somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এলোমেলো-৬

০৯ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
সময় কত দ্রুত চলে যায় !!! মনে হয় যেন এইতো সেদিন, পারিবারিক, নিজস্ব, আর দেশের কথা ভেবে বিদেশের জব, আরো উন্নত ভবিষ্যতের হাতছানি ছেড়ে দেশে ফিরে এসেছিলাম। প্রথমে বলি দেশের কথা, আজ থেকে ৬ বছর আগে যখন ফুল স্কলারশিপ পেয়ে অন্যদেশে পাড়ি দিয়েছিলাম তখন স্খলারশিপ অ্যাপ্লিকেশনের স্টেটমেন্ট অব মটিভেশনে লিখেছিলাম আমি পড়াশুনা শেষ করে এই দেশে ফিরে আসব, দেশের সেবা করব। কিন্তু পাশ করার পর দুই বছর যখন অন্য দেশে চাকরী করলাম তখন প্রতিটা সময় নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছিল। মনে হত আমি মিথ্যা বলেছি। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে সারা স্কুল কলেজ ভার্সিটি জীবনে অনেক অনেক সরকারী বেসরকারী স্কলারশীপ পেয়ে এসেছি। এগুলো ছিল মানুষের টাকা, একজন ভিখিরিরও ট্যাক্সের টাকা ছিল এইখানে যা সরকারী কোষাগারে জমা হয়েছে সেখান থেকে দরিদ্র মেধাবীদের দেয়া হয় সবসময়। নিজেকে কেন যেন খুব দায়বদ্ধ মনে হত দেশের কাছে দেশের মানুষের কাছে।দেশী বিদেশী কলিগ, আত্মীয় পরিজন সবার নিষেধ স্বত্বেও দেশে ফিরে এসেছিলাম, কোন চাকরী ঠিক না করেই। এখন দেশে ফিরে এসে এই দেড় বছরে যা দেখছি দেশের অবস্থা খারাপই লাগছে। কোথাও কোন নিয়ম নীতির বালাই নেই, যে যার ইচ্ছে মত চলছে।কি এক আজব দেশ!!! যদিও আমি আমার পক্ষথেকে যার পর নাই চেষ্টা করে যাচ্ছি পরিবর্তন আনার, মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে পড়ি অন্য কোন কারনে না শুধু এই ইয়াং জেনারেশনের গা ছাড়া ভাব দেখে, কাজের জিনিস অনুসরন না করে বা না শিখে ছুটছে সব হাল ফ্যাশনের পিছে। এবার নিজস্ব কারন, এক ক্ষুদ্র মানবীর পপ্রবলে ভালবাসার টানেই দেশে ফিরে এসেছিলাম, কারন প্রেমে বা যে কোন সম্পর্কে দূরত্ব এক বিশাল বাধা। যদিও কোন এক কারনে মিলনের সম্ভাবনা ছিল খুবই সীমিত, কিন্তু ভালবাসার এই কাঙাল আমি সব উপেক্ষা করেই ছুটে এসেছিলাম সেই অসাধারন মানবীর কাছে। যদিও পারিপারশিক কারন আর তার চরম অস্থিরতাই তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে আমার কাছ থেকে। আর সেশ কারন-পারিবারিক, বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে অনেক দায়িত্ব মাথায় থাকাতেও দেশে ফিরে আসা একটা কারন ছিল, বোড় বোন দুইটার বিয়ে দেওয়া সহ আরো অনেক দায়িত্ব। শুধু মাত্র এই একটা জায়গায় হয়তো আমি সফল হতে পেরেছি।এই বছরই ইনশাল্লাহ মামা হব।সব স্বপ্ন পূরণ হয় না, এটাই জগতের নিয়ম কিন্তু মনের দিক থেকে আমি অনেক সুখী কারন নিজের বিবেকের কাছে প্রস্ন করলে আমি উত্তর পাই যে আমি হাল ছেড়ে দেইনি। কেউ বলতে পারবেনা যে আমি চেষ্টা করিনি, আমি স্বপ্নের ভিতরে বাস করিনি, স্বপ্ন সফলের জন্য সব ছেড়ে হাজার মাইল পাড়ী দিয়েছি, এখনো লড়াই করে যাচ্ছি নিজের দিক থেকে। এটাই কজনে পারে !!!!

