শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহের ভিতরে বাতাস প্রবেশ করে আবার বের হয়ে যায়। এই বাতাস ফুসফুসে যায় এবং ফুসফুসের নিকটবর্তী সূক্ষ্ম রক্তনালীগুলি সেই বাতাস থেকে অম্লজান গ্যাস (অক্সিজেন) সংগ্রহ করে। এই অম্লজান রক্তের সাথে মিশে যায়। অম্লজান সমৃদ্ধ রক্ত প্রতিটি কোষে পৌছায়। আবার কোষ থেকে নির্গত অঙ্গার দ্বি অম্লজান গ্যাস (কার্বন ডাই অক্সাইড) রক্তের সাথে মিশে যায়। সেই কার্বন ডাই অক্সাইড মিশ্রিত রক্ত ফুসফুসে আসে এবং নিশ্বাসের সাথে দেহ থেকে বের হয়ে যায়।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের দেহের ভিতরে বাতাস থাকে। কিন্তু এই বাতাস যদি বুদবুদ আকারে কোনভাবে রক্তনালীতে ঢুকে যায় তাহলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই ধরণের ঘটনাকে এয়ার এমবোলিসম (Air Embolism) বলে। এয়ার এমবোলিসমের ফলে বাতাসের বুদবুদ হৃদপিণ্ড, ব্রেন কিংবা ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে। পরিনামে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে কিংবা শ্বসনতন্ত্র অকেজ হয়ে যেতে পারে যা কিনা মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। কয়েকভাবে অসাবধানতাবশত রক্তনালীতে বাতাসের বুদবুদ প্রবেশ করতে পারে।
১। ইঞ্জেকশন দেয়ার সময় সিরিঞ্জের মাধ্যমে। এই কারণে খেয়াল করবেন যে নার্স বা ডাক্তার ইঞ্জেকশন পুশ করার আগে সিরিঞ্জের ভিতরের কিছুটা মেডিসিন সুইয়ের মাথা দিয়ে বের করে দেয়। এটা করা হয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য যেন সিরিঞ্জে কোন বাতাস না থাকে। কোন কারণে সিরিঞ্জের ভিতরে বাতাস থাকলে এবং সেটা যদি রক্তনালীতে পুশ করা হয় তাহলে বাতাসের বুদবুদ রক্তনালীতে ঢুকে যাবে।
২। রক্তনালীতে ব্যবহৃত ক্যাথেটারের মাধ্যমে। অনেক সময় রক্তনালীতে ব্যবহৃত ক্যাথেটার থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
৩। অস্ত্রোপচারের সময়। বিশেষ করে মগজের কোন অস্ত্রোপচারের সময়। শল্য চিকিৎসকরা জানেন কিভাবে এই বুদবুদকে সরিয়ে ফেলতে হয়। অস্ত্রোপচারের সময় কোন কারণে বাতাসের বুদবুদ রক্তনালীতে প্রবেশ করলে সেটা সরিয়ে ফেলার কৌশল শল্য চিকিৎসকরা জানেন।
৪। ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুসে ভেন্টিলেটর ব্যবহারের সময়। ভেন্টিলেটর ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুসে অস্বাভাবিক চাপ প্রয়োগ করে বাতাসের বুদবুদ প্রবেশ করাতে পারে।
৫। স্কুবা ডাইভিং করার সময়। স্কুবা ডাইভাররা যদি বেশী সময় পানির নীচে থাকে তাহলে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বেশীক্ষণ দম আটকে রাখলে ঝুকি বেশী। তার ফলে ফুসফুসের উপর চাপ পরে। এই চাপের কারণে ফুসফুসের সূক্ষ্ম এলভিওলি ফেটে যেতে পারে। পরিনামে বাতাসের বুদবুদ রক্তনালীতে প্রবেশ করতে পারে। সাধারণত দীর্ঘ সময় দম বন্ধ রাখলে বা অতি দ্রুত পানি থেকে উপরে উঠলে এই ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
৬। বোমা বা ঐ জাতীয় কোন বিস্ফোরণের কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হলে। যুদ্ধক্ষেত্রের সৈন্যরা অনেক সময় এই ধরণের দুর্ঘটনায় পতিত হয়।
৭। এই কারণটা কিছুটা অশ্লীল এবং হাস্যকর মনে হলেও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন। সেটা হোল যদি কোন নারীর যোনিতে কোন পুরুষ মুখ দিয়ে প্রচণ্ড বেগে ফু দিতে থাকে। সেই ক্ষেত্রে প্রচণ্ড চাপের কারণে বাতাস রক্তনালীতে ঢুকে যেতে পারে। কারণ যোনির কাছাকাছি অনেক সূক্ষ্ম রক্তনালী থাকে। যোনিতে কোন কারণে ইঞ্জুরি হলে বা ছিঁড়ে গেলে এই ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ঝুকি আরও বেশী। তাই যোনিকে বাচ্চাদের খেলার বেলুন ভেবে ফুলাতে চেষ্টা করাটা হবে কোন পুরুষের জন্য চরম বোকামি।
এয়ার এমবোলিসমের লক্ষণঃ
১। শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
২। বুকে ব্যথা কিংবা হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা কমে যাওয়া
৩। পেশি বা গিরায় ব্যথা
৪। ব্রেন স্ট্রোক
৫। রক্তচাপ কমে যাওয়া
৬। চামড়া নীল হয়ে যাওয়া
সনাক্ত করার পদ্ধতিঃ
১। সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে
২। আলট্রা সাউন্ডের মাধ্যমে
চিকিৎসাঃ
১। উচ্চচাপের ১০০% অক্সিজেন পূর্ণ কক্ষে রেখে চিকিৎসা। এই পদ্ধতিতে বুদবুদ ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যায় এবং রক্তে মিশে যায়।
২। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। বুদবুদের নির্দিষ্ট স্থান সনাক্ত করা গেলে অস্ত্রোপচারের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়।
৩। রোগীকে আনুভূমিক না রেখে বসিয়ে রাখা যেন দেহের উপরের অংশে সহজে বাতাসের বুদবুদ না যেতে পারে।
৪। হৃদপিণ্ডের গতি স্বাভাবিক রাখার জন্য ওষুধ প্রয়োগ।
তবে আশার কথা হোল সামান্য পরিমান বাতাস প্রবেশ করলে অনেক সময় নিজে থেকেই সেটা রক্তে মিশে যায়।
সুত্রঃ healthline.com/health/air-embolism
ছবি- study.com/academy/lesson/what-is-an-air-embolism.html
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:৫২