somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নের রাজকন্যা পর্ব-৩

১১ ই জুলাই, ২০০৮ সকাল ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব-৩

এপর আমি আর হৃদিকা গেলাম ধানমন্ডির সেই রেস্টুরেন্ট জিনজিয়ানে। একজন মেয়েকে নিয়ে এসেছি কেমন কেমন যেন লাগছে। মনে হচ্ছে সবাই যেন কেমন কেমন চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। দেখে মনে হয় এই রকম একটা পরীর পাশে ঐ গাধার মত চেহারার ছেলেটাকে মানায় না এ রকম একটা ভাব নিয়ে তাকাচ্ছে। যার যা ভাবার ভাবুক।
-স্যার
হঠাৎ চমকে উঠলাম। বললাম বলুন।
-না মানে এখানে কি দাঁড়িয়ে থাকবেন না ভিতরে বসবেন?
-ও হ্যা চল। চল ঐ কাচের দেয়ালের পাশে বসি। এতে বাইরের দৃশ্যও দেখা যাবে।
এর পর আমি আর হৃদিকা পাশাপাশি বসলাম। আহ কি সুন্দর করে টেবিলে তাজা ফুল রাখা। আমার খুব ইচ্ছে করছে ফুল গুলো এই ফুলের মত মেয়েটাকে দিয়ে দিই। কিন্তু কি আর করা। এখানে আমি বস আর ও আমার অধীনস্থ কর্মচারী। না কথাটা কেমন যেন লাগছে। এরকম একটা সুন্দরী মেয়ে আমার অধীনস্থ কর্মচারী কথাটা মানায় না।
-স্যার
হঠাৎ আমার কল্পনার জগৎ ভেঙে গেল। খেয়াল হল যে কখন ওয়েটার এসে দাড়িয়েছে কে জানে।
-ওহ। দাও মেনুটা দাও। কি খাবেন আপনি?
-স্যার আপনি না খাওয়াবেন বললেন? আপনি আপনার পছন্দমত অর্ডার দিন। আর আমিও এখানকার খাবার সম্পর্কে খুব ভাল করে জানি না।
-আচ্ছা। দিচ্ছি।
এরপর আমি খাবারের অর্ডার দিয়ে আবার আমার কল্পনার জগতে ডুব মারলাম। না এই মেয়ে পাশে থাকলে দেখি আমার কোন কাজই হবে না। কি করি? আচ্ছা ও কি আমাকে নিয়ে ভাবে? মনে হয় না। কেমন এ দিক ঐদিক দেখছে। আর আমার যা চেহারা মাশআল্লাহ। এই পরীকে পাওয়া আর আমার হবে না। দেখা যাবে বস হিসেবে ওর বিয়ে খেতে আমি চলে গেছি। না একটা ব্যবস্থা করতেই হয়। আর চুপচাপ না বসে থেকে কিছু কথা বলি। কিন্তু আমার এত নার্ভাস লাগছে কেন? ভাগ্য ভাল ওয়েটার আগে কোল্ড ড্রিংকস দিয়ে গেছে। সেটা খেয়ে কোন মতে টিকে আছি।
-আচ্ছা হৃদিকা আপনি আস্ট্রেলিয়ার কোন ইউনিতে পড়েছেন?
-স্যার আমি ইউটিএস এ ছিলাম। ঐখান থেকে গ্রাজুয়েশন করে সোজা দেশে আসলাম।
-আমার জানা মতে যারা বাইরে থাকে তারা কেউ সহজে দেশে আসতে চায় না। একমাত্র ব্যাতিক্রম দেখলাম আপনাকে। আপনি কেন আসলেন খুব জানতে ইচ্ছা করছে কিন্তু এটা একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার হয়ে যায়।
-না স্যার ঠিক আছে। আসলে আমি দেশে এসেছি কারণ এই দেশটা আমার খুব ভাল লাগে। আমার প্রিয় দেশ আমার মাতৃভূমি।
-আপনার কি অস্ট্রেলিয়াতেই জন্ম?
-না। আমার জন্ম ঢাকায়। যখন ক্লাশ এইটে উঠেছি তখন গিয়েছি অস্ট্রেলিয়ায়।
-ওহ আচ্ছা। মনে মনে ভাবতে থাকলাম আর কি প্রশ্ন করা যায়। কিন্তু মাথা থেকে যেন সব প্রশ্ন কোথায় হারিয়ে গেল। এই সময়ে ওয়েটার এসে খাবার দিল। আমি ওর প্লেটে খাবার তুলে দিব কিনা ভাবতেছি। দেয়াটা কি ঠিক হবে? ভাবতে ভাবতে খেয়াল করলাম ও আমার স্যুপের বাটিটা নিয়ে আমাকে স্যুপ ঢেলে দিল। সেই মুহুর্তে কি যেন লাগল। মনে হতে লাগল যেন আমার বাসায় আমার খাবার টেবিলে বসে ও আমাকে রাতের খাবার তুলে দিচ্ছে।
-নিন স্যার।
-ও হ্যা
কি ব্যাপার ও একটু মুচকি মুচকি হাসছে যেন। ও কি তাহলে টের পেয়ে গেছে? আমার হৃদয়ের হাজার ঘন্টার শব্দ কি ওর কানে পৌছে গেছে? না এত ভাবার সময় নাই। সাবধান হতে হবে।
-কি কেমন খাবারগুলো?
-জ্বি স্যার ভালই।
-আমার খুব প্রিয় একটা রেস্টুরেন্ট এটা।
-ওহ।

