somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কম খরচে আবার ভারত পর্ব-৪ ( আধিক্য কালকা মেইল-২)

২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অন্য পর্বগুলো

এর মাঝে কখন যে সেতুকে আর নিয়নকে আপনি থেকে তুই বলে ডাকা শুরু করেছি জানি না। তবে তাদের কাজকর্মগুলি খুব উদ্দীপক। প্রচন্ড গরমে তারা অস্থির হয়ে আছে। শেষ পর্যন্ত তারা আর পারলো না। ছুটিতে বাড়ি যাওয়া এক বিএসএফ জওয়ানের কাছ থেকে একটা টিফিন বাটি চেয়ে নিয়ে টয়লেটে ঢুকে পড়লো। সেখানে অনেকক্ষণ ধরে গোসল করে বাইরে বের হয়ে এসে কিছুক্ষণ আরামে বসে থেকে আবারো গরমে অস্থির হয়ে পড়লো।

তাদের দেখাদেখি আমিও টয়লেটে গেলাম গোসল করতে। কিন্তু বিধি বাম! গায়ে কোনরকমে দু’বাটি পানি ঢালতেই পানি শেষ হয়ে গেল। অগত্যা ওই অবস্থায় গা মুছে বের হয়ে এলাম। টিফিন বাটি ফেরত দিতে যেতেই বিএসএফ সদস্য বাটি উল্টে সাবানের ফেনা দেখিয়ে দিলেন। তাড়াতাড়ি সেটা নিয়ে আরেকটি টয়লেট থেকে ধুয়ে ভালো করে মুছে তাকে ফেরত দিলাম। হু হু বাবা! এর নাম বিএসএফ! এরাই তো পাইকারি হারে মানুষ হত্যা করে।



আজ যেহেতু রবিবার এজন্য এই ট্রেনে লোকাল যাত্রীর সংখ্যা কম। অর্থাৎ অতিরিক্ত কোন লোক ওঠেনি। অন্যান্য দিন নাকি অফিস যাত্রীতে এই ট্রেন ভরে যায়। এছাড়া আমাদের সারিতে ৬টা সিটের একটা ফাঁকা। মনে হয় কোন যাত্রী ট্রেন মিস করেছে। এতো লম্বা একটা জার্নিতে ট্রেনের মধ্যে যে পরিমানে ভিক্ষুক থাকার কথা ছিল তা নেই।

এমনকি স্টেশনগুলোতেও আমি কোন ভিক্ষুক দেখিনি। তাই বলে যে ভিক্ষুক নেই তা বলছি না, হয়তো আমার চোখে পড়েনি। এছাড়া আমি ভেবেছিলাম আমাদের দেশে হিজড়ারা যেরকম উৎপাত করে, ভারতের ট্রেনেও বোধহয় করে। এজন্য কিছু খুচরা রুপি আলাদাভাবে প্রস্তুত রেখেছিলাম। কিন্তু আল্লাহর রহমতে এ ধরনের কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি।

আমার সামনের সিটে বসেছে শিভেন্দু আর তার সহকারি। আমি বললাম শিবেন্দু, সে বলে না শিভেন্দু। আচ্ছা তাই সই! শিভেন্দু হচ্ছে একজন গাইড, আর তার সহকারি লোকটি হচ্ছে একজন বাবুর্চি। তারা একপাল লোক নিয়ে হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় যাচ্ছে বেড়াতে। সেই একপাল লোক অবশ্য এসি বগিতে করে যাচ্ছে। শিভেন্দু মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে তাদের দেখে আসছে। বাবুর্চির বেতন দৈনিক ৫০০রুপি করে, গাইডের নিশ্চয় আরো বেশি।

মাসে আয় তো তাহলে কম না, কিন্তু এদের দেখলে মনে হয় এদের অবস্থা বুঝি খুবই খারাপ। সকালে তাদের খাবার হলো মুড়ি-চানাচুর কাচামরিচ দিয়ে একটা পলিথিনের মধ্যে মাখিয়ে তার সাথে একটা পেঁয়াজ থেতলে খাওয়া। আমি অন্যান্য যাত্রীদেরকেও এমনকি দিল্লি থেকে যখন কলকাতায় ফেরত আসি সেই ট্রেনেও সবাইকে এইভাবে খেতে দেখেছি। আসলে আমরা বাংলাদেশীরা টুকটাক নাস্তা হিসাবে খাবারের বিরতিতে যা খায় ইন্ডিয়ানরা তাই তাদের মুল আহার হিসাবে গ্রহণ করে।

তাদের এই খাদ্য গ্রহণ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি ভাবলাম দুপুরে ট্রেন যে স্টেশনে দাঁড়াবে সেখান থেকে কোন কম দামের খাবার কিনে খাবো। কিন্তু শিভেন্দু আমাকে বোঝাল যে ভ্রমণে বের হয়ে খাবারে কষ্ট করতে নেই। আমিও নির্দ্বিধায় তার কথা মেনে নিলাম। এজন্য ট্রেনের লোক যখন খাবারের অর্ডার নিতে আসলো তখন তাদের কাছে ডিম আর চাউলের অর্ডার দিলাম। ইন্ডিয়াতে বেশিরভাগ জায়গায় ভাতকে চাউল বলে।

