somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৪৭ এর দেশভাগ নিয়ে বোঝাপড়ায় নতুন আলোঃ সাঈদ ফেরদৌসের পূর্ববঙ্গের গল্প

২৭ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুক্তরাষ্ট্রে নিজের পড়াশুনার চাপে চিঁড়েচ্যাপ্টা অবস্থায়ও ঢাকার কোন আলোচনা শোনা যায়, তা আমার নিজেরও জানা ছিল না। এই বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের কল্যাণে রান্নাবান্না করতে করতে আমার প্রাক্তন কর্মস্থল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সংসদের বক্তা হিসেবে সাঈদ ফেরদৌসের দীর্ঘ আলোচনাটি শুনে ফেললাম গতকাল । লাউ দিয়ে মিষ্টি পানির মিশিগান লেকের মাছ রান্না করতে করতে, পেঁয়াজ-মরিচ কাটতে কাটতে, তেলে ফোঁড়ন দিতে দিতে শুনছিলাম ব্রিটিশ-ভারতের পার্টিশন সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাদ পড়া ভগ্নাংশের ইতিহাস। রমিলা থাপারের অনেক বক্তৃতা শুনেছি আমার রান্নাঘরে। এভাবে আমি এখন অনেক ভারী ভারী তত্ত্বালোচনা শুনি।

আমি বড় হয়েছিলাম আমার নানা-দাদার বাড়ী নোয়াখালীতে গান্ধীজীর অবস্থানের গল্প শুনে, নানাবাড়ির গ্রাম থেকে হিন্দুদের ওপারে চলে যাওয়ার গল্প শুনে, নানাবাড়ি বেড়াতে গিয়ে পরিত্যাক্ত হিন্দু ভিটাবাড়ী দেখে দেখে।সেখানে এখন মুসলমান পরিবারের বাস।নব্বইয়ের দশকের জাহাঙ্গীরনগর জীবনে সাভারের আশেপাশের এলাকায় চষে বেড়াতাম, কখনও গবেষণার সহকারী হয়ে ধামরাইয়ের কুমার পাড়ায়, বংশী নদীর পাড়ে, কখনও বা যৌবনের অদম্য অসীম জিজ্ঞাসায় এখানে ওখানের বিভিন্ন লোকালয়ে।হিন্দুদের ওপারে চলে যাওয়ার অসংখ্য সাক্ষ্য, আমাকে বিব্রত করতো, ব্যথিত করতো, লজ্জিত করতো। পৌরাণিক অশ্বত্থ গাছ, পরিত্যাক্ত মন্দির, বসত ভিটায় আক্ষরিক ভাবে ঘুঘু চরতে দেখেছি। কল্পনার চোখে দেখেছি বিগত দিনের জীবন্ত ছবি। মধ্য দুপুরে ঘুঘুর ডাকে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠেছে। আম্মার কাছে প্রশ্ন করলে আম্মা এক কথায় এড়িয়ে যেতেন। আব্বা একজন নোয়াখালীতে পীরের নেতৃত্বে দাঙ্গার কথা বলতেন। কিন্তু মোটাদাগে এই ভিটা বাড়ী ছেড়ে যাওয়ার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা কখনও কেউ পুরপুরি বলেনি। এক সামাজিক নৈঃশব্দ ঘিরে ঘুঘু ডেকে যেত। ওরা কোথায় গেছে, কেন গেছে, এই প্রশ্নের উত্তরে শুধু শুনেছি, ভাগভাগির সময় গণ্ডগোলে তারা ইন্ডিয়া চলে গেছে। বড় হতে হতে বাংলা সাহিত্য গোগ্রাসে গিলতে গিলতে পড়লাম, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শহিদুল জহির, হাসান আজিজুল হক, মাহমুদুল হক এবং আরও অনেক স্মৃতিকথাধর্মী লেখা। আমার ভীষণ কৌতূহলের সামনে এক রহস্যময় ইশারা ছাড়া আর কোন জবাব পাইনি। জীবনানন্দ দাশের বিষাদময় রূপসী বাংলায় আবার শঙ্খ চিলের বেশে ফিরে আসতে চাওয়া তো এই জন্যেই যে, মানুষ হিসেবে আর কখনও ফিরে যাওয়া যাবে না ধানসিঁড়ি নদীটির পারে।

