১। তখন প্রাইমারী স্কুলে পড়ি, কিন্তু ঠিক মনে নেই কোন ক্লাসে। তো তখন একদিন প্রেসিডেন্ট হু. ম. এরশাদ সাহেব কি একটা প্রোগ্রামে যেন আমাদের এলাকায় এসেছিলেন। হেলিকপ্টার নেমেছিল আমাদের স্কুল মাঠেই। তো হেলিকপ্টার থেকে নেমে প্রথমে আমাদের স্কুলে এলেন, বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে ভিজিট করার এক পর্যায়ে আমাদের ক্লাসেও এলেন। কতক্ষণ ছিলেন ঠিক মনে নেই, আমাদের কয়েকটি প্রশ্ন করলেন, সবাই প্রায় চুপচাপ থাকলেও আমি চটপট দাঁড়িয়ে তার কয়েকটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছিলাম। তিনি খুশি হয়ে আমার নামটি জিজ্ঞেস করলেন এবং তাঁর কাছে ডাকলেন, আমি তার কাছে গেলে তিনি আমার পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করে আমাকে কি যেন একটা পুরষ্কার হিসেবে দিয়েছিলেন।
২। ৪র্থ অথবা ৫ম কোন এক ক্লাসে পড়ি তখন। এমনিতে আমি ছোটকালে খুবই হ্যাংলা পাতলা ছিলাম, কোন আউটডোর খেলায় অংশ নিতাম না। তখন প্রতিদিন টিফিন আওয়ারে মাঠে ছেলেরা ফুটবল খেলতো। তো এমন একদিন খেলা চলাকালীন সময়ে একজন খেলোয়াড় কম পড়ে যাওয়ায় আমাকে জোর করে মাঠে নামিয়ে দিল। আমি ফুটবল খেলার কিচ্ছু বুঝতাম না, তো সবার দেখাদেখি আমিও বল পেলে বল নিয়ে দৌড়াচ্ছি কোনদিকে না তাকিয়ে... এভাবে কয়েকবার অফসাইড, কয়েকবার আউট ইত্যাদি করে খেলায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছিলাম আর সবার হাসির পাত্র হচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে আমার অনেক রাগ চাপল মাথায়.... হাফ টাইমের পরে খেলতে খেলতে এতই মগ্ন হয়েগিয়েছিলাম যে... কোনটা আমাদের গোলপোষ্ট আর কোনটা প্রতিপক্ষের তা খেয়াল না করেই প্রতিপক্ষের গোলপোষ্টের কাছাকাছি থেকে বল নিয়ে সবাইকে কাটিয়ে নিজদলের গোলপোষ্টে বল মেরে গোল গোল বলে আনন্দে লাফাতে লাফাতে সারা মাঠ প্রদক্ষিণ করতে শুরু করেছিলাম। সবাই সে কি হাসাহাসি........ এমনকি বারান্দায় দাড়ানো স্যারেরা শুদ্ধু হা হা করে হেসে উঠেছিল। তাদের হাসি দেখে আমি লজ্জা পেয়ে খেলা.... স্কুল .... ত্যাগ করে বই নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে এসেছিলাম।
ছবি: গুগল
৩। আমার চেহারাটা বরাবরই বেশ সুন্দর ছিল বলে সবাই আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইত, কিন্তু আমি কারও সঙ্গে তেমনভাবে মিশতে পারতাম না। বাবা-মায়ের নিষেধ আর নিজের অর্ন্তমূখী স্বভাবের কারণে। কিন্তু তবুও আমার চারপাশে সর্বদাই একদল আমাকে ঘিরে থাকত.... চুপি চুপি বলি তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মেয়েরা ছিল। এমনকি আমার বড় আপুদের বান্ধবীরা পর্যন্ত আমাকে অনেক স্নেহ করত, অনেক আদর করত কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াতো, তাদের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যেতো, তাদের সঙ্গে খেলাধূলায় অংশ নিতে বাধ্য করত, খেলতে না চাইলে অনেক সময় জোর করেই খেলায় নামাত, আর একান্তই না নিতে পারলে কোথাও বসে গল্প শোনাতো বা তারা আড্ডা দিত কিন্তু আমাকে তাদের পাশে অথবা কোলে নিয়ে বসে থাকত। কেউ একটানা বেশিক্ষণ আমাকে কোলে বা পাশে রাখতে পারত না, পালাক্রমে সবারই পাশে বা কোলে বসতে হতো। এ নিয়ে কোন কোনদিন তাদের মাঝে মান-অভিমানও হতো।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৩:৩৮