somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়েটি চলল প্রবাসের পথে - বাংলাদেশ ছাড়ার সে দিনটি................ (পূর্বের সেরা মন্তব্যকারী ঘোষণা)

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পূর্বের পর্ব:
মেয়েটি চলল প্রবাসের পথে - আগমনী বার্তা (সামু পাগলার নতুন সিরিজ :) )
মেয়েটি চলল প্রবাসের পথে - বিদেশ গমনে শ্বশুড়বাড়ির পারমিশন! (পূর্বের পর্বের বিজয়ী ঘোষিত)
মেয়েটি চলল প্রবাসের পথে - ৫ রকম মানুষের সাজেশন যা বিদেশে যাবার পূর্বে পাবেন (কোনটি কাজের ও অকাজের জেনে নিন)

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও রাজনীতি নিয়ে আড্ডাটা গাড়ির মতোই এগিয়ে যাচ্ছে - মন্থর গতিতে। হুটহাট ট্রাফিকের মতোই আড্ডায় ছেদ পড়ে যাচ্ছে অদ্ভুত বিষন্নতায়। এক গাড়িতে এতজন থাকায় দমবন্ধ পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তার ওপর এসিটাও জোরে বাতাস দিচ্ছেনা। গাড়ির এসি কিভাবে যেন জেনে যায় কখন কাজ না করলে আত্মীয় স্বজনের সামনে নাক কাটা যাবে, সেই অনুযায়ী নষ্ট হয়ে বসে থাকে! মাঝপথে সব জানালা খুলে দেওয়া হলো, তখন সবাই একটু স্বস্তির শ্বাস নিল।

জানালার পাশে বসায় বিকেলের হালকা বাতাসটা একেবারে চোখে এসে পড়ছে। সারাদিন অফিস করে বাড়ি ফেরা মানুষদের মুখে ক্লান্তি আর শান্তি দুটোই একসাথে দেখা যাচ্ছে। এত শব্দ চারিদিকে! রিকশার টুং টাং, বাস কনডাক্টরের চিল্লানো, প্রাইভেট কারের প্যা পু, ভিক্ষুকের সুর "আমার আল্লা রাসূলের নাম...", ফুটপাতের ক্রেতা বিক্রেতার তর্ক "কইলাম তো আপনে জেতবেন, না আরো কমান!" আমি এতসব শব্দ শুনতে পারছিনা ঠিকমতো, শুধু দেখতে পারছি। আজ আমি আমার দেশ ও আপনজনদের ছেড়ে অজানা এক দূরদেশে চলে যাব! অনিশ্চয়তা, শংকা, ব্যাথা সব একসাথে ব্রেইন ব্লেন্ডারে মিক্সড হয়ে যাচ্ছে অনবরত; যার ঘরঘর শব্দে মাথাব্যাথা শুরু হয়ে গিয়েছে।

আমার খুব ইচ্ছে করছে ড্রাইভার চাচাকে সড়িয়ে নিজেই গাড়ি চালিয়ে আবারো বাড়ির পথে যেতে। অনেক ধরণের কল্পনা চোখের সামনে ভাসতে লাগল; ১) আমি গাড়ি থেকে নেমে নিজেই রিকশা ধরে বাড়ি চলে গিয়েছি, ২) গাড়ি মাঝ রাস্তায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে যার মধ্যে ফ্লাইট মিস হয়ে গেছে, ৩) হুট করে দাদু বাবাকে আদেশ দিলেন বিদেশে যাওয়া যাবে না, ৪) রাস্তার কারেন্ট চলে গিয়ে, গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। (রাস্তার কারেন্ট কি জিনিস আমি জানিনা, তখন মনে হয়েছিল ;) )।

আমার ভাবা কোন সিচুয়েশনই সত্য হলোনা। গাড়ি ঠিকই এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেল। বাবা সবাইকে বলল, গাড়ি থেকে নামার দরকার নেই, শুধু শুধু কষ্ট করোনা। কেউ কথা কানেও তুলল না, ঠিকই নেমে গেল। দাদু ও চাচু অনেক আদেশ উপদেশ দিলেন। চাচী ও মা একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন। চাচাত বোন "ভালো থাকিস" বলল আমাকে। আমি কিছুই ক্লিয়ারলি শুনতে পারছি না। যে যা বলছে তাতে ব্ল্যাংক চোখে তাকিয়ে মাথা নেড়ে যাচ্ছি।

সবাই আরো অপেক্ষা করতে চাইছিল, কিন্তু বাবা অনেক বুঝিয়ে সবাইকে বাড়ি ফিরতে রাজি করাল। বাবা আসলে জানত ওনারা যতো কাছে আসবেন, বিদায় দিতে ততোই কষ্ট হবে! আমরা একদম এয়ারপোর্টের সামনে দাড়িয়ে রইলাম গাড়ি থেকে কিছু দূরে। পুরো ছয়টা লাগেজ তিনজনে ভাগ করে দুটো করে নিয়ে নিলাম। দু হাতে দুটো রোলিং সুটকেস নিয়ে দাড়িয়ে আছি, তখন সামনের দিকে চোখ পড়তে অবাক হয়ে গেলাম!