জাহাঙ্গীরনগরে পেয়েছিলাম অনেকগুলো চিহ্ন পড়বার শিক্ষা। আমাদের সহপাঠী রুমানা মানস চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের হিন্দুদের প্রান্তিকটা এবং ক্রমাগত দেশত্যাগ নিয়ে তাঁর থিসিস লিখেছিল "ভারত যাচ্ছ কবে?"। আমি আগ্রহ ভরে পড়েছিলাম ওর অভিসন্দর্ভ। দক্ষিণ এশিয়া অধ্যয়ন কোর্সে সাঈদ ফেরদৌস আমাদের চিন্তার জগতকে আমূল পালটে দিয়েছিলেন। আমার নৃবিজ্ঞানের প্রস্তুতিতে এই কোর্সটি ছিল একটি স্তম্ভের মত। এখানে পার্টিশনকে বুঝবার ক্ষেত্রে নতুন ধরনের তত্ত্বীয় প্রস্তুতির দরজা খুলে যায়। শিক্ষকতায় যোগ দিয়ে এই কোর্সটি আমি বহুবার পড়িয়েছি এবং, পার্টিশন নিয়ে নিজের পড়াশুনার পরিধি বাড়িয়েছি। ইচ্ছা ছিল এই নিয়েই ভবিষ্যতে বড় গবেষণার কাজ করবো। আমার তেভাগা আন্দোলনের গবেষণার সময়ও পার্টিশন ছিল এক বিরাট বিষয়। আমি তেভাগা নিয়ে কথা বলতে চাইতাম, আর নড়াইলের মানুষজন বার বার ভাগাভাগির সময়ের গল্প বলতো, গান শোনাত। সেটা ছিল ১৯৯৮ সাল । ইলিয়াসের "খোয়াবনামা"য় পেয়েছি পূর্ববঙ্গের দেশভাগের এক মহাকাব্যিক বয়ান। মাহমুদুল হকের "অণুর পাঠশালা" গল্পটি আমরা কিছু সাহিত্যামোদী বন্ধুরাসহ একসাথে পড়তাম আর বেদনা ভোগ/ভাগ করতাম। বরকত উল্লাহ মারুফ, আকরাম খান, লায়লা আফরোজ ঋতা, মৌমিতা, নাসরিন সিরাজ - ২০০০ সালের দিকে অধুনালুপ্ত বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন পত্রিকা 'মেঘবার্তা' য় কাজ করতে করতে একে অপরকে বাক্য ধরে ধরে পড়ে শুনিয়েছি। আকরাম খানের চলচ্চিত্রে এই বেদনা ছড়িয়ে গেছে। এ সময়ের প্রখ্যাত গল্পকার বন্ধু বদরুন নাহার একটা গল্প লিখেছিল, "আমাদের পাড়ার নমুরা গেল কই?" - এই রকম একটা নামে।পেলাম তপন রায় চৌধুরীর "বাঙ্গালনামা" - এক প্রাক-দেশভাগ বরিশালের হারিয়ে যাওয়া জীবনালেখ্য। অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাতের সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি বেদখল নিয়ে গবেষণা বাদ দিলে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া নিয়ে, হিন্দুদের পরিত্যাক্ত বসতি নিয়ে বাংলাদেশে এত কম কাজ হয়েছে, বাংলাদেশের গবেষণা, সাহিত্য, চলচ্চিত্র এত চুপচাপ থেকেছে যে, এখানে সাঈদ ফেরদৌসের গবেষণাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোক সম্পাত। তাঁর এই আলোচনাকে আমি মনোযোগ দিয়ে পাঠ করি।