অফিসে ফিরে আসলাম ওকে নিয়ে। সারা রাস্তায় মনে হয়েছে, আহ আমার পাশে যেন বসে আছে এক অপরূপ সুন্দরী পরী। আসলে পরীরা কি সুন্দর? কেউ কি দেখেছে? কি জানি। কিন্তু আমার কাছে ও পরী। সুন্দরী পরী। কি হল আমার কেন ঘুম আসছে না। রাত তো বেশী হয় নাই। মাত্র ১১ টা বাজে। আসলে এত সকাল কি আর ঘুম হবে। কি করব? নাহ ঘুমানোর চেষ্টা করি। পরদিন আবার সকালে অফিসে যেতে হবে। এবার মনে হয় আমার নিয়ম ব্রেক করা হবে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অফিসে যেতে হবে। না হলে ও কি ভাববে। এই ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টের পেলাম না।

-গুড মর্নিং রত্না।
-মর্নিং ইমন ভাই। কি ব্যাপার আজকেও এত সকাল সকাল?
-আরে অনেক তো হল এবার একটু সিনসিয়ার হই।
-কেন বিয়ে স্বাদী করছেন নাকি?
-কি যে বল আমাকে আবার কে বিয়ে করবে।
-কি যে বলেন ইমন ভাই। আপনি বললে আপনার জন্য মেয়েরা হুমরি খেয়ে পড়বে।
-কি বল মেয়েদের কি আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই।
-কাজ থাকবে না কেন। আপনি যে রকম হ্যান্ডসাম তাতে যে কোন মেয়ে পটে যাবে।
-আহ তোমার যে কেন বিয়ে হয়ে গেল। আমার তো মনে হচ্ছে তোমার বিয়ে না হলে তোমাকেই বিয়ে করে ফেলতাম। হা হা হা
-হি হি কি যে বলেন ইমন ভাই।
-আচ্ছা হৃদিকা কি এসেছে?
-কোন হৃদিকা? ওহ নতুন মেয়েটা। না আসে নাই।
-ও আচ্ছা যাই। পরে কথা হবে।

রুমে ঢুকেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমি ওর জন্য এত সকালে অফিসে আসরাম আর ও এখনো আসলো না।কি করা যায়। ধুর আমার কাজ বাদ দিয়ে ওর কথা চিন্তা করলে কি আর হবে। এর চেয়ে মেইল চেক করি।

-গুড মর্নিং স্যার।
আমি চোখ খুলে তাকালাম। এ্যা আমার চোখের সামনে এ কে? আজকে সুন্দর দেখে একটা নীল শাড়ী পড়ে এসেছে। ও জানল কি ভাবে যে আমার নীল শাড়ী পছন্দ। আবার চুলগুলোও দেখলাম খোলা। এত বড় চুল, আমি তো বিশ্বয়ে তাকিয়ে আছি। আমার বড় চুল পছন্দ। তাহলে কি আমার দেখানোর জন্যই ও চুল ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু ও আমার পছন্দের কথা জানবে কি ভাবে? ঘুম একটা প্রসাধন ব্যবহার করেনি। তারপরেও আজকে যেন ওকে আরও বেশী সুন্দর লাগছে।
-স্যার বসতে পারি।
আমি যেন স্বর্গ থেকে মাটিতে পড়লাম।
-ও হ্যা নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই
কি ব্যাপার আমার গলা শুকিয়ে আসছে কেন। পানি খেলাম এক গ্লাস।
-কি ব্যাপার আজকে মনে হয় দেরী করে এসেছেন?
-আসলে স্যার এর জন্য আমি দুঃখিত। আজকে একটু শাড়ী পরতে ইচ্ছা হল তাই একটু দেরী হয়ে গিয়েছে।
-ওকে কোন সমস্যা নাই। আজকে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
এইটা আমি কি বললাম। ওরে তুমি বলে ফেললাম।এটা কি ঠিক হল? কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার উপর যেন আমার কোন কন্ট্রেল নাই। আমার কন্ট্রোল অন্য কারও হাতে। আর ও তে লজ্জাল একদম লাল হয়ে গেছে। দেখতে অবশ্য খুব ভাল লাগছে।
-সর্যিং আপনাকে তুমি বলে ফেললাম।
-না স্যার ঠিক আছে। আপনি তো আমার চেয়ে বড়। আর আপনি তো রত্না আপাদের তুমি করেই বলেন। কোন সমস্যা নাই।
-আচ্ছা তুমি যখন বলছ ঠিক আছে। তাহলে তুমি করেই বলি। আজকেও তো সাইটে যেতে হবে। তুমি কি জান?
-জ্বি স্যার জানি।
-আচ্ছা তোমাকে যখন আমি তুমি করেই বলছি তখন তুমিও আমাকে রত্নাদের মত ইমন ভাই বলতে পার। আর প্রথম দিনের জন্য আমি সর্যিত। আসলে ওভাবে তোমাকে বলা ঠিক হয় নাই।
-না ঠিক আছে। আসলে আমি আগে কখনো কোথাও জব করি নাই তো তাই বুঝতে পারছিলাম না। আর আপনাকে ঐ বিয়েতে তো তাই ডেকেছিলাম। আচ্ছা ইমন ভাই সাজ্জাদ ভাই আসে নাই।
-এসেছে মনে হয়। আসলে ওর সেকশন আলাদা তো তাই সকালে হয়ত দেখা হয় না। কিন্তু একটি পর ও আসবে দেখ।

এরপর…

------------------------------------------------------------------------------
এটি কোন সত্য ঘটনা নয়। নিছক একটি গল্প মাত্র
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১:২১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×