গ্যাস আইন প্রণয়নে কোন বিশেষজ্ঞের মতামত না থাকায় এবং একটি প্রতিবেদন তৈরিতে দীর্ঘ নয় মাস সময় অতিবাহিত করায় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী বিষয়ক উপদেষ্টা এবং বিদুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের সচিবের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে গ্যাস আইন ২০০৯ এর নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই গত জানুয়ারি মাসে এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে গ্যাস আইন প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সোমবার মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত আইনে দুই সদস্য বিশিষ্ট গঠিত কমিটির বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না থাকায় প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু এই আইন করার জন্য ৯ মাসের বেশি সময়েও বিশেষজ্ঞের মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে।
এ সময় জ্বালানী সচিব প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন অযুহাত দেখালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজে দুইজন জ্বালানী বিশেষজ্ঞের মতামতের জন্য এতদিন সময় প্রয়োজন হয়নি। সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মধ্যে এই মতামত নিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে গ্যাস আইন ২০০৯ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই আইনে জ্বালানি মোকাবেলায় গ্যাস সরবরাহ, সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবহারের বিধান রাখা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে যে, গ্যাস ব্যবহারের পরিপূর্ণ আইন না থাকায় গ্যাসের অপব্যবহার ও অবৈধ ব্যবহার হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের কোন সাজাও দেয়া যাচ্ছে না। গ্যাসের সুষ্ঠু ব্যবহারের লক্ষ্যে ২০০৪ সালে এই আইনটি করার উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০৭ সালের জুন মাসে একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আইনটি কার্যকর করা হয়। এর আগে ১৯১০ সালের ইলেক্ট্রিক আইন দ্বারা গ্যাসের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হতো। বর্তমান সরকার ক্ষতায় আসার পরপরই এটিকে পরিপূর্ণ আকারে আইন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।
আবুল কালাম আজাদ জানান, বাংলাদেশ-ডেনমার্কের মধ্যে পুঁজি বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সংরক্ষণের চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার ৫৩তম সাধারণ সভায় অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদন এবং এর আলোকে প্রণীত সুপারিশ উপস্থাপন করা হয় বৈঠকে।
প্রেস সচিব আরো জানান, বৈঠকে সম্পূরক এজেন্ডা হিসেবে বর্তমান সরকার আমলে মন্ত্রিসভার গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও অগ্রগতির পর্যালোচনা করা হয়।
এতে বলা হয়, গত ৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬টি বৈঠকের সিদ্ধান্ত উলে¬খ করা হয়। এই ৩৬টি বৈঠকে ২০৪টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরমধ্যে ১শ’ ২৮টি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়েছে। ৭৬টি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বাস্তবায়নের হার ৬৯ শতাংশ। ৭৩টি আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি সংসদে পাস হয়েছে। ৩৩টি সংসদে পাসের প্রক্রিয়াধীন এবং ১৫টি সংসদে উপস্থাপনের অপেক্ষায় আছে।
প্রেস সচিব জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিদ্যমান ঘড়ির কাঁটা বহাল রেখেই যানজট নিরসনে ঢাকা মহানগরীর সব সরকারি-বেসরকারি অফিস, বিধিবদ্ধ সংস্থা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন সময়সূচী নির্ধারণ করেছে সরকার।
নতুন সময়সূচি অনুযায়ী সরকারি অফিসে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কাজ চলবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সময় দশটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাশ শুরু হবে সকাল সাড়ে নয়টায়। চলবে সোয়া চারটা পর্যন্ত। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুল-কলেজ, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এবং মাদ্রাসাগুলোকে সকাল সাতটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে ক্লাশ শুরু করে দুপুর একটা থেকে বেলা আড়াইটার মধ্যে তা শেষ করতে হবে। তবে এই সময়সূচি এলাকা ভেদে নিজ নিজ স্কুল কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।
এছাড়াও মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, টেন্ডার ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধ এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৯:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