এই আলোচনায় সাঈদ ফেরদৌস ইতিহাসের নীরবতা ও বাদ পড়া ভগ্নাংশ নিয়ে আমাদের স্পষ্ট করেছেন। তাঁর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এই নীরবতাকে নিয়ে। কেন এই নীরবতা? প্রথমতঃ ভারতীয় পার্টিশন গবেষণার কলেবর বড় হলেও উপেক্ষিত পূর্ববঙ্গের ইতিহাস এক জটিল ধরনের রাজনীতিকে নির্দেশ করে । অন্য দিকে এই পারে, পূর্ব বাংলা/পূর্ব পাকিস্তান/বাংলাদেশের গবেষণাতেও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রাধান্যে এবং ইতিহাস লিখনের সেকুলার জাতীয়তাবাদী মতাদর্শে চাপা পড়ে গিয়েছিল এখনও জীবিত মানুষের বিরাট এক রাষ্ট্রীয় অভিজ্ঞতা। পার্টিশন খুব দূরের ইতিহাস নয়। এখনো সেই মানুষেরা অনেকে বেঁচে আছেন। এখনো সেই গল্প আমাদের কথ্য ইতিহাসে হাত-পা নেড়ে ঘরে ঘরে বয়ান করে যাচ্ছে । কিন্তু পূর্ববঙ্গের ইতিহাস চর্চায় পার্টিশন প্রায় নেই বললেই চলে। হাজার বছরের বাঙ্গালীর ইতিহাস মাত্র ৭২ বছর আগের কথা ভুলে কেমন করে লেখা হবে? ১৯৪৭ তো আমার দাদা-দাদির ইতিহাস। আমার দাদা জলপাইগুড়ির চাকরী ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে নোয়াখালী ফিরে আসেন। আর ১৯৭১ আমার আব্বা-আম্মার জীবনী। আব্বা পালিয়ে আমার নানার বাড়ীতে আশ্রয় নিলে সেখানে আম্মার সাথে যুদ্ধের মধ্যে তাদের বিয়ে হয়। কেবল বাংলাদেশের জাতীয় কবির জীবনী লিখলেই তো পার্টিশন হয়ে যায়। সাঈদ ফেরদৌসের আলোচনা রান্নায় লবণ চাখতে চাখতে শুনতে শুনে মনে হল, এখনই এই ভাবনাগুলো লিখে না ফেললে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমার বঙ্গোপসাগর সেঁচা গবেষণার নিচে চাপা পড়ে যাবে।

দ্বিতীয়তঃ রাষ্ট্রবাদী ইতিহাসর মহাবয়ানকে সরিয়ে দিয়ে তিনি আম-জনতার ইতিহাস লিখেছেন। আম- জনতার কাছে পার্টিশনের অর্থ কি ছিল সেই আলাপকে হাজির করেছেন। ছোট ছোট মানুষের ছোট ছোট পার্টিশন দৃশ্যমান হল। মেঘনা গুহঠাকুরতা তার পরিবারের ইতিহাসে এমন একটি ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরে ছিলেন। ১৯৭১ তার বাবা ১৪ ডিসেম্বরের শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার ভারতে চলে না যাওয়া এবং পাকিস্তানীদের হত্যার শিকার হওয়া ১৯৪৭ কে ১৯৭১ এর সাথে গেঁথে দেয়।

তিনি বলেছেন, শুধু দেশত্যাগের গল্প নয়, পশ্চিমবঙ্গের অভিজাত আশরাফ মুসলমানদের পূর্ববঙ্গে ফিরে আসবার গল্প, এখানকার কৃষকশ্রেণীর সাথে তাদের সাংস্কৃতিক ধাক্কা খাওয়ার গল্প, আর কৃষকদের ক্ষণস্থায়ী স্বরাজের স্বপ্ন দেখার গল্প। দেশভাগ পূর্ববঙ্গে বিজয়, স্বাধীনতার উদযাপনের অভিজ্ঞতায় এসেছিল। এখানে পার্টিশন দ্বিখণ্ডিত পাঞ্জাবের মত রক্তাক্ত ছিল না। এসেছে, ভারত থেকে আসা অবাঙ্গালি মুসলমানদের, যাদের বিহারি বলা হচ্ছে, তাদের ইতিহাসের ফাঁদে আটকে পড়বার জটিল গল্প। সাঈদ ফেরদৌস বাংলাদেশের প্রথাগত ইতিহাসের লিখনে এই ভঙ্গীতে এক নতুন ছবি দৃশ্যমান করে তোলে, যেখানে বড় বড় ইতিহাসের ভেতর খণ্ডিত, ভাঙাচোরা, টুকরা-টাকরা, পরস্পর-বিরোধী ভাবধারা একসঙ্গে অবস্থান করতে পারে। ইতিহাসের ছোটছোট স্বরগুলো শোনা যায়। অশ্রুত প্রান্তের স্বর বিদ্বৎসভার কানে এসে পৌঁছায়। আবালবৃদ্ধবনিতাকে ইতিহাসের কর্তা হতে দেখা যায়। ফলে বড়দের, প্রতিষ্ঠিত পণ্ডিতের ধমকে আমাদের চাপা পড়ে যাওয়া কৌতূহলের তৃষ্ণা মেটায়।

