খুব বেশি নামেনি আঁধার—গত রাতে
তুমি ছিলেনা পাশে তাই,
তুমি যে চলে গিয়েছিলে দূরে
ঘুম আসেনি তাই আঁধারবিহীন রাতে।
স্পষ্ট দেখা গেছে মেঘবালিকা,
ভেসে বেড়ায় রাতের বুকে— ছায়াপথে
এক সাগর জলীয় বাষ্প যেন
তুমি দেখো নামবে পৃথিবীর বুকে
বেলী ফুলের মালা শুকিয়ে যাবে
তবু পৃথিবী ভিজে যাবে, সোঁদামাটির ভেজা গন্ধ
যখন সুতীব্র হয়ে নাকে এসে লাগে ।
তুমি দেখে নিও— বৃষ্টির জল, জলপরী যেন
মুক্তো দানার মত সুখে নেচে নেচে
বৃষ্টির ছটা যেন প্রাণের উচ্ছাসে
গায়ে এসে প্রেম হয়ে বিঁধে, নিবিড় মমতায়।
এই বর্ষা — একান্তই আমার
তুমি আসোনি যে সর্প করিতে গ্রাস
তোমার প্রেমের গহবরে ভরে
তোমার চোখে পোয়াতি কামনা দেখেছি
অঘোর বর্ষারও আগে, বসন্তে হেমন্তে
সঙ্গম অভিপ্রায়ে ।
তোমার দেহে ভাঙে জলে, হাঁটুভাঙা জল
বিবিধ সঙ্গম নাভির নীচে তাই
প্রজাপতির মতন জেগে ওঠে ।
তুমি নষ্ট রাতের প্রার্থনারত ছিলে;
ভুলে গিয়েছিলে, মানব সভ্যতার ইতিবৃত্ত
তুমি ভুলে গিয়েছিলে সব প্রণয়োপাখ্যান
তুমি আদিম সুখ খুঁজেছিলে কামনার রাতে,
দিকভ্রান্ত নাবিকের মত ধ্রুবতারার মাঝে।
সেদিন ঢেউ ছিল খুব, পূর্ণিমা রাতের মতন
বাঁধ ভাঙা জোয়ারে
তোমার বুকে ছিল শিহরণ— অশ্বত্থ গাছের মতন;
তুমিও খুঁজেছো —এক ঘুঘু ডাকা হিজলের বন
তুমিও খুজেছো, সঙ্গমের সরল সমীকরণ
অলস দুপুরে আধোজাগরণে রাতে।
প্রাসাদে বন্দী থেকে জোছনা বনে— বনবাসে
সুরে র্মূছনায় জোছনা ঝরে পড়ে ।
মেঘেরা ভেসে বেড়ায়— একদিন
সভ্যতার নাগপাশ বিদীর্ণ করে
পৃথিবীর বুকে, নেমে আসবে বলে ।
রাতের আকাশে তৃষিত চাঁদ জাগে
বুকে তার কৃষ্ণগহবর যোনীর মতন
জাগে তোমার কামনা— উদাসী হওয়ায়,
বটের বিস্তৃত মূলে বাতাসের সংস্পর্শে
বায়বীয় অনুভূতি সব কর্পূরের মতন উবে যায়
লক্ষী পেঁচা ডেকে ওঠে— রাতের আড়াল থেকে
জেগে থাকা প্রহরীর হুইসেল বাজে
রাতের সতর্ক বার্তা পৌঁছে দেয় রোজ।
মেয়ে ওখানেও আছে অনাহত সুখের খোঁজ
সারা পৃথিবী যখন ঘুমে, প্রেম প্রখর হয়ে ওঠে।
সৃষ্টিসুখের উল্লাসে— তাইতো আছড়ে পড়ে
সাগরের ফেণীল সফেদ ঢেউ সমুদ্রসৈকতে।
তুমি রংতুলি নিয়ে বসে যাও রঙের ক্যানভাসে
অবচেতন মনে ভোরের বাতাসে
সূর্য জাগে— জাগে পাখির কাকলি,
শত ব্যস্ততার মাঝে বধুয়ার আচল
খুঁজে নেয় সঙ্গম সুখ— নব উদ্যমে
