পূর্বের পর্ব:
মেয়েটি চলল প্রবাসের পথে - আগমনী বার্তা (সামু পাগলার নতুন সিরিজ )
মেয়েটি চলল প্রবাসের পথে - বিদেশ গমনে শ্বশুড়বাড়ির পারমিশন! (পূর্বের পর্বের বিজয়ী ঘোষিত)
মেয়েটি চলল প্রবাসের পথে - ৫ রকম মানুষের সাজেশন যা বিদেশে যাবার পূর্বে পাবেন (কোনটি কাজের ও অকাজের জেনে নিন)
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও রাজনীতি নিয়ে আড্ডাটা গাড়ির মতোই এগিয়ে যাচ্ছে - মন্থর গতিতে। হুটহাট ট্রাফিকের মতোই আড্ডায় ছেদ পড়ে যাচ্ছে অদ্ভুত বিষন্নতায়। এক গাড়িতে এতজন থাকায় দমবন্ধ পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তার ওপর এসিটাও জোরে বাতাস দিচ্ছেনা। গাড়ির এসি কিভাবে যেন জেনে যায় কখন কাজ না করলে আত্মীয় স্বজনের সামনে নাক কাটা যাবে, সেই অনুযায়ী নষ্ট হয়ে বসে থাকে! মাঝপথে সব জানালা খুলে দেওয়া হলো, তখন সবাই একটু স্বস্তির শ্বাস নিল।
জানালার পাশে বসায় বিকেলের হালকা বাতাসটা একেবারে চোখে এসে পড়ছে। সারাদিন অফিস করে বাড়ি ফেরা মানুষদের মুখে ক্লান্তি আর শান্তি দুটোই একসাথে দেখা যাচ্ছে। এত শব্দ চারিদিকে! রিকশার টুং টাং, বাস কনডাক্টরের চিল্লানো, প্রাইভেট কারের প্যা পু, ভিক্ষুকের সুর "আমার আল্লা রাসূলের নাম...", ফুটপাতের ক্রেতা বিক্রেতার তর্ক "কইলাম তো আপনে জেতবেন, না আরো কমান!" আমি এতসব শব্দ শুনতে পারছিনা ঠিকমতো, শুধু দেখতে পারছি। আজ আমি আমার দেশ ও আপনজনদের ছেড়ে অজানা এক দূরদেশে চলে যাব! অনিশ্চয়তা, শংকা, ব্যাথা সব একসাথে ব্রেইন ব্লেন্ডারে মিক্সড হয়ে যাচ্ছে অনবরত; যার ঘরঘর শব্দে মাথাব্যাথা শুরু হয়ে গিয়েছে।
আমার খুব ইচ্ছে করছে ড্রাইভার চাচাকে সড়িয়ে নিজেই গাড়ি চালিয়ে আবারো বাড়ির পথে যেতে। অনেক ধরণের কল্পনা চোখের সামনে ভাসতে লাগল; ১) আমি গাড়ি থেকে নেমে নিজেই রিকশা ধরে বাড়ি চলে গিয়েছি, ২) গাড়ি মাঝ রাস্তায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে যার মধ্যে ফ্লাইট মিস হয়ে গেছে, ৩) হুট করে দাদু বাবাকে আদেশ দিলেন বিদেশে যাওয়া যাবে না, ৪) রাস্তার কারেন্ট চলে গিয়ে, গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। (রাস্তার কারেন্ট কি জিনিস আমি জানিনা, তখন মনে হয়েছিল )।
আমার ভাবা কোন সিচুয়েশনই সত্য হলোনা। গাড়ি ঠিকই এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেল। বাবা সবাইকে বলল, গাড়ি থেকে নামার দরকার নেই, শুধু শুধু কষ্ট করোনা। কেউ কথা কানেও তুলল না, ঠিকই নেমে গেল। দাদু ও চাচু অনেক আদেশ উপদেশ দিলেন। চাচী ও মা একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন। চাচাত বোন "ভালো থাকিস" বলল আমাকে। আমি কিছুই ক্লিয়ারলি শুনতে পারছি না। যে যা বলছে তাতে ব্ল্যাংক চোখে তাকিয়ে মাথা নেড়ে যাচ্ছি।
সবাই আরো অপেক্ষা করতে চাইছিল, কিন্তু বাবা অনেক বুঝিয়ে সবাইকে বাড়ি ফিরতে রাজি করাল। বাবা আসলে জানত ওনারা যতো কাছে আসবেন, বিদায় দিতে ততোই কষ্ট হবে! আমরা একদম এয়ারপোর্টের সামনে দাড়িয়ে রইলাম গাড়ি থেকে কিছু দূরে। পুরো ছয়টা লাগেজ তিনজনে ভাগ করে দুটো করে নিয়ে নিলাম। দু হাতে দুটো রোলিং সুটকেস নিয়ে দাড়িয়ে আছি, তখন সামনের দিকে চোখ পড়তে অবাক হয়ে গেলাম!
