somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নের রাজকন্যা পর্ব-২

০৬ ই জুলাই, ২০০৮ সকাল ৭:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটি দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্ব পড়তে হলে আমার ব্লগে ঢুকলেই পড়া যাবে।

পর্ব-২

তারপর এইভাবে প্রায় ৬ মাস কেটে গেল।আমি আমার রুমে বসে কাজ করছি এ মুহুর্তে সাজ্জাদ ঢুকল
-দোস্ত গতকাল আমার শালি আসছে।
-তোর কোন শালি?
-আরে ঐ যে অষ্ট্রেলিয়ায় থাকে?
-তোর না কোন শালি নাই। ভাবী না একমাত্র মেয়ে?
-আরে বিয়েতে যে দেখলি না, আমার খালাত শালি।
-ওহ তাই বল। (আমি মনে মনে তো ভীষণ খুশি কয় কি শালায়)।
-তোর ঐ শ্যালিকা যে বিদেশে থাকে বললি না তো?
-বলব মানে তুই কি কখনো জিজ্ঞেস করেছিস?
-তোর ফ্যামিলির ব্যাপারে আমি নাক গলাব কেন?
-ওহ বিয়ের সময় শালা নিজে বর সেজে এখন বলছিস ফ্যামিলির ব্যাপারে নাক গলাবি কেন?
-আচ্ছা বাদ দে তো। এখন বল কি হয়েছে?
-কি আর হবে গতকাল এয়ারপোর্ট থেকে সরারি বাসায় এসে হাজির। আমরা কেউ জানতাম না যে ও আসবে। এসে সারপ্রাইজ দিল।
-হুম আসলেই সারপ্রাইজ।
-আরও সারপ্রাইজ আছে?
-কি?
-এখন বলা যাবে না। পরে বলব।
-না এখনই বললা প্লিজ।
-কি ব্যপার ইমন ওর ব্যাপারে তোর এত আগ্রহ কেন?
-আরে কি যে বলিস না (আমি অনুভব করলাম আমার কান মনে হয় আবার লাল হয়ে যাচ্ছে)
-কিরে তুই এত লজ্জা পাচ্ছিস কেন?
-কই লজ্জা পাই।
-কি দোস্ত ডাল মে কুচ কালা হ্যায়।
-ডালের যা দাম কিছু কালা থাকলেও তা চলবে।
-হা হা। আচ্ছা যা কালকে তোর সারপ্রাইজ তোকে দিব।

আমি মনে মনে ওর চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করলাম্ শালা তোর শ্যালিকা আসছে আমারে দাওয়াত দে। বাসায় যাই। সেধে সেধে তো আর যেতে পারি না। শালা কিপট্টুস আমারে একবারও বলে না ক্যান। আমার অবস্থা তখন একবার বলিলেই যাইতাম।

-আচ্ছা শোন ভাল কথা কাল অফিসে আসছিস তো?
-হ্যা আসব। কেন?
-আমার শ্যালিকার জন্য একটা পাত্র দেখিস তো। আমার খালা শ্বাশুড়ী বলেছে ভাল একটা ছেলে দেখতে। ওকে বিয়ে দিবে।

আমি তখন মনে মনে বলি শালায় কয় কি? আমি তোর চোখের সামনে বসে আছি, আমাকে তুই দেখিস না। নিজে তো বিয়ে করে ঘর সংসার করিস আমাদের কি করতে ইচ্ছা করে না?

-আচ্ছা তুই থাক। কাল দেখা হবে।
-আচ্ছা যা।

সাজ্জাদ চলে যাবার পর মনটা খারাপ হয়ে রইল। কোন কাজে মন বসাতে পারছি না। ঘুরে ফিরে শুধু সেই পুরোনো চেহারা চোখের সামনে ভাসতে লাগল। এর মধ্যে আজকে আবার সাইটে যেতে হবে। নাহ আজকে আর সাইটে যাব না। বসকে বলে দিই কালকে গিয়ে দেখে আসব। কিন্তু আজকে কি করব? এর চেয়ে গান শুনি। ল্যাপটপটা অন করে ছেড়ে দিলাম তৌসিফ এর মনের সমুদ্র থেকে ভালবেসেছি শুধু তোমাকে গানটি। আহা মনে হয় যেন আমার মনের কথাগুলো বলছে তৌসিফ। আসলেই আমি কি ওকো এক নজর দেখে ভালবেসেছি। ঠিক এই সময় বড় আপুর ফোন আসল।

-হ্যালো আপু বল কি হয়েছে।
-তুই কি আজ অফিস থেকে তারাতারি ফিরবি?
-মনে হয়। কেন?
-আসার সময় একটু মার্কেটে যেতে পারবি?
-কেন?
-কাল না তুহিন এর জন্মদিন। ওর জন্য একটা গিফট কিনে আনবি। পারবি না?
-হ্যা পারব। আচ্ছা রাখি।
-রাখি মানে? তুই ফোন করেছিস না আমি? রাখলে আমি আগে রাখব।
-কাজ আছে আপা। কাজের সময় কথা বলতে ভাল লাগে না।
-কত কাজ করিস জানা আছে। আচ্ছা রেখে দে।

ফোনটা রেখেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। ভাবলাম তারাতারি বাসায় যাব। না তা আর হল না। কি আর করা।

পরের দিন খুব সকাল সকাল (আমি সাধারণত একটু দেরী করে যাই এ জন্য প্রায়ই নানা অজুহাত দিতে হয়) অফিসে গিয়ে হাজির। সারারাত ভাল ঘুম হয় নাই। কি সারপ্রাইজ? শালা কি আবার মতলব করেছে কে জানে। আমাকে দেখে সবাই খুব অবাক হল। এত সকালে আমি অফিসে। রত্না তো বলেই ফেলল
-কি ইমন ভাই সূর্য আজ কোন দিকে উঠেছে?
-যেদিক দিয়ে প্রতিদিন উঠে সেদিক দিয়ে। কেন তুমি দেখনি?
-দেখেছি। কিন্তু আপনি এত সকালে অফিসে? ব্যাপার কি?
-আর বল না প্রতিদিন দেরী করা যায় নাকি? আচ্ছা সাজ্জাদকে দেখেছ?
-না সাজ্জাদ ভাই তো এখনো আসে নাই।
-ওহ।
আমি রুমে এসে বেটা বজ্জাতকে একটা ফোন দিলাম।কিন্তু শালার মোবাইল বন্ধ। কি হয়েছে ওর? ও কেন এত রহস্য করতেছে আমার সাথে? প্রায় ১ ঘন্টা পর বস ডেকে পাঠালেন। বসের রুমে গিয়ে তো আমি হা। হা মানে পুরো অবাক। আরে এ কে বসের সামনে বসে আছে? এ তো সেই আমার স্বপ্নের রাজকন্যা।

-ইমন বস।
-জ্বি স্যার বসছি।
-ও হচ্ছে হৃদিকা।আজই আমাদের অফিসে জয়েন করেছে। আর ওর অবশ্য আর একটা পরিচয় আছে। ও আমাদের সাজ্জাদের খালাত শ্যালিকা।আমি অবশ্য জানতাম না। আজই জানলাম। ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমাদের এখানে এপ্লাই করেছিল। আজ থেকে ও তোমার সাথে কাজ করবে। তুমি ওকে সব বুঝিয়ে দিবে। যখন সাইটে যাবে ওকে সাথে নিয়ে যাবে। ঠিক আছে?
-জ্বি স্যার ঠিক আছে।
-ঠিক আছে তাহলে ওকে তোমার পাশের রুমটায় দিয়ে দাও। আর গতকাল তুমি তো সাইটে যাওনি। আজকে ওকে সাথে নিয়ে সাইটটা ঘুরে আসো।
(আমি তো মনে মনে এইটাই চাইছিলাম। ইশ আজ যে কার মুখ দেখে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেছিলাম। মনে পড়েছে আমার দুষ্ট ভাগ্নে পার্থিব এর মুখ থেকে উঠেছিলাম। ওকে আজকেই কিছু খেলানা কিনে হবে।)
-ঠিক আছে স্যার আমরা তাহলে এখন উঠি।
-হ্যা যাও।

