somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদি রাজকন্যার জীবন কাহিনী (পর্বঃ ১২) – মেয়েদের শাস্তির জন্য মৃত্যুকক্ষ

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সুলতানার বোন তাহানি’র এক বাল্যকালের বান্ধবীর নাম ছিল সামিরা। সামিরার বয়স ছিল ২২ বছর। সামিরাকে তার পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা একটা নির্জন, অন্ধকার, জানালাবিহীন কক্ষে তালাবদ্ধ করে রেখেছে। তার খাবারের ব্যবস্থা যদিও আছে কিন্তু মৃত্যু পর্যন্ত তাকে ঐ ঘরে থাকতে হবে। অনাথ এই মেয়েটির বিরুদ্ধে ব্যভিচারের এবং পরিবারের সম্মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে তার চাচা ও অন্যান্য পুরুষ আত্মীয়ের পক্ষ থেকে। মেয়েটিকে তার বাবা মা লন্ডনে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পাঠিয়েছিল যখন তারা জীবিত ছিল। সেখানে ল্যারি নামের একটা অ্যামেরিকান ক্যাথোলিক ছেলের সাথে তার প্রেম হয়।

সামিরার আর কোনও ভাই-বোন ছিল না কারণ তার মার গর্ভাশয়ে ক্যানসার হয়েছিল। ক্যানসার চিকিৎসার পর ডাক্তাররা বলেছিল যে তার পক্ষে আর মা হওয়া সম্ভব হবে না। সামিরার বাবা গড়পড়তা সৌদি পুরুষদের মত ছিল না। সে চাইলেই আরেকটি বিয়ে করতে পারতো। কিন্তু আমৃত্যু সে সামিরার মাকে নিয়েই সংসার করেছে। সুলতানা আর সারাও তাহানির মত সেই ছোটবেলা থেকেই সামিরার বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। একমাত্র সন্তান হওয়ার কারণে সামিরাকে তার বাবা অনেক ভালবাসত। সামিরার বাবা সামিরাকে বলেছিল যে সামিরাকে সে সৌদি আরবের মেয়েদের প্রতি প্রয়োগ করা অন্যায় নিয়ম কানুন থেকে মুক্ত রাখবে।

ল্যারি আর সামিরার ভালবাসার বাধা হয়ে গেল ধর্ম। ল্যারি গোঁড়া ক্যাথোলিক, তাই সে মুসলমান হতে চায়নি। সামিরার বাবা মা হয়তো এই সমস্যার একটা সমাধান করতে পারতো। কিন্তু মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় উভয়েই মারা যান। আরবের নিয়ম অনুযায়ী সামিরার উপর কর্তৃত্ব করার অধিকার পেয়ে যায় তার চাচা। তিনি সামিরাকে তখনই দেশে ফিরতে আদেশ করলেন। সামিরা এই আদেশ না মেনে ল্যারিকে নিয়ে অ্যামেরিকা চলে গেল। সামিরার চাচা একটা প্রাইভেট এজেন্সিকে দায়িত্ব দিলো তাকে খুঁজে বের করার জন্য। চাচা ভাতিজির এই টানাপড়েনের কথা ল্যারিও কিছু কিছু জানতে পারলো। সামিরা আর ল্যারির ভালবাসাও ধীরে ধীরে এইসব কারণে ফিকে হতে থাকে।

সামিরা অর্থ সঙ্কটে পরে গেলো। সে তাহানির (সুলতানার বোন) কাছে টাকা ধার চায়। তাহানি তার স্বামীকে ব্যাপারটা খুলে বলে। কিন্তু তাহানির স্বামী টাকা পাঠাতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর সামিরা তার ছোট ফুফুকে ফোন করে। ফুফু সামিরার সমস্যার কথাগুলি সামিরার চাচাকে বলে। সামিরার চাচা ও ফুফুরা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সামিরার দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে। সামিরা মিশরে পৌছলে তার দুই ফুফু আর দুই কাজিন তাকে আনতে যায়। তাকে বলা হয় যে সে আবার লন্ডন যেতে পারবে। সামিরা তাদের মিথ্যা আশ্বাস বিশ্বাস করে।

রিয়াদে পৌছলে সামিরাকে প্রথমে একটা কক্ষে আটকে রাখা হয়। তার চাচা তার জন্য বিয়ে ঠিক করে ফেলে। বরের বয়স ৫৫ বছরের মত এবং এটা তার তৃতীয় বিয়ে। সে ছিল লম্বায় খাটো ও মোটা। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত সামিরাকে নজরবন্দি করে রাখা হয়। পরে সুলতানারা জানতে পারে যে বিয়ের রাতে সামিরা তার স্বামীর সাথে এমনভাবে হাতাহাতি, মারামারি করে যে তার স্বামী আহত ও রক্তাত্ত হয়। পরে সামিরা তার ফুফুদের বলে যে সে এই খাটো আর মোটা লোককে কখনও স্বামী হিসাবে মেনে নিতে পারবে না এবং সে তার অ্যামেরিকান প্রেমিক ল্যারির সাথে এই লোকের তুলনা করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তালাকের মাধ্যমে এই বিয়ের অবসান হয়। তালাকের সময় সামিরার বর সামিরার চাচাকে বলে বলে যে আপনাদের পরিবারের কোনও সম্মান নেই এবং আপনারা জেনে শুনে একটি অসতী মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছেন। বাসর রাতে সামিরা হাতাহাতি, মারামারি করেছে এবং তার প্রেমিকের সাথে আমাকে তুলনা করেছে। সে বিছানায় আসতে রাজি হয়নি।

সামিরার চাচা শাস্তি হিসাবে সামিরাকে একটা অন্ধকার ঘরে চিরদিনের মত বন্দি করে। তাকে শুধু খাবার দেয়া হতো। কারও সাথে কথা বলা তার নিষেধ ছিল। মৃত্যু না ঘটা পর্যন্ত এভাবে তাকে থাকতে হয়েছিল। ঘরটিতে কোনও জানালা ছিল না। তার কান্নার আওয়াজ যেন বাইরে না যায় তার জন্য রুমটাকে সেইভাবে তৈরি করা হয়েছিল। এভাবেই সামিরাকে হত্যা করা হোল পরিবারের সদস্যদের দ্বারা যার খবর বাইরের মানুষ জানলেও কেউ কোনও প্রতিবাদ করলো না কারণ সৌদি সমাজে এই কুপ্রথা প্রচলিত ছিল।

মার্কিন লেখিকা জিয়ান সেসন (Jean Sasson) এর বই Princess: A True Story of Life Behind the Veil in Saudi Arabia তে বর্ণিত রাজকন্যা সুলতানার জীবন কাহিনীর সারসংক্ষেপ।

ছবি – ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৭
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×