somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রফেসর নাহিদের আবিষ্কার

২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাহিদ হোসেন সাহেব প্রিন্সটনের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মূল ভবনের গেইটের কাছে এসে একটু থমকে দাঁড়ালেন। তাড়া নেই কোনো। তাঁদের কাজ চীনা ছাত্রগুলি এবং পোস্টডকরাই দেখছে। তিনি তত্ত্বাবধান করেন, দিক নির্দেশনা দেন। নাকবোচারা খুব পরিশ্রমী, সারা রাত ল্যাবে কাটাতেও আপত্তি নেই। এক সময় প্রথম প্রিন্সটনে এসে তিনিও এ কাজ করেছেন। গ্রুপের লোকদের বিশেষত মুরুব্বিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এক্সপেরিমেন্টাল কাজের জয়-জয়কার চাকরীর বাজারে। আজকাল সাদাগুলো কেউ ল্যাবে কাজ করতে চায় না, তারা সবাই থিওরী চায়। থিওরী দিয়ে আইনস্টাইনের মত রাতারাতি খ্যাতি চায়।

বিএস আর্লিংটনে করতে হয়েছে, তেমন খ্যাত নয়। তখন আইডিয়া আসে ভালো কোথাও যেতে হলে পিএইচডির জন্য বলতে হবে এক্সপেরিমেন্ট করতে চাই। সুযোগ এলো স্ট্যানফোর্ড থেকে। সেখানকার পর্ব শেষ করে পোস্টডকেও পাওয়া গেল প্রিন্সটন।

এই সব রেনেগেড তাত্ত্বিকদের মন পড়ে থাকে থিওরীতে। শখ করে টিভিতে বিগ ব্যাং থিওরী দেখে। অবশ্য তাঁর স্ত্রী সাহারা আবার বিগ ব্যাং বেশী দেখতে দেন না, এতে নাকি বড্ড বেশি আদিরসের প্রাধান্য আছে, যদিও তা শুধু কথায়, কাজে নয়। আর নায়কটি তো প্রায় হিজরার মত। তার কোন লৈঙ্গিক আকর্ষণ আছে মনে হয় না, যদিও অন্য তিন বন্ধুর চিন্তাতে সারাক্ষণ বিষয়টি পদার্থবিজ্ঞানের সমীকরণের মতই খেলা করে। ভারতীয়টি অথর্ব সমলিঙ্গের মতই উপস্থাপিত করা হয়েছে। যেন সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই। মাঝে মাঝে এই বর্ণবৈষম্য দেখে নাহিদ বিরক্ত হয়। তবু স্ত্রীর চোখের আড়ালে দেখতে ভালোই লাগে। মনে মনে তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ ফিরে পায়, যা বাধ্য হয়ে তাকে ত্যাগ করতে হয়েছে। মাঝে মাঝে পুরোনো বই খুলে আবার পড়তে বসে। একটু একটু দুরূহ মনে হয় বটে, কিন্তু আবার সাহস পায় এই ভেবে যে চল্লিশ বছর যে স্ট্রিং তত্ত্ব তাত্ত্বিক গবেষণাকে কোণঠাসা করে শেষে পশ্চাদপসরন করছে অবশেষে, সে জায়গাতে এখন একটা শূন্যস্থান তৈরী হয়েছে। এবং নতুন বাজারে নয়া বণিকের সমান সম্ভাবনা সম্ভব।

প্রিন্সটন এক চমৎকার জায়গা গাছ-গাছালিতে ভরা। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে দু চারজন ছাড়া সবাই ইহুদী। এ কথা অবশ্য আমেরিকার বেশির ভাগ ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই প্রযোজ্য। আইনস্টাইন নেই, কিন্তু স্টাইনহার্ড আছে, সবচেয়ে গোঁড়া ইহুদী। যখন অনেক ইহুদী বিজ্ঞানী আরব-ইসরায়েল সম্প্রীতির জন্য ডাক দিচ্ছিল, স্টাইনহার্ড হার্ভার্ডের উকিল দের্শোউইটস-এর মত কট্টর যিওনিস্ট বক্তব্য দিয়ে মনো্যোগ আকর্ষণ করছিল এবং ইস্রায়েলের বাহবা কুড়াচ্ছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো নাহিদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করত স্টাইনহার্ড, সম্ভবত তাঁর মধ্যেও অন্য ধর্মের শক্ত প্রভাব দেখে। সাহারাকে হেজাব পরা অবস্থায় কয়েকবার দেখেছে স্টাইনহার্ড।
তুলনামূলকভাবে কার্টিস কালান ছিলেন মডারেট। ইহুদী হলেও আচরণে কখনো বোঝা যেত না। পাকিস্তানের সালামের সাথে নাকি কালানের বেশ খাতির ছিল। এ জন্য প্রিন্সটনের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইহুদী শিক্ষক কালানকে বেশি পছন্দ করত না। আরেক মহারথী এডলারের অবস্থান ছিল মাঝামাঝি। দুকূল বাঁচিয়ে।

প্রিন্সটনের কন্ডেন্সড ম্যাটার ল্যাব ছিল নেতৃত্বহীন। কয়েকদিনের মধ্যেই নাহিদ টেনিউর পেয়ে গেল। প্রচুর পেপার লিখতে হয়েছে এজন্য। দেখে স্টাইনহার্ড খুব খুশী। তিনি নিজেই অনেক টাকার চুক্তি বগিয়ে ফেললেন এন এস এফ থেকে। বিভিন্ন দেশ থেকে তার ল্যাবে কাজ করার আবেদন আসে, প্রধানত যেগুলো উন্নয়নশীল। কিন্তু নাহিদ চাইনিজদের বেশি পছন্দ করেন। এরা চুপচাপ মুখ বন্ধ করে কাজ করে যায়। কোনো কাজ অসম্ভব মনে হলেও ঠিক মুখ ফুটে তা বলে না। চেষ্টা করে। চীনা কৃষক যেমন মালিকের কথায়, বা পরে পার্টি লীডারের কথায়, প্রাণপণে তাঁর মন ভরানোর চেষ্টা করত। ভারত-উপমহাদেশীয়রা আবার বেশী বোঝে, পলিটিক্স। পারতপক্ষে এড়িয়ে চলেন নাহিদ। তাদের মধ্যে নানা কোন্দল।

নাহিদের পেপারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তারপর এক সময় মনে হয় এখন তাঁর একটা বড় কিছু চমকদেয়া করা উচিত। হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে মনে হয় - তাই তো, ফিজিক্সে টপলোজী এত উপেক্ষিত কেন? কি চমৎকার বিষয় - কিভাবে কত বিচিত্র ভাবে দড়ি প্যাঁচানো যায়, কিভাবে ফুটোর সংখ্যা দিয়ে বিভিন্ন তলের শ্রেণীবিভাগ হয়। এসবের সাথে তো নিশ্চয়ই কন্ডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্সের যোগাযোগ করা যায়। কয়েক বছর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে চেষ্টায় ক্রিস্টালের টপোলজিকাল গড়নের বিভিন্নতার সাথে কোনো কোনো প্রপার্টির বিভিন্নতার সম্পর্ক পেল। এটা তো থাকবেই। কিন্তু নাহিদ এটাকে এখন এক যুগান্তকারী আবিষ্কার হিসেবে সব জায়গায় প্রচার করা শুরু করল। বিভিন্ন জায়গাতে সেমিনার দেয়ার আমন্ত্রন চাইল। অনেকে ভদ্রভাবে শুনে বলল - বেশ কাজ হয়েছে। আবার কেউ কেউ ঠোঁট উল্টে বলল - এটা তো ট্রিভিয়াল। বিল্ট ইন মেকানিজম, তোমার যদি থিওরীতে একটু জ্ঞান থাকত, শুরুতেই বুঝতে, এত এক্সপেরিমেন্ট করে বের করতে হতো না।

নাহিদ জানেন তাঁর থিওরী জ্ঞানে একটু ঘাটতি আছে। হার্ভার্ডে টক দিতে গেলে বিশেষ কেউ এলোই না কিন্তু না দমেই দেশে বিদেশে শুধু প্রশংসার সুসংবাদটি পাঠিয়ে দি্তেন। আজ এখানে কাল, সেখানে সেমিনার দিয়েছে্ন, এই জার্নালে সেই জার্নালে তাঁর পেপার বেরিয়েছে।