প্রেমের কুন্ডলী পাকিয়ে পরিপুষ্ট হয় মানবভ্রুণ।
যৌবনের অনুরাগে প্রতিদিন ফুটে ফুল
বসন্ত কাননে উদাসী হাওয়ায় দোলে।
শিরীষের ডালে বসে থাকে কৌতুহলী শালিক
অদূরে ফসলী মাঠ— ধানশীষ, কীট-পতঙ্গ
শুধু তোমার-আমার প্রেম যেন মুক্তবিহঙ্গ
হয়ে উড়ে অসীম আকাশে— অনন্ত হৃদয়ে।
অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ঠিকই নেমে আসে
বিবর্ণ পরশপাথর সুখের আকর।
দূষণহীন পৃথিবীর প্রতিশ্রুতি কি তবে করোনার;
মানুষের শাপ মোচন করে দিয়ে
তবে নেই কেন মানবতা ? এ যেন এক ভিন্ন পৃথিবী
প্রতিদিন লাশ হয় মানুষ, প্রাসাদ ছেড়ে
আবাস গড়ে পথের ধূলো গায়ে মেখে কফিনে
প্রকৃতি দিনে দিনে সতেজ ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
তবু প্রেমের হয়না শেষ, তাইতো কৃষ্ণের বাঁশি বাঁজে
বেহুলার সতত প্রচেষ্টায় মৃত্যুঘুম থেকে জেগে ওঠে লখিন্দর।
তোমার নগ্নপদতলে যে আঁকাবাঁকা সর্পিল মেঠো পথ
কুন্ডলী পাকিয়ে ক্রমাগত প্রতীক্ষারত সাপের মতো
জলজ কামনা বেঁচে থাকে যেন যোনীপথ,
অপার সম্ভাবনার— প্রেম লয়ে বুকে।
রতির সুখে নেচে ওঠে নিয়ত সুতীব্র বাসনা
শুধু তাজা কলমের সন্ধানে খোঁপায় রক্তগুলাপ গুঁজে।
সফেদ সাদা কামনা জলে স্নাত হয়
অনুভূতি আর প্লাবিত হয় মেঘবালিকার প্রণয় উপত্যকা।
ঘুণে ধরা চেতনার দংশনে জর্জড়িত বিবেক
ঘুম আসেনি তাই, গতরাতে আঁধার নামেনি যে অতটা
যতটা আঁধারে তোমার মাঝগাঙে অনায়াসে
ছুটে চলে পালতোলা নৌকো, ঢেউ তুলে নদীর বুকে
নোঙর ফেলে মুক্তোর সন্ধানে ডুবুরী মন সঙ্গম উল্লাসে
যাযাবর খুব এখন, গভীর আঁধারের রাতে।
তবু নক্ষত্রের আগুনে ঝলসে ওঠে তৃষিতচোখ
জুনাকির আলো সঙ্গে লয়ে রাতে আঁধারে চাঁদের সঙ্গমসুখ।
প্রতিনিয়ত জেগে ওঠে স্বপ্নজাল বুনে দেয় মনে
তোমার দূর থেকে ক্রমাগত দূরে সরে থাকা
তবুও নয় নিরাপদ যেন—অমোঘ প্রেমের সংক্রমনে।
করোনা থেকে বেঁচে যেতে পারো অনায়াসে
তুমি কি পারলে প্রেম থেকে সরে যেতে— দূরে
প্রেম যেন সঁন্ধ্যার ধূপছায়া ধূম্রজাল অপার ম্যুহমায়া কোন
বৃষ্টি বিলাসে নেমে আসে, আঁধার পৃথিবীর বুকে,
অঘোর বৃষ্টির আষাঢ় শ্রাবণ কাব্যঘন ক্ষণ হয়ে
প্রেমের অমোঘ পরিণতি যেন— শুধু অনন্ত সঙ্গমে ।
ছবি গুগুল
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:৫২