somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক-রিজার্ভ ফরেষ্টের ভেতর পাইপ লাইন নির্মাণ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস

৩০ শে জুন, ২০০৮ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৪ই জুন মাগুরছড়া দিবস
মাগুরছড়া ব্লো-আউটের ১১ বছর পূর্ণ
ক্ষতিপূরণ আদায়ে কিছু সুপারিশ
(ধারাবাহিক-১২)
---সৈয়দ আমিরুজ্জামান
লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক-রিজার্ভ ফরেষ্টের ভেতর পাইপ লাইন নির্মাণ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসঃ
মার্কিন বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানী ইউনোকল মাগুরছড়া গ্যাসকূপ ব্লো-আউটের ক্ষয়ক্ষতি বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ না দিয়েই বিস্ফোরিত গ্যাসকূপের কাছাকাছি ১৪ নং ব্লকের এমবি-৪ ও এমবি-৫ নামে ২টি কূপ খনন সম্পন্ন এবং এই ২টির গ্যাস কালাপুরে স্থাপিত প্রসেসিং প্লান্টে সঞ্চালনের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের লাল তালিকাভূক্ত লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক-রিজার্ভ ফরেষ্টের ভেতর দিয়ে পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করে গ্যাস গ্যাদারিং পাইপ লাইন নির্মাণ করেছে। ইউনোকল কোম্পানী প্রাথমিক পরিবেশগত মূল্যায়ন (Initial Environmental Examination-IEE) এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সাইট ক্লিয়ারেন্স (Site Clearence) পেলেও এনভায়রনমেন্টাল ইমপেক্ট এসেসমেন্ট (Environmental Impact Assessment-EIA) ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এনভায়রনমেন্টাল ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ( Environmental Clearence Certificate) ছাড়াই ঐ কাজ চালায়। পাইপ লাইন নির্মাণের কাজে ইউনোকল বনজ সম্পদ, বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ-প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করছে বলে বনবিভাগ বহু আগেই অভিযোগ করেছে। অভিযোগে আরো বলা হয় যে, লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক-রিজার্ভ ফরেষ্টের অভ্যন্তরে ব্যবহৃত ৮/৯ ফুট প্রশস্ত পায়ে হাটার পথকে গাড়ী চলাচলের রাস্তা দেখিয়ে প্রাথমিক পরিবেশগত মূল্যায়ন রিপোর্ট জমা করা সাপেক্ষে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সাইট ক্লিয়ারেন্স (Site Clearence) নিয়ে ইউনোকল উক্ত রাস্তাকে নির্মাণ কাজের সময় ২৫/৩০ ফুট চওড়া করে। লাউয়াছড়া বনাঞ্চলের ভেতর প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার পথে অসংখ্য গাছ, লতা,গুল্মাদি ও প্রাকৃতিক ঝোপঝাড় কেটে পরিস্কার করে পরিবেশ-প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করা হয়েছে। এতে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের প্রায় সোয়া দুই কিলোমিটার অংশের প্রাকৃতিক উদি্‌ভরাজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টিলার মাটি কেটে ড্রেসিং ও লেবেলিং করায় ভূমিক্ষয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। গ্যাস গ্যাদারিং পাইপ লাইন নির্মাণ কাজে ভারী যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার, শ্রমিকের কোলাহল প্রভৃতি কারণে পরিবেশ বিনষ্ট এবং ন্যাশনাল পার্ক-রিজার্ভ ফরেষ্টের বন্যপ্রাণী বাইরে চলে আসার অভিযোগ করা হয়েছে। পাইপ লাইন নির্মাণকালীন সময়ে বনবিভাগ ও ইউনোকল ক্ষতিগ্রস্ত উদি্‌ভদের যে যৌথ জরীপ সম্পন্ন করে তাতে ইউনোকল স্বাক্ষর করেনি। বনবিভাগের এসব অভিযোগকে ইউনোকল গুরুত্বই দেয় নি। বরং ইউনোকলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এন্ডো এল ফথ্রপ এসব অভিযোগ ও বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকাতে ছবিসহ প্রকাশিত লাউয়াছড়া সংক্রান্ত সরজমিন প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছে। ইউনোকল প্রেসিডেন্ট এন্ডো এল ফথ্রপ প্রাথমিক পরিবেশগত মূল্যায়ন (Environmental Examination-IEE)কে এনভায়রনমেন্টাল ইমপেক্ট এসেসমেন্ট ( Environmental Impact Assessment-EIA)-ইআইএ হিসেবে চালিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া সাইট ক্লিয়ারেন্স (Site Clearence)কে পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের এনভায়রনমেন্টাল ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ( Environmental Clearence Certificate) বা ছাড়পত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন। অথচ ইউনোকল কোম্পানী পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের (Environmental Clearence Certificate) বা ছাড়পত্র পায়নি। এছাড়া (Initial Environmental Examination-IEE) প্রাথমিক পরিবেশগত মূল্যায়ন শেষে সাতটি সুনির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে সাইট ক্লিয়ারেন্স(Site Clearence) দেয়া হলেও পাইপ লাইন নির্মাণ কাজের সময় ইউনোকল সেগুলোও মেনে চলেনি।
শর্তগুলো ছিলঃ
১. শব্দ ও কোলাহল এড়ানোর জন্য হস্তচালিত কার্যক্রম পরিচালিত করা, ২. খননকাজ হাতে সম্পন্ন করা যাতে গাছের শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়,
৩. গাছপালা না কাটা,
৪. বন্যপ্রাণীর জীবন যাত্রায় কোন প্রকার অসুবিধা যাতে না হয়,
৫. প্রতিদিন বিকেলের মধ্যে শ্রমিকদের সরিয়া নেয়া,
৬. বনের মধ্যে কোন ভারী স্থাপনা না রাখা,
৭. নির্মাণ কাজ শুরু করার আগে ইআইএ সম্পন্ন করা।
সরজমিনে লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক-রিজার্ভ ফরেষ্ট পরিদর্শনে গেলে দেখা যায় যে,ইউনোকল সকল শর্তাবলী লঙ্ঘন করেছে। যেমন, ১. ভারী যানবাহন ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা হয়েছে, ২. অসংখ্য গাছের শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে,৩. অসংখ্য গাছপালা কাটা হয়েছে, ৪. বন্যপ্রাণীর জীবনযাত্রায় ব্যঘাত সৃষ্টি করা হয়েছে, ৫. বিকেলের মধ্যে কাজ শেষ না করা, ৬.লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক-রিজার্ভ ফরেষ্টের ভেতর দিয়ে ভারী স্থাপনা বহন করা হয়েছে, ৭.নির্মাণ কাজ শুরু করার আগে ইআইএ সম্পন্ন না করা এবং ছাড়পত্র না নেওয়া।
কূপ খনন করার পরে কূপের বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থসহ রাসায়নিক পানি ছড়া-খাল(ছোটনদী)তে ফেলে পরিবেশ দূষিত করা হয়েছে; ফলে উক্ত বিষাক্ত পানিতে ছড়ার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, ব্যাঙ, সাপ, বিচ্ছু, কেঁচো,শামুক, ঝিনুক, পোকা-মাকড়, কাঁকড়া, অনুজীবসহ ইত্যাদি মারা গেছে বলে জানা যায়। ইউনোকল কোম্পানীর পূর্বসুরি অক্সিডেন্টাল কোম্পানীর সাথে সম্পাদিত পিএসসি চুক্তির মেয়াদ মাগুরছড়া ব্লো-আউটের পর ১৯৯৮ সালে শেষ হয়ে গেলে ঐ বছরেই নভেম্বর মাসে (Supplemental Agreement) বা সম্পূরক চুক্তি সম্পাদিত হয়। (Supplemental Agreement) বা সম্পূরক চুক্তির কিছুদিন পর অক্সিডেন্টাল কোম্পানী তাদের সমস্ত দায় দায়িত্ব ইউনোকলের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে ইউনোকলও তাদের স্বত্ব আরেক মার্কিন বহুজাতিক লুটেরা কোম্পানি শেভরনের কাছে বিক্রি করে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ফয়সালা না করেই একরকম সামছিকার ন্যায় পালিয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০০৮ দুপুর ২:৪০
২০টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×