গ্রাহক পর্যায়ে গত ২০ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৭ বার। এক্ষেত্রে নূন্যতম বিদ্যুতের (১০০ ইউনিট পর্যন্ত) দাম বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। পাশাপাশি বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে ১১ শতাংশ।
বর্তমান সরকারসহ বিগত চারটি সরকারের আমলে এ দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিগত বিএনপি সরকারের আমলে তিন বার, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাত বার, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিন বার দাম বাড়ানো হয়।
এছাড়া ২০০৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে একবার এবং বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে তিন বার। এ সরকারের আমলে আগামী বছরের ফেব্র“য়ারিতে আরো এক দফা দাম বাড়নোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পক্ষ থেকে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) দেওয়া এক নথি থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দেশের উন্নয়ন তথা জিডিপি প্রবৃদ্ধির একটি বিশেষ উপাদান হিসেবে বিদ্যুৎ খাতকে বিবেচনা করা হয়। অতীতের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি এক শতাংশ জাতীয় প্রবৃদ্ধির জন্য বিদ্যুতের চাহিদার প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। সে হিসেবে প্রতি বছর জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ বিবেচনায় বিদ্যুতের চাহিদার বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১০ শতাংশ।
১৯৯১-৯২ অর্থ বছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিলো প্রায় ০৪ শতাংশ, যা বর্তমানে ২০১০-১১ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের উৎপাদন ছিলো প্রায় ১৭০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে ২০১১-১২ অর্থবছরে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াটে। সে হিসেবে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে ১১ শতাংশের কিছু বেশি।
১৯৯১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি
১৯৯১ সালে সেপ্টেম্বর আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম ছিলো ১ টাকা ৬৫ পয়সা, ২০১ থেকে ৭০০ ইউনিট পর্যন্ত দুই টাকা ৭৫ পয়সা এবং ৭০০ ইউনিটের উপরে ৪ টাকা ৫০ পয়সা।
১৯৯৬ সালের অক্টোবরে ন্যূনতম ট্যারিফের হার পরিবর্তন হয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ১ টাকা ৭৫ পয়সা, ৩০১ থেকে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত দুই টাকা ৯৫ পয়সা এবং ৫০১ থেকে ৭০০ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ৫৫ পয়সা এবং ৭০০ ইউনিটের ওপরে ৪ টাকা ৯৫ পয়সা।
একই বছরের ডিসেম্বরে ফের দাম বেড়ে হয় ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ১ টাকা ৮০ পয়সা, ৩০১ থেকে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত ২ টাকা ৯৫ পয়সা এবং ৫০১ থেকে ৭০০ ইউনিট পর্যন্ত ৪ টাকা এবং ৭০০ ইউনিটের ওপরে ৫ টাকা ২০ পয়সা।
১৯৯৭ সালের মার্চে এ দাম দাঁড়ায় ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ১ টাকা ৮৫ পয়সা, ৩০১ থেকে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা এবং ৫০১ থেকে ৭০০ ইউনিট পর্যন্ত ৪ টাকা ৫ পয়সা এবং ৭০০ ইউনিটের ওপরে ৫ টাকা ২৫ পয়সা।
একই বছরের সেপ্টেম্বরে ফের বেড়ে হয় ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ১ টাকা ৯০ পয়সা, ৩০১ থেকে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ০৫ পয়সা এবং ৫০১ থেকে ৭০০ ইউনিট পর্যন্ত ৪ টাকা ১০ পয়সা এবং ৭০০ ইউনিটের উপরে ৫ টাকা ৩০ পয়সা।
১৯৯৮ সালের মার্চে দাম বেড়ে হয় ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ১ টাকা ৯৫ পয়সা, ৩০১ থেকে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত তিন টাকা ১০ পয়সা এবং ৫০১ থেকে ৭০০ ইউনিট পর্যন্ত চার টাকা ১৫ পয়সা, এবং ৭০০ ইউনিটের উপরে পাঁচ টাকা ৩৫ পয়সা।
