মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী জামাত সম্পর্কে সেই তখনকার দিনেই বলেছিলেন, 'নীল নদের পানি যেমন নীল নয়, জামায়াতের ইসলামও ইসলাম নয় । আসলেই এটা কোন ইসলাম নয় বরং এটা হল মওদূদীবাদ।
বাস্তবে জামাতে ইসলামের সাথে সবগুলা ইসলামী দলই ভিন্নমত পোষণ করে। বিশেষ করে মাজারকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক সংঘরা জামাতকে ঘৃণা করে।
আপনে হেফাজতে ইসলামের ঘোর সমর্থকদের কাছে যান, দেখবেন এরাও জামাত ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক উত্তর দিবে। যাক, আজকে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সাহেবের মৃত্যুবার্ষিকী। উনাকে স্মরণ করা দরকার। উনি বাঙালি জাতির পিতা ছিলেন, পরে পাল্টিয়ে দেওয়া হইয়াছে।
উনার দাড়ি-টুপি ও লেবাসের কারণে তাঁর প্রতিপক্ষের জন্য প্রচার করা সহজ যে তিনি একজন গ্রাম্য মুসলমান নেতা ছিলেন। সেকালের বাংলার জমিদারদের ৮০ শতাংশ ছিলেন হিন্দুধর্মাবলম্বী এবং তাঁদের প্রজাদের ৭০ শতাংশ ছিলেন মুসলমান। তিনি যখন জমিদার-জোতদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, তা যাদের গিয়ে আঘাত করে, তাদের বারো আনাই হিন্দুধর্মাবলম্বী।
বাংলা ও আসামের বহু হিন্দু তাঁকে অবতার জ্ঞান করত। তিনি বলতেন, হিন্দুর ক্ষুধা, মুসলমানের ক্ষুধা, বৌদ্ধের ক্ষুধা, খ্রিষ্টানের ক্ষুধা একই রকম। শোষক ও জালেমের কোনো ধর্ম নেই। মজলুমের কোনো ধর্ম নেই। জালেম হিন্দু হোক আর মুসলমান হোক, দেশি হোক আর বিদেশি হোক, কালো চামড়ার হোক আর সাদা চামড়ার হোক—সব সমান।
ভাসানী কোন অবতার ছিলেন না, আর দশটা মানুষের মত তারও সীমাবদ্ধতা ছিলো, এবং তার মত বিশাল নেতার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভুলের জন্যে জাতিকে কড়া মাশুল দিতে হয়েছে। পাকিস্তান আমলে জিন্নাহর সাথে সুসম্পর্ক, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তার অনুসারীদের দদ্যুল্যমনতা(এর কারণ আজ স্পষ্ট ভারত কি করতেছে উহা দেখা যাচ্ছে), এবং ১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে তার কাজকর্ম নিয়ে অনেক বিতর্ক(কুতর্ক আছে, ইহা ভারতীয় দালালরা বিতর্ক বলে) রয়েছে। যত বিতর্কই থাকুক তিনি যে সত্যিকারে একজন কৃষকের নেতা ছিলেন, দরিদ্রের ভালো চাইতেন সেটা তার শত্রুও মেনে নেবে। তাই আমাদের উচিত এই মহান নেতার কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করা।
জামাত ইসলামের ইসলাম কেন্দ্রিক রাজনীতি আমার বরাবরই অপছন্দ। এই জায়গাটা মাওলানা ভাসানী সাহেব খুব সুন্দর করে ধরতে পেরেছিলেন। তিনি যৌক্তিক করাণেই জামাতের বিরোধিতা করতেন। আমার মতে জামাতের উচিত ধর্ম নিয়ে নিরপেক্ষ একটা অবস্থান তৈরি করে রাজনীতি করা। কারণ উনাদের রাজনীতির ফিল্ড খুবই শক্তিশালী। বাংলাদেশের ক্রমাগত উন্নয়ণ ও অগ্রগতি করার শক্তি বিএনপির চেয়ে জামাতে ইসলামের বেশি আছে। ইহা এ জাতির জন্য খুবই দরকার।
তবে আজ বেঁচে থাকলে তিনি নিশ্চয়ই জালিম হাসিনার বিরু্দধে কন্ঠ উঁচিয়ে কথা বলতেন। ভারতের বিরুদ্ধে আজকের তারেকের মতো রাস্তায় নেমে লংমার্চ করতেন। উনি বেঁচে থাকলে আজ জনগণ উনার সুতোয় এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ গড়তে অংশ নিতে পারতো।
মওলানা মিডিয়া সিন্ডিকেটের বুকে কাঁপন ধরিয়ে হাতে হারিকেন ধরিয়ে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতেন নিশ্চয়ই। আসুন উনার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