২।
নিজেরে সেদিন বড় বেকুব মনে হচ্ছিলোা। গেলাম এক বিয়ের দাওয়াতে, আমার এক পরিচিত বন্ধুর ছোট ভাই এর বিয়ে। ধানমন্ডি ৮ নম্বরের এক রেস্টুরেন্টে। গিয়ে মনে হল অনেক আগে এসে পড়েছি। যেহেতু কাউকে চিনিনা আর চেনার কথাও না। এক কোনায় বসে এন্ড্রয়েড ফোনে নেট ঘাটা শুরু করলাম আর বই পড়তেছিলাম উইল্বার স্মিথের। অনেক ভিড় বেড়ে গেছে চারদিকে লোকজনের কোলাহল। পাশে বসা এক সুন্দরী মহিলার সাথে গল্প জুড়ে দিলাম, তার পিচ্ছি বাচ্চাটাকে আদরও করলাম। ঘন্টা দেড়েক পরে সামনের দিকে লোকজনের আয়োজন, আর বেলুনের সমাহার দেখে সন্দেহ হল, মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম, কার প্রোগ্রাম এইটা ? মহিলা বিস্ময়ের সাথে উত্তর দিলো, জিহানের জন্মদিন। কেন আপনি জানেন না কার প্রোগ্রাম !!! আমি মোবাইল পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে উঠে দাড়ালাম। মেজাজটা গেল খারাপ হয়ে। ওনাকে বললাম, সরি একটা ভুল হয়ে গেছে। আমি আসলে একটা বিয়ের প্রোগ্রামে এসেছি। ভুল করে এখানে চলে এসেছি। মহিলা হাসতে গিয়েও না হেসে এক্টূ সিম্প্যাথি দেখিয়ে বলল, চলে যাচ্ছেন ? কেক খেয়ে যান, এতক্ষন ছিলেন যখন। বললাম, না থ্যাঙ্কু। জিহানকে আমার শুভেচ্ছা জানাবেন, আসি। নিজের উপর খুব রাগ হল, স্টুপিড কি গাছে ধরে !!!! পরে যাদেরকেই বলেছি সবাই হেসেছে, আমি বলেছি আসলে আমার দোষ না, আমার নতুন মোবাইলটার দোষ।

৩।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নাটকের মঞ্চ কি ? আমার মনে হয়, সেটা হল ফেসবুক। প্রায় সবাই অভিনয় করে এখানে, দুঃখকে আড়াল করে। আর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আবেগের বাজার কি ? এটাও ফেসবুক, কিছু দূঃখের ফেরিওয়ালা দিনে ১০/১২ টা দূঃখের পোষ্ট মেরে নিজের মনের ভাব প্রকাশের সাথে নিজের পরশ্রীকাতরতা টাই প্রকাশ করে ফেলে। এদের পোষ্ট দেখলে মনে হয় এই পৃথিবীতেই ওরা নরকে বাস করতেছে। আর কেউবা বউকে বা গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে রচনা করে কবিতা ওথবা তুলে দেয় রোমান্স ভরা সব গানের কলি। দেখে মনে হয় ওদের জন্য মার্ক জুকারবার্গ মেসেজ অপশন রাখে নাই। বেহায়ার দল। আর কিছু মানুষ, না এদের ইঊজার বলাই ভালো এদের মানুষ বলতে হলে মানসিক রোগী বলতে হবে। এরা নিজের বঊরে সংরক্ষণ করে রাখে, কেউ বোরখা পরিয়ে বা কেঊ পর্দার আড়াল করে। কিন্তু ফেসবুক নামে বিশ্বের বড় বাজারে বঊকে পাব্লিক করতে কেন যেন এই মানুষগুলোই দ্বিধা করে না। কেউ বউ কে হাজির করে সমুদ্রের জলে ভিজিয়ে, কেউ বউকে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরে বা কেউ উদোম তোষক ও বালিশের উপর একই সাথে মাথা রেখে ক্যপশণে বলে- 'ঝড়ের পরে স্নিগ্ধ সকালে দুজনে'। আহাম্মকের দল।