তৃতীয়তঃ সেকুলারদের জন্যে খুব অস্বস্তির একটি বিষয়কে তিনি টেবিলে নিয়ে আসেন যে কিভাবে নতুন মুসলিম মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকেরা এই পার্টিশনের সুবিধাভোগী হয়েছিল। সাঈদ ফেরদৌসের পিতার মালদা থেকে এসে দ্রুত তরুণ বয়েসে প্রিন্সিপাল হওয়ার উদাহরণ দেন। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মুসলমান শ্রেণী চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে এবং নানাভাবে বৈষয়িক সুবিধা লাভ করেছে।শরণার্থী থেকে নায়করাজ হয়েছেন রাজ্জাক।

চতুর্থতঃ তিনি রিচার্ড ইটনের মত ভারত-বাংলাদেশের নমনীয় সুছিদ্র বর্ডারের চেহারা প্রত্যক্ষ করে তোলেন। বর্ডার তাঁর লেখার কেন্দ্রে পরিণত হয়। চিরাচরিত ঝাপসা প্রান্ত ফোকাসে চলে আসে। বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এ প্রায় পাশা উলটে দেয়ার মত ব্যাপার।

পঞ্চমতঃ তিনি খোলাসা করেন যে, পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে কিভাবে শোষণ করেছিল, শোষণের সাংস্কৃতিক- মতাদর্শিক দিকটাকে উন্মোচন করে শক্তিশালী কোন গবেষণা নেই। রেহমান সোবহানের অর্থনৈতিক শোষণের থিসিসটা গন-অভ্যুত্থানের এজেণ্ডাকে ভিত্তি দিয়েছিল।কিন্তু আধিপত্যের বিচিত্র ধরনের উন্মোচনে অন্য শাস্ত্রগুলোর অনেক ভূমিকা পালন করবার ছিল।এই শূন্যতা আবিষ্কার হওয়াতে আমি নিজেও চমকে উঠেছি। বাংলাদেশ, ইতিহাস সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পড়ছি, পড়াচ্ছি, আগে কখনও লক্ষ্য করিনি তো।

সবশেষে, তাঁর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল ইতিহাসকে বর্তমান বলে দেখতে পাওয়ায়। পার্টিশন বিগত যুগের কিছু মৃত ঘটনা নয়, বরং, পার্টিশন আমাদের আঞ্চলিক রাজনীতির জীবন্ত বর্তমান। নৃবিজ্ঞানের আলোকে ইতিহাসের পাঠ করে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাস পাঠে, এবং সর্বোপরি উপনিবেশিক ভারতের ইতিহাসের ভগ্নাংশে নতুন আলোক প্রক্ষেপণ করেন। এই কাজ আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্যে ইতিহাসের তদন্তে একটি দিক নির্দেশনা হয়ে থাকবে। আমাদের নিজেদের জানবার জন্যে যৌথ পরিচয়ের স্বরূপ উন্মোচনে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।এভাবে নৃবিজ্ঞানের এই ধরনের পদ্ধতি আর কলকব্জা ব্যবহার করে ইতিহাসকে নিয়ে আমরা আমাদের নতুন বর্তমান সৃষ্টির সম্ভাবনা খুলে যায়। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের ত্রিমুখী সম্পর্কের উত্তেজনা, টানাপড়েন, বর্ডারের মানুষ, বিহারিদের মত খণ্ডিত আত্মপরিচয়ের বিষয়গুলোকে বোঝাপড়ার পরিপক্বতা তৈরি করে। ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গায় বাংলাদেশে দাঙ্গাহাঙ্গামা লেগে যাওয়া, গুজরাটের দাঙ্গায় মুসলমান গণহত্যা- ধর্ষণ, আসাম-বিহারে 'মুসলিম অনুপ্রবেশ ঠেকানো', বাংলাদশে নির্বাচনী সহিংসতায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া, বাংলাদেশে হিন্দু পূর্ণিমার আর ভারতের গুজরাটে মুসলমান বিলকিস বানুর গণধর্ষিত হওয়া, কিশোরী ফেলানির মৃত্যু, বছর বছর দুর্গা পূজায় মন্দিরে হামলা, হিন্দুদের ধারাবাহিক দেশ ত্যাগ, সংখ্যায় কমে আসা, গণজাগরণ মঞ্চের উত্থান, খেলাফতে মজলিশের সহিংস সমাবেশ, ভারত বাংলাদেশ- পাকিস্তানের বর্ডারের নিয়মিত উত্তেজনা আমাদের ক্ষতবিক্ষত চলমান পার্টিশন ছাড়া আর কি?

