somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাজার বছর ধরে

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাবুন তো একবার !! কলেজে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কয়েক বন্ধু মিলে চলে গেলেন কোন এক নদীর পাড়ে আড্ডা দিতে। অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা আর খুব প্রিয় কিছু মানুষ একসাথে। সবাই একেবারে হরিহর আত্মা। প্রিয় বন্ধুদের নাম- কাহ্নপা, লুইপা, কুক্কুরীপা, ভুসুকুপা, সরহপা আর শবরপা।

অ্যাঁ !!! এইগুলান আবার কেমনতর নাম ????? Are they pom gana ?????

আচ্ছা, যাই হোক। আরেকবার ভাবুন তো। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ছেলেটার চোখে এক অজানা ভয়। ছেলেটা থমকে দাঁড়ালো। মেয়েটার সামনে এলো। কি অদ্ভুত সুন্দর চোখ!! কি মিষ্টি চেহারা!!! কিছু একটা ভেবে সে হঠাৎ হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। মেয়েটার হাত ধরে বলল, " তোএ সম করিবে ম সাঙ্গ "

ধুর!!! এইডা কিছু হইলো!!!! কি কন মিয়া ???

আসলে উপরের নামগুলো আমাদেরই পূর্বপুরুষদের। ওনারা সবাই চর্যাপদের কবি। আমাদের প্রাণের বাংলা ভাষার সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন এই চর্যাপদ। আর ছেলেটা কি বলেছে তা তো সব্বাইই বুঝতে পারছেন। কথাটির অর্থ হচ্ছে- ' আমি তোমাকে বিয়ে করবো।'

হাজার বছর আগে এমনই ছিল আমাদের বাংলা ভাষা।

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ৯০০ বা ৯৫০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে মাগধী অপভ্রংশ থেকে জন্ম নেয় আমাদের বাংলা ভাষা। এ হিসেবে বাংলা ভাষার বয়স এক হাজার একশো বছর। কিন্তু একটুও বুড়িয়ে যায়নি আমাদের প্রিয় ভাষা। সে যে অনন্তযৌবনা!!!

ফিরে আসি চর্যাপদের কথায়। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালে যান। নেপাল রাজদরবারের গ্রন্থশালায় তিনি আবিষ্কার করেন চারটি পুঁথি। ঐ পুঁথিগুলো তিনি ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ থেকে প্রকাশ করেন। এ গানগুলোই এখন চর্যাপদ নামে পরিচিত।



মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী


'চর্যা' শব্দের অর্থ হল আচরণ। বৌদ্ধ ধর্মের সিদ্ধপুরুষেরা এতে নির্দেশ দিয়েছেন, সাধনার জন্য কি আচরণ করা যাবে ও কি আচরণ করা যাবেনা। অর্থাৎ এগুলো হলো তান্ত্রিক গাথা। আমাদের মত সাধারণ মানুষদের জন্য এটা রচিত নয়। শুধুমাত্র সিদ্ধপুরুষদের জন্যই এই রহস্যময় গানগুলো।






এর একটি পদাংশঃ

"নগর বাহিরেঁ ডোম্বি তোহোরি কুড়িআ
ছই ছোই যাই সো বাহ্ম নাড়িআ
আলো ডোম্বি তোএ সম করিবে ম সাঙ্গ
নিঘিণ কাহ্নকপালি জোই লাঙ্গ"

এর অর্থঃ

"নগরের বাইরে, ডোম্বি, তোমার কুঁড়েঘর
তুমি ব্রাহ্মণ নেড়াকে ছুঁয়েছুঁয়ে যাও
ওগো ডোম্বি আমি তোমাকে বিয়ে করবো
আমি ঘৃণাহীন কাহ্ন-কাপালিক, যোগী ও উলঙ্গ"

কথাগুলো হয়তো সহজবোধ্য মনে হচ্ছে। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে এক রহস্যময় অর্থ, যা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভভ নয়। এর ভেতরের ভাব একমাত্র সিদ্ধপুরুষেরাই জানেন।

চর্যাপদে ব্যবহৃত কিছু শব্দের অর্থঃ

উইএ = উদিত হয়
নঈ = নদী
জাণহুঁ = জানি
নঅ বল = দাবা খেলা
উএস = উপদেশ
গঅণ = আকাশ
গুহাড়া = অনুরোধ
বিআলী = বিকেল
হাউঁ = আমি
হিঅহি = হৃদয়ে
অকিলেসেঁ = বিনা পরিশ্রমে
.................................
.................................


চর্যাপদ প্রাচীন বাংলা ভাষার নিদর্শন। মধ্যযুগের বাংলা ভাষা কেমন ছিল তা আমরা জানতে পারি ' শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ' নামের একটি পুঁথি থেকে। এটি একটি বড় কাহিনীকাব্য। এর কবির নাম বড়ু চণ্ডীদাস। তিনি বাংলা ভাষার প্রথম মহাকবি। ধারণা করা হয় এটি ১৩৫০-১৪০০ সালের মধ্যে কোন এক সময়ে রচিত হয়েছে।


কৃষ্ণ ও রাধা


চর্যাপদ সাধারণ মানুষদের জন্য লেখা হয়নি। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে উঠে এসেছে রাধার কষ্ট, তার আবেগ-ভালবাসা। উঠে এসেছে রাধার রূপ দেখে কৃষ্ণের মুগ্ধতা। রাধার অশ্রুকণায় মিশে টলমল করতে থাকে আমাদের মধ্যযুগের বাংলা ভাষা। কৃষ্ণের বাঁশির মায়াবী সুরের তালে নেচে উঠে আমাদের মধ্যযুগের বাংলা ভাষা।

এ কাব্যের একটি পদাংশঃ

" কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি কালিনী নইকুলে
কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি এ গোঠ গোকুলে
আকুল শরীর মোর বেআকুল মন "

এর অর্থ দাঁড়ায় এমনঃ

" কে বাঁশি বাজায় বড়ায়ি কালিন্দী (যমুনা) নদীর কূলে
কে বাঁশি বাজায় বড়ায়ি এ গোঠ গোকুলে (যমুনা পারের গ্রাম)
আমার শরীর আকুল আর মন ব্যাকুল "

এই প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলা ভাষা সম্পূর্ণরূপে আমরা বুঝতে পারিনা। তবে রোমাঞ্চিত হই এই ভেবে যে, আজ থেকে হাজার বছর আগে বাংলার পথে-প্রান্তরে এই ভাষাতেই কথা বলতেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা। তাদের হাসি-কান্না, ভালবাসা, রাগ, ঘৃণা, দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা সবকিছু মিশে আছে এই ভাষার সাথে। এ আমাদের জন্য এক স্বপ্নের ভাষা। রূপ আলাদা হতে পারে। তবে হাজার বছর ধরে এ ভাষায়ই আমরা কথা বলছি, হাজার বছর ধরে এই ভাষায়ই আমরা কথা বলে যাবো..........



যারা আরও বিস্তারিত জানতে চান এ বিষয়ে -

১. কতো নদী সরোবর বা বাংলা ভাষার জীবনী - হুমায়ুন আজাদ
২. Click This Link
৩. Click This Link
৪. Click This Link
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×