এই মাত্র রাতের শেহরী খেয়েছি। ফজরের আজানের এখনো পনের মিনিট বাকী। তাই বসে বসে মোবাইলে আঙুল চালাচ্ছি । কিছুক্ষণ পর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। অপরিচিত নাম্বার। আমি কিছু বলার আগে ওপাশ থেকে হ্যালো বলে উঠলো। মেয়েলি মিহি কন্ঠ। আমিও এপাশ থেক হ্যালো বললাম।
-স্যার ভালো আছেন?
-জি আমি ভালো আছি। আপ্নাকে তো চিনতে পারলাম না?
-স্যার আমি বিথি, আপনার ছাত্রী।
কিছুক্ষণ থ' হয়ে রইলাম। ২০০৯-২০১০ তে অনেক পোলাপান পড়াইছি। বিথী নামের কাউকে চিনতে পারছিনা। কিন্তু সৌজন্যতা রক্ষা করার জন্য বললাম,
-ওহ বিথি, কি অবসস্হা তোমার?
-স্যার ভালো। কিন্তু স্যার আপনি আমাকে না চিনেই চিনার ভাব ধরলেন! আমি বিথি, সাজিদের ফুফাতো বোন। সাজিদগো বাড়িতে বেড়াতে গেলে মা সাজিদের সাথে মাঝেমধ্যে পড়াতে বসাতেন যেন পড়ায় গ্যাপ না খাই। এই বার চিনছেন তো স্যার?
-হ, মনে পড়েছে, তয় কি মনে করে আমাকে ফোন করেছ? আর আর নাম্বারই বা কোথায় পেলে?
-স্যার, সত্যি কথা বলতে কি আমি এখন পরী হয়ে গেছি। ফেবুতে এঞ্জেল নওরিন নামে আমার একটি ফেসবুক আইডি আছে। আপনাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম, আপনি একসেপ্ট করেন নি। ফেক মনে করে রিজেক্ট করেছেন। তাতে আমি কোন কষ্ট পাইনি। আর নাম্বারের কথা বলেছেন? নাম্বার ফেবু থেকে নেয়া।
-সর্যি তোমাকে প্রথমে চিনতে পারি নাই। এখন বলো কি জন্যে ফোন দিয়েছো?
-স্যার সে কথা পরে বলছি, তার আগে বলেন আপনি প্রেম করেছেন?
- কিসের মাঝে কি! তুমি তো ভালো এডভান্স হয়েছো! তোমার কাছে শুরুতেই পারসোনাল কথা বলবো, ভাবলে কিভাবে?
- ঠিক আছে স্যার বলা লাগবেনা, তাহলে বিয়ের কথা নিশ্চয় বলতে দ্বিধা করবেন না। বিয়ে করেছেন কবে?
-না এখনো করেনি। কেন তুমি করবা ।
- করবো স্যার, তার আগে বলেন, চুল কয়টা কালো আছে?
-চুপ কর বেয়াদব মেয়ে। এখন বলো কি জন্যে ফোন দিয়েছো?
- প্লিজ স্যার উত্তেজিত হবেন না, উত্তেজিত হলে পরীরা ভূমিতে পা রাখতে পারেনা। এখন যে কথা বলব সেটির জন্য আপনি প্রস্তুত না। তার পরেও আপনাকে বলছি। আপনার প্রতি আমার খুব বিশ্বাস। আপনি সাজিদ ভাইকে যে কথা বলেছেন তা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হতে চলেছে।
সাজিদ কে আমি কি কথা বলেছি এখন তা মনে করতে পারছিনা। সাজিদ ছাত্র হিসেবে ভালো ছিলোনা, অংক দিলে প্যাক্টিস করতো না, সেজন্য মাঝেমধ্যে বকাঝকা করতাম, তাছাড়া সাজিদ কে যখন পড়াই তখন সে দশম শ্রেণিতে পড়ে, এই মেয়েটি সম্ভবত ক্লাস ফোরে। এত দিন আগের কথা মনে না থাকাই স্বাভাবিক।
-আচ্ছা, আমি সাজিদ কে কী বলেছি?
-আপনি বলেছেন, সাজিদ বড় হয়ে ঘর জামাই হবে। অল রেডি সে হয়ে গেছে। সে মেরিনা কে বিয়ে করে তার বাবার দৌড়ানি খেয়ে শ্বশুর বাড়িতে উঠেছে। দেখছেন স্যার তার শ্বশুর কত ভালো মানুষ। রিলেশন করা মেয়ে ও মেয়ের জামাই কে প্রথম অবস্হায় মেনে নিয়েছে।
- এই মেয়ে বাদ দাও তো এসব ফালতু কথা, আজানের সময় হইছে, এখন বলো কিজন্যে ফোন দিয়েছ?
- স্যার সত্যি কথা বলতে কি আমি একটি ছেলের সাথে রিলেশন করি। আমি সে ছেলের সাথে আগামী বুধবার কোর্ট ম্যারেজ করতে যাব, এখন আপনার বলতে হবে, আমার অভিভাবক আমার ও আমার বরের সাথে কেমন আচরণ করবে?
- মেরিনার উল্টোটা ঘটবে, আর সাজিদের মত ভাগ্য তোমার হবু বরের হবেনা, তোমার বাবার দাবড়ানি খাবে নিশ্চিত। সহজে উত্তর দিলাম।
- হয় নাই স্যার। সাজিদ ভাই এখনো বিয়ে করে নাই। সাজিদ ভাইয়ের ঘটনাটি আমি আপনাকে বানিয়ে বলেছি। তবে সাজিদ ভাইয়ের বিয়ে হবে, রিসেন্টলি হবে। পবিত্র রমজান মাসে আমার সাথে তার বিয়ে হতে যাচ্ছে। মানে আপনার কথা সত্যি হতে যাচ্ছে। এবার ভাবুন তো স্যার, সাজিদ মাস্টার্স পাশ বেকার ছেলে, বিয়ের পর সে কোথায় উঠবে? আমি ভাবছি, বিয়ের পর তাকে নিয়ে আমার বাপের বাড়িতে উঠবো। আমি বাবার একমাত্র মেয়ে। বর কে নিয়ে আমার বাবার বাড়িতে সুখে থাকতে চাই। এখন আপনার কাছে দোয়া নেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছি। দোয়া করবেন না স্যার?
আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছিনা। একটি ছেলে আর একটি মেয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছে তাদের জন্য দোয়া করা কর্তৃব্য। অপর দিকে তাদের বাবা মা অনেক কষ্ট পাবেন নিশ্চয়। এখন আমি কি বলব? তাদের কে শুভ কামনা জানব? নাকি বলব- তোমাদের অভিভাবক কে কষ্ট দেয়া ঠিক হচ্ছেনা। না আমি কিছুই বলতে পারিনি। আজানের সূর ভেসে আসার সাথে সাথে বললাম, বিথি এখন আজান হচ্ছে, পরে তোমার সাথে কথা বলব। সাথে সাথে লাইনটা কেটে দিলাম।
(লেখার সাথে ছবির মিল নাই)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৮ রাত ৯:৪২