি দিন। সেদিনই আমি খুজে পাই আমার দেখা স্বপ্নের রাজকন্যাকে। কি পাঠক মনে হচ্ছে এটি কি একটি সিনেমার কাহিনী নাকি যে এখানে রাজকন্যা আসল। আসলে তা না এটি কোন সিনেমার গল্প নয়। যাই হোক সেই কাহিনী বলি আপনাদের। আসলে আমি গিয়েছিলাম একটি বিয়েতে। অবশ্য বিয়েটি ছিল সেই রাজকন্যার বড় বোনের। আর বরটি ছিল আমার অফিসেরই এক কলিগ। তো আমরা গিয়েছিলাম আমাদের মত যারা ইয়ং কলিগ আছে সবাই একসাথে। আর আমাদের সবাইকে বরণ করে নিল মেয়ে পক্ষ। তবে ওখানেও একটি মজা হয়েছে। সেই মজার কাহিনী থেকে কি আপনাদের বঞ্চিত করা আমার উচিত হবে? মনে হয় না। বিয়ের অনুষ্ঠানটি হয়েছিল পার্টি প্যালেস এ। ঐ যে শ্যামলীতে একটি কমিউনিটি সেন্টার আছে না ঐটাতে। আমাদের প্লান ছিল বরের গাড়ীর ঠিক আধা ঘন্টা আগে আমরা আমাদের মধ্যে একজন বর সাজিয়ে একই ভাবে গাড়ী সাজিয়ে কমিউনিটি সেন্টার এ হাজির হব। যেই ভাবা সেই কাজ। অবশ্য আইডিয়াটা ছিল আমারই। কে বর হবে কে বর হবে যেই না সবাই খোজা খুজি করতে ছিলাম অমনি সবাই ধরে আমাকে বর বানিয়ে দিল। কারণ ওরা বলল আমার মাথায় নাকি সব সময় বদ চিন্তা ভর করে। আর যেহেতু পুরো প্ল্যানটা আমার সেহেতু আমি যে কোন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারব। অবশ্য আমার বন্ধু (কলিগ) বলল দোস্ত সাবধান ওরা যদি তোরে আমার বউর পাশে বসিয়েও দেয় তুই কিন্তু উল্টা পাল্টা কিছু করিস না। যদি করিস তাহলে কিন্তু আমি এখুনি ওরে বলে দিব। আমার মাথায় সব সময় দুষ্টুমি বুদ্ধি থাকে। তাই মুখ থেকে কিছু বললাম না। বললাম তুই চিন্তা করিস না। তোর বিয়ে তো আমার আগে হচ্ছে। যদি আমি কিছু উল্টাপাল্টা করি তাহলে তুই কি আমারে ছেড়ে দিবি?
যাই হোক অবশেষে আমি বর সেজে আরও কলিগদের নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারণত কোন বর পক্ষ নির্দিষ্ট সময়ে যায় না) গিয়ে উপস্থিত কমিউনিটি সেন্টারে। অবশ্য এখানে আমাকে একটি ট্রিক্স খাটাতে হল। আর তা হল ফুল দিয়ে আমার মুখ পুরোটা ঢেকে দেয়া হল যেন না দেখা যায়। টুপির সাথে ফুল গুলি ঝুলতে থাকল। পুরো জামাই বেশে হাজির কনে পক্ষের সামনে। কনে পক্ষ তো রেডি ছিল না। কি করবে কি করবে তাড়াহুরো করে আমার কলিগের শ্যালিকা (অবশ্য তখন মুখ ঢাকার কারণে দেখতে পাই নাই) আমাকে দুলাভাই ভেবে গেটে আটকে দিল। আর ওদের কি দোষ, দুলাভাই ভাববে না কেন। আমি তো পুরা দুলার বেশেই হাজির। গেটে ওরা যা দাবি করল তা মিটিয়ে দিলাম। কোন হইচই করলাম না। ওরা অবশ্য এতে ভীষণ অবাক হলেও খুশি হল। এর পর শ্যালিকা হাত ধরে বরণ করে নিল (আহ তখন যদি জানতাম ওর হাত তাহলে আর ছাড়তাম না সারা জীবনেও)। অবশ্য ওর আপন শ্যালিকা না। ওর খালাত শ্যালিকা। মুরুব্বিরা অবশ্য বলতে লাগল আমাদের সাথে কোন মুরুব্বি আসে নাই কেন? আমরা বললাম তারা আসবে একটু পর। আমরা আগে চলে এসেছি তারা জ্যামে আটকা পড়েছে। আমার সেই বন্ধু কলিগের শ্যালিকা আমাকে দুলাভাই দুলাভাই করতে লাগল। আমি মুখ দিয়ে কোন কথা বললাম না। কারণ তাহলে ধরা পড়ার একটা সম্ভাবনা থাকতে পারে। আমার কথার উত্তর আমার আশ পাশ থেকে অন্য কলিগরা দিতে লাগল। শ্যালিকা বেশ দুলাভাই দুলাভাই করে দুষ্টুমি করতে লাগল। আমার ভালই লাগতে শুরু করল। মনে হল ইস কবে যে বিয়ে করব। এই সময় বেরসিক এর মত আসল বর এসে হাজির। সবাই তখন আমাকে নিয়ে ব্যস্ত। গেটের