somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তৃতীয় লিঙ্গ: আমার অপরাধ বোধ

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কাজের চাপে ভালোলাগা একটি খবর শেয়ার করতে ভুলেই গেছি। সেটা হল গত ১৩ই ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার ফেসবুক তৃতীয় লিঙ্গকে সমর্থন দিয়েছে। তারমানে আমরা যাদের হিজড়া বলে জানি তাদেরও এখন থেকে ফেসবুক একাউন্ট থাকবে। খবরটা দেখে খুবই ভালো লাগলো। কবে যে আমাদের দেশে ওরা একটু ভালো মর্যাদা পাবে !!! ছোট বেলা থেকেই এই প্রশ্ন আমাকে বিদ্ধ করে করে আসছে। মালেক নামে আমার এক বন্ধু ছিলো ছোটবেলায় একই এলাকায় বাড়ি যে ছিলো হিজড়া। তারপরে দীর্ঘ অনেক বছর পর দেখা আমার ভার্সিটির সামনে, যথারীতি শাড়ি পরা, মাথায় অনেক বড় খোপা, ঠোটে লাল লিপিস্টিক আমার বন্ধুদের সামনে আমাকে ছোটবেলার মত জড়িয়ে ধরেছিল। আর শিক্ষিত হীন আমি লজ্জায় সংকুচিত হয়ে ওকে নতুন বন্ধুদের সামনে অবজ্ঞা করেছিলাম । এখনও আমার চোখের সামনে সেদিনের জলে ভেজা চোখের মর্মাহত মালেকের মুখটি ভাসে। পড়াশুনা ও চাকরীর সুবাদে এরপর দীর্ঘ কয়েক বছর থাইল্যান্ডে কাটিয়েছি, অনেক বন্ধুদের পেয়েছি যারা তৃতীয় লিঙ্গের। সেখানে আছে ওদের পূর্ন সামাজিক মর্যাদা ও সমান অধিকার-সে ভোটাধিকার থেকে শুরুকরে শিক্ষা ও চাকরীর বাজার সবখানে। তখন মনে হত আমাদের দেশে কেন আমরা পারিনা এদের প্রাপ্য অধিকার দিতে, ওদের জন্ম ত্রুটির দায়ভার কেন সমাজ ওদের ওপর চাপিয়ে দেবে? কেনই বা দিতে হবে? ক্ষতি কি ওদের মর্যাদা দিলে?? আমাদের দেশে ওরা যে কতটা অবহেলিত তা সংক্ষেপে বলি ঃ
১। ওদের স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয়না।
২। বাবা মা তাদের বাচ্চাদের সাথে হিজড়া বাচ্চাদের খেলতে দেন না।
৩। তাদের কোন সামাজিক অনুষ্টানে দাওয়াত দেওয়া হয়না। পরিবারও লজ্জায় তাদের আড়াল করে রাখে।
৪। তাদের ভোটাধিকার নেই।
৫। হাস্পাতালে তারা অবহেলার শিকার।
৬। কাজ চাইলেও কেউ তাদেরকে কাজ দেয় না।
৭। মৃত্যুর পর ওদের জানাজা হয় না।
৮। মুসলিম গোরস্তানে ওদের কবর হয়না বা শ্মশানে ওদের সৎকার হয়না।

তথাকথিত এই সভ্য সমাজের আমরা হিজড়াদেরকে অশুভ কিছু বলে ভয়ংকরভাবেই এড়িয়ে চলি। এই আমরাই ভুলে যাই যে তারা আমাদের মতই একই বাতাস, গ্রহন করে বেঁচে থাকে, ওদেরো রক্তের রঙ আমাদের মতই লাল। সমাজ ও পরিবার থেকে বিতাড়িত এই সম্প্রদায়ের নিত্যসঙ্গী হচ্ছে অভাব। অন্যদের করুণা এবং ভিক্ষাই ওদের জীবিকা। স্বাভাবিক জীবন যেন ওদের কাছে একটি স্বপ্ন। লেখক রণদীপম বসুর একটি কলামের কিছু অংশ দিয়ে শেষ করি, “আপনার স্বাভাবিক কর্মব্যস্ততার ফাঁকে হঠাৎ করেই কোন হিজড়ার সাথে দেখা হয়ে গেলে হয়তোবা স্বতঃকৌতুহলি হয়ে ওঠবেন আপনি। এই কৌতুহলের মধ্যে অজান্তেও কোন কৌতুক মেশাবার আগেই একটিবার অন্তত ভেবে দেখবেন কি, এই না-পুরুষ না-স্ত্রী সত্তাটি আপনার আমার মতোই সবক’টি নির্দোষ দৈহিক উপাদান নিয়েই কোন না কোন পারিবারিক আবহে জন্মেছিলো একদিন। মানবিক বোধেও কোন কমতি ছিলো না। কিন্তু প্রকৃতি তাকে দিয়েছে ভয়াবহ বঞ্চনা, যা আপনার আমার যে কারো ক্ষেত্রেই হতে পারতো ! অসহায় পরিবার ত্যাগ করেছে তাকে, অবিবেচক সমাজ করেছে প্রতারণা। নিয়তি করেছে অভিশপ্ত, আর রাষ্ট্র তাকে দেয়নি কোন সম্মান পাবার অধিকার। কোন অপরাধ না করেও ভাগ্য-বিড়ম্বিত সে কি আপনার আমার একটু সহানুভূতি থেকেও বঞ্চিত হবে ?" আশার কথা যে এখন অনেক এনজিও এদের ওধিকার প্রতিষ্টায় কাজ করে যাচ্ছে । খুলনার লোসাউক, বরিশালের নাহার ,র‌্যক ও বয়েজ অব বরিশাল, ঢাকার সুস্থজীবন, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, সুস্থ জীবন, বাঁধন হিজড়া সংঘ, লাইট হাউস, দিনের আলো, চট্টগ্রামের নোঙ্গর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা ইত্যাদি বেসরকারি সংগঠন। গত বছর নভেম্বরে এইসকল সঙ্গঠনের পক্ষ থেকে হিজড়াদের জন্য প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের জোরালো দাবী উঠেছে। এমনকি ২০১১ সালে নোমান রবিন পরিচালিত "কমন জেন্ডার" নামক একটি বাংলা সিনেমাতে হিজড়াদের করুন জীবন তুলে ধরা হয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারীতে বেশীরভাগ হিজড়া অন্তরভুক্ত হয়নি। আমাদের দেশে হিজড়াদের ভোটার হওয়ার নিয়ম না থাকলেও ভারতে কিন্তু লোকসভার সদস্য হয়েছিলেন হিজড়া শবনম মৌসি। আশা করি এইসব সামাজিক আন্দোলনের ফলে একদিন তারা তাদের ন্যাযা অধিকার ফিরে পাবে।

এখনও খুলনায় গেলে দল বেধে চলা হিজড়াদের মাঝে আমি আমার সেই ছোটবেলার সেই মাঠের খেলার সাথী অসচ্ছল পরিবার থেকে আসা চরম হাসিখুসি মালেককে খুজে ফিরি। ওর সেই মর্মাহত মুখটি আমাকে অনুতাপে প্রায়ই দগ্ধ করে। যদি কখনো দেখা পাই তবে ক্ষমা চেয়ে নেবো আর বন্ধুত্বের অধিকারটি অন্তত ফিরিয়ে দিয়ে প্রায়শ্চিত্ব করবো আমার ভুলের।
ছবি ও কিছু তথ্য সুত্রঃ গুগল
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×