somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার লেখা আর্টিকেল

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতি ৪ মাস পর হতে পারেন রক্ত দাতা
সাদিয়া ফাতেমা কবীর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ১৪ জুন পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব রক্তদাতা দিবস।’ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য স্বেচ্ছায় রক্ত-দানকারীর প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি জনসাধারণকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করা ও এই বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এই দিবসের উদ্দেশ্য।

রক্তদান একটি সহজ ও সাধারণ বিষয় কিন্তু এর গুরুত্ব নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। রক্তদানের ফলে রক্তদাতার শারীরিক কোনও ক্ষতি হয় না। রক্তদান নিয়ে আমাদের দেশে সাধারণের মাঝে বেশ কিছু মিথ বা ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত থাকলেও সত্য এটাই যে এটি শারীরিক কোনও ক্ষতি করেনা।

রক্তের লোহিত কণিকার আয়ু ১২০ দিন। অর্থাৎ আপনি রক্ত দিন বা না দিন ১২০ দিন পর লোহিত কণিকা আপনা আপনিই মরে যায়। সেখানে জায়গা করে নেয় নতুন লোহিত কণিকা। রক্তের আর উপাদানগুলোর আয়ুষ্কাল আরও কম। সুস্থ, সবল, নীরোগ একজন মানুষ প্রতি চার মাস অন্তর রক্ত দিতে পারেন।

তবে রক্তদানের ক্ষেত্রে রক্তদাতার কিছু শারীরিক বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন:
১)রক্তদাতাকে শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে।
২)রক্তদাতার বয়স কমপক্ষে ১৭ বছর হতে হবে।
৩)রক্তদাতার ওজন কমপক্ষে ১১০ পাউন্ড হতে হবে।
৪)রক্তদাতার রক্তচাপের দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। খুব বেশি বা খুব কম কোনটিই রক্তদানের ক্ষেত্রে সহায়ক নয়।
৫)কোনও রোগের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবনরত থাকলে সেক্ষেত্রে রক্তদান করা উচিত নয়।
৬)নারীরা মাসিক চলাকালীন বা গর্ভাবস্থায় রক্তদান করতে পারবেন না।
৭)রক্তদানের কাছাকাছি সময়ে কোনও বড় দুর্ঘটনা বা অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে রক্তদান না করা বাঞ্ছনীয়।

এছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে যে, এক ব্যাগ রক্তদানের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া দরকার। রক্তদানের পর দুই গ্লাস পানি বা জুস খেলে রক্তের জলীয় অংশটুকু পূরণ হয়ে যায়। বাকিটুকুও পূরণ হতে বেশি সময় লাগে না। রক্তদানের পর ওই দিনটাতে খুব বেশি পরিশ্রম করা উচিত নয়। স্বাভাবিক কাজকর্মেও কোনো বাধা নেই।

রক্তদান একটি ব্যথামুক্ত এবং নিরাপদ প্রক্রিয়া:
রক্তদান একটি ব্যথামুক্ত এবং নিরাপদ প্রক্রিয়া। অভিজ্ঞ হাতে রক্তদান করলে এই প্রক্রিয়াতে শুধুমাত্র হাতের শিরায় সুঁই ঢোকানোর সামান্য ব্যথাটুকু ছাড়া আর কোনও ব্যথাই অনুভূত হয়না। প্রত্যেক রক্তদাতার দানকৃত রক্ত সংগ্রহের জন্য সম্পূর্ণ নতুন আনকোরা জীবাণুমুক্ত প্ল্যাস্টিক ব্যাগ ও সুঁই (যা ব্যাগের সঙ্গেই যুক্ত থাকে) ব্যবহৃত হয় যার ফলে প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত এবং কোন ধরণের সংক্রমণের আশঙ্কা নেই।

আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদানের বিষয়টি এখনও যথেষ্ট না হওয়ার কারণে রোগীকে শরণাপন্ন হতে হয় নিকট আত্মীয় স্বজনের কাছে। সেখান থেকে সম্ভব না হলে তখন ভরসা পেশাদার রক্তদাতা অথবা ব্লাড ব্যাংক। এই দুই ক্ষেত্রেই সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন।

কারণ পেশাদার রক্তদাতারা টাকার বিনিময়ে তাদের রক্ত বিক্রি করে থাকে আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই রক্তদাতারা মাদকাসক্ত। এছাড়া এদের রক্তে হেপাটাইটিস, এইচআইভিসহ আরও নানা ধরণের জীবাণুর সংক্রমণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষণীয়। এছাড়া পেশাদার রক্তদাতারা একবার রক্তদানের পর পরবর্তী রক্তদানের ক্ষেত্রে উপযোগী সময়ের পূর্বেই রক্ত দিয়ে থাকে যার ফলে তাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রায় ও ঘাটতি দেখা যায়। ব্লাড ব্যাংক এর ক্ষেত্রে সঠিকভাবে খোঁজখবর নিয়ে নির্ভরযোগ্য ব্লাড ব্যাংক বেছে নিন।

আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর সর্বপ্রথম সূত্রপাত করেছিল মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান Ôসন্ধানী।Õ শুরুতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে একটি মাত্র ইউনিট নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হয় Ôসন্ধানীÕ। গড়ে ওঠে দেশের সকল সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ অনেক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালগুলোতেও।Ôসন্ধানীÕ ছাড়াও আরও মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীদ্বারা পরিচালিত কিছু একি ধরণের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান আছে এগুলো হল Ôমেডিসিন ক্লাবÕ ও Ôরেড ক্রিসেন্ট ইয়ুথÕ। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ÔবাঁধনÕ এবং কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেইসবুকেও দেখা যায় এই ধরণের উদ্যোগ যেগুলোতে তরুণসমাজের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সত্যিকার অর্থেই আশার কথা। কিছু ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক রয়েছে যেমন আই ব্লাড নেটওয়ার্ক (I-blood network), সেইফ (SAFE), ডোনার জোন (Donor zone), http://www.BloodBd.org সহ আর কিছু নির্ভরযোগ্য ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক ও প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ করে থাকে।

স্বেচ্ছায় রক্তদান নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত মহৎ পদক্ষেপ। আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদান এখনও সন্তোষজনক অবস্থানে নেই। এই মহতী পদক্ষেপ পরিপূর্ণতা পাক সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাঝে। নিয়মিত রক্তদানে এগিয়ে আসুন।বিশ্বব্যাপী যে সকল মহৎ রক্তদাতারা তাঁদের রক্তদানের মাধ্যমে এই কথাটিকে সার্থকতা দিয়ে আসছেন তাঁদের প্রতি রইল শুভকামনা, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা।

লেখক: শিক্ষার্থী, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ, বরিশাল।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১২
সম্পাদনা: তানিয়া আফরনি, বিভাগীয় সম্পাদক


লিঙ্কঃhttp://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=7a25351114ba52ac1bd6292aa53a3e62&nttl=20120614044420119118&fb_source=message
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×