বাইরে রুক্ষতা আরো বেড়েছে। ট্রেন মনে হয় উত্তর প্রদেশে ঢুকে পড়েছে। বাইরে মাঝে মাঝে ময়ুর দেখতে পাচ্ছি। আর গরম বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। দুপুর একটার দিকে খাবার দিয়ে গেল। মূল খাবারের সাথে এক্সট্রা রুটি অথবা ভাত দেয়, আমি রুটি না নিয়ে ভাত নিলাম। দুটো ডিম, দুই বাটি ভাত, একটা ভাজি, ডাল, চাটনি এক গ্লাস পানি আর এগুলো খাওয়ার জন্য প্লাস্টিকের একটা চামচ। একটা বিষয় আমার কাছে খুব অবাক লেগেছে, পুরো ইন্ডিয়াতে বোধহয় একজনের খাবারের জন্য দুটো করে ডিম বরাদ্দ। খুব সাবধানে এইসব খাবারের প্যাকেট খুলে খুলে খেতে হয়। নাহলে বাতাসের ধাক্কায় বর্ণিল ঝোলওয়ালা এইসব খাবার ছিটকে অন্য কারো গায়ে লাগতে পারে।



খেতে বসলে সেতু আমার আর নিয়নের খাবারে ভাগ তো বসালোই এমনকি আশেপাশের যাত্রীদের খাবার থেকেও তুলে তুলে খেতে লাগলো। আমি যতোই এই ছেলেটাকে দেখছি ততোই অবাক হচ্ছি। মানুষকে আপন করে নেবার এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে সেতুর মধ্যে। অগ্রিম একটা কথা বলি, সিমলা পর্যন্ত পৌছানোর ৪৯ ঘন্টা সময়ের মধ্যে আমরা শুধু বন্ধু ছিলাম না, সে সব জায়গায় আমাকে তার কাজিন হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলো।

যাই হোক, খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা আরো গরমে পড়লাম। মাথার উপরে ঘুরন্ত তিনটি ফ্যান যেন আগুনের হল্কা টেনে নিয়ে আসছে। মাঝে মাঝে যে স্টেশনগুলিতে ট্রেন থামে, দেখি সেতু খালিগায়ে শুধু লুঙ্গি পড়ে প্ল্যাটফর্মগুলোতে দৌড়াদৌড়ি করছে। নিয়নের অবস্থাও কাছাকাছি। একটা স্টেশনে আমিও নেমে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর দেখি একটা কুলিকে পরিচিত মনে হচ্ছে। তো কাছে গিয়ে দেখলাম স্টেশনের মালপত্রের উপর সেতু বসে আছে আর নিয়ন তার ছবি তুলে দিচ্ছে। সত্যি এরা এক আজব চীজ।

শেষ পর্যন্ত আর গরম সামলাতে না পেরে একদম উপরের বাংকে সেতুর সিটে উঠে জামা খুলে শুয়ে পড়লাম। অতিরিক্ত গরম কেমন যেন নেশার মতো তৈরি করে। কিছুক্ষণ ঝিমিয়ে নিলাম। আস্তে আস্তে দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামা শুরু করেছে। গরমও একটু কমা শুরু করলো। কিন্তু ততোক্ষণে আমি গরমে সেদ্ধ আর পুড়ে কয়লা হয়ে গেছি।



বিকালে হকারদের আনাগোনা বেড়ে গেল। আর সেতু হয়ে উঠলো সেগুলোর এক আগ্রহী ক্রেতা। সে ইচ্ছেমতো খাবার দাবার কিনে নিয়নকে দেখিয়ে দিতে লাগলো। টাকা-পয়সার হিসাব বোধহয় নিয়নের কাছে থাকে। সে সব হকারের টাকা পরিশোধ করে একটা কাগজে সবকিছুর হিসাব রাখতে লাগলো। একসময় দেখলাম সেতু আর নিয়ন লুঙ্গি বদলে হাফপ্যান্ট পড়লো, তারপর আমার কাছ থেকে সরে গিয়ে কি যেন গুজুর গুজুর ফুসুর ফাসর করতে লাগলো।

সুন্দর লাল আলো ছড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো। বিএসএফ লোকটা বেশ আগেই নেমে গেছে। ব্যাটার বাড়ি এলাহাবাদে। ট্রেন এখন অনেকটায় ফাঁকা। এটি প্রায় দু’ঘন্টা লেটে চলছে। হতেই পারে। এতো লম্বা একটা জার্নিতে দু’ঘন্টা লেট কিছুই না। আর এই ট্রেন জার্নি আমার কাছে একেবারেই বিরক্তিকর মনে হয়নি। আমাদের দেশে এতো লম্বা ট্রেন জার্নি নেই বলে অনেকে ভারতের দূরপাল্লার ট্রেনে উঠে অধৈর্য হয়ে পড়ে। তবে আমার কাছে ব্যাপারটি বেশ উপভোগ্যই মনে হয়েছে।

রাতের খাবারের অর্ডার দিয়ে দিলাম। এবার আমি ভেজ খানার অর্ডার দিয়েছি। ভেজ খাবারে ডিমের বদলে পনির রান্না করা থাকবে। তবে সুখবরটা পেলাম এসময়। সেতু আর নিয়ন এসে জানালো যে আমাকে তাদের খুব পছন্দ হয়েছে। কথাটা শুধরে নিয়ে আবার বললো যে আমার ট্যুর প্ল্যানটা তাদের খুব পছন্দ হয়েছে। তারা আমার সাথে যেতে আগ্রহী। তখন তাহলে এই নিয়েই তারা ফুসুর ফাসুর করছিলো।
পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×