১৯৯৯ সালের জুলাইতে দাম বেড়ে হয় ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ২ টাকা, ৩০১ থেকে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত তিন টাকা ১৫ পয়সা এবং ৫০১ থেকে ৭০০ ইউনিট পর্যন্ত চার টাকা ২০ পয়সা, এবং ৭০০ ইউনিটের উপরে পাঁচ টাকা ৪০ পয়সা।
একই বছরের সেপ্টেম্বরে দাম বেড়ে হয় ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ২ টাকা পাঁচ পয়সা, ৩০১ থেকে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত তিন টাকা ২০ পয়সা এবং ৫০১ থেকে ৭০০ ইউনিট পর্যন্ত চার টাকা ২৫ পয়সা, এবং ৭০০ ইউনিটের উপরে পাঁচ টাকা ৪৫ পয়সা।
২০০০ সালের মার্চে তা দাঁড়ায় ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ২ টাকা ১০ পয়সা, ৩০১ থেকে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত তিন টাকা ২৫ পয়সা এবং ৫০১ থেকে ৭০০ ইউনিট পর্যন্ত চার টাকা ৩০ পয়সা, এবং ৭০০ ইউনিটের উপরে পাঁচ টাকা ৫০ পয়সা।
একই বছরের নভেম্বরে এ দাম হয় ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ২ টাকা ১৫ পয়সা, ৩০১ থেকে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত তিন টাকা ৩০ পয়সা এবং ৫০১ থেকে ৭০০ ইউনিট পর্যন্ত চার টাকা ৩৫ পয়সা এবং ৭০০ ইউনিটের উপরে পাঁচ টাকা ৫৫ পয়সা।
২০০২ সালের জানুয়ারিতে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ধাপটি ভেঙে দুই ধাপ নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত ২ টাকা ১৫ পয়সা, ১০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত দুই টাকা ৩০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। তবে ৩০১ থেকে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত দাম বেড়ে হয় তিন টাকা ৪৫ পয়সা এবং ৫০১ থেকে ৭০০ ইউনিট পর্যন্ত চার টাকা ৫০ পয়সা, এবং ৭০০ ইউনিটের উপরে পাঁচ টাকা ৭০ পয়সা।
একই বছরের অগাস্টে দাম বেড়ে হয় ১০০ ইউনিট পর্যন্ত ২ টাকা ২৬ পয়সা, ১০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত দুই টাকা ৪২ পয়সা, ৩০১ থেকে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত দাম বেড়ে হয় তিন টাকা ৬২ পয়সা এবং ৫০১ থেকে ৭০০ ইউনিট পর্যন্ত চার টাকা ৭৩ পয়সা এবং ৭০০ ইউনিটের উপরে পাঁচ টাকা ৯৯ পয়সা।
২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে আবারো ধাপে পরিবর্তন আনা হয়। এক্ষেত্রে দাম বেড়ে হয় ১০০ ইউনিট পর্যন্ত ২ টাকা ৫০ পয়সা, ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত তিন টাকা এবং ৪০০ ইউনিটের উপরে পাঁচ টাকা।
২০০৭ সালের মার্চে দাম বেড়ে হয় ১০০ ইউনিট পর্যন্ত দাম বাড়েনি। তবে ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত তিন টাকা ১৫ পয়সা এবং ৪০০ ইউনিটের উপরে পাঁচ টাকা ২৫ পয়সা।
২০১০ সালের মার্চে দাম বেড়ে হয় ১০০ ইউনিট পর্যন্ত দুই টাকা ৬০ পয়সা, ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত তিন টাকা ৩০ পয়সা এবং ৪০০ ইউনিটের উপরে পাঁচ টাকা ৬৫ পয়সা।
২০১১ সালের ফেব্র“য়ারিতে দাম বেড়ে হয় ১০০ ইউনিট পর্যন্ত দাম বাড়েনি। তবে ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত দাম বেড়ে হয় তিন টাকা ৪৬ পয়সা এবং ৪০০ ইউনিটের উপরে পাঁচ টাকা ৯৩ পয়সা
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ১০০ ইউনিট পর্যন্ত দুই টাকা ৭৩ পয়সা, ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত তিন টাকা ৮১ পয়সা, ৪০০ ইউনিটের উপরে ছয় টাকা ৮৮ পয়সা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া আগামী ১ ফ্রেব্র“য়ারি থেকে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত দুই টাকা ৮৭ পয়সা, ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত চার টাকা ০৪ পয়সা, ৪০০ ইউনিটের উপরে সাত টাকা ৪৩ পয়সা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি বাণিজ্যিক, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্প এবং রাস্তার বাতির জন্য বিভিন্ন ট্যারিফে দাম বাড়ানো হয়।
Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