সামনে আমার বন্ধু ওর আত্নীয় স্বজন নিয়ে হাজির। মুরুব্বিরা দেখে তো অবাক আরে আবার বর আসল কোথা হতে? সবাই যখন অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইল তখন আমি আমার মুখের সামনের থেকে ফুল গুলো সরিয়ে দিলাম। আর সবাই এত অবাক হল মনে হয় যেন ভুত দেখছে। অবশ্য তখন আমার চোখের সামনে বসা ছিল একটা পরী। আমিও অবাক হয়ে ঐ পরীর দিকে তাকিয়ে রইলাম। মানুষ এত সুন্দর হয়? আমার বন্ধুটি তখন ভিতরে চলে আসল আর সবাইকে কারণটি ব্যাখ্যা করল। সবাই অবশ্য তখন হাসতে হাসতে আমার দুষ্টুমির প্রশংসা করতে লাগল। অবশ্য কেউ কেউ একটু রাগও হল বলে মনে হয়। আমার তখনও ঘোর কাটেনি। আমার বন্ধু আমার কাছে এসে বলল কি এখনও বসে থাকবি নাকি? না একটু উঠে আমার জন্য জায়গা দিবি। আমার কথাটা শুনে ভীষণ লজ্জা পেলাম এবং কান দুটো লাল হয়ে গেল।আর ওর শ্যালিকার ঘোর তো মনে হয় এখনো কাটেনি। ওর কথা শুনে যেই আমি উঠতে যাব তখনই ওর শ্যালিকা বলল কি দুই নম্বর দুলাভাই কই যাচ্ছেন? আমি আমাদের আসল দুলাভাইর পাশে বসেন। আমি লজ্জায় তখন ঐ স্থান ত্যাগ করতে পারলেই বাচিঁ অবস্থা। তখন মাথায় কিছু আসছিল না যে প্রতিউত্তর দিব। আমি একটি সাইডে সরে গিয়ে সাজ্জাদের জন্য (আমার কলিগের নাম) জায়গা করে দিলাম।আর ওর শ্যালিকার দিকে আড় চোখে তাকাতে লাগলাম। ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম ঐ মেয়েটা কে রে? সাজ্জাদ বলল আমার খালাত শালি। তখন পরিচয় পেলাম। সেই যে প্রথম দেখা এবং এখনো চোখে ভেসে থাকা সেই মুখ আমি আজও ভুলতে পারিনি। সেই অনুষ্ঠানে ওর সাথে অনেকবার দেখা হল আর আমাকে দুই নাম্বার দুলাভাই বলে খ্যাপাতে লাগল। আমি অবশ্য ছেড়ে দেয়ার পাত্র না। বলতে থাকলাম দুই নম্বর হই আর তিন নম্বর হই দুলাভাই না কি সেটা পরে টের পাবা। এখন তো মাত্র শুরু। সাজাদ্দের কাছে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করলাম। ও বলল দোস্ত নাম হৃদিকা। কি তোর চোখ ওর দিকে পড়ছে নাকি। আমি কথাটা উদিয়ে দিয়ে বললাম কি যে বলিস না। আমার বউ হবে সে রকম দেখতে। আর তোর শালি তো আসলেই একটা শালি। এই কথা বলে আমরা সবাই হো হো করে হেসে দিলাম। সেই দিন রাতটা আমার কাছে এখনো স্পষ্ট মনে আছে। সেই অনুষ্ঠানে অনেকবার দুজোনের চোখাচোখি হয়েছে। কিন্তু কেউ কাউকে কিছু বলতে পারিনি। আসলে ও কি কিছু বলতে চেয়েছিল? নাকি আমি বলতে চেয়েছি? কি একটা সংকোচ ছিল আমার মনে? আমি তো কখনো এমন ছিলাম না। কোন মেয়েকে দেখে তো এমন মনে হয় নি। আজ কেন হচ্ছে? কি একটা বলতে গিয়েও বলতে পারিনি। এর পর আমি অনেক বার সাজ্জাদের বাসায় গিয়েছি কিন্তু লজ্জায় ওর কথা কিছু জিজ্ঞেস করতে পারিনি। কিসের ভয়? ভয় নাকি জড়তা? ভাবী অবশ্য খুব ভাল মানুষ গেলে অনেক কতাই বলত। কিন্তু সেই হৃদিকার কথা কিছু বলেনি। আর ঐ মেয়েটাও কেমন কোন দিন ওর বাসায় আসেনি। আরে তোর বোন এ বাসায়। আপন বোন না হোক খালাত বোন তো একবার তো আসবি নাকি? তাও আসলি না আমার মনের কথা বুঝলি না। দিন দিন আমার অবস্থা খারাপ হতে লাগল। যখনই চোখ বুজি শুধু ওর ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠে। আপা তো সেই দিন ধমক লাগাল। কি হয়েছে আমার জানতে চাইল। কিন্তু আমি কি আর বলিতে পারি আমার মনের কথা।তারপর …

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



