কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হলো আমার ষষ্ঠ কবিতার বই 'মেঘের কার্তুজ'। পশ্চিবঙ্গের বন্ধুরা কলকাতা বইমেলায় বার্ণিকের স্টল থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। বাংলাদেশেও কিছু কপি আসবে।
রাত দুপুরে কোকিলের ডাক কানে মেখে কিংবা গ্রীষ্মকালে দখিনের জানালা খুলে বাতাস খাওয়ার অনুভূতি নিয়ে যেসব কবিতা পড়ার আগ্রহ নিয়ে পাঠক অপেক্ষা করেন ‘মেঘের কার্তুজ’ সেরকম কবিতার বই নয়। খণ্ডিত চিন্তার পাশ ফিরে শুয়ে থাকা রক্তাক্ত চোখ, লাশবাহী শরীরের করুণা কাতর জিহ্বারা চেয়ে আছে এই কবিতাগুলোর শরীরে। সময় যাতনা, ক্ষুধার্ত রোদ্দুর, আলোহীন পোশাকের অসুস্থ হ্যাণ্ডসেকে কথা বলে তারা। কর্পোরেইটাজ দুনিয়ায় নরম গালের মতো প্রবাহিত হয়। সতীর্থদের চেয়ে আলাদা উন্নয়নে, অবয়বে বেড়ে ওঠে সতীত্বের অহমে…
‘মেঘের কার্তুজ’ থেকে চারটি কবিতা...
করপোরেট
এমন নুইয়ে গেছি
জ্বলছে ছিন্ন পারাপার, শুয়ে গেছি ঘাসে…
অথচ নিষ্পাপ,
প্রখর জেল্লায়
গেয়ে যাচ্ছিলাম নদী।
বর্ণে স্বৈরিতা ছিল
পথের পতাকায় উঁচু ছিল সন্ধ্যের ধূপ
বিছানাবন্দি অক্ষরে স্নান শেষে
পুড়ে উঠতো পরান, ইচ্ছে হতো যদি—
আহারে—এমন ভেঙে যাচ্ছি
ফুলেল গৌরবে ভাসিয়ে নিচ্ছি বৈরিতা।
অন্য সময় চশমা ছিল
বুদ্বুদ ফুটতো চোখে
না বলে চলে যেতো হাওয়ায়…
নাব্যতা ফুরিয়ে স্রোত উঠছে হাতে
পায়ে পায়ে সরে যাচ্ছে মুখ
এই তো এখন কুকড়ে এমন
মিশে যাচ্ছি চাওয়ায়—
ডেনভার
ফিরে আসছে মেদ
মৃত্যু, হাতের বরফে―
ঘেমে ক্ষীর।
দুর্যোগ এলো―গল্পের ঘামে রেখে গেলো নৃত্যের ট্রেন।
বুক ঘেষে কীসের শব্দ―অবিরত গদ্যকোলাজ
তিতে রাত―
মদ নদী;
কোথায় বেঁকে বাঁচে অথৈ―
শরীর থামে―গলিপথে কথাকার খোঁজে যন্ত্রণা
আঙুলে ছুটি; ওড়নায় উড়ে গ্যাছে বৃত্তের গড়জ।
মুখ থেকে বুকে―নেমে যাচ্ছে কই
সুখের সিরিজ!
ভুল থেকে ফুল; ―নিভে আসে বায়ুর শরম।
চোখে রেখে গন্ধ
গেঁথে রাখি ছুরির কাম...
রোজ রাতে ছুড়ে ফেলি বিকেল;
শিখে রাখি সিঁড়ির টান
পালাগানের বানান―
নিভে গেলে অন্ধ কিশোর―ছড়িয়ে ঘুমায় হাসি
আমি মাটি মেপে খেয়ে আসি ধানের সুবাস...
মানুষ
কাউকে কখনো মানুষের মতো হাসতে দেখিনি। অথবা এমন কিছু দেখিনি যাকে মানুষ ভেবে
নিজেকে মেপে দেখা যায়—কতটুকু মানুষ হলাম!
আগামী স্বপ্নে একটা বিড়াল কিনবো;
হলুদ মেখে—নাম রাখবো মানুষ!
নিকটবর্তী কোনো ডোবায় নাচতে দিয়ে—দেখতে থাকবো
ভেতরের নাচগুলো কত মুহূর্ত বাঁচতে পারে।
…আর বিড়াল থেকে সেই নাচগুলো
কিভাবে মানুষ হয়!
কানাকানি
ফুরায় না কিছুই
প্রাপ্তিও রয়ে যায় বিশ্বাসের ঘরে;
না যাওয়ার মতো এসেছিল যে
সেও থেকে যায় মুগ্ধ স্বাদের ঘোরে…
বিচ্ছিন্ন হয়ে ওঠা স্বদেশ কখনো
লেপ্টে থাকে চোখের সীমানায়;
গন্ধের লোভে—
কিছু তো এমন ভিন বাহাসে রটে যায় বেঘোর
সমাপ্তি টানে না কোথাও;
স্পর্শ মুখর ঠিকানা থেকে ফিরে এলেও
জটিল করে না দৌড়,
অস্ত্রের ঠোঁট তাক করে থাকে
না হওয়া খবরের শার্টে; তবু
স্তব্ধতা এলে ঘুম ভেঙে যায়
বৃক্ষের গোপনে লুট হয় দিন—
অথচ কোথাও থেকে যায় দূরে যাওয়া রাত
সরে যাওয়া মাটি!
প্রকাশক : বার্ণিক প্রকাশন
প্রচ্ছদ: আল নোমান
মূল্য: ১৫০ রূপি
#সানাউল্লাহ_সাগরের_কবিতা
#মেঘের_কার্তুজ
#কলকাতা_বইমেলা_২০২২
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:০০