somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নোবেল পুরষ্কার ২০১২ এবং লাইফ সায়েন্স

১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান করলে দেখা যায় চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং রসায়নে নোবেল বিজয়ীদের মাঝে লাইফ সায়েন্স নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীদের সংখ্যা বেশী। এরই ধারাবাহিকতায় এই বছর স্টেম সেল নিয়ে গবেষণার জন্য জন বি. গার্ডন ও শিনিয়া ইয়াযানাকা চিকিৎসা বিজ্ঞানে এবং সেল রিসেপ্টর নিয়ে গবেষণার জন্য রবার্ট জে লেফকোইৎজ ও ব্রায়ান কে. কোবিলকার রসায়নে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। অবস্য অ্যামেরিকান কেমিকেল সোসাইটির সভাপতি বাসসাম সাক্সাহীরি এই বছর দুই জন মেডিকেল ডক্টরকে রসায়নে নোবেল পুরষ্কার প্রদানের জন্য কিছুটা আক্ষেপ প্রকাশ করেন। এমনটা প্রথম হয়েছিল ২০০৩ সালে, সেবছর পিটার এগরি এবং রোড্রিক ম্যাকাকিনন একুয়া প্রোটিন নিয়ে গবেষণার জন্য মেডিকেল ডক্টর হওয়া স্বতেও রসায়নে নোবেল জয় করেছিলেন। আসলে এর মাধ্যমে এটিই প্রমানিত হয় যে, বিজ্ঞানকে চিরদিন নিদৃষ্ট গন্ডিতে বেধে রাখা যায় না।
মানবদেহের কোষগুলো কিভাবে বাইরের পরিবেশের সাথে সাড়া দেয় এবং অভ্যন্তরীণ তথ্য আদান-প্রদান করে তা নিয়ে গবেষনার জন্য এই বছর রসায়নে নোবেল দেয়া হয়েছে। কারণ পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় জি (Gatekeeper)- প্রোটিন কাপল্ড রিসেপ্টরের (GPCR) জৈব রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে। বাইরের পরিবেশ থেকে উদ্দীপনা গ্রহণ ও সেই তথ্য অন্য কোষে ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করে জীব কোষের পৃষ্ঠে অবস্থিত বিভিন্ন সেল রিসেপ্টর। এমনই এক ধরনের রিসেপ্টর হচ্ছে GPCR যা কোষকে আলো, গন্ধ ও স্বাদের অনুভূতি দেয়, সেই সাথে বিভিন্ন হরমন ও নিউরোট্রান্সমিটারের সাহায্যে সেই তথ্য পার্শ্ববর্তী কোষে সঞ্চারিত করে। এভাবেই লক্ষ কোটি কোষ পাড়ি দিয়ে বাহ্যিক ও অভ্যান্তরীন উদ্দীপনা আমাদের মস্তিস্কে চলে যায়। ১৯৯৪ সালে জি-প্রোটিন আবিষ্কারের জন্য মার্টিন রুডবেল এবং আলফ্রেড গিলম্যান চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পান। কিন্তু জি-প্রোটিন কিভাবে কাজ করে তা ছিল এক রহস্য, যা এই আবিষ্কারের মাধ্যমে উৎঘাটিত হয়। পোস্ট ডক্টোরাল রিসার্চের সময় ড. লেফকোইৎজ ও ড. কোবিলকার কিছু সেনসর আবিষ্কার করেন যারা এড্রেনিল হরমনের উপস্থিতিতে সাড়া দেয়। এই সেনসরগুলো মূলত GPCR পরিবারের রিসেপ্টর ছিল এবং এদের সাথে এড্রেনিল হরমন যুক্ত হলে কোষগুলো খুব দৃঢ়ভাবে এবং দ্রুততার সাথে সংকুচিত ও প্রসারিত হতে থাকে ফলে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়। এড্রেনিল ক্ষরন হয় উত্তেজিত বা সংকিত হলে কিংবা ভয় পেলে।
ড. লেফকোইৎজ ও ড. কোবিলকার বিটা এড্রেনারজিক রিসেপ্টর (এড্রেনিলের প্রতম রিসেপ্টর) এর জিন ক্লোন করেন এবং রডোপসিন (চোখের রেটিনায় অবস্থিত আলোতে সাড়া দানকারী কোষ) রিসেপ্টরের সাথে তুলনা করেন। এর জন্য ২০০৭ সালে কোবিলকার এডভান্স ফোটোন সোর্স (APS) এর সাহায্যে GPCR এর গঠন প্রকৃতি আবিষ্কার করেন ফলে জি-প্রোটিন কিভাবে পরিবেশের সাথে সাড়া দেয় তা আবিষ্কার সহজ হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে X-ray crystallography বলে, যার মাধ্যমে কোবিলকার GPCR এর একটি ছবি নিতে সক্ষম হন যেখানে দেখা যায় রিসেপ্টরটি বাইরের হরমন থেকে ভেতরের জি-প্রোটিনে সিগন্যাল ট্রান্সমিট করছে!