আমাদের থেকে কয়েক হাত দূরে গাড়ির সামনে কাজিন, চাচা ও চাচী দাড়িয়ে আছে। কাজিনের চোখ ছলছলে, আর চাচী কেঁদে যাচ্ছে। প্রথমবার চাচীকে কাঁদতে দেখে খুব অসহায় মনে হতে থাকল নিজেকে। সাথে সাথে মায়ের দিকে তাকালাম এটা বলতে যেন মা চাচীকে সামলায়। কিন্তু কে কাকে সামলাবে? মাও অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে! বিদেশগমণে যার সবচেয়ে আগ্রহ ছিল তার চোখেও পানি! আমি মায়ের চোখ মুছে দিয়ে, কাঁধে হাত বুলিয়ে সামলাতে লাগলাম। অন্যদিকে চাচাত বোন এক হাত দিয়ে ধরে রেখেছে চাচীকে। কখনো কখনো মায়েরাও বাচ্চা হয়ে যায় আর মেয়েরা মা...........
আমার বুকটা ভেঙ্গে যাচ্ছিল। একদিকে দেশ মাকে ছেড়ে যাচ্ছি, অন্যদিকে মা ও চাচী কেঁদে যাচ্ছে। কিছু কিছু বৃষ্টি ঝপঝপ করে পড়ে এবং হুট করেই থেমে যায়। সেদিনও এমনই হয়েছিল। কিছু সময়ের মাঝেই মা ও চাচী স্বাভাবিক হলো। তারপরে একে অপরকে বিদায় দিল এক হালকা, বিষন্ন হাসিতে।
সবকিছুকে পেছনে ফেলে, সামনের দিকে হাঁটতে থাকলাম অনুভূতি শূন্য, কল দেওয়া পুতুলের মতো। কাঁদতে পারলে ভালো হতো কিন্তু সব কান্না গলার কাছে আটকে গিয়ে কেমন যেন ব্যাথা হতে থাকে বুকে। এই তীব্র কষ্টের মধ্যেই একটা এমব্যারেসিং সিচুয়েশনে পড়ে গেলাম!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পূর্বের পর্বের কুইজ - কুইজ সেভাবে নেই যেহেতু আমি নিজেই সবকিছু বর্ণনা করেছি। তবে এটা জানান যে কোন গ্রুপটি সবচেয়ে মজা লেগেছে? যার মন্তব্য/উত্তর আমার কাছে সবচেয়ে মজার লাগবে তার জন্যে থাকবে প্রাইজ।
এমন একটি কুইজ রেখে নিজের জন্যেই বিপদ ডেকে এনেছিলাম। বেশ কয়েকজন অসাধারণ মন্তব্য করেছিলেন। একজনকে বাছাই করা কঠিন ছিল। কিন্তু শেষমেষ মনে হলো - যিনি শুধু লেখা নয়, যা লেখা হয়নি তাও পড়বার চেষ্টা করেছেন তাকে পুরষ্কারটি দেওয়া উচিৎ। তাই পুরষ্কারটি পাচ্ছের আমাদের প্রিয় সহব্লগার কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত)।
তিনি লিখেছিলেন: "মায়ের সাথে খালার তেমনই একটি কথোপকথন; টাই বেশ লেগেছে- উনি আপনাদের মিস করবেন- বলে নিজের আত্মীয়ের আত্মীয়রা বিদেশের খবর শেয়ার করলেন, হয়তো আর আপনাদের সাথে দেখা হবে না; তাই কথপোকথনে একটা সুখের বীজ খালার মনে গেথেঁ রাখলেন -যা পরবর্তীতে অন্য বাসায় বলতে পারবেন।"
ভ্রমণপ্রিয় মানুষটির জন্যে উপহার হিসেবে রইল বিশ্বের সুন্দর কিছু জায়গার কার্ড!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এ পর্বের কুইজ - আমি কিভাবে এমব্যারেসিং সিচুয়েশনে পড়ে গেলাম? সঠিক উত্তর ও উত্তরদাতার নাম পরের পর্বে.......
ছবিসূত্র: অন্তর্জাল!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫২