চড় জানাজাত
পরদিন শুক্রবার। নাস্তা খেয়ে বের হলাম , তারপর ভাগ্যকূল বাজারে গিয়ে জানাজাত চরের উদ্দেশ্যে নৌকায় চড়ে বসলাম। নাম তার চর জানাজাত হলেও সবাই সে চরকে বলে ভূমিহীন। চরটি ভূমিহীনদের দখল বলেই হয়তো এমন নামকরণ। এপার ভাগ্যকুল বাজার থেকে ওপারের জানাজাত চরে ট্রলারে চেঁপে পৌঁছুতে সময় লাগে আধা ঘন্টা। জোয়ার-ভাটার কারনে একটু সময়ের তারতম্য হয়। সে কারনে আমাদের সময় একটু বেশী লাগলো। খালা রতন নামের একজন পরিচিতকে আমাদের সাথে দিয়ে দিয়েছেন। নৌকায় পরিচিত হলাম শাহীন ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি চর জানাযাতের বাসিন্দা এবং ট্রলার মালিক। শাহীনের সাথে গল্পে গল্পে আর ছবি তুলে আমরা চর জানাজাতে পৌঁছে যাই। দুর থেকে চর জানাজাতকে মনে হচ্ছিল ছোট্ট একটা দ্বীপ। সে দ্বীপে নৌকা আমাদের হাঁটু পানিতে নামিয়ে দিলো। সবাই যে যার মত কাপর গুটিয়ে পানি টপকে হাঁটা ধরলো। আমি শুভমিতাকে নামালাম তারপর হাঁটতে হাঁটতে একটি মাছ ধরার নৌকা তীরে আসতে দেখে নৌকায় ইলিশের খোঁজে এগিয়ে গেলাম। ইলিশ নয় ছোট সাইজের বেলে মাছ। আমি কিছু বলার আগেই সে মাছ গুলো একজন চারশত টাকায় কিনে নিলো। আমি মাছ কিনতে না পারায় মন খারাপ হলেও শুভমিতা শান্তনা দিলো এখন মাছ গুলো নিয়ে কী করতে তুমি। ট্রলার মালিক শাহীনের ঐ একই কথা। কী আর করবো আবার নদীর ঘাটে মাছ ধরার নৌকা আসবে এই ভেবে সামনে এগিয়ে চললাম। যেতে যেতে গান ধরলাম -আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ...
আমরা হেঁটে হেঁটে সামনে এগিয়ে চলেছি। অবশ্য এখানে হাঁটা ছাড়া কোনও গতি নাই। রিকসা , ভ্যান জাতীয় কোন গাড়ি এখানে নাই। সুতরাং পায়ে হেঁটেই এগিয়ে চললাম। শুভমিতা ক্যামেরা ক্লিক করে করে পথ চলছে। এই গরমেও তার মধ্যে শিশুসুলভ চপলতা কমেনি। আমিও সমানে ক্যামেরায় কিক করে চলেছি। হঠাৎ সামনে তাকাতেই দেখি ধান েেতর ধানগাছের মাথায় হাওয়ার দোলায় একঝাঁক চড়ই পাখি দৌঁড়ে উড়ে চলে গেলো ফুড়–ৎ! তারপর আবার বসলো সামনের ধান গাছে। আমরা এমন দৃশ্যে খুব বিমোহিত। সে মুগ্ধতা নিয়ে কাছের এক বিশাল বড়ই গাছের নীচে গিয়ে বসলাম। আমরা বটগাছকে দেখি ছাঁয়া হয়ে থাকে। এখানে সে কাজটি এই বড়ই গাছের। ওপার থেকে আসা মানুষ-জন এখানে বড়ই গাছ তলায় একটু জিড়িয়ে তারপর গন্তব্যে চলে। চারিপাশ খোলা বড়ই তলায় আমরাও বসে পরি। চারিপাশ থেকেই যেন বাতাস ধেঁয়ে আসছে। বুনো গন্ধমাখা সে বাতাস প্রান আকুল করা। পুরো এলাকাটা কেমন জংলায় ভরা। একটু ভালো করে তাকাতেই দেখি সে জঙ্গলে অনেক বুনো গাছের সাথে হাতিসুর দাঁড়িয়ে। আমি ক্যামেরা হাতে নেমে পরি হাতিসুরের ছবি তুলতে। এখানে আমি বেশ মজার কান্ড ল্য করি। হাতিসুর ফুলের ওপর ফুরফুর করে উড়ছে রঙবেরঙের প্রজাপতি। আমি প্রজাপতির ওপর ক্যামেরা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরি। এর মথ্যে কোথা থেকে এক ঝাঁক ফিঙ্গে উড়ে এসে বসেছে ধান েেতর পাশের ঝিঙ্গে গাছের মাঁচায়। আমি ফিঙ্গের দিকে যেই ক্যামেরা তাক করেছি , সাথে সাথে তারা দলবেঁধে উড়াল দিলো। তারপর আবার তারা ঝুঁপ করে বসে পড়লো অন্য এক ঝোঁপের মাঝে।
শাহীন এলাকার লোক। সে চর জানাজাতের আদ্যপান্ত জানে। যখন আমরা একেবারে গ্রামের ভেতর যেতে চাইলাম , তিনি চলেন বলে একটু ইতস্তত মনে হলো। তারপর বললেন , এতোদুর যাবেন , তার চেয়ে বরং কাছের বাড়ি ঘর বেড়ান। চর জানাজাতের মুল আবাস এলাকায় যেতে হলে প্রায় এক থেকে দেড় মাইল হাঁটতে হবে। শুনে আমরাও একটু দোমনা হলাম। শেষে এবার শুধু আশপাশের এলাকায় ঘুড়ে বেড়াবো ঠিক করে পানির খোঁজ করি। রতন ছুট লাগায় , পেছনে শাহীন ভাই। আমরা পুরো চর এলাকা আবার চোখ বুলাই। খুব দর্শনীয় চর জানাজাতের এই অংশ , দেখে আমরা অভিভুত। আরেকবার চোখ বুলিয়ে এলাকাটা দেখে নিলাম। বড়ই গাছের থেকে একটু সামনে আট থেকে দশটা টিনের বাড়ি। সে বাড়ি ঘিরে আছে অনেক গাছ-গাছালিতে। এখানে অনেক কলা গাছ চোখে পড়লো। মাঠে গরু চড়ছে। রাখালও দেখলাম বসে আছে পাশে। আর নদীতে গোসল করছে এক ঝাঁক শিশু। বাড়ির বৌ-ঝিরাও অনেককেই নদীতে গোসল শেষে বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছে। আমরাও সামনের গ্রামে পা বাড়াই।
পদ্মার বুকের এই চরটি দীর্ঘ দিনের।
এ কুল ভাঙ্গে , ও কুল গড়ে
এই তো নদীর খেলাÑ
এভাবেই চলছে। আমরা এখন মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার চরজানাজাত অংশে। পাশেই রয়েছে চর কাঁঠালবাড়ি ও চর বান্দরখোলা। প্রতি সাত-আট বছরে এসব চর নদীর ভাঙ্গনে পরে। তার মানে হলো চর এলাকার বাসিন্দারা এক যায়গায় আট থেকে দশ বছরের বেশী থাকতে পারেনা। তাইতো ভাঙ্গনের শব্দে তাদের বুক কাঁপে। নদীর সাথে জেহাদ করে এখানকার মানুষের বসবাস। বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন শাহীন ভাই। হাঁটতে হাঁটতে আমরা এর মধ্যে গোবোরন্ড গ্রামে চলে এসেছি। এলাকাটি হাসেম বেপারীর ভিটা নামে পরিচিত। একটি মাত্র দোকান , সে দোকান ঘিরেই গ্রামবাসীর যত আড্ডা। সাথে ওপারে যাবার জন্য নৌকার অপো। এখানে আমাদের দেখা হয় এলাকার মেম্বার মুফসুরুল হাওলাদারের সাথে। তাঁর কাছ থেকেই জানতে পারি চর জানাজাত ইউনিয়নে ছয়টি প্রাইমারী স্কুল ও দুইটি হাইস্কুল থাকলেও পরিবেশ খুব একটা ভালোনা। প্রচার প্রচারোনার ডামাডোল থাকলেও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের আওয়াজ কেনো জানি মানুষের কানে পৌঁছে না! সাথে স্কুল থাকলেও কেনো অদৃশ্য কারনে শিার