প্রকৃত অর্থে কোষের শারীরবৃত্তীয় সব ধরনের কাজের সাথে GPCR জড়িত। ফলে এই আবিষ্কার নতুন ধরনের ড্রাগ ডিজাইনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। যদিও বর্তমানে প্রায় ৫০% ঔষধের কার্যকারিতা নির্ভর করে GPCR এর সক্রিয়তার ওপর, কিন্তু ঔষধের মাধ্যমে GPCR এর নিয়ন্ত্রন সম্ভব হয় তবে কোষের শারীর বৃত্তীয় কাজের সাথে সম্পৃক্ত প্রায় সব ধরনের রোগের চিকিৎসা সম্বব হবে যার মাঝে Cardiovascular disease, Obesity, Diabetes, Neuropsychiatric disorders, Inflammation এবং ক্যন্সার অন্যতম। সুতরাং এই আবিষ্কার নিয়ে আমরা অনেক স্বপ্নই দেখতে পারি, যদিও স্বপ্নের পথটা খুব একটা সহজ হবে না। উদাহরনে খুব সাধারণ একটি সমস্যার কথা বলা যেতে পারে। যেমন অন্য GPCR এর সাথে কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া কোন নিদৃষ্ট হরমনের সাথে সম্পৃক্ত GPCR কে নিয়ন্ত্রন করতে পারার সম্ভাবনা কতটুকু? হয়ত এই প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া যাবে নিকট ভবিষ্যতে।
এবার আসি চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কারের ব্যাপারে, যা প্রথম থেকেই লাইফ সায়েন্সের গবেষকদের দখলে। এই বছর জাপানের শিনিয়া ইয়ামানাকা ও ব্রিটেনের জন বি. গার্ডন স্টেমসেল নিয়ে গবেষনার জন্য নোবেল পেয়েছেন। জীবনের শুরু হয় ডিম্বানু ও শুক্রানুর মিলনের ফলে গ্যামেট তৈরীর মাধ্যমে। এরপর বার বার বিভাজনের মাধ্যমে একটি গ্যামেট থেকে তৈরী হয় একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাণী। কিন্তু এই সময় শুধু গ্যামেটের বিভাজনের ফলে সংখ্যা বৃদ্ধিই হয় না, সেই সাথে তৈরী হয় বিভিন্ন ধরনের কোষ; যারা বৈশিষ্টে একটি অন্যটি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। যেমন চোখের কোষ, ত্বকের কোষ কিংবা পেশীকোষ থেকে বৈশিষ্ট্যে সম্পূর্ণ ভিন্ন! কিন্তু প্রতিটি কোষই তো একটি মাত্র গ্যামেট থেকে সৃষ্ট এবং প্রতিটি কোষ একই জিনোম বহন করে। প্রাথমিক কোষ যারা বিভাজনের মাধ্যমে অন্য যেকোন ধরনের কোষ তৈরী করতে পারে তাদের স্টেমসেল বলে। স্টেম সেল থেকে কোন বিশেষ ধরনের কোষ তৈরী হয়ে গেলে তারা কোষ বিভাজনের মাধ্যমে পুনরায় স্টেমসেল বা অন্য কোন ধরনের কোষ (যেমন ত্বকের কোষ থেকে স্টেমসেল বা পেশী কোষ) তৈরী করতে পারে না, শুধুমাত্র তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে পারে এবং একসময় মারা যায়। এটিই হচ্ছে প্রাকৃতিক নিয়ম, কিন্তু নোবেল বিজয়ী এই দুই গবেষক তাদের গবেষনায় দেখিয়েছেন প্রাপ্ত বয়স্ক কোষ থেকেও স্টেমসেল এবং সেই স্টেমসেল থেকে অন্য যেকোন ধরনের কোষ তৈরী করা সম্ভব। শিনিয়া ইয়ামানাকা মূলত চারটি জিন সনাক্ত করেছেন যাদের মিউটেসন হলে পূর্ণাঙ্গ দেহকোষ থেকে বিভাজনক্ষম টটিপটেন্ট (একটিমাত্র কোষ থেকে পূর্নাঙ্গ জীব সৃষ্টির ক্ষমতা) স্টেমসেল তৈরী হয়। নি:সন্দেহে এটি চিকিৎসাক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×