বিঃদ্রঃ উপরের বর্নিত ঘটনাগুলির সাথে কল্পনার কোন মিল নেই, সবই বাস্তব আর আশ্চর্য হলেও সত্য আমার মত সবার ফ্রেন্ড লিস্টেই এরা অবস্থান করছে নিশ্চিন্ত বেলাজ ভাবে।

৪। পৃথিবীটা আসলে অনেক সুন্দর। এই অল্প বয়সে অনেক দেশ ঘুরেছি, প্রকৃতি প্রেমিক আমি বারং বার ছুটে গেছি সমুদ্রে মাঝে, চাদনী রাতে পাহাড়ের উপর শুয়ে চেয়ে থেকেছি কোটি কোটি তারার পানে, নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছি গহীন জঙ্গলের ঝর্ণার পানিতে, মটরবাইকে পাড়ি দিয়েছি মাইলের পর মাইল পাহাড় জঙ্গলের মাঝ দিয়ে ছুটে চলা অচেনা পথ। গিয়েছি কত ট্রেকিং, হাইকিং, ওয়াটার স্কিং এ।এইমাসেই আবার যাবো ফুকেট থাইল্যান্ড, তার পরের মাসে নেপাল। কিন্তু তারপরেও নিজের দেশের সোন্দর্যটা কেন জানি অন্য রকম লাগে, মনে হয় বড় আপন। আত্মীয় পরিজনহীন এই নিঃষ্ঠুর ঢাকা শহরে সুন্দর মনের মানুষের সাথে সাথে সুন্দর প্রকৃতি খুজে পাওয়া দুরহ। প্রতিদিন এই শহরের নতুন নতুন এলাকা ঘুরে ফিরি, নতুন রাস্তা চিনতে থাকি, সেগুলোকে তুলে দিতে থাকি ম্যাপে।পুরোনো অনেক স্মৃতিময় এই ধানমন্ডি এলাকাটাকে অনেক আপন মনে হয়, অনেক দিন মাঝরাতে, ভোরের নরম আলোয় ঘুরেছি এই এলাকার বিভিন্ন রাস্তায়। কিছুদিনের জন্য ছিলাম গুলশান-২ এর অভিজাত এলাকায়, ওখানকার পরিবেশ সুন্দর, নীরিবিলি, অনেক সাজানো গোছানো কিন্তু সব সময় কিসের যেন একটা অভাব অনুভব করেছি। সেটা হল মানুষের কোলাহল, ধানমন্ডির পরিবেশটা মনে হয় যেন অকৃত্রিম যেটাকে খুজে পাইনি গুলাশান বনানীতে।আবারো ফিরে এসেছি এই স্মৃতিময় ধানমন্ডিতে, ঘুরে ফিরি অলিগলিতে। হাটতে যাই লেকের পাড়ে, আড্ডা দেই বন্ধুদের সাথে কেএফসি, কলাবাগান, রাসেল স্কয়ারে অথবা ডুরুমস’র ছাদে। সেদিন ৮নং ব্রীজের উপরে রিক্সা থামিয়ে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে ছিলাম লেকের উপর ঝুকে পড়া বিশাল কৃষ্ণচুড়ার দিকে, প্রকৃতি যেন উদার ভাবে টকটকে লালফুলে সাজিয়ে এই যান্ত্রিক নগরের যান্ত্রিক মানুষগুলোকে উতসর্গ করছে তার মহিমা। আই লাভ ধানমন্ডি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃদ্ধাশ্রম।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৬



আগে ভিডিওটি দেখে নিন।

মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×