পরিবেশটা ঠিক মত গড়ে ওঠেনি। একটা পরিবারে ছয়-সাতটা করে ছেলে মেয়ে বোঝেন ঠেলা - বলে অট্টহাসি হাসেন মুফসুরুল হাওলাদার! তারপর বলেন , আসল সত্য হলো যায়গাটা দূর্গম আর গ্রাম গুলো অনেক দুরে দুরে। আর যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হওয়াতেই সব কিছু কেমন বিচ্ছিন্ন থেকে গেছে। তারপর বলেন , তবে চর জানাজাতের যত ভেতরে যাবেন তত বেশী মুগ্ধ হবেন। আমরা কিন্তু এখানে এসে মুগ্ধ কম হইনি। সে মুগ্ধতায় ভর করে মেম্বার সাহেবের কাছে বিদায় নিয়ে পাশের বাড়িতে ঢুঁ মারি। যেতে যেতে দেখা হয় একদল শিশু কিশোরের সাথে। তারা তখন খেলা করছে একটি পরিত্যাক্ত ধান মারাইয়ের যন্ত্র নিয়ে। তাদের ছবি তুলি। ছবি তুলি একটি কলার মোচা সহ কলা গাছের। এভাবেই আমরা বাড়ির ভেতর চলে আসি। চমৎকার পাটখড়ি আর খড় দিয়ে তৈরী ঘর , তার ওপর কবুতরের বাসা। পাশেই টিনের একচালা ঘর। একজন বয়স্ক মহিলা সে ঘরের সামনে বসে একটা টুকরিতে খড় নিয়ে কিছু একটা করছিলেন। আমাদের দেখে ঘোমটা টেনে বসলেন। ক্যামেরা হাতে দেখে উঠে কাছে আসলেন। তিনি আমাদের সরকারী লোক বা এনজিওর কেউ ভাবলেন। ভেবে বলে চললেন , আমাগো খুব অভাব। কৃষিকাজ আর মাছ ধরা ছাড়া কোন কাম নাই গ্রামে। নদী ভাঙ্গনের ভয় আর ডাকাইতের ভয় তো আছেই। আমাগো লাইগা কিছু করেন বাবা। অথচ মহিলার কানে মোটা কানের দুল। যা দেখে শুভমিতা চুপিচুপি আমাকে বললো মহিলা শয়তান। আমি মুচকী হেসে সে বাড়ি থেকে বের হলাম। এবার শাহিন ভাই বিদায় জানায় আমাদের , যেতে যেতে বলেন এই সময় নদীতে জাল বাওয়া যায়না। নদীতে ভাঙ্গন লাগছে , তাই মাছও কম। ইলিশ পড়লে জানাবো বলে আমাদের মোবাইল নাম্বার নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেন। আমরাও ফিরতি পথ ধরি। ফিরতে ফিরতে দেখি তখনও শিশুরা পদ্মা নদীতে দাপাদাপি করে চলেছে। একপাল গরুও দেখলাম পদ্মার বুকে। তখন পড়ন্ত বিকেল। সুর্য আড়ালে চলে যাচ্ছে। আমরা ধীর পায়ে নদীর ধারে এসে দাঁড়ালাম। খরস্রোতা পদ্মায় নেমে বালুর ওপর দিয়ে খানিকটা এগিয়ে গেলাম। গোড়ালি ভেজা পানিতে কেমন যেন শির শির করতে লাগলো। আমাদের সামনে দিয়ে তখন এগিয়ে যাচ্ছে একটি পাল তোলা নৌকা।
শেষ কথা
বর্ষা চলে গেলেও নদী ভাঙ্গনের ভয় শেষ হয়নি। ভাদ্র আশ্বিন মাসে নদীর ভাঙ্গন বেশী। এখন ভাদ্রমাস চলছে। চর জানাজাতের মানুষের তাই রাতে ঘুম আসেনা স্রোতের ডাকে। চরের পশ্চিম দিকটা পদ্মায় গ্রাস করেছে। হাশেম বেপারীর ভিটা নামে খ্যাত গোবোরন্ড গ্রামখানিও গ্রাস করতে পারে পদ্মা। নদী সব পারে - ভাঙ্গতে এবং গড়তে!
মিশন: কাঁসার থালা–বাটি
বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ
কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।