অফিসের করিডোর ধরে আমি সাজ্জাদ আর সে (হৃদিকা) হেটে হেটে আমার রুমে আসলাম। আমি চেয়ারে বসতে বসতে বললাম
-সাজ্জাদ বস। আর আপনিও বসুন।
-কিরে দোস্ত তোরে না বললাম আজকে তোরে সারপ্রাইজ দিমু। তা সারপ্রাইজটা কেমন হইল?
-কি সারপ্রাইজ দিলি। এইটা কোন সারপ্রাইজ হইল।(মনে মনে তো ভীষণ খুশি। সেটা তো আর বাইরে প্রকাশ করা যায় না)
-আচ্ছা এইটা সারপ্রাইজ হইল না? পরে টের পাবি। এখন কিছু খাওয়া। নতুন মেহমান আসছে কিছু খাওয়াবি না?
-মেহমান কে?
-কেন দুই নম্বার দুলাভাই আমাকে কি মেহমান মনে হয় না?
-দেখুন এটা অফিস এখানে পারিবারিক আলোচনা না করাই ভাল। আগে যা ঘটেছে ঘটেছে এখানে সেটা আমরা নি বলি। ঠিক আছে। (ইচ্ছা করেই একটু সিরিয়াস হলাম। নাহলে আমার মাথায় উঠে বসতে পারে)
-স্যরি স্যার। (মুখটা কালো করে বলল। আমার বেশ মায়া হল দেখে)
-ইটস অলরাইট। আচ্ছা সাজ্জাদ আজকে সাইটে যেতে হবে। আমি হৃদিকাকে নিয়ে সাইটে যাচ্ছি। এসে একসাথে লাঞ্চ করব।
-কি আর বলব। তুই যেভাবে মুডটা খারাপ করে দিলি। আচ্ছা যা। দোস্ত ও নতুন তো একটু বুঝিয়ে দিস। ধমক দিস না। শত হলেও আমার শালি।
-কি শালির জন্য এত মায়া। না ধমক টমক দিব না।আচ্ছা হৃদিকা চলুন আগে আপনাকে আপনার রুমটা দেখিয়ে দিই। এরপর আমরা বের হয়ে যাই আমাদের বর্তমান প্রজেক্ট দেখতে।
-চলুন স্যার।
(মনটাই আমার খারাপ হয়ে গেল। আহা বেচারী একটু দুষ্টুমী করতে চাইছে আর আমি তাকে এভাবে কড়া কথা বলে মন খারাপ করিয়ে দিলাম। এখন ভাববে যে আমি মনে হয় রাগি রাগি।)

-হৃদিকা প্রজেক্ট কেমন দেখলেন।
-জ্বি স্যার ভালই। আসলে এখানে আমি নতুনতো তাই আমার বুঝতে একটু সমস্যা হবে।
-আচ্ছা কোন সমস্যা নাই। চলুন দুপুর তো প্রায় হয়ে আসল। সাজ্জাদকে ফোন করে দেই। আজকে তো আপনাদের খাওয়ানোর কথা আমার।
-হ্যালো সাজ্জাদ। তুই কই?
-দোস্ত আমি একটু বাইরে আছি। বিশাল ঝামেলায় আছি। কেন কি হয়েছে?
-আজকে না তোদের খাওয়াব দুপুরে বললাম। তুই এক কাজ কর তুই ধানমন্ডির জিনজিয়ানে চলে আয়।
-নারে দোস্ত এখন পারব না। তুই বরং ওকে নিয়ে যা।
-আচ্ছা কি আর করা।
-শুনুন মিস হৃদিকা। সাজ্জাদ তো আসতে পারবে না। ও একটা জরুরী কাজে আটকা পড়েছে। যেহেতু আমি বলেছি আজকে আপনাদের খাওয়াব সেহেতু চলুন ওকে ছাড়াই আমরা খেয়ে আসি। কি বলেন?
-জ্বি মানে সাজ্জাদ ভাই থাকলে ভাল হত না। আচ্ছা চলুন আমারও শহরটা একটু দেখা হবে।(মন খারাপ করে কথাটা বলল। দেখে আমার মায়াই লাগল)
এরপর…
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×