আমাদের থেকে কয়েক হাত দূরে গাড়ির সামনে কাজিন, চাচা ও চাচী দাড়িয়ে আছে। কাজিনের চোখ ছলছলে, আর চাচী কেঁদে যাচ্ছে। প্রথমবার চাচীকে কাঁদতে দেখে খুব অসহায় মনে হতে থাকল নিজেকে। সাথে সাথে মায়ের দিকে তাকালাম এটা বলতে যেন মা চাচীকে সামলায়। কিন্তু কে কাকে সামলাবে? মাও অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে! বিদেশগমণে যার সবচেয়ে আগ্রহ ছিল তার চোখেও পানি! আমি মায়ের চোখ মুছে দিয়ে, কাঁধে হাত বুলিয়ে সামলাতে লাগলাম। অন্যদিকে চাচাত বোন এক হাত দিয়ে ধরে রেখেছে চাচীকে। কখনো কখনো মায়েরাও বাচ্চা হয়ে যায় আর মেয়েরা মা...........

আমার বুকটা ভেঙ্গে যাচ্ছিল। একদিকে দেশ মাকে ছেড়ে যাচ্ছি, অন্যদিকে মা ও চাচী কেঁদে যাচ্ছে। কিছু কিছু বৃষ্টি ঝপঝপ করে পড়ে এবং হুট করেই থেমে যায়। সেদিনও এমনই হয়েছিল। কিছু সময়ের মাঝেই মা ও চাচী স্বাভাবিক হলো। তারপরে একে অপরকে বিদায় দিল এক হালকা, বিষন্ন হাসিতে।

সবকিছুকে পেছনে ফেলে, সামনের দিকে হাঁটতে থাকলাম অনুভূতি শূন্য, কল দেওয়া পুতুলের মতো। কাঁদতে পারলে ভালো হতো কিন্তু সব কান্না গলার কাছে আটকে গিয়ে কেমন যেন ব্যাথা হতে থাকে বুকে। এই তীব্র কষ্টের মধ্যেই একটা এমব্যারেসিং সিচুয়েশনে পড়ে গেলাম!

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পূর্বের পর্বের কুইজ - কুইজ সেভাবে নেই যেহেতু আমি নিজেই সবকিছু বর্ণনা করেছি। তবে এটা জানান যে কোন গ্রুপটি সবচেয়ে মজা লেগেছে? যার মন্তব্য/উত্তর আমার কাছে সবচেয়ে মজার লাগবে তার জন্যে থাকবে প্রাইজ। :)

এমন একটি কুইজ রেখে নিজের জন্যেই বিপদ ডেকে এনেছিলাম। ;) বেশ কয়েকজন অসাধারণ মন্তব্য করেছিলেন। একজনকে বাছাই করা কঠিন ছিল। কিন্তু শেষমেষ মনে হলো - যিনি শুধু লেখা নয়, যা লেখা হয়নি তাও পড়বার চেষ্টা করেছেন তাকে পুরষ্কারটি দেওয়া উচিৎ। তাই পুরষ্কারটি পাচ্ছের আমাদের প্রিয় সহব্লগার কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত)।
তিনি লিখেছিলেন: "মায়ের সাথে খালার তেমনই একটি কথোপকথন; টাই বেশ লেগেছে- উনি আপনাদের মিস করবেন- বলে নিজের আত্মীয়ের আত্মীয়রা বিদেশের খবর শেয়ার করলেন, হয়তো আর আপনাদের সাথে দেখা হবে না; তাই কথপোকথনে একটা সুখের বীজ খালার মনে গেথেঁ রাখলেন -যা পরবর্তীতে অন্য বাসায় বলতে পারবেন।"
ভ্রমণপ্রিয় মানুষটির জন্যে উপহার হিসেবে রইল বিশ্বের সুন্দর কিছু জায়গার কার্ড! :)



-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

এ পর্বের কুইজ - আমি কিভাবে এমব্যারেসিং সিচুয়েশনে পড়ে গেলাম? সঠিক উত্তর ও উত্তরদাতার নাম পরের পর্বে.......

ছবিসূত্র: অন্তর্জাল!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫২
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×