প্রচারের সুফল শুধু সাবানের বিজ্ঞাপনে হয় না। কালক্রমে নাহিদ প্রিন্সটনের প্রফেসর হয়ে গেলেন। তাঁর সাম্প্রতিকতম আবিষ্কার হলো ওয়াইল ইলেক্ট্রনের ভৌত আবিষ্কার। নয় দশক আগে ইলেক্ট্রনের জন্য একটা সমীকরণ আবিষ্কারের চেষ্টায় হেরমান ওয়াইল দুটো উপাংশ দিয়ে যে ইলেক্ট্রন উপস্থাপন করেন তার কোন ভর নেই। কিন্তু এরকম এক জোড়া ইলেক্ট্রনের সাথে আমাদের পরিচিত ভর-বিশিষ্ট সাধারণ ইলেক্ট্রন মিলিয়ে দেয়া যায় এবং সেটাই আমরা ব্যবহার করি। এমনকি ইলেক্ট্রনের ম্যাগ্নেটিক মোমেন্টও কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রোডায়নামিক্সের নিয়মে গণনা করলে হুবহু বেরিয়ে আসে বাস্তবের সমান।

আজ সকালে নিউ ইয়র্ক থেকে কে জানি এসেছে নাহিদের কাছে, সেক্রেটারী বলল। সালাম জানিয়ে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকা ছেলেটি বললঃ স্যার, দেশের সব পত্রিকায় আপনার এত সুনাম শুনে চলে এলাম একবার দেখতে। আপনি আমাদের জন্য একটা প্রেরণা।
নাহিদ মনে মনে প্রীত হলেন।
- না, না, এটা তো সবে শুরু। তোমরা আশা করি আরো বড় আবিষ্কার করবে। তুমি কোথায় পড়?
- স্যার, আমি এখানে কম্পিউটিং পড়তে এসেছি। তবে পার্টিকল ফিজিক্স আমার খুব ভালো লাগতো, কিন্তু স্ট্রিং থিওরী বুঝতে না পেরে ছেড়ে দিয়েছি।

নাহিদ হাসলেন। - স্ট্রিং থিওরী আমিও বুঝি না। অথচ প্রিন্সটনের এড উইটেন এ বিষয়ে সব চেয়ে বড় সব আবিষ্কার করেছেন। অথচ তিনি অনার্সে ইতিহাসের ছাত্র ছিলেন।
ছেলেটি খুব কুন্ঠিতভাবে বলল - স্যার, আসলে অনেক ক্যালকুলেশন দিয়ে জোর করে অনেক কিছু মিলিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু যাদের একটা স্বাভাবিক ইন্সটিঙ্কট থাকে তারা প্রথমেই টের পায় কোনটা হতে পারে্‌ আর কোনটা গায়ের জোরে চেষ্টা করে মেলানো। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে চেষ্টা চলতেই থাকে, দু এক লাইন টানলেই যেমন একটা ছবি চলে আসে, তেমনটি হয় না।
- আমার বিশ্বাস আমার ছবি ঠিক। ওয়াইল ইলেক্ট্রনের ভর নেই। এটা একটা চমৎকার প্রপার্টি।
ছেলেটি আরো কুন্ঠিতভাবে এত বড় বিজ্ঞানীর কাছে বলল - কিন্তু স্যার, ভরহীন হওয়ার কথা ছিল নিউট্রিনোর, যার চার্জ নেই। অথচ সব নিউট্রিনোর ভর পাওয়া গেছে। ইলেক্ট্রনের তো চার্জের কারণেই এনার্জি, অর্থাৎ ভর, চলে আসার কথা। স্যার, টপোলজীতে হোমোলজী থিওরী দিয়ে --

নাহিদ উঠে দাঁড়ালেন। আজকে আমার সময় নেই, একটু বেরুতে হবে। পরে তোমার কথা শুনব।
ছেলেটা চলে যাওয়ার পরে নাহিদ লাইব্রেরীর দিকে চললেন। হোমোলজী থিওরিটা ভালো করে পড়া নেই।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৩১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×