স্কুলের ইতিহাস বইয়ে দ্বি-জাতি তত্ত্ব পড়বার সময় ভেবেছি, তাহলে আমার বৌদ্ধ/খ্রিস্টান বন্ধুর জন্যে কোন দেশ? ছোটবেলায় নারিন্দার শাহ সাহেব লেনে থাকবার কারণে রোজ খ্রিস্টান গোরস্থান পেরিয়ে আমাদের চলতে হতো। পাশে ছিল সেন্ট গ্রেগরি স্কুল। ক্লাসে ছিল বড়ুয়া সহপাঠী। কাউকে জিজ্ঞাসা করবার সাহস পাইনি। নৃবিজ্ঞান গবেষণা করতে গিয়ে এই প্রশ্ন আমাকে সব সময় তাড়িত করেছে যে, হিন্দু-মুসলমানের জন্যে দুই দেশের, দুই জাতির কল্পকাররা কিভাবে ভারতের বহুজাতিকে অস্বীকার করলো? উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হতে গিয়ে জাতিরধর্মভিত্তিক পরিচয়ের মনোলিথিক বয়ান সৃষ্টি হল এক মহা বিচিত্র বহুজাতির বহু সংস্কৃতির, বহু ধর্মের ভু-খণ্ড ভারতে । যেন এই জাতিগোষ্ঠীগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন। অথচ এদের ইতিহাস একদম লেপটা-লেপটি, হরদম আদানপ্রদান এবং মেশামিশির মধ্যে বয়ে চলেছে এর ভূগোলেরই মত।

নৃবিজ্ঞানী হিসেবে চাকমা, মারমা, খাসি, গারো, তঞ্চঙ্গা, ত্রিপুরা, লুসাই, রাখাইন, সাঁওতাল, মনিপুরী - এই বহু বিচিত্র জাতির পার্টিশনের ইতিহাস কোথাও খুঁজে পাইনি। একেবারেই অকথিত, অনালোচিত, অদৃশ্য বহু জাতির দ্বি-খণ্ডন । ডাচ নৃবিজ্ঞানী আলেন বল উত্তর সীমান্তের গারোদের নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁর সাথে এই নিয়ে যোগাযোগ করেছিলাম। তিনি খুব উৎসাহ নিয়ে আমাকে জানিয়েছেন, খুব সামান্য কিছু দলিল, বা লিখিত বিবরণ থাকতে পারে। তারপর বিভিন্ন কারণে আমি আর অগ্রসর হতে পারিনি। সাঈদ ফেরদৌস দিনাজপুরের হিলির বর্ডারের কথা বলেছেন। আমি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করবার সময় ২০০১-৪ সালের দিকে বহুবার ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আসা চা-বাগানের শ্রমিকদের সাথে আলাপ করেছি।তাদের আদি বাসস্থানের সাথে সব যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্তের খাসি পল্লী, মনিপুরীদের এলাকায় গিয়েছি। কুমিল্লা- ত্রিপুরার বর্ডারে ত্রিপুরাদের বসতিতে গিয়েছি। পার্টিশনে এই জাতিগুলো দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে।বিভিন্ন কারণে এই নিয়ে আমার আরও বেশি তলিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। চাকমা, মারমা, খাসি, গারো, তঞ্চং্যা, ত্রিপুরা, রাখাইন, সাঁওতাল, মনিপুরী জাতির পার্টিশন জানবার জন্যে আমার মন উন্মুখ হয়ে আছে।

মূল আলোচনার জন্যে দেখুনঃ

সাঈদ ফেরদৌস- পূর্ববঙ্গের উপেক্ষিত গল্পগুলোর বর্তমানতাঃ ' ৪৭ এর পার্টিশন প্রসঙ্গে Